ভুল

ভুল

মেয়েটি বিছানায় বসে কাঁদছে । শরীরের কাপড় গুলো এলোমেলো । সিহাব নামের ছেলেটি অপরাধী ভাব দেখালেও মনে মনে খুশি । নাহ্ অনেক দিনের খায়েশটা পূরণ হয়েছে । এখন জয়াকে একটু মেনেজ করতে পারলেই হলো ।

— এতো চিন্তা করছ কেন, আর কান্নার কি হলো । আমি তো তোমাকেই বিয়ে করব । যাকে ভালোবাসতে পার তার খুশির জন্য এতটুকু করতে পার না !

— তুমি আমার সাথে ওয়াদা করেছিলে বিয়ের আগে কিছুই করবে না কিন্তু আজ ওয়াদা ভেঙে ফেললে এক প্রকার জোর করেই ভোগ করলে আমায় ।

— ছিঃ কি বলছ এসব, তোমাকে ভোগ করতে যাব কেন । নিজেদের মধ্যে ভালোবাসা থাকলে এই সামান্যতে কোন দোষ নেই ।

— আমি অনেক দেখেছি । আমার বান্ধবী একই ভুল করেছিলো কিন্তু তার বি,এফ তাকে বিয়ে করেনি । তুমি কি সেই একই কাজ করবে ?
— আরে দূর তুমি কোন চিন্তা করো নাতো আমি সেই রকম না । এই তোমার গা ছুঁয়ে প্রমিজ করছি অবশ্যই তোমাকে বিয়ে করব ।

জয়া মেয়েটি কিছুটা শান্ত হয়েছে । তবে সিহাবের মনে খেলে যাচ্ছে অন্য রকম অভিসন্ধি । আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিল । তথাকথিত ভালোবাসা দিবস । এই দিনটা কে তৈরি করতে সিহাব কে অনেক কাঠ খোর পোড়াতে হয়েছে । না চাইলেও দিতে হয়েছে ফেক্সির টাকা । ফেব্রুয়ারির প্রতিটি দিবসে দিতে হয়েছে দামী গিফ্ট । পকেটের টাকা খরচ করে আজ সারাদিন ঘুরতে হয়েছে, চাইনিজ খাওয়াতে হয়েছে । বন্ধুর পকেটে ভারী করে তার কাছ থেকে নিতে হয়েছে ফ্ল্যাটের চাবি। তারপর মিথ্যা বলে জয়া কে এখানে নিয়ে আসা । একবার যখন তাকে সে ভোগ করতে পেরেছে, আগামী দিন গুলো তার জন্য সহজ হয়ে গেছে ।

হ্যাঁ হয়েছিলও তাই, জয়া সিহাবের মিষ্টি কথায় ভুলে গিয়ে মাঝে মাঝেই বিছানায় সঙ্গী হতো । জয়া ভাবতো কয়েকদিন পরে তো তারা বিয়েই করছে । কোন সমস্যা তো হওয়ার কথা নয় । অনেক ছেলেকে সে দেখেছে কিন্তু সিহাবের মতো ভদ্র আর ভালো ছেলে সে কখনো দেখেনি । সিহাব তার গা ছুঁয়ে প্রমিজ করেছে, অবশ্যই তাকে বিয়ে করবে তাই অবিশ্বাসের কোন কারন নেই ।

তিন মাস পরেই দেখা গেল সে কনসিভ করেছে । তার কপালে চিন্তার ভাজ । কিন্তু সিহাব তাকে বিয়ে করার নাম নিচ্ছে না । একদিন হঠাৎ করেই সিহাব উধাও হয়ে গেছে । পরীক্ষা শেষে তার আর দেখা নেই । পরিচিত মোবাইল নাম্বারটাও বন্ধ । এখন জয়া কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না । অনেকটা দিশেহারা হয়ে গেছে সে । যে বন্ধুর ফ্ল্যাটে তারা মাঝে মাঝে গিয়ে সময় কাটাতো সেখানে গিয়েও খবর নিয়েছে । সেই বন্ধু সিহাবের কোন খবর জানে না । এমনকি তার গ্রামের বাড়ির ঠিকানাও তার জানা নেই । কোন উপয়ন্ত না পেয়ে ইউনিভার্সিটি থেকে পয়সা খরচ করে সিহাবের গ্রামের বাড়ির ঠিকানা যোগাড় করেছে জয়া ।

জয়ায় বাড়িতেও এই ব্যাপারটাও কেউ জানে না, কারন জয়া ঢাকা হোস্টেলে থেকে লেখা পড়া করে । ভেবেছিল সিহাবের সাথে সম্পর্কের কথা বাড়িতে জানাবে । তারপর পারিবারিক ভাবেই তারা বিয়ে করবে । আর যদি পারিবারিক ভাবে কোন সমস্যা হয় তবে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিবে কিন্তু তার আগেই যে সিহাব এমন একটা ঘটনা ঘটাতে পারে সেটা জয়ার চিন্তার বাইরে ছিল । তারপরেও মন বলে উঠে সিহাবের কোন বিপদ হলো নাতো ?

একটা ঠিকানা যুক্ত কাগজ জয়ার হাতে । বাস থেকে নেমে এক ভ্যানওয়ালা কে ঠিকানা বলতেই সে চিনে ফেলেছে । সিহাবের বাড়িতে আসতে বেশি সময় লাগেনি । ভাড়া মিটিয়ে জয়া তাকিয়ে আছে চৌচালা নতুন বাড়িটার দিকে । মনের ভেতর দ্বিধা, দ্বন্দ্ব, সংশয় আর ভয় । সদর দরজা খোলাই ছিল । ঘরের দরজায় সামনে বাঁধাই করা সিঁড়ি । সেখানে বসে আছে সিহাব এবং ঘুমটা দেওয়া একটি মেয়ে । তারা হেসে হেসে কথা বলছে । ঐ তো সিহাব, সিহাবের কোন বিপদ তো হয়নি ! কিন্তু পাশে বসা মেয়েটি কে ? আপাতত দৃষ্টিতে মনে হবে তারা স্বামী, স্ত্রী কিন্তু সে কথা জয়া বিশ্বাস করতে চায় না ।

সিহাব দরজার সামনে জয়াকে দেখে দাঁড়িয়ে গেছে । তার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে । কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না । জয়া তাকে বিয়ে করার জন্য পীড়াপীড়ি করছিল কিন্তু জয়ার সাথে সে যেটা করেছে সেটা ছিল নিখুঁত অভিনয় । কোন কুমারী মেয়েকে চেখে দেখার স্বাদ । তার স্বাদ মিটে গেছে তবে কেন জয়ার পেছনে পরে থাকা । পরীক্ষা শেষ করেই বাড়িতে চলে এসেছে । আর যে মোবাইলের সিমটা ছিল সেটা বাড়ির পাশের পুকুরে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে কিন্তু জায়া তার বাড়ির ঠিকানা পেল কিভাবে ! সে তো কাউকেই কখনো বাড়ির ঠিকানা বলেনি ! জয়া সিহাবের দিকে হেঁটে যায় তার চোখ রক্ত বর্ণ । তার ধারণা যদি সত্যি হয় তবে সিহাব কে সে খুন করে ফেলবে ।

— সিহাব এটা কি ? তুমি আমাকে কিছু না বলে বাড়িতে চলে আসছ কেন ? আর যদি কোন কারনে এসেই থাক তবে ফোন দেওনি কেন ?
— কে আপনি ? কাকে চান । আমি তো আপনাকে চিনি না ।
— আমি কে মানে !! তুমি আমাকে চিন না ?
— না আপনাকে আমি চিনি না, কোন ভেজাল না করে এখান থেকে বিদায় হোন ।
— তুমি আমাকে চিন না !! বদমাশ, ইতর, অমানুষ কোথাকার । একথা বলতে একটুও বুক কাঁপলো না তোর ।
— এই ,,, আপনি কে ? কেন আমার স্বামীকে উল্টা পাল্টা কথা বলছেন ?
— বাহ্ বা,,বা,,বাহ্ , বিয়েও করে ফেলেছিস দেখছি । তুইকি জানিস বদমাশের বাচ্চা তোর সন্তান আমার গর্ভে ।
— দেখ নীলা এই মেয়েটি কে আমি চিনিনা জানিনা, নিশ্চয় সে আমাকে ব্লাকমেইল করার চেষ্টা করছে । ও সম্ভবত কোন মাফিয়া চক্রের সদস্য । এই মেয়ে তুই কি এখান থেকে যাবি, না গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিব । যখনই সিহাব এই কথাটা বলেছে । জয়া সাথে সাথেই একটা চড় বসিয়ে দিয়েছে সিহাবের গালে ।

— কুকুরের বাচ্চা তুই আমার সাথে প্রতারণা করেছিস, আল্লাহ তোর বিচার করবে ।

না, আর এক দন্ড দাঁড়ায় না জয়া । চোখ মুছতে মুছতে বেড়িয়ে আসে ভয়ংকর মিথ্যুক এবং প্রতারক সিহাবের বাড়ি থেকে । প্রচণ্ড কষ্ট আর ক্ষোভে পার হয় জয়ার দিন গুলো । কোন কিছুই করার থাকে না জয়ার কিন্তু প্রতারক সিহাবের অনাগত সন্তান পৃথিবীর মুখ দেখে না তার আগেই নিজের বিরুদ্ধে নষ্ট করে দিতে হয় সন্তানটিকে, কারন পিতা ছাড়া সন্তান এই সমাজ কখনোই মেনে নেয় না ।

অনেক প্রতিকূলতা পার হয়ে জয়া এখন অন্যের স্ত্রী এবং দুই সন্তানের জননী । জয়াকে প্রচণ্ড ভালোবাসে তার স্বামী । না, সিহাবের প্রতারণার কথা জয়া তার স্বামী কে বলেনি । আসলে কোন মেয়েই বিয়ের আগের অবৈধ সম্পর্কের কথা তার স্বামী কে বলতে পারে না । জয়া তার স্বামী সন্তান নিয়ে ভালোই আছে কিন্তু যখন তার অতীতের ভুল গুলোর কথা মনে পড়ে কিছুক্ষণের জন্য তার শরীর শীতল হয়ে যায় । সে ভেবে পায় না তার এই পাপের শাস্তি আল্লাহ তায়ালা মাফ করবেন কিনা ।

ও আপনাদের তো বলা হয়নি । সিহাবের ঘর শূন্য । শূন্য বলতে বিয়ের পর তাদের কোন সন্তান আদি হয়নি । এ নিয়ে স্বামী, স্ত্রীর মাঝে প্রতিনিয়ত ঝগড়া হয় । সিহাবের স্ত্রী স্থানীয় চেয়ারম্যানের মেয়ে, তাই ইচ্ছে করলেই সিহাব তার বিরুদ্ধে কিছু করতে পারেনা । আর তাইতো সন্তান শূন্য ঘরে তুষের আগুনে জ্বলতে থাকে সিহাব । আর হঠাৎ হঠাৎ একটা কথা কানে বেজে উঠে । “আল্লাহ তোর বিচার করবে”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত