না বলা কনভারসন

না বলা কনভারসন

রাত তখন ৩টা বাঁজে,আইডি এমনিতেই চ্যাট অফ করা থাকে আমার।রাত তিনটার পর অন করি। এক বছর ধরে এভাবেই চলে,কোনদিন কেউ জিজ্ঞেস করে না এতো রাতে কি করেন?আজ করেছে। আমি চ্যাট অন করি ১০ মিনিটের জন্য,তারপর আবার অফ করে রাখি,আজ অফ করার পর পরই ম্যাসেজ,

-নিশ্চুপতা বুঝেন?’ আমি কিছুক্ষণ ভেবে নিলাম,উওর দিব কি না।তারপর ইচ্ছে হলো,মন সায় দিলো।
-হ্যাঁ….কঠিন একটা ভালো লাগা;আর এটা একান্তই আমার কাছে।’
-বুকটার ভেতরে এতগুচ্ছ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে হাঁসি মুখে থাকেন!ভয় করেনা?’
-ভয় কি করে হবে,আমি সবার থেকেই এটা লুকাই,স্পেশাল কেউ নেই এতে!তাই ভয় হয়না।যারা আছে তারা দীর্ঘশ্বাস এর মানে বুঝেনা,বুঝে স্বার্থ।’

-ওপর থেকে আপনাকে দেখে কেউ বুঝবেইনা আপনার ভেতরে কতটা পাহাড় সমান দীর্ঘশ্বাস জমে আছে।সিগারেট খাননা,দাড়িতো নেই,চুল ঠিকঠাক গুছানো।’

-আমি কি সবাইকে দেখাব আমার ভেতরে এতগুলো দীর্ঘশ্বাস জমা?কষ্ট পাই বলে অগোছালো থাকব,চুলগুলো বড় করব,দাড়ি কামাব না।মানে ছ্যাকামার্কা হয়ে থাকাব?আমি পাগল না হ্যাঁ!’
-ভেতরে ভালোলাগা এখনও কাজ করে নাহ্?’

মেয়েটার এমন কথায় চুপ থাকি আমি,সিন করে রেখে দেই।আবার ভাবি,কে এই মেয়ে?এতটা খোঁজ নিয়ে আমাকে চমকাচ্ছে। ফোনটার স্ক্রিন এর আলো বন্ধ হয়ে যায় ভাবতে ভাবতে।তাঁর কিছুক্ষণ পর ফোনটা কেঁপে উঠে,বুঝতে পারি ম্যাসেজ এসেছে। লকটা খুলে দেখি মেয়েটা লিখেছে,

-উওর দিন,নয়ত ঘুমাবেন!’ আমি আবারো চুপ থাকি,সিন করে কিছুক্ষণ ভাবি,তারপর রিপ্লাই দেই!

-ভেতরটা কখনও পুড়ে না,ভালো লাগা সবার মাঝে সব সময়ের জন্যই থাকে!আমরা বলি না,আর ভালো লাগা কাজ করে না রে কারো ওপর!এটা মারাত্মক ভুল।ভালো যখন তখন লাগতে পারে।কিন্তু এটা বলতে পারেন যে,ভালো সবাইকে বাসা যায় না।’

-তার মানে এখনও ভালো লাগা আপনার ভেতরে আছে?’
-থাকবে না কেন?ভেতরের মন এর সাইজ মতো কোন মেয়ে হলেই ভালো লাগে!তবে বেশি সুন্দর,কালো এটা তফাৎ না।ভালো লাগার মতো ভাব থাকতে হবে মুখভঙ্গিতে।সুন্দর ফ্যাক্ট না।’

-গল্প গুলোর মতো নাহ্?
-হ্যাঁ,কারণ মন এর সাইজ মিলিয়েই গল্প গুলোতে কারো চরিত্র দেওয়া হয়।আর টোল পড়া মেয়ে গুলো বরাবরই সুন্দর হয়!ভেতরে একটা ভালো লাগা কাজ করে।’

-ইতুর কথা মনে পড়ে নাহ্ এখনও?’
-পরে,কারণ বন্ধুত্ব করতে না পারার ব্যার্থতাটা আজও বড্ড দীর্ঘশ্বাস বয়ে আনে।’
কথাটা বলে কিছুক্ষণ চুপ রইলাম!কি করছি আমি?কে এই মেয়ে,সব কিছু বলে দিচ্ছি।
-আপনি কে বলবেন?এতো কিছু আপনাকে কেন বলছি আমি?’
-প্রশ্ন করা বাদ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন,মাথা ব্যাথা করার পরও রাত জাগেন!এই বদ অভ্যাসটা চেঞ্জ করেন।’
-আপনি কে বলবেন কি?’

আর কোন রিপ্লাই পাই না আমি,সিনও হয় না। সকাল ৮ টায় আবির ডেকে তুলল,বলল ওদের কলেজ যেতে হবে।কিন্তু আমার আজই আবার ঢাকা ফিরতে হবে।রাতে রওনা হবো!কোথাও যেতে ইচ্ছে করছিলো না,তারপরও আবিরের জোরাজোরিতে রেডি হয়ে নিলাম। আসলে কলেজটাতে গেলে আমার দীর্ঘশ্বাসগুলো বাড়ে,ইতুর কথা মনে পড়ে।দুইটা বছর এই কলেজে কাটিয়েছি,অনার্সে এসে ঢাকায় ভর্তি হলাম। রেডি হলাম ঠিকই,কিন্তু যাওয়া আর হলো না,বিকেলে নাকি ইভেন্ট! তাই বিকেলে ব্যাগটা নিয়েই বের হলাম,আবির এর ইভেন্ট শেষ করেই ওই পথে ঢাকা চলে যাব। ব্যাগটাতে কিছুই নেই,কিছু দরকারি কাগজপত্র!আর ইতুর গিফ্ট।কিনেছিলাম দিব বলে,কিন্তু দিতে পারিনি। এই কলেজটা এলেই কেমন জানি একটা শূণ্যতা কাজ করে ভেতরে।

-কিরে চল ভেতরে!’ আবির এর কথায় চমকে উঠি,তারপর ‘হু’ স্বরূপ কিছু বলে ভেতরে যাই। ব্যাগটা কাধে রাখতে কেমন জানি লাগছিলো,এদিকে ইভেন্ট এর দায়িত্ব পড়েছে আবির এর সঙ্গে সঙ্গে আমারও।বড় ভাই ছিলে কতগুলো আগে থেকেই।

-দে ব্যাগটা,আমি রেখে আসি এক জায়গায়।’
-ব্যাগে কি আছে নিশ্চই জানিস,সো ভেবে চিন্তে রাখবি!কারো হাত যেন না পড়ে।’
-হ্যাঁ জানি জানি,টেনশন করার দরকার নেই।’

ইভেন্ট এর কাজ শেষ করলাম পাঁচটায়।তারপর সোজা কলেজ গেইট।হঠাৎ কিছু শূণ্য লাগছিলো,মনে পড়ল ব্যাগের কথা। আবির কে বললাম,

-ব্যাগ কই?’
-ওহ্,ওয়েট কর আনাচ্ছি।’

আবির সেই যে গেল আর আসার নাম গন্ধ নাই,রিক্সা কাছেই ছিলো,উঠে বসলাম;যেন ব্যাগটা পাওয়া মাত্রই রওনা হতে পারি। আরো সাত মিনিট গড়ালো।নাহ্,কোন খোঁজ নেই সালার। রিকসাওয়ালা মামাকে যেতে বললাম,সে চলে গেলো। ফোন বের করে আবিরকে ফোন দিলাম,কিন্তু ফোন তুলল না!অনেক রাগ হচ্ছিলো,তার সাথে ভয়।বুকের বাম পাশে একটা মৃদু চিনচিন ভাব!

-তোরিও!’

পেছন থেকে ডাক পাওয়া মাত্রই পিছু ফিরে তাকিয়ে দেখি ইতু!অবিশ্বাস্য একটা অনূভুতি হলো ভেতরে।সাথে ঠোটের কোণে মৃদু এক উল্লাসের হাঁসি। ইতু কাছে এলো ডাক দেওয়ার কিছুক্ষণ পর!তারপর কাছে এসে ব্যাগটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,

-চলে যাচ্ছেন শুনলাম,আর সরি!আমি একটু গুরুদাসপুর গিয়েছিলাম একটা কাজে।আর ব্যাগটা আমার কাছে রাখতে বলেছিল আবির।’

-আচ্ছা তাহলে আসি,আবির কই আছে জানেন?’
-না,তবে আপনার সামনে আপাতত আসবে না এটা কনর্ফাম।আচ্ছা তাহলে ভালোভাবে যাইয়েন,হ্যাপি জার্নি।’
যদিও ইচ্ছে করছে সময়টাকে থামিয়ে দেই!তারপর ফার্স্ট ইয়ার থেকে বন্ধুত্ব ঘিরে যতো কথা ছিলো তা একদিনে বক বক করে বলে দেই।কিন্তু আমার এই নিশ্চুপতা যে আমাদের ‘তুই’তে দেয়াল হয়েছে প্রথম থেকেই।মন খুলে কিছু বলার সাহসটা দেইনি!দুইটা বছরের স্বপ্ন বুকের এক কোণে মাঝে মধ্যেই ব্যাথা অনুভব করায়।দুইটা বছরে নাম কি,কেমন আছেন!এর কোনটাই বলতে পারিনি।এটাই ব্যার্থতা।

-তোরিও,তোর ব্যাগটা চেক করে নিলি না?’

ইতুর মুখে ‘তুই’ শব্দটা শুনে থমকে দাড়াই। কিছুক্ষণ চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম নিচের দিকে তাকিয়ে!কারণ আমার ঠোটের এক কোণে কিছু পূর্ণতার হাঁসি!জানি ব্যাগে গচ্ছিত গিফ্টটা যাকে দেবার জন্য কিনেছিলাম,তার হাতে সেটা এক বছর পর পৌঁছে গেছে। আমি ইতুর দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকাই,ইতু হাঁসে ছোট্ট করে।আর ওর বাম পাশের গালটাতে ছোট্ট করে টোল পড়ে। আর কিছু বলি না আমি,চুপ থাকি!কারণ চুপ করে দেখার মাঝেও একটা আলাদা ভালো লাগা কাজ করে….

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত