– ভাইয়া তুই নাকি আমার বান্ধবী বৃষ্টি কে প্রেমের চিঠি লিখেছিস ? আজকে তোর খবর আছে , আমি এখনই মায়ের কাছে বলবো । ( ছোট বোন মাহী )
– কে বলেছে ? (আমি)
– বৃষ্টি নিজে সেই চিঠি আমার কাছে দিয়েছে, আমি যত্ন করে রেখে নিয়ে আসছি । তোর কাপড় চোপড় গুছিয়ে বসে থাক এ বাড়িতে আজকে তোর শেষ দিন ।
– ফাজলামোর কথা বার্তা বলবি না , তোর বান্ধবীকে আমি চিঠি দেবো কেন ?
– চিঠি দেবার উদ্দেশ্য তো চিঠির মধ্যে লেখা আছে ।
– কোই দেখি ?
– পাগল নাকি ? যদি ছিড়ে ফেলাে ?
– কিসের জন্য টাকা দরকার ?
– পিকনিক করবো ।
– কত টাকা ?
– দুই হাজার ।
– এত টাকা ?
– হ্যাঁ , আমি আর আমার বান্ধবীরা ।
– পিকনিক টা কোথায় ?
– আমাদের বাড়ির মধ্যেই , আশেপাশের সব মেয়ে মিলে পিকনিক করা হবে ।
– এবার চিঠি টা দে ।
– আগে টাকা ।
পকেট থেকে ২০০০ টাকা বের করে দিয়ে চিঠি হাতে নিয়ে দেখি সেটা আমার ডায়েরি থেকে কাটা হয়েছে । মেজাজ খারাপ হয়ে গেল কিন্তু ততক্ষণে মাহি চলে গেছে আমার ধরা ছোয়ার বাইরে । গ্রামীন সীমের মিনিট নেবার জন্য ১৯৯ টাকা বিকাশ থেকে রিচার্জ করতে হবে ।
মোবাইল হাতে নিয়ে নাম্বার টিপেই ফ্লেক্সিলড করে নিলাম । বিকাশের মেসেজ আসলো কিন্তু ফ্লেক্সিলড এর মেসেজ আসলো না । ব্যালেন্স চেক করে দেখি ১ টাকা ৫৪ পয়সা আছে । পুনরায় মেসেজ চেক করে দেখি নাম্বার একটা ভুল হয়ে গেছে ।
মনটা খারাপ হয়ে গেছে , কারণ এতগুলো টাকা চলে গেছে রং নাম্বারে । তাড়াতাড়ি নাম্বার তুলে কল দিলাম কিন্তু রিসিভ করে না । একটানা ১৭ বার কল দিয়ে মুখ গোমড়া করে বসে আছি আর এমন সময় ভাবির আগমন । আমার দিকে ঝুকে পরে মুখের সামনে মুখ রেখে বললো,
– আমার দেবর টা আজকে এত রেগে আছে কেন বুঝতে পারছি না তো । (ভাবি)
– রাগ নেই কিন্তু মন খারাপ । (আমি)
– ভাবি তার হাতের ফুলকপি টা আমার সামনে ধরে বললো ;- ওগো প্রিয় , তোমার জন্য রান্না ঘর হতে সুভাশ বিহীন একটা ফুল নিয়ে এলাম । গ্রহণ করো প্রিয়, আর তোমার ওই মিষ্টি কন্ঠে উচ্চারণ করে দাও ভাবি তুমি যাও আমি তরকারি কাটতে আসতেছি ৷
– আমি ফিক করে হেঁসে বললাম , আমার এমন একটা ভাবি থাকতে আমার যদি তরকারি কাটতে হয় । তাহলে নিজের কাজের ভাগাভাগি করতে তো নিজেরই একটা বিয়ে করা দরকার ।
– বউকে খাওয়াবে কি শুনি ?
– কেন , ফুলকপি ?
– হিহিহিহি তুমি পারোও বটে , আচ্ছা শোনো যে কারণে এসেছি । তোমার ভাইয়ের কি কোন খবর পেয়েছো ? সপ্তাহ খানিক মোবাইল বন্ধ করে রাখছে কিসের জন্য জানো কিছু ?
– না তেমন কিছু জানিনা ।
– অবশ্য জেনে কি লাভ ? তোমার ভাই তো আমার সঙ্গে কথা বলে না ।
– মন খারাপ করে লাভ নেই , রান্না ঘরে গিয়ে আমার জন্য একটা ডিম সিদ্ধ দিও ।
– তুমি একটু চেষ্টা করো তোমার ভাইয়ের সন্ধান বের করার জন্য ।
– হ্যাঁ ভাবি করছি ।
অনার্স ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র আমি , বড় ভাই আমি আর মাহি আমরা তিন ভাই বোন । বড় ভাই ইন্টারঃ পাশ করার পরে মালয়েশিয়া চলে গেছে, বাবা তাকে পাঠিয়েছে । আড়াই বছর পরে দেশে এসে ভাইয়া নিজের পছন্দের মেয়ে কে বিয়ে করতে চায় ৷ কিন্তু বাবা-মা তাদের নিজেদের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করাতে বাধ্য করে ৷ বিয়ের সপ্তাহ খানিক পরে ভাই গোপনে কাগজপত্র জমা দিয়ে টিকিট কেটে আবার মালয়েশিয়া চলে গেল । মা-বাবা ভাবির সাথে কোন যোগাযোগ ছিল না শুধু মাত্র আমাকে ফোন করতেন সবসময় ৷ পরিবারের খরচের টাকাপয়সা সবকিছু আমার কাছে পাঠিয়ে দেয় ।
ভাবি আমার চেয়ে এক বছরের ছোট হবে কিন্তু সে যেহেতু বড় ভাইয়ের বউ তাই এখানে আর কি তাকে ছোট বলা যায় ? আমার পরিবারের প্রতিটি মানুষের ভালবাসা পেয়েছে কিন্তু স্বামীর ভালবাসা টা তার ভাগ্যে মিললো না । ছোট বোন মাহি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী আর পড়াশোনায়ও অনেক ভালো । কিন্তু এই পৃথিবীতে ওর একমাত্র শত্রু হচ্ছে সাইফুল ইসলাম সজীব । তিনি আর কেউ নয় বরং আমি সেই সজীব ।
মোবাইলের স্ক্রিনে আলো জ্বলে উঠলো , সেই নাম্বার থেকে কল করেছে ৷ তাই সাথে সাথে রিসিভ করে জিজ্ঞেস করলাম , আমার টাকা পেছেছে কিনা ?
কিন্তু অপর প্রান্তের কন্ঠ শুনে আমার টাকা ফেরত পাবার ইচ্ছে টা হারিয়ে গেছে । কারণ সেটা একটা মেয়ের কন্ঠ ছিল কিন্তু আমি জানি মেয়েরা ১০ টাকার বেশি ফ্লেক্সিলড করে না । সেখানে আমি ১৯৯ টাকা দিয়ে দিছি । ও টাকা আর ফেরত পাবো না ।
– হ্যালো । (আমি)
– এ নিয়ে ৫ বার হ্যালো বললেন , এখন কি দয়া করে আপনার পরিচয় দিবেন ? (মেয়ে)
– দেখুন, আমি ভুল করে ১৯৯ টাকা আপনার সীমে রিচার্জ করে দিছি । এখন আপনি যদি একটু আমার টাকা ফেরত দিতেন অনেক খুশি হতাম ।
– আমি কি আপনাকে চিনি ?
– মনে হয় না ।
– তাহলে আপনাকে খুশি করবো কেন ? সরি মিঃ খুশি করতে পারলাম না ।
– আচ্ছা আপনার নাম কি ?
– রুপন্তী । খুব সুন্দর নাম, তাই না ?
– হ্যাঁ খুব ভালো নাম ।
– জানতাম এটাই বলবেন ?
– কিভাবে ?
– যেহেতু আমার মোবাইলে টাকা চলে আসছে তাই আপনি চাইবেন আমার প্রশংসা করে পাম দিয়ে টাকা টা আদায় করতে । কিন্তু আপনার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে , টাকা আমি ফেরত দিতে পারবো না ।
– আশ্চর্য, কেন দিবেন না ?
– এতটাকা আমি ৬ মাসের মধ্যেও রিচার্জ করি না ।
– দেখুন এটা একটা ভুল ছিল ।
– কিন্তু আমার তো ভুল নেই ! ভুল হয়েছে আপনার ।
– আপনি সত্যি সত্যি দিবেন না ?
– হ্যা সত্যি সত্যি দেব না , তবে আপনার শান্তনার জন্য একটা কাজ করতে পারি ।
– কি ? বলেন !
– ১৯৯ টাকা দিয়ে ৩৩০ মিনিট আসছে আমি সম্পুর্ণ টাকা টা আপনার সাথে কথা বলে শেষ করবো । এতে করে আপনার শান্তনা হচ্ছে যে আপনার টাকা আপনি খরচ করেছেন ।
– লে হালুয়া ।
– মানে কি ?
– আমার তো অনেক দরকার ছিল , আর আমি তো সবজায়গা কথা বলবো ।
– গার্লফ্রেন্ড আছে তাই না ?
– নু নু নেভার ।
– মানে ?
– নো নেভার । মানে গার্লফ্রেন্ড নেই ।
– তাহলে এই ৩৩০ মিনিট দিয়ে আমার সাথে কথা বলে দেখুন তো আমাকে পটাতে পারেন কিনা ।
– বয়েই গেলো ।
– কেন মিনিট খরচ করবেন না ?
– না দরকার নেই ।
– শুনন ।
– বলেন ,
– আপনার বাসা কোথায় ?
– বাগেরহাট জেলা ।
– আমার বাসা রাঙ্গামাটি ।
বায় ।
মোবাইল কেটে দিয়ে আবুল হয়ে বসে আছি , প্রথম এমন একটা ভুল করে বসলাম । হাঁটতে হাঁটতে রান্না ঘরে ভাবির কাছে চলে গেলাম কিন্তু গিয়ে দেখি চির শত্রু মাহী সেখানে উপস্থিত ।
– ভাবি বললো, কি ব্যাপার আজকে সাহেবের এত বেশি মন খারাপ কেন ?
– আমি কিছু বলার আগে মাহী পাশ থেকে বলে উঠলো , আজকে হাজার দুই টাকা পকেট থেকে উদাও হয়ে গেছে তাই শোকাহত হিহিহিহি ৷
– আমি বললাম, ভাবি ভুল করে একটা মেয়ের নাম্বারে ১৯৯ টাকা লোড দিয়ে দিছি । এখন সেই মেয়ে নাকি টাকা ফেরত দেবে না ।
– ভাবি বললেন , তাহলে ভুল হলো কিভাবে ?
– তাড়াহুড়ো করে মাদারবোর্ড টিপছি তো !
– মাদারবোর্ড না কিবোর্ড ?
– ওই হলো একটা ।
– চিন্তা করিও না আমি টাকা দিবো ।
– দরকার নেই , আমি ওই মেয়ে কে খুঁজে বের করে তারপর টাকা আদায় করবো । মেয়ের বাড়ি নাকি রাঙ্গামাটি জেলা অবশ্য যদি বন্ধুত্ব করতে পারি তাহলে বেড়াতে যেতে পারবো ।
– মেরে জঙ্গলের মধ্যে পুতে দেবে ।
– কি সাংঘাতিক ।
– এতক্ষণে মাহী বললো , আমি কিছু বলতে পারি ?
– ভাবি বললেন , কি বলবা মাহী ?
– তোমার গুনধর দেবর ইচ্ছে করে টাকা ভুল নাম্বারে দিছে কারণ ওই উছিলায় কথা বলবে ।
– তাহলে তোর সমস্যা কি ? (আমি)
– আমার কিছু না , তবে আমার বান্ধবী বৃষ্টি কিন্তু তোকে খুব পছন্দ করে বিষয় টা মাথায় রাখিস ভাইয়া । (মাহী)
– তোর বান্ধবী একটা পেত্নী । (আমি)
– আর তুই তো একটা লুচ্চা । (মাহী)
– তোমরা চুপ করবা ? (ভাবি)
– আমি গেলাম ভাবি ।
ভাবির নাম লামিয়া মুনতাহা মীম । আমাদের গ্রামের পরে আরো ৪ টা গ্রাম পেরিয়ে তালুকদার বাড়ির মেয়ে । স্বামীর ভালবাসা না পেয়ে প্রতিদিন রাতে একা একা চুপিচুপি কান্না করে । মাহী আর ভাবি এক সাথে ঘুমায় কিন্তু মাহী প্রায়ই দেখতে পায় যে গভীর রাতে ভাবি চাপা কান্না করছে ।
ভাবি সবসময় নীল শাড়ি আর কাচের চুরি পরতে খুব পছন্দ করে । তার শ্যামল বরণ রূপে এমন সাজ সত্যিই মুগ্ধতার মোহজালের আবদ্ধতা । কথায় আছে টাকা দিয়ে সৌন্দর্য কেনা যায় না । কাচেঁর চুড়ি তার অন্যতম উদাহরন । এর দাম যত কম, সুন্দর্য ততটাই বেশি ।
আমি মনে করি যে মেয়েরা শাড়ীর সাথে লাল, নীল বিভিন্ন রং এর কাচেঁর চুড়ি পরে, তাদের এর থেকে বেশি সুন্দর আর অন্য কোন কিছুতে লাগবে না । এই দুটো জিনিসে মেয়েদের সুন্দর্য হাজার গুন বারিয়ে দেয় ।
রাত দুটোর দিকে রাস্তা থেকে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে ঘরে আসলাম । সবসময় এসে ভাবির নাম্বারে কল দিয়ে দরজা খুলতে বলি । আজকেও মোবাইল করার সাথে সাথে ভাবি রিসিভ করে বললো , সজীব দরজা খোলা আছে । সত্যি সত্যি আজকে এসে দেখি বাতি বন্ধ করা কিন্তু দরজা খোলা ৷ ডিনার করে বাসা থেকে বের হইছিলাম নাহলে বাবা অনেক রাগারাগি করে । সেজন্য ভাবি প্রতিদিন চুপিচুপি দরজা খুলে দেয় ।
নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগানোর সময় দেখি অন্ধকারে ভাবি আমার দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে ৷
– আমি জিজ্ঞেস করলাম , কিছু বলবা ভাবি ?
– তোমার ভাইয়ের কোন খবর আছে ?
– না ভাবি ।
– খুব খারাপ একটা স্বপ্ন দেখছি তাখন থেকে কান্না পাচ্ছে খুব ৷ একথা বলেই ভাবি আবারও কান্না শুরু করলো ।
– আমি বললাম , ভাবি তুমি ভিতরে আসো তারপর বলো কি হইছে তোমার ?
– ভাবি দরজা লাগিয়ে দিয়ে ভিতরে এসে আমার বিছানায় বসলেন । আমি বললাম , আচ্ছা ভাবি তুমি তোমার মা-বাবা কে সবকিছু খুলে বলছো ?
– কোন বিষয় ?
– ভাইয়া এমন করে ।
– না , পাগল নাকি তুমি ?
– তাহলে এভাবে আর কতদিন ? প্রায় বছর খানিক পার হয়ে গেছে ।
– যতদিন তোমার ভাই কিছু না বলে ।
– তুমি যে তার মন যোগাড় করবে তারও কিছু সুযোগ নেই কারণ ভাই তো চোখের সামনে নেই ।
– ধৈর্য্য ছাড়া কিছু করার নেই সজীব শুধু মাঝে মাঝে বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসে । কারণ এ জীবনে কাউকে ভালবাসিনি কারণ বিয়ের পরে স্বামী কে বেশি ভালবাসবো বলে । কিন্তু আমার জীবন টা এমন কেন হলো সজীব ?
আমি কিছু একটা বলতে যাব এমন সময় আমার দরজায় ঠকঠক করে টোকা পড়লো । আমি চমকে উঠলাম মুহূর্তে চুপসে যাওয়া চোখে ভাবির দিকে তাকিয়ে দেখি ভাবিও আমার দিকে তাকিয়ে আছে ।
দরজা খুলে দেখি ছোট বোন মাহী দাঁড়িয়ে আছে , ভাবিকে খুঁজে না পেয়ে আমার রুমে আসছে । তাই আর কথা না বাড়িয়ে ভাবি আর মাহী চলে গেল আর আমি বিছানা ঠিক করে সুয়ে পরলাম ।
সকালে ১০ টার দিকে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে বাড়ির সামনে আমাদের কলা বাগানের ভিতর চলে গেলাম । তখনই সেই রাঙ্গামাটির পাহাড়ি মেয়ে রূপন্তী কল দিল । দক্ষিণা বাতাস বইছে তার দিকে মুখ করে বসে মোবাইল রিসিভ করলাম ।
– আসসালামু আলাইকুম । (রূপন্তী)
– ওয়া আলাইকুম আসসালাম । (আমি)
– কেমন আছেন ? কি করেন ?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি , বসে আছি আপনি কি করেন ?
– আমিও বসে আছি ।
– আচ্ছা আপনি কি সত্যি সত্যি আমার টাকা ফেরত দিবেন না ?
– না , তবে কথা বলে আপনার মিনিট আপনি শেষ করে দেন ।
– এত কথা কিভাবে বলবো ? আর কিসের বিষয় নিয়ে এতো কথা হবে ?
– আপনার বলার মত কিছু নেই ?
– না তেমন কিছু নেই ।
– তাহলে আমার পরিচিত একটা মেয়ের জীবনের সামান্য কিছু কষ্টের কথা বলি শুনবেন ?
– যদিও শুনতে ইচ্ছে করছে না তবুও মুখে বললাম ; হ্যাঁ শুনবো ।
– আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে শুনুন ।
গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা মেয়ে , তবে রক্ষনশীল পরিবার । পরিবারের সবাই শিক্ষিত না হলেও ইসলামের প্রতি সবাই ভালো জ্ঞান ছিল । দুষ্ট, চঞ্চল, হাসিখুশি ভরা একটা মেয়ে যে কিনা সবাই কে হাসাতে ভালবকসে । সবার অনেক আদরে বড় হইছে কারণ সে ছিল তার পরিবারের বড় মেয়ে ।
মেয়ে বড় হলে মা-বাবার একটা চিন্তা বেরে যায় যে মেয়ে কিভাবে বিয়ে দেবে ? এবং ভালো পরিবার কোই পাওয়া যাবে ?
মেয়ে যখন ক্লাস 7 এ পরে তখন থেকেই প্রথম বিয়ের প্রস্তাব আসা শুরু করে । কিন্তু পরিবার থেকে কেউ বিয়ে দিতে চায় না কারণ তাদের পরিকল্পনা মেয়ে এসএসসি পাস করুক । মেয়ের বাবা ঢাকা শহরে চাকরি কতো ।
মেয়েটার যতো বিয়ে আসতো সব প্রায় ভালো ঘর থেকে আসতো কিন্তু মেয়ে টা বিয়ের কথা শুনলে কান্না করতো । কারণ তার ইচ্ছে ছিল সে বিয়ে করবে না সে পড়াশোনা করবে ।
মেয়েটা দেখতে অসুন্দর ছিল না কিন্তু সে প্রেম করার সাহস পেতো না কারণ তার পরিবার ধর্মীয় । কিন্তু সে অনেক প্রপোজ পেতো তবে সবগুলো অযোগ্যতায় ভরা ছেলে । তবুও মেয়ে টা তার পরিবার কে কিছু জানায়নি কারন তারা যদি ভুল বুঝে তার পড়াশোনা বন্ধ করে বিয়ে দিয়ে দেয় । আশেপাশে দু একজন ছেলে মেয়ে হঠাৎ করে বিয়ে করে পালিয়ে যায় আর তা দেখে মেয়েটার পরিবার ভয় পেয়ে যায় যদি তাদের মেয়ে এমন ভুল করে ?
একবার ঈদের ছুটিতে মেয়েটির বাবা বাড়িতে বেড়াতে আসছে আর তখন একটা ঘটনা কিছু মানুষ নিয়ে মেয়ে টাকে দেখতে আসে তবে ছেলে বাদে ।
মেয়ে তাদের পছন্দ হইছে কিন্তু সেই দিনই আরেক ছেলে পক্ষ মেয়ে টাকে দেখতে আসে । আর তারা ছিল মেয়ের আত্মীয় মানে তার দাদীর বোনের মেয়ের ঘরের নাতি । যারা প্রথম দেখতে আসে মেয়ের বাবা তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করে বিদায় করে । কিন্তু মেয়ে টা প্রচুর কান্না করে কারণ সে বিয়ে করবে না সে আরো পড়াশোনা করতে চায় ৷
দ্বিতীয় পক্ষ মানে যারা আত্মীয় ছিল তারা নাস্তা করার পরে মেয়ে দেখতে চাইলো কিন্তু মেয়ে চলে গেছে তার পাশের বাড়ি । সেখানে গিয়ে তার মা ও দাদি গিয়ে নিয়ে আসে আর মেয়ে টা জিদ এবং রাগ করে ছেলের সামনে যায় । কিন্তু ছেলে পক্ষ মেয়েকে দেখার সাথে সাথে পছন্দ করে ফেলে । কালো একটা ড্রেস পরা এবং হালকা সাজগোছ করা মেয়েটাকে দারুণ লাগছিল তাই পছন্দ করে ৷
মেয়ে কে একবার বলা হলো ছেলে পছন্দ হইছে কিনা কিন্তু মেয়ে বলে, আমি তো বেশ্যা হয়ে গেছি পালিয়ে যাচ্ছি তাই এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দেবে । তোমরা জাহান্নামে ফেলে দিলেও আমি সেখানে চলে যাব কোন সমস্যা নেই । তখন মেয়ের বয়স ছিল ১৬ বছর ২ মাস আর ছেলের বয়স ৩২ এর বেশি । এলাকায় যৌতুক চলে তাই কিছু টা যৌতুকের ভয়ে মেয়ের বাবা বিয়ে দিতে চায় । কারণ তার ধারণা ছিল আত্মীয়র মধ্যে যৌতুক চাইবে না । কিন্তু তবু তারা আবদার করেছেন তবে মেয়ের বাবা দিতে রাজি হলনা শুধু মেয়ে কে গহনা দেবে ।
এসএসসি পরীক্ষার আগেই বিয়ে হয়ে গেল কিন্তু কথা ছিল মেয়ে বাপের বাড়ি থাকবে । আর পড়াশোনা করে এসএসসি পাস করে তারপর স্বামী উঠিয়ে নিয়ে যাবে যেহেতু বিয়ে হয়ে গেছে তাই ছেলে মাঝে মাঝে কিস্তি নিতে আসবে । ( কপাল )
বাসর ঘরেই মেয়ে টা বুঝতে পারে তার স্বামী বেশি সুবিধার মানুষ না । আচরণে সমস্যা আছে নির্বোধ মেয়ে মনে করেছে পরবর্তী তে ঠিক হয়ে যাবে । কিন্তু বিয়ে হবার পরে অনেকে অনেক কথা বলতো কেউ সামনে কেউ পিছনে । মেয়ের বান্ধবী বলতো , এই তোমার পছন্দ ? তুই তো বিয়ে করতে বারণ করিস প্রেম করতে নিষেধ করিস কিন্তু তুই নিজেই আগে বিয়ে করে নিলি , তখন মেয়ে টা বলতো সবই ভাগ্য আর ( কপাল ) ।
মেয়েটির বান্ধবীরা মেয়েটির স্বামী কে চাচা বলে ডাকতো কারণ বয়সের তুলনা । তাই মেয়েটা তার বান্ধবী দের সঙ্গে রাগ করে কথা বলতো না ।
অবশেষে এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল , এবার বাপের বাড়ি থেকে বিদায় নেবার পালা ৷ আয়োজন কম ছিল না তাই অনেক বড় অনুষ্ঠান আয়োজন করে নিয়ে গেল ।
স্বামীর বাড়িতে রাজ্যের কাজ , মেয়ে টা নিজের যে কাজ কখনো চোখে দেখেনি সেই কাজ করতে হবে কারণ সংসার বলে কথা । যেটুকু পারতো সে কাজ করতো কিন্তু তবুও কারো মন পেতো না । মেয়ের স্বামী শহরে থাকতো জব করতো কিন্তু যার উপর বিশ্বাস করে যেই ফুপুর জন্য বিয়ে টা হলো । সেই ফু ফু সংসারের কাল হয়ে গেল ৷ শশুর শাশুড়ী ছিল বয়স্ক কিন্তু তাদের কথা অনেক ভারি কর্কশ ।
শাশুড়ী কে মা বলে ডাকতো কিন্তু একদিন শাশুড়ী বলে , আমাকে মা বলে ডাকতে কে বলে ? আমাকে মা বলে ডাকার অনেক মানুষ আছে । মেয়েটা সারাদিন কাজ করতো রান্না করতো কিন্তু নিজের ইচ্ছে মত কিছু খেতে পারতো না । শাশুড়ী যা দিতো তাই খেতো । ভালো কিছু রান্না করে খেতে না পারাটা কষ্টের মনে করতো না ।
মেয়েটি ননদ ছিল না কিন্তু ফুপুর তিনটা মেয়ে ছিল এবং তারাই যথেষ্ট । মেয়েটার তাদের কাছে মাঝে মাঝে পা ধরে কান্না করতো শুধু বড়দের শাসনের অভাবে ৷
রান্না করে সামান্য নষ্ট হয়ে গেলে বলতো, তোর বাবার বাড়ি থেকে আনছো যে নষ্ট করো ? তবে এসবের কিছু সে তার স্বামী কে বলতো না । পড়াশোনা আর করা হলো না যদিও ইন্টারমিডিয়েট ভর্তি ছিল কিন্তু সমাপ্ত হয়নি । পরীক্ষার সময় আসলে শাশুড়ীর কাজ বেরে যেত ৷
মেয়েটা একদিন তার স্বামী কে বলে , আপনি তো ঢাকা শহরে থাকেন আপনার খেতে কষ্ট হয়না ? আমাকে নিয়ে যান তাহলে খুব ভালো হবে । কিন্তু তার স্বামী রাজি হলো না তবুও জোর করে মেয়েটা তার কাছে শহরে চলে গেল । কিন্তু তার স্বামীর কাছ থেকে সে ভালবাসা পায়নি কারণ মনের মিলন ছিল না তাই ৷ কিন্তু মেয়ে টা তাকে খুব সম্মান করতো যেমন বলতো তেমন চলতো । কিন্তু মেয়ের শরীর ছাড়া আর কোন ক্ষুধা তার স্বামীর ছিল না ।
মেয়েটা সইতো কারণ সে অশান্তি চাইতো না ভাবতো সময় হলে ঠিক হয়ে যাবে । কিন্তু ভালবাসা বিহীন যৌন ক্ষুধা একটা মেয়ে আর কতটুকু সহ্য করতে পারে ? শুরু হলো শারীরিক নির্যাতন , কখনো হাত দিয়ে কখনো হাতের কাছে যা পেতো তাই দিয়ে মারতো । একা একা ঘরে থাকতো কখনো বাইরে বের হতো না কিন্তু তবুও লাঞ্ছিত কথা শুনতে হতো । বাসায় বসে সবসময় নামাজ পড়তো কোরআন শরিফ তেলওয়াত করতো তবুও অশান্তি, কপাল ।
সকালে নামাজ পড়ে কোরআন শরিফ তেলওয়াত করে যদি দেখতো স্বামী ঘুমিয়ে আছে তখন সে নাস্তা বানাতো । একদিন সকালে তার স্বামী নাস্তা খেতে বসে তার পেটে হাত দিয়ে বলে , তোর পেটে বাচ্চা তাই না ? মেয়ে খুশিতে আলহামদুলিল্লাহ বলে কিন্তু তার স্বামী নিমিষেই মুখ অন্ধকার করে ফেলে । এবং গম্ভীর হয়ে বলে , সন্তান আমার না এটা অন্য কারো সন্তান । কিন্তু সত্যি সত্যি মেয়ে গর্ভবতী ছিল না ।
একটা কথা হচ্ছে প্রতিটি মানুষের ধৈর্যের একটা সীমা আছে যা অতিক্রম হয়ে গেল । এতো বাজে ব্যবহার করতো যেটা মেয়ে টা কোনদিন কারো কাছে শুনেনি । এত এত মার খেয়েছে তবুও সে তার স্বামীর সেবা করা যত্ন করা কমায়নি । মাত্রাধিক ধৈর্যের বাইরে চলে গেলে মেয়ে টা একাই গ্রামের বাড়ি চলে গেল ।
কিভাবে এস সাহস করে সে বাড়িতে চলে গেছে তা সে নিজেও জানেনা । বাড়ি আসার পরে মেয়ের মা অবাক হয়ে গেল কিন্তু তেমন কিছু জিজ্ঞেস করে নাই । কিন্তু মেয়েটার স্বামী তাদের বাড়ি এসে ভুল স্বীকার করে মেয়ে টা কে নিয়ে যায় । বলে আর কখনো এমন করবে না তাই মেয়ে টা তার সাথে চলে গেল । কিন্তু সে ভাবতে পারে নাই আগের চেয়ে আরো বেশি অত্যাচার শুরু হবে ।
মেয়ে টা কে বাড়িতে রেখে তার স্বামী আবারও শহরে চলে গেল । কিন্তু দুই মাস যাবার আগেই আবার ফোন করে খারাপ ব্যবহার করা শুরু করে । শশুর শাশুড়ী সহ বাড়ির ছোট বড় সবাই কথা শোনাতো আর তার স্বামী তো আছেই । তবে মেয়েটা আর ঢাকা শহরে গেল না কিন্তু শশুর বাড়ি কম কিসে ? বাচ্চা নেবার চেষ্টা করে কিন্তু আল্লাহ দেননি । শশুর বাড়ির সবাই বলতো মেয়েটার নাকি বাচ্চা হবে না ।
মেয়েটা যদি গাছ লাগাতো আর সে গাছে যদি ফুল না ফুটতো তবে বলতো গাছের মালিকের ফুল নেই তার গাছে কিভাবে হবে ? মেয়েটাকে তারা বলে যে সে নাকি তাদের পরিবারের যোগ্য না । তাদের ছেলে কে জোর করে নাকি মেয়ের বাবা মা ঘাড়ে চাপিয়ে দেছে ।
একবার ছুটিতে মেয়ে টা তার স্বামী কে নিয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসছে । তখন তার স্বামী তার মা-বাবার সঙ্গে এমন খারাপ ব্যবহার করে যে মেয়ে টা সিদ্ধান্ত নিলো সে আর সংসার করবে না ।
যথেষ্ট হয়ে গেছে , লেখার মধ্যে কম মনে হলেও একে একে কিন্তু ৪ বছর পার হয়ে গেছে । তার মা-বাবা কে বলে তাদের ডিভোর্স হয়ে গেল আর মেয়েটা মনে করলো যে একটা বড় আজাব থেকে মুক্তি পেয়েছে৷ কিন্তু এরচেয়ে বেশি আজাব অপেক্ষা করে আছে সেটা সে বুঝতে পারে নাই ।
সমাজের মানুষের মুখে মুখে , আত্মীয় স্বজনের মুখে শুধু লাঞ্ছিত কথা । সবাই বলে বাচ্চা হচ্ছে না তাই নাকি স্বামী ছেড়ে দিছে । উঠতে বসতে অতীত তাকে পুড়িয়ে মারে কিন্তু যে বয়সে তার পড়াশোনা করার কথা । সেই বয়সে সে স্বামী সংসার ত্যাগ করে লোক লজ্জার ভয়ে গৃহ বন্দী হয়ে গেল ।
– এটাই কাহিনি ।
– আমি তখন জিজ্ঞেস করলাম, একটা কথা বলি ?
– সে বললো ,, হ্যাঁ বলেন ।
– সেই মেয়ে টা কি আপনি ?
– কেন মনে হলো আপনার ?
– আসলে কাহিনী বলতে গিয়ে আপনার গলাটা কেঁপে কেঁপে উঠল তাই ।
– জ্বী আপনার ধারণা সঠিক আমি সেই মেয়ে রূপন্তী ।
– নতুন করে বাঁচতে হবে আপনাকে ৷
– চেষ্টা করবো ।
– এখন তাহলে রাখি পরে কথা বলি ৷
– আচ্ছা ঠিক আছে ভালো থাকবেন আপনি আর কিছু মনে করবেন না ।
– আচ্ছা ।
বসা থেকে উঠে রৌদ্রে হাঁটা শুরু করলাম , ভাবলাম মানুষের জীবন টা সত্যি কত কষ্টের । অল্প বয়সে বাল্যবিবাহ হয়ে রূপন্তীর জীবন টা শেষ হয়ে গেল । আমি চাই এভাবে যেন কোন রূপন্তী অকালে শেষ হয়ে না যায় । তাদের সন্তান কে যেন সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে বিয়ে দিয়ে পরবর্তী জীবনে সুখ টা খুঁজে দেয় ৷ সুখ দেবার মালিক আল্লাহ কিন্তু মানুষের চেষ্টা করতে দোষ কি ?
বাড়িতে পৌছে দরজার সামনে দাড়িয়ে ভাবিকে ডাক দিয়ে বললাম, ভাবি ঠান্ডা একগ্লাস শরবত দেও । ছোট মাহী বের হয়ে এলো কিন্তু তার মুখ টা অন্ধকার হয়ে আছে ।
– আমাকে বললো , সজীব ভাইয়া, ভাবির বাবা আর ভাই এসেছে ভাবিকে নাকি নিয়ে যাবে ।
– আমি বললাম , ভাবি কি বলে ?
– কিছু বলে না , কান্না করে আর কাপড় গোছাচ্ছে ।
– আচ্ছা ঠিক আছে ।
ঘরের মধ্যে গিয়ে মা-বাবার রুমে প্রবেশ করে দেখি তারাও মন খারাপ করে বসে আছে ।
– আমাকে দেখে মা বললো , বাবা সজীব তুই তোর ভাবিকে বিয়ে করবি ? আমাদের বউকে আমরা রেখে দিতে চাই ।
– আমি বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি তিনিও আমার দিকে উত্তর শোনার অপেক্ষা করে আছে । আমি কোন উত্তর না দিয়ে সোজা ভাবির রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম । কিন্তু ভাবি পিছনে ফিরে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ।
– আমি বললাম , কোথায় যাচ্ছো তুমি ?
– বাবার সাথে চলে যাব ।
– কেন ?
– থেকে কি লাভ ? তোমার ভাই আমার জন্য সবার সঙ্গে কথা বলে না । তাই আমি চলে যাচ্ছি ।
– তুমি যাবে না ।
– কেন ?
– আমি তোমার কে ?
– মানে ?
– দেবর ?
– হুম তো ?
– তাহলে প্রথম বর নেই তাই এখন দ্বিতীয় বরের সঙ্গে থাকবে ।
– কি বলো তুমি ?
– হ্যাঁ তাই হতে হবে ।
– কিন্তু …
– কোন কিন্তু নেই ।
আমি কিছু বলার আগে ভাবি আমার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে ঝড় ঝড় করে কান্না শুরু করলো । আমি বাধা দিলাম না কারণ এতদিন সে দুঃখের জন্য কান্না করেছে আজ নাহয় সুখের জন্য কান্না করুক ।