হায় হালুয়া

হায় হালুয়া

নিজের বউয়ের প্রেমে পড়া ঠিক না! পড়লেও বুঝতে দেয়া উচিৎ না। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত রিহানের আম্মু বুঝে গেছে । এখন ভাব ধরছে, এমন ভাব যে কাছে ঘেষতে দিচ্ছে না।

রিহানকে পড়াতে বসে গেছে। ছেলেকে পড়াবে ভালো কথা, কপালে এমন কালো টিপ পরার দরকার কী ? ঠোঁটে এমন সর্বনাশা লিপস্টিক দেওয়ার কারণ কী ? হাতা কাটা ব্লাউজের সাথে মেরুন রঙা শাড়ী পরার উদ্দেশ্য কী ? কাজলটানা চোখে কেমন করে যেন তাকাচ্ছে। ঘোর লাগা মাতাল ভাব ধরেছে আর আমি জ্বলে পুড়ে মরছি। এমন নির্দয় নিষ্ঠুর বউ আর দেখি নাই। স্বামী তৃষ্ণায় মরে আর বউ জল নিয়ে খেলে। মনের অজান্তেই বিরহ কাতর হৃদয় গেয়ে উঠলো, আমাকে পোড়াতে যদি এতো লাগে ভালো জ্বালো আগুন আরো জ্বালো, ঢালো আরো ব্যথা ঢালো।”

গান শুনে রিহানের আম্মু ঠোঁট চেপে হাসছে। কিশোরী মেয়েরা চারপাঁচটা ছেলে পেছনে ঘুরিয়ে যেভাবে হাসে তেমন ঢংগী হাসি। বখাটে হতে ইচ্ছে করছে কিন্তু একমাত্র জনতা রিহানের জন্য কিছুই করা যাবে না। রিহানকে ভাবতাম আমার দলের লোক এখন দেখি সে বিরোধী দলে নাম লিখিয়েছে। বেঈমান কোথাকার!

মিউচুয়ালি রিহানের আম্মুর কাছে বসতে গেছিলাম, দূর দূর করে তাড়িয়ে দিছে। রিহানের পিছনে দাঁড়িয়ে চোখ মারছিলাম, হতচ্ছাড়ি রিহানের কাছে বলে দিছে। পুত্রের সামনে এই অপমানটা না করলে কি হতো না ? আমার বদ পুত্রও দেখি হাসে! আশ্চর্য, পিতার অপমানে পুত্র হাসে! এ কেমন পুত্র ? এজন্যই কী তোকে ঔরসে লালন করেছি ? সারাবছর পড়ার নামে খবর নাই আজ একেবারে বিদ্যাসাগর হয়ে গেছে। আমাকে বলে,

– বাবা এখানে ঘুরঘুর করছো কেন?
– কী পড়িস দেখি।
– দেখতে হবে না যাও এখান থেকে, ডিস্ট্রাব হচ্ছে।

হায়রে নিঠুর দুনিয়া। পুরুষ হয়েও পুরুষের দুঃখটা বুঝলি না! ধুর কিছুই ভালো লাগছে না। যাই রান্না ঘরে হাঁড়ি পাতিল নিয়ে কিছুক্ষণ ঘটরঘটর করি গিয়ে। কোন ভাবে কিচেনে আসলেই হয়। অন্তরে আগুন জ্বালিয়ে তামাশা দেখার মজা দেখাবো। সবচেয়ে ভালো হয় রিহানকে তিফাদের বাসায় পাঠাতে পারলে। কিন্তু হারামজাদা যাবে কিনা কে জানে? চেষ্টা করে দেখা যাক,

– রিহান তোর কিন্তু গ্রুপ স্টাডি করা উচিত, গ্রুপ স্টাডি করলে পড়া বেশি মনে থাকে।

গ্রুপ স্টাডির কথা শুনে রিহানের আম্মু কেমন করে যেন তাকাচ্ছে। যেন ছেলেকে আমি সিগারেট অফার করেছি। আরে সমবয়সী বান্ধবীর সাথে পড়াশোনা করলে ক্ষতি কী ? তাছাড়া তিফার আম্মু অনেক যত্ন নিয়ে পড়ায়। রিহান তিফাদের বাসায় যেতে খুবই উদগ্রীব। কোন একটা ছুতো পেলেই সে তৎপর হয়ে উঠে। আজও এর ব্যাতিক্রম হলো না। বলার সাথে সাথেই সে বই ব্যাগ নিয়ে রেডি। রিহান দরজা খুলে গ্রুপ স্টাডি করতে চলে গেছে। আমি হাত তালি দিয়ে গানে টান দিলাম, একেলা পাইয়াছি রে শ্যাম পালাইয়া যাবি কোথায়? চৌদিকে ঘিরিয়া রে রাখবো এই নিঠুর বনে আজ পাশা খেলবো রে শ্যাম!” রিহানের আম্মু আমার উৎসাহ উদ্দীপনা দেখে হাসছে। ভয় ও আনন্দের মিশেলে অদ্ভুত রহস্যময় হাসি।

কিন্তু হায়, খোলা দরজা দিয়ে আরেক উপদ্রব এসে হাজির হয়েছে! বিলুপ্তপ্রজাতির প্রাচীন ম্যামথ গোত্রীয় প্রাণী তিন তলার মুটকি ভাবি এসে উপস্থিত! একি বিপদ!! মুটকি ভাবি রিহানের আম্মুর জন্য হটপট ভর্তি করে হালুয়া নিয়ে এসেছে। মূলা, গাজর আর শালগমের ককটেল হালুয়া। আমাকেও খেতে ডাকছে! এই অবিবেচক মহিলা দুনিয়ার সব উদ্ভট খাবার বানায়। এসব হাবিজাবি খাবারের ভয়ে তার হাসবেন্ড বেচারা বাসায় আসে না। এখন আমাকেও তাড়াতে চাইছে। মুটকি তোর হালুয়া তুই খা! আমি গেলাম!

আজ আর পাশা খেলা হবে না। যাই তিফাদের বাসা থেকে একটু ঘুরে আসি। সময় সুযোগ হলে তিফার আম্মু সাথে মানব সভ্যতার উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে দু’চারটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলবো। অরিজিন অব স্পিসেস সম্পর্কে তিফার আম্মুর অগাধ জ্ঞান। আর জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক নর নারীর জন্য অতি আবশ্যক। মানুষ জ্ঞান অর্জন করতে ইউরোপ যায় আমি একটু পাশের বাসায় গেলে অসুবিধা কী ?

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত