প্রাক্তনকে ভুলে কি কখনোই তুমি নতুন করে জীবন শুরু করতে পারবে না রেহনুম? মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে ছিলাম,হঠাৎ রিফাতের মুখে এমন কথা শুনে কিছুটা বিচলিত হলাম! ফোনটা রেখে ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম একটা প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যেন এই কথা টা জ না জানা হলে তার শান্তি নেই। কিন্তু আমি ওর থেকে চোখ সরিয়ে কিছু না বলে আবার ও ফোনের দিকে তাকালাম। রিফাত আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো! একটু পর আবারো বললো, আচ্ছা রেহনুম একটা কথা বলি প্লিজ জবাব দিবা? ওর দিকে না তাকিয়েই বললাম, আচ্ছা বলো জবাব দেওয়ার মতো হলে চেষ্টা করবো।
— আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি সেটার বিন্দু পরিমাণ ও কি এতোদিনে অনূভব করতে পেরেছো? হু….(ফোনের দিকে তাকিয়েই বললাম)..
হু মানে কি? সেই কৈশোর কাল থেকে আমি ভালো লাগা বলতে শুধু তোমাকে বুঝি,আস্তে আস্তে বড় হওয়ার সাথে সেটা তোমাকে বুঝানোর চেষ্টা ও কম করি নি৷ কিন্তু তুমি আগে ও বুঝার চেষ্টা করতে না আর এখনো করো না!!
কথা টা কেমন যেন ঠেকলো। আসলেই রিফাত আমাকে পছন্দ করতো আর ভালোবাসতো সেটা আমি অনেক আগে থেকেই বুঝতাম। তাতে কি তার এই ভালোবাসা আর অনুভূতি আমার ভালোলাগার অনেক দূরের ছিলো। কারণ আমি রুহানকে ভালোবাসতাম। তার ভালোবাসায় এতটাই সিক্ত ছিলাম যে আমার প্রতি অন্য কারোর ভালোবাসার প্রকাশ গুলো খেয়াল করাটা ও আমার বেখেয়াল ছিলো । পুরো ৩ বছরের সম্পর্কের সমাপ্তি হয়েছে আজ থেকে ৪ মাস আগে৷ যে সম্পর্কের নিশ্চয়তা নেই সেখানে ভালোবাসাটা আর গভীর করতে চায়ছিলো না রুহান তাই নিজের মতো করে তার রাস্তা খুঁজে নিয়েছে৷ সে ভালোই আছে তার মতো করে কিন্তু আমি আমার মতো না। তার সবকিছু এখন গোছালো আর আমার সব হলো এলোমেলো।
রিফাত সেসব জানে…আমাদের যখন রিলেশন ছিলো তখন সে দূরেই ছিলো কিন্তু ইদানীং সে কথা বলতে চাচ্ছে ফেইসবুকে ঘন ঘন নক করছে..অনেক দিন ধরে আমাকে কিছু বলবে বলবে বলে অনুরোধ করছে কিন্তু দেখা করার ইচ্ছে প্রকাশ করি নি। আজকে রাস্তায় দেখে একরকম জোর করেই কথা আছে বলে একটা চায়ের দোকানে বসালো। এরপর এসব কথা বলতে ছিলো,, আর ওর এমন সব কথার জবাবে আমি মাথা নাড়লাম শুধু। বুঝালাম হ্যাঁ আমি তোমার ভালোবাসা বুঝতে পারতাম। তখন একটা বিনয়ী সুর আমার কানে আসলো,,, রেহনুম আমাদের ভালোবাসা টা কি দুতরফা হতে পারে না? আমি একা একা ই কি সারাজীবন ভালোবেসে যাবো?? তখনই একজন এসে দুইটা চায়ের কাপ এগিয়ে দিলো রিফাত একটা নিজের কাছে নিয়ে আরেকটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো৷
একটা কঠিন শিকলে বাধা বিলুপ্তময় হাস্যমুখ থেকে ও ক্ষানিকটা হাসির চেষ্টা করে কাপটা হাতে নিলাম।
নজরটা চায়ের দিকে দিলে ও স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল রিফাত এখনো আমার দিক থেকে চোখ সরায় নি,হাত টাও বাড়িয়ে দেওয়া অবস্থাতেই৷ সেটা বুঝতে পেরে আস্তে করে বাম হাতটা ছোট টেবিলটার উপরে রেখে ওর দিকে তাকালাম। আমি তাকানোর সাথে সাথে সে চোখ নামিয়ে কাপে একটা চুমুক দিলো।। ওর দিকে তাকিয়েই বললাম দেখো রিফাত যে তোমাকে ভালোবাসে না তাকে তুমি গুরুত্ব দিয়ে নিজের জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট করো না। সময়ের অনেক দাম আছে। আমার কথা শুনে সে জোরে হেসে উঠলো আর বলতে শুরু করলো…
–তুমি কতটা বুঝো বিষয়টা? নিজেই তো রুহানের জন্য চোখের নিচে কালি ফেলেছো…তার জন্য চির হাসি মুখটা ও আধারে ধারণ করেছো…সেখানে আমাকে কি বুঝাও তুমি? কেউ ভালোবাসুক আর না বাসুক যাকে মন মেনে নিয়েছে তার জন্য যুগ যুগ অপেক্ষা করলে ও সময় নষ্ট হয় বলে মনে হয় না ।
—হুহহ এসব শুধুই সময়ের সফল বক্তৃতা! অনেক শুনেছি আর শেষ পরিনতি ও দেখেছি তাই এসব কথা বলে ইমপ্রেস করার বৃথা চেষ্টা করো না৷
— এভাবেই কি মানুষের প্রতি অবিশ্বাসের মতো একটা জীবন নিয়ে থেকে যাবে?
— আমি কাউকে অবিশ্বাস করি না রিফাত ৷ কারণ আমি যার কথা অবিশ্বাস্য ভাব্বো সে নিজেই তো জানে না সে পরবর্তীতে কি করবে বা কিসের সম্মুখীন হবে, আর তখন তার কথা ঠিক থাকবে কিনা! সেখানে আমি কিভাবে এতো অগ্রীম বিশ্বাসে অন্ধ হবো?
— রেহনুম আমার ভালোবাসা তাহলে কি অপুর্নই থেকে যাবে?
— সেটাই হোক ৷ এই অপুর্ণতার জন্য আকাঙ্ক্ষাটা সবসময় এক রকম ই থেকে যাবে। বিলীন হতে সময় লাগবে৷
আমি নিজেকে শুধরানোর চেষ্টা করবো । অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু পাওয়ার আশায় যে ভুল টা নিজে থেকে করেছিলাম সেটা পরিবার থেকে করুক, হয়তো সেটাই আল্লাহ প্রদত্ত লিখা আছে। আর যে আমার নয় তার সাথে এভাবে ১০ বছর সম্পর্ক থাকলে ও সে আমার হবে না৷ কিন্তু যে আমার ভাগ্যের ছোঁয়ায় তার সাথে হয়তো একদিনের পরিচয়ে ও জীবন সংযোজন হবে। আমি ও তাই রুহানের মতোই তোমাকে বলতে চাই,আশাবিহীন ভালোবাসা থেকে দূরে থাকো৷
এইটুকু বলে হাতের চায়ের কাপ টাতে একটা চুমুক দিলাম। ব্যাগটা হাতে নিয়ে সেখান থেকে উঠে গেলাম। রিফাতের দিকে অশ্রু টালমল করা চোখে তাকানোর সাহস ছিলো না …তাই না তাকিয়েই পেছন ফিরে রওয়ানা দিলাম নিজের গন্তব্যে! জানি তার ও মানতে কষ্ট হবে, কিন্তু একসময় ঠিক ই এই বিষাদময় পথচলা টা শিখতে পারবে৷ নয়তো নতুন কারোর সন্ধান করবে। তখন তা হবে আরেকটা ভিন্ন রকম পথচলা ।