উপন্যাসের বই

উপন্যাসের বই

~ তুমি এখানে কেন?

-কেন আবার পাত্রি দেখতে আসছি। আমার কি বিয়ে করার শখ নেই।

-হুম তা আছে। তবে আমাকেই কেন দেখতে আসতে হবে?

-বাহ্ রে আমি কি জানতাম নাকি যে পাত্রি তুমি।

-ওহ তুমি জানো না কিছু হে? বিয়ে করতে আসছো? ইতু আমার কলার ধরে জোর গলায় বললো,

-সত্যি আমি জানতাম না। বাবা বলল,আমাকে বিয়ে করাবে। তাও আবার তার বন্ধুর মেয়েকে। তুমি তো জানোই আমি বাবার কথার অমুল্য করতে পারি না। তাই বাধ্য হয়েই আসলাম পাত্রি দেখতে!

-তাহলে তুমি যদি জানতে পাত্রি আমি তবে আসতে না তাই তো?

-না মানে ঠিক তা না,

-আমাকে আর মানে বুঝাতে হবে না। আমি সব বুঝি। আমি তোমাকে বিয়ে করবো না। এখনি বাবাকে বলছি। এ বিয়ে ভেঙে দিতে।

-সে তোমার ব্যাপার। যা ইচ্ছে করতে পারে,

-হ্যা তাই করবো

বলে ইতু হনহন করে রুম থেকে বের হয়ে গেল। ইতু আমার গার্লফেন্ড। ঠিক গার্লফেন্ড না তার আগে আরেক টা শব্দ আছে লাগানো। সেটা হল এক্স। শব্দ সত্যি ভয়ংকর জিনিস। যা মানুষকে জ্বালিয়ে ঝারকার করে তুলে।

ইতুর সাথে আমার প্রথম দেখা হয় একটা বই মেলায়। সেদিন আমি ইহুদি কন্যা উপন্যাস টার জন্য প্রত্যেক টা দোকান ঘুরছিলাম কিন্তু কোথাও তা পাচ্ছিলাম না। অবেশেষে মেলার এক কোনে ছোট একটা দোকানে গেয়ে দোকানি কে বললে তিনি বলেন আছে। তারপর বের করে আমার হাতে দিবে। তখনি একটা মেয়ে এসে দোকানির হাত থেকে ছু মেরে বইটা নিয়ে নেই। তার ব্যাগ থেকে টাকা বের করে দোকানির হাতে দিয়ে চলে আসতে থাকে। আমি বোকার মতো তার দিকে তাকিয়ে আছি তখনো। মেয়েটা চলে যাচ্ছে। আমি দোকানি কে বললাম, আমাকে একটা দিতে দোকানি জবাব দিল, এই বই এক পিচ ছিল। আর নেই তার কাছে। এমন কি আর কোন দোকানে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। আমি আর কিছু না ভেবে। মেয়েটা কে পিছন থেকে ডাক দিলাম। মেয়েটা আমার ডাকে শারা দিলে আমি তার কাছে এগিয়ে গিয়ে বললাম,

-আপু বই টা আমি আগে বলেছিম আমাকে দিতে মাঝখানে আপনি এসে নিয়ে নিলেন । আর এই বইটা একটায়। সো এটা আমার লাগবে?

-আপনার লাগবে মানে? এটা আমি নিয়েছি দেখেন নি?

হুম দেখেছি তবে বইটা আমার খুব পছন্দের। এটার জন্য বেশ কিছুদিন ধরে ঘুরছিলাম কিন্তু পাচ্ছি না। আর যখন পেলাম তখন আপনি এসে নিয়ে নিলেন? কিন্তু এটা তো আমারো পছন্দের কি করা যায়? কি আর করবেন আমাকে দিয়ে দিতে হবে যে? অসম্ভব এটা দেওয়া যাবে না আপনি বরং আমাকে দিয়ে দিন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে যখন কোথপকথন হচ্ছে তখন আমার দিদি এসে বলে, কি হয়েছে আবির? আমি দিদি কে সবটা বললাম। মেয়েটাও দিদিকে বললো। তার পর দিবি বললো জটিল ব্যাপার দুজনের পছন্দের বই। তবে তোরা একটা কাজ করতে পারিস। আমরা দুজন এক সাথে বলে ওঠলাম, কি কাজ দিদি? দিদি বললো তোরা আগে একজন বইটা নে। নিয়ে পড় তার পর আরেক জন নিস কেমন। যেহুতু বই একটায়।

তখন আমরা দুজন দিদির কথায় সম্মতি দিলাম। সিগ্ধান্ত নিলাম আগে মেয়েটা মানে ইতু নিবে। মেয়েটার নাম ইতু। তার দুদিন পর আমাকে দিবে। ইতু আমার ফোন নাম্বার নিয়ে গেল। তার পড়া শেষে আমাকে ফোন করে বলবে আমি বইটা নিব। দুইদিন পর ইতু আমাকে ফোন দেই। বই আনতে যেতে বলে। আমি তার ঠিকানো অনুযায়ি গেলাম বই আনতে। ইতু বই টা আমার হাতে দিয়ে বলে, বইটা কিন্তু অনেক ভাল। আপনার পড়া শেষে আমাকে আবার দিবেন কিন্তু। সেদিন ইতুর সাথে এ নিয়ে অনেক কথা হয়। জানতে পারি সে কি করে কোথায় থাকে? আমার ঠিকানা দেই। এক পর্যায়ে আমরা বন্ধুত্ব হয়ে গেলাম।

ভাল চলতে থাকে আমাদের বন্ধুত্ব। তবে এর মাঝে সবসময় আমরা বই টা রাখতাম। পার্কে লেকের ধারে বসে দুজন বই পড়তাম। এমন কি রিক্সা দিয়ে ঘুরার সময় বই নিয়ে গল্প করতাম। এক জন অন্য জনের কে প্রিয় চরিত্রর কথা জানাতাম। এবাবে কাটে বেশ কিছু দিন। আস্তে আস্তে আমরা একজন আরেক জনের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ি। বই বাদে ফোনে ফেইস বুকে সারাক্ষন গল্প করি। দুজন দুজনের পছন্দ অপছন্দ কে শেয়ার করি। এমনও দিন গেছে আমরা ফোনে অথবা ফেইস বুকে গল্প করে রাত পার করে দিছি। খুব ভাল বুঝা পরা ছিল আমাদের। একদিন আমার কাজিন নিলা কে নিয়ে লেকের পাড়ে বসে গল্প করতেছি। তখন ইতুও আসে তার বান্ধবীদের নিয়ে।

আমাকে আর আমার কাজিন কে ফলো করে অনেকক্ষন সেদিকে আমার খেয়াল ছিল না। আমরা যখন লেকের ধার থেকে ওঠে আসবো তখন ইতু আমাদের সামনে এসে কোমরে দুহাত দিয়ে রাগান্তি অবস্থায় আমাকে বলে মেয়েটা কে? জবাব দেই আমার কাজিন। কিন্তু আমার কাজিন পাশ থেকে বলে কাজিন মানে? আমি না তোমার গার্লফেন্ড! ইতু তার কথা শুনে রাগে কটমট করে বলে, কি গার্লফেন্ড মানে, আপনি জানেন ইনি আমার বয়ফেন্ড। আমি ইতুর কথা শুনে বোকার মতো তাকিয়ে থাকি। কাজিন যখন আবার বলে, আমি তার বয়ফেন্ড। আমাকে প্রেম অনেক দিনের। তখন ইতু তার গালে কষে থাপ্পড় মেরে বললো

-আবির শুধু আমার এর দিকে কেউ চোখ দিলে চোখ তুলে নেব। তখন কাজিন হাসতে হাসতে বললো
-আমি বুঝতে পেরেছিলাম

আপনি আবির ভাইয়ার এমন কিছু হবেন। কিন্তু ভাইয়াকে জিজ্ঞাস করলে কিছুই বলতো না তাই টেকনিক করে জেনে নিলাম। এখন কি করবা ভাইয়া আমাকে এখন ট্রিট দিতে হবে চল রেস্তুরেন্টে। কাজিন ইতু ইতুর বান্ধবী সকলে মিলে সে দিন পার্টি করি। টাকা কিন্তু সব ইতুই দেই।

সেই থেকে ইতুর সাথে চলে আমার প্রেম। খুব কেরিং আর মায়াই বাধা ছিল আমাদের সম্পর্ক। আর এই প্রেমের আরেক টা অংশ ছিল উপন্যাসের বইটা। আমরা দেখা করলেও বই নিয়ে আসতাম। সেই সুবাদে এক সময় আমার কাছে আর এক সময় ইতুর কাছে থাকতো বই।সেই বার পালা মাফিক আমার কাছে ছিল বই। আমি বইটা নিয়ে ইতুর সাথে দেখে করতে আসি রিক্সা করে। হঠৎ কোথা যেন বইটা পড়ে যায বুঝতে পারি না। ইতুর সাথে দেখা করে কথা বলতে বলতে বই এর কথা চলে আসে। ইতু বই টা চায়। কিন্তু আমি দিতে পারি না। খুঁজতে থাকি বই। তখন ইতুকে বলে যে মনে হয় হাড়িয়ে ফেলেছে। এই কথা শুনে ইতুর সে কি রাগ!

পুরো রাস্তা আমাকে দিয়ে বই খুঁজালো। কিন্তু বইটা আর পায় নি। তারপর ইতি আমাকে সময় দেয় দুদিনের। এর মধ্যে বইটা বের করে দিতে। না হয় সমপর্ক রাখবে না আমার সাথে। যে একটা বই আগলে রাখতে পারে না। সে নাকি তাকে কি করে আগলে রাখবে?প্রশ্ন জাগে ইতুর মনে। জাগাড়ো কথা বটে। দুদিন পর আবার দেখা হলে বই না দেওয়াই আমার সাথে ব্রেকাপ করে ইতু। সব সম্পর্ক বন্ধ করে দেই একটা উপন্যাসের বই এর জন্য। খুব ভেঙে পড়ি তখন। মেনে নিতে পারি না। একটা বই এর জন্য এমন হয়েছে। অনেক বুঝাবার চেষ্টা করি কিন্তু বুঝাতে ব্যার্থ হলাম।

প্রায় দু মাস আমাদের কোন যোগাযোগ নেই। আমার অবস্তা হয়ে পড়ে ভয়াবহ। তখন বাবা আমার কথা ভেবে। সিগ্ধান্ত নেই বিয়ে করাবে। আর সেই জন্য আমাকে নিয়ে এল পাত্রি দেখাতে। যদিও বিন্দু মাত্র আক্ষেপ ছিল না আমার। ইতু নিচে নেমে কি জানি বলবো। আমি আসতে একটু লেট হওয়াই শুনতে পায় নি। বাবা আমাকে নিয়ে চলে এল বাসায়। আমাকে বললো না কি হয়েছে এবাবে হুট করে চলে আসলো কেন? আমি জানতে চাইলেও বলে নি। আজ সকালে বাবা আমাকে জামায়ের পোশাক দিয়ে গেল। বলল জামাই সেঁজে আসতে। আজ নাকি আমার বিয়ে।

কথাটা শুনে বুকের ভেতর বুক করে ওঠে। মনে পড়ে ইতুর কথা। কিন্তু বাবার সম্মান আর ইতির প্রতি অভিমান করে আমি বিয়ে করতে চলে আসি। আর এসেই দেখি ইতুর সাথেই আমার বিয়ে। বিয়ের কাজ শেষে আমরা বাড়ি ফিরি। এখন বাসর ঘরে সামনে দাড়িয়ে আছি সাহস হচ্ছে না ঘরে ঢুকার যদি ইতু নেগেটিভ কিছু করে।ভয় ভেঙে ঘরে ঢুকতেই ইতু বললো আগে আমার বই এনে দিবে পরে হবে সব।না হয় বিয়ে হলেও আমাদের মাঝে ব্রেকাপ চলবে। আল্লাহ বই এখন কই পাব তুমি বল? সবাই দোয়া করবেন যেন বইটা দ্রুত পায় সে সাথে ইতুর ভালবাসাও আবার পায়।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত