ঘরে ঢুকেই বসার ঘরে এক্স আর তার বাবা মা কে দেখে কয়েক সেকেন্ডের জন্য থমকে গেলাম। চিন্তায় পড়ে গেলাম পুরো পরিবার নিয়ে আমাদের বাসায় আবির কি করছে। পরক্ষনেই মাথায় এলো আজ আমাকে দেখতে আসার কথা ছিলো, ছোট মামা কোনো এক সম্বন্ধ আনবে বলে মা বলেছিলো। তাহলে কি এরাই! নাহ ভাবতে পারছি না। হনহন করে ঘরের ভিতরে ঢুকে গেলাম। মা আমাকে দেখেই দৌড়ে এসে বললো নীরা তোকে দেখতে এসেছে দ্রুত রেডি হয়ে আয়। আমি ব্যক্কল হয়ে চেয়ে রইলাম। মা কে বললাম,
– এরাই কি পাত্রপক্ষ
– হ্যা ছেলে, ছেলের বাবা আর মা।
– আগেরদিন যে এসেছিলো তারা কারা
– ঐটা ছেলের মামা চাচা আর ছেলের বড় ভাই ছিলো। পছন্দ হয়েছে তাই পাকা কথা বলতে এসেছে।
– মা ছেলে সম্পর্কে খোজ খবর নিয়েছো
– হ্যা তোর মামা নিয়েছে আর তোর বাবারও ছেলেকে বেশ পছন্দ হয়েছে, যেমন ভালো ছেলে তেমনি পরিবার। ছেলে ইঞ্জিনিয়ার আর কি চাই বল
– মা আমার ছেলেকে পছন্দ হয়নি
– তুই তো এখনো দেখলি না আগে দেখ কথা বল পরে সিদ্ধান্ত নিস।
– দেখেছি আর সিদ্ধান্ত নিয়েছি
– তোর বাবাকে রাগিয়ে দিস না মা আগে রেডি হয়ে উনাদের সামনে যা
– মা যেহেতু বিয়ে করবো না তাহলে সামনে কেনো যাবো!
– তুই তো সেদিন বললি বাবা যাকে পছন্দ করবে তাকেই বিয়ে করবি আজ আবার এসব বাহানার মানে কি।
– হুম বলেছি তবে এই ছেলেকে না
– কেন এই ছেলে দেখতে খারাপ?
– হুম খারাপ
– তর্ক করিস না দ্রুত রেডি হয়ে আয়।
মা চলে যাবার পর কিছুটা সময় দরজা লাগিয়ে নিজের রুমে ঘাপটি মেরে বসে রইলাম। আবির কি না জেনেই কাকতালীয় ভাবে প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। সেইটা হবার সম্ভাবনা কম কারন সে আমার বাসা চিনে। তাহলে ব্রেকাপের ২ বছর পর কি মনে করে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে চলে এলো। ৩ বছরের সম্পর্কের ইতি টেনেছিলাম আমি নিজেই কারন একটাই আবিরের মেয়ে ঘেসা স্বভাবের কারনে।
তার এক গাদা মেয়ে বন্ধু আর সব বন্ধুদের কাছেই সে নিজেকে সিংগেল বলে দাবী করে। প্রেমিকা থাকতেও তা গোপন করার মানে কি। সে আমাকে কখনোই ভালোবেসেছিলো বলে আমার মনে হয় না। কিন্তু ব্রেকাপের পরেও এই ২ বছর এর মধ্যে আমি তাকে ১ মিনিটের জন্যেও ভুলিনি। কারন সে ছিলো আমার প্রথম ভালোবাসা। মা এসে দরজায় নক করা শুরু করলো বাধ্য হয়ে গিয়ে দরজা খুললাম। রেডি হয়ে তাদের সামনে গেলাম। সারাক্ষন মাথা নিচু করেই বসে রইলাম। দেখা দেখি শেষে দুজন কে কথা বলার জন্য ছাদে ব্যবস্থা করে দেয়া হলো। খোলা আকাশের নিচে দুজন মুখোমুখি বসে আছি কিন্তু কেউ কিছুই বলছি না। নীরবতা ভেঙে আবির বলল-
– নীরা কেমন আছো
– ভালো
– কিন্তু আমি ভালো নেই
– কেনো
– তুমি চলে যাবার পর আমি হারে হারে টের পেয়েছি তুমি আমার কতোটা স্থান জুড়ে ছিলে। এক মিনিটের জন্য তোমাকে ভুলতে পারিনি। মা অনেক মেয়ে দেখিয়েছে সবার মধ্যেই আমি কেবল তোমার ছায়া খুজেছি। তোমার সেই চঞ্চলতা, হাসি মাখা মুখ আমি মিস করেছি। প্লিজ আমাকে একটা সুযোগ দাও।
– তুমি কি সেই সুযোগের যোগ্য?
– জানিনা তবে ভালোবাসার দাবী নিয়ে এসে দাড়িয়েছি। আমি জানি তুমিও আমাকে ভালোবাসো। আজ যদি আমাকে ফিরিয়ে দাও তাহলে ভাববো আমি হয়তো তোমাকে আমার ভালোবাসা বুঝাতেই পারিনি।
– আসলেই পারনি, যখন ছিলাম তখন কেনো অবহেলা করেছো
– আমায় ক্ষমা করো
– তোমার কি ধারনা আমি হ্যা বললেই সব হয়ে যাবে
– হয়তো, তবে কথা দিচ্ছি আর কখনোই অভিযোগ করার সুযোগ দিবো না। আমাকে ফিরিয়ে দিও না। সারাজীবন না পাওয়ার হাহাকার নিয়ে বেচে থাকতে পারবোনা।
– আর তোমার সেই মেয়ে বন্ধুরা
– বিলিভ করো ওরা সবাই তোমার কথা জানতো, আর আমি তোমাকে ক্ষেপানোর জন্যই এমন করতাম। আচ্ছা ঠিকাছে আজ থেকে তুমি আমার বন্ধু ভালোবাসা বউ সব।
-ঠিকাছে ভেবে দেখবো।
– আমারে নিরাশ করো না প্লিজ ২ বছর অনেক বার যোগাযোগের চেস্টা করেছি তুমি পাত্তা দেওনি। বাধ্য হয়ে তোমার মামাকে ম্যানেজ করে ফ্যামিলিগত ভাবে আগাতে এসেছি।
– বললাম তো ভেবে দেখবো। আবিরের ছলছল করা দুটি চোখে আমি সেদিন সত্যিকারের ভালোবাসা দেখেছিলাম। হুম হয়তো মানুষ হারিয়ে হারানো জিনিষের মর্ম বুঝে। আমি তাকে সুযোগ টা দিয়েছিলাম। নিচে রুমে এসেই মা কে বলেছিলাম তোমরা যা ভালো বুঝো করো আমার আপত্তি নেই। মা বোন সবাই মুখ টিপে হাসছিলো। সে রাতেই আমাদের ঘরোয়া ভাবে কাবিন হয়ে যায়। সব কিছুই স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিলো। বিয়ের ১০ বছর পরেও আজ মনে হচ্ছে সিদ্ধান্ত টা ভুল করিনি, আবিরকে সুযোগ দিয়ে। সে সত্যি বদলে গেছে। সত্যি সে অভিযোগের কোনো সুযোগ দেয়নি। সত্যি আজ নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হয়। হুম দিন শেষে ভালোবাসার জয় হয়েছে।