ক্লাস ফাইভে পড়ুয়া ছেলে ‘টলু’, আমার ভাই। ওর প্রাইভেসি দেখে আমি আজকাল মুগ্ধ! প্রতিদিন স্কুল যাবার আগে তার টেবিলের ড্রয়ারে তালা মেরে যায়। আম্মু খাওয়ায়ে দিতে আসলে ভাব মেরে নিজেই খাওয়া দাওয়া শুরু করে!
আম্মু চুল আচঁড়াতে আসলে-ভ্রু কুঁচকে নিজেই সেই কাজটা সেরে নেয়! যদিও তার আচঁড়ানো মোটেও ঠিক হয়না!
হঠাৎ এর এই আমুল পরিবর্তনে আমরা সবাই মুগ্ধ! আজকে রুমে এসে দেখি আমার পারফিউম গায়ে মাখছে সে! দেখেই আমি হতমত খেয়ে গেলাম! জিজ্ঞেস করায় বলে,
” আপু, স্কুলে ফাংশন আছে। পারফিউম না মাখলে ফাংশনে এলাউ করবেনা। ” আমি হাসি নিবারণ করে বললাম,
” তা ভাই টলু, কিসের ফাংশনে যাচ্ছিস? ”
” আপু,পরে এসে বলবো।এখন যেতে দে তো! ” আমি চোখ পাকিয়ে বললো,
” তাই বলে তুই আমার পারফিউম কেন মাখছিস!ছেলেরা মেয়েলী পারফিউম মাখে নাকিরে বলদ! ” টলু শুনে না, দৌঁড়ে চলে যাচ্ছে আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষন হাসলাম!
পরদিন রুমে এসে বলে, ” আপু শোন, মেয়েরা কোন জিনিস খুব বেশি পছন্দ করে? আমি তো থ! কথা আসেনা মুখ দিয়ে! তাও বললাম, ” কেন ভাই?তুই জেনে কি করবি?” ভাই ভ্রু কুঁচকে বললো, ” বল? দরকার আছে! আজকাল বড্ড বেশি প্রশ্ন করিস তুই!” আমি চোখ সরিয়ে নিয়ে গম্ভীর স্বরে বললাম, “ফুল,চকোলেট,আইসক্রিম কমন।” ভাই রকেটের গতির মতো করে আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিয়ে বলে উঠে, ” আপু থ্যাংকু অনেক হেল্প করলি তুই আমার! আই লাভ ইউউউউ! ” কিছুদিন পর. পড়াতে গিয়ে দেখি টলুর খাতা ও বইয়ে (T+R) লিখা! শুধু এক পেইজে না প্রতিটা পেইজের কোণায় গুটি গুটি করে এটাই লিখা! হায় আল্লাহ্! এসব কি! এই পিচকু আবার টলু আসলো আমি বললাম, ” কিরে অংক সলভ করা হয়েছে? ”
— আপু… টেনশনের চাপে কি আর পড়া যায়! জীবন আমার মরুভূমি করে দিছে একদম আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝতেছিলাম না! খানিক কৌতূহলোদ্রেক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ” ভাই! তোর জীবন মরুভূমি হয়ে গেছে বুঝি? তা, কে করলো?”
— তুই এতো কিছু জেনে কি করবি? তোর কাজ কি? আমাকে অংক করানো। এর বাইরে আম্মু তোকে আর কোনো কাজ দিছে? এমন পটপট করিস ক্যাঁন? পড়া! (দুই ভ্রু,কপাল বিরক্তে তার ভাঁজ হয়ে কুঁচকে আছে)
টলুর থেকে আমি পুরো ৬/৭বছরের বড়। তাও সে আমাকে এইভাবে শাসন করলো বিধায় ভালোই লাগলো! হাসিও পাচ্ছে খুব! এরপর থেকে টলুকে ফলো করি রোজ! এ কি করে না করে সব দেখতে চাই আমি!
একদিন হঠাৎ দেখি আম্মুর ফোনে মেসেজ এসে রয়েছে দেখলাম.. ৫টা মেসেজ। মেসেজগুলোতে পুরো পাক্কা রিলেশন টাইপ এডাল্ট কথাবার্তা! আমিতো পুরো ‘থ হয়ে ‘ব হয়ে গেলাম এই কান্ড দেখে! টলুর নিজের ফোন নেই তাই আম্মুর ফোন দিয়েই আমি যখন আমার ফ্রেন্ড তানভিনের সাথে এগুলো নিয়ে কথা বলে হাসাহাসি করতেছিলাম তখন দেখি দুইহাত ভাঁজ করে রাখা-রাগে, জ্বলজ্বল করা ভাই আমার, একদম সামনে এসে হাজির! আমিতো ভাবলাম,” এইরে সারছে! ” পিচকু কিছু না বলে হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় আমাকে তার রুমে। আমি বললাম, ” কি রে টলু?” সে কান্নার স্বরে বলতে লাগলো, ” আপ্পি,মাছের কাঁটাগুলো বেছে দেনা। খেতেই পারতেছিনা। ” টলু মাছ বেশ পছন্দ করে। তাও এতদিন নিজে নিজেই কষ্ট করে বড়-বড় ভাব দেখিয়ে নিজে নিজেই খেয়েছে! আজ আর পারছে না কারন আজ ইলিশ মাছের ঝোল। কাঁটা বেছে দিয়ে ভাইকে আদর করে খাইয়ে দিতে দিতে ভাবলাম, ” সেদিনের সেই টলু মলু গোলু আজ কত্তো বড় হয়ে গেছে! ”
– নাহ্! আমি অনেক বড় হয়ে গেছি। এবারে সে চুপচাপ হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে খুব কষ্ট নিয়ে বলছে,
” আপু জানিস! জীবনটা আমার একদম তেজপাতা আর কাজুবাদাম হয়ে গেছে। কিছুই ভালো লাগেনা। ”
এই বলে জানালার দিকে এক নিথর দৃষ্টিপাত করলো। আমি তা দেখে খাবার হাতে রেখেই অট্টহাসিতে ভেঙে পড়লাম! টলু রেগে আগুন হয়ে খাওয়া শেষ না করেই চলে গেলো। ও চলে যাচ্ছে কিন্তু আমি যে মানা করবো বা আটকাবো তারো হদিস নেই আমার! চরম হাসি পাচ্ছে! চরম! ও এগুলা কিভাবে বলে! শিখলোটা কই! হাহ্ হা হা! এভাবেই একদিন দেখতে দেখতে ভ্যালেন্টাইন ডে চলে আসলো আমার ফাইনাল এক্সাম সামনে, দরজা বন্ধ করে বেশ গভীরভাবে-আয়োজন করে পড়াশোনা করছি!
ভ্যালেন্টাইন? তাতে আমার কি! (এমন একটা বাহাদুরি ভাব নিয়ে পড়তেছি, একেবারে দরজা অফ করেই শুরু করে দিয়েছি!) হঠাৎ দরজায় এসে নক দিলো কেউ। আম্মু খালামণির বাসায়, আব্বু স্কুলে আছে শুধু টলু। বাদরটা এখনো প্রাইভেটে যায়নি এই ভেবে বেশ রাগী রাগী মুড নিয়েই দরজা খুললাম আর খুলেই দেখলাম, ” ভাই আমার নতুম দুলা সাজ সেজে আমার আমার সামনে এসে হাজির!
” ঈদে আমার দেওয়া গরজিয়াস শেরোয়ানিটাই আলমারি থেকে নামিয়ে পড়ে নিয়েছে! লাল টুকটুকে ভাইয়ের দিক থেকে চোখ সরাতেই কষ্ট হচ্ছে আমার! ভাই এসব অনুভূতিকে নষ্ট করে দিয়ে বললো, ”তোর পারফিউমটা দে তো। আর তোর চুলের জেল আছেনা? ঐদিন দেখলাম মাখছিস ওটাও দিস। ” ( একটা বড় বড় ভাব,মনে হয় যেনো ওর চেয়ে আমি বয়সে ছোট) আমি আর কিই বা করবো…বড় ভাইয়ের আদেশের মতো “যথা আজ্ঞা” বলে তার কথা শুনে সব সামনে এনে দেওয়ার পর আমার ড্রেসিংটেবিলেই সাজুগুজু করে বলে, ” আপু? আমাকে কেমন দেখাচ্ছে? আজ আমার জীবনের একটা অনেক বড় কাজ! ”
— কি কাজ?
” রিয়াকে আজ প্রপোজ করবো! ও accept করবে তো? ” আমিতো কথা শুনে পুরো হকচকিয়ে গেলাম! শুধু জ্ঞান হারানোটাই বাকি! হায়রে দিনকাল আমিই আজো বয়ফ্রেন্ড জোগাতে পারলাম না আর আমার সেদিনের জন্মানো সেই পুচকে ভাই টলু রিলেশন পাকা করতে যাচ্ছে!