মারিয়া প্রচণ্ড ছ্যাঁকা দিছে। সেই সকাল থেকে চোখে পেঁয়াজ দিয়ে কান্না করছি। তবুও ডিপ্রেশন কমছেনা। ডিপ্রেশন কমাতে দরজার চিপায় পা রেখে চাপ দিয়ে কতক্ষণ হাউমাউ করে কাঁদলাম। বুকটা ধুকপুক করছে। একটু পরেই বৃষ্টি শুরু হলো, বাহিরে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজলে কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে। আব্বার নতুন লুঙ্গী পরে দৌঁড়ে গেলাম বৃষ্টিতে ভিজতে। দু-হাত প্রসারিত করে বৃষ্টিতে ভিজছি। কিছুক্ষণ পর কোমল কিছুর অনুভব করলাম। চোখ খুলে দেখি পাশের বাসার মিম আমায় জড়িয়ে ধরেছে৷ আমি হাত সরিয়ে ধমকের সুরে বললাম….
–এসব কি মিম? তুমি এখানে কেন?
-আপনার কষ্ট দূর করতে এসেছি।
–মানে? কিসের কষ্ট? আমিতো বৃষ্টিতে ভিজছি।
-আমিও ভিজব আপনার সাথে, আপনার হাতে হাত রেখে ভিজব বৃষ্টিতে।
–দেখো তুমি বাসায় চলে যাও, আর আমি একা একটা ছেলে কেউ দেখলে খারাপ ভাববে।
‘এই মিম তুই এতরাতে এখানে কি করছিস?’ তাকিয়ে দেখি মিমের বড়বোন সাদিয়া। আমি ভাবলাম ইজ্জত শেষ। কিন্তু নাহ, সাদিয়া বলল….
-তুই উনাকে ডিস্টার্ব কেন করেছিস?
–কই করলাম?
-আমি অনেকক্ষণ থেকেই দেখছি। উনাকে ভিজতে দিচ্ছিসনা ভাগ্যিস আমি ছিলাম নইলে উনার নামে যে কেউ উল্টাপাল্টা বলতো। তুই এখনি বাসায় যা..! মিম বাসায় চলে গেলো। সাদিয়া মুচকি হেসে আমার দিকে তাকালো। এই হাসিতে আমার গা জ্বলে। কিল মারতে মনচায় পিঠে। তবে এখন কিল মারতে ইচ্ছে করছেনা। সাদিয়া বলল….
–কি হয়েছে তোমার? একা-একা ভিজতেছো যে! আমায় বললেই পারতে দু’জনে একসাথে ভিজতাম।
-না মানে তুমি যদি কিছু মনে করো?
–ধ্যাত তুমিনা, রাগ কেন করব। জানো তোমাকে আমি কত ভালোবাসি।
ভালোবাসার কথা শুনে বুকটা মোচর দিয়ে উঠলো। সাদিয়ার পাত্তা পাবো না ভেবে আমি মারিয়ার সাথে রিলেশনে গেলাম আর এ নাকি আমায় ভালোবাসে। মারিয়ার দেওয়া ছ্যাঁকার ডিপ্রেশন এক মুহূর্তে হাওয়া হয়ে সাদিয়ার ভালোবাসায় পরিনিত হলো। একেই বলে ভালোবাসার শক্তি। ভয় ঢুকে গেলো। নতুন করে কষ্ট পাওয়ার মানে হয়না। সাদিয়া কাঁদোকাঁদো কণ্ঠে বলল….
–আমায় ফিরিওনা রুবেল।
-কিন্তু সাদিয়া?
–কোন কিন্তু নেই রুবেল।
-আমাকে সময় দাও কিছুদিন।
–আচ্ছা….!
বলেই সাদিয়া আমার পেটে কাতুকুতু দিয়ে চলে গেলো। সাদিয়া প্রচণ্ড খুশিতে অন্যদের কাতুকুতু দিতে পছন্দ করে। তাই তেমন অবাক হলামনা। আমি আপন মনে বৃষ্টিতে ভিজতে মনোযোগ দিলাম। দু-হাত প্রসারিত করে আকাশ পানে তাকালাম। অমনি জোড়ে শব্দ হলো। মেবি ঠাডা পরেছিলো। তারপর আর কিচ্ছু মনে নেই। সকালে ঘুম ভাঙ্গে মেয়েলি কণ্ঠে। চোখ মেলে দেখলাম আমি আনিকার কোলে শুয়ে আছি। আনিকা আমাদের নিচের ফ্লাটেই থাকে। নতুন ভাড়াটে ওরা। আমি কিছু বলার আগেই বলল…..
–উহু কষ্ট করে উঠতে হবেনা, আপনি গতকাল রাতে বেহুশ হয়ে পরেছিলেন বাইরে। আমি নিয়ে এসেছি।
-ওহ, আচ্ছা উঠি কেউ দেখলে কেলেঙ্কারি হবে।
–সমস্যা নেই, আম্মু দেখেছে বলল আপনার সেবা করতে।
আমি আর কিছু বললামনা। আনিকা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমি ঘুমের রাজ্য তলিয়ে গেলাম। স্বপ্ন দেখতে থাকলাম। ‘আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি। সুন্দরী একটা নার্স এসে আমার পাশে বসলো। আমাকে ঔষধ খাইয়ে দিল। নার্সের পিছনে দেখি মারিয়া দাঁড়ানো। ওর হাতে ফুলের তোরা। আমার রাগ চরমে উঠে গেলো। আমি উঠে গিয়ে ফুলের তোরা নিয়ে মারিয়া মাথা ঠেসে ধরে পিঠে বারি শুরু করলাম। বারি খেয়ে মারিয়া চিৎকার করছে, ওমাগো ওবাবাগো….নার্স আমাকে থামাতে আসতেই নার্সকে সহ শুরু করলাম বারি। তারপর আরেক নার্স এসে ইনজেকশন দিতেই মাগো বলে চিৎকার দিলাম।’ অমনি ঘুম ভাঙ্গলো। আমি হাঁপাচ্ছি। তাকিয়ে দেখি আনিকার বদলে ওর জায়গায় সুপ্তি। সুপ্তি আনিকার ছোট বোন। এবার ইন্টারে পড়ে। এই মেয়ের প্রতি আমি বরাবরই দূর্বল। কারণ এই মেয়ে সেই লেবেলের কিউট। আমি বললাম…..
–তু তু তুমি এখানে কেনো?
-অ্যাই রুবেল ভাইয়ু আমি থাকবনা তো কে থাকবে শুনি? ওরে বাপুরে বাপু কি ন্যাকামি। রুবেল আবার ভাইয়ু? আমি বললাম…..
–সকালেতো এখানে আনিকা ছিল।
-আনিকা আপু ভার্সিটিতে গেছে, আমাকে বলেছে আপনার সেবা করতে। সেই কখন থেকে আপনাকে দেখছি আপনার ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে আমি কোটি বছর পার করতে পারব। অ্যাইই ভাইয়ু সেই অধিকার দিবেন? একেতো ভাইয়ু বলে আবার অধিকার! খাচ্চুন্নি গিরি করার জায়গা পাওনা। টাউট মাইয়া। আমি গলা খাঁকড়ি দিয়ে বললাম…..
–একটু পানি আনবে?
সুপ্তি পানি আনতে গেলো। আমি এই সুযোগে কেটে পরলাম। টুপ করে বাসায় গেলাম। বাসার ভিতরে যেতেই চোখ কপালে উঠে গেলো। বাসায় মারুফ আঙ্কেল এসেছে। আব্বার ছোট বেলার ফ্রেন্ড। আমাকে দেখেই আব্বা রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল….
–কই ছিলি তুই তোর খবর নেই? তোকে অনলাইনে এক্টিব না পেয়ে বুশরা কত কেঁদেছে জানিস? একদিনে মেয়েটির কি হাল হয়েছে।
-মানে কি?
–মানে তুই গতকাল থেকে অনলাইনে ছিলিনা। তোকে মেসেঞ্জারে না পেয়ে বুশরা টেনশনে শেষ। ভেবেছে তোর কিছু হয়েছে, তাই আজকে সকালেই মারুফ আমাদের এখানে এসেছে। বল তুই কই ছিলি? আমি কিছু বলতে যাব, তখন-ই বুশরা বলল….
–থাক আঙ্কেল রুবেল কে কিছু বইলেননা। হয়তো কোন ফ্রেন্ডের বাসায় বেড়াতে গেছিলো৷ এখনতো ওকে পেয়েছি, এতেই খুশি আমি।
-দেখেছিস? এমন মেয়ে কোথাও পাবি? কত খেয়াল রাখে ভাইবোনের ভালোবাসা এমনই হওয়া উচিৎ।
ভাই বোনের ভালোবাসা মানে? হোয়াট দা ফাঁপর? বুশরা আমাকে ভাইয়ের চোখে দেখে? বুশরার দিকে তাকিয়ে দেখি সে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে। ভাই বলাতে সেও বেশ অবাক হয়েছে। ওরে আব্বা এই সমীকরণ তুমি বুঝলেনা? ছ্যাঃ! বুশরা তবুও কিছু বললনা, সবার সামনে কিছু বলাও ঠিকনা। পাছে সবাই মাইন্ড করবে। আমি আমার রুমে চলে আসলাম। সন্ধ্যের দিকে শরীর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসলো। ফার্মেসি পাশেই ছিল। তাই আমি একাই গেলাম ফার্মেসিতে। গিয়ে দেখি ফার্মেসীতে তন্নি। তন্নিকে বছর দুয়েক আগে প্রপোজ করেছিলাম যার সুবাদে তন্নির বড়ভাই আমাকে পুকুরে চুবিয়েছিল৷ আমি অবাক হয়ে বললাম….
-তুমি এখানে কেন?
–এখানেই বসব এখন থেকে। কতদিন তোমাকে দেখিনা কেমন আছো তুমি?
-জ্বর খুব….
জ্বর বলাতে তন্নি দিশেহারা হয়ে গেলো। আমাকে ফার্মেসির ভিতরে নিয়ে বসালো। নিজেই সব চেকাপ করলো। আলতো করে একটা ইনজেকশন দিয়ে বলল…..
–অতীতের সেই কাজের জন্য সরি রুবেল। আমি এখন প্রতিনিয়ত তোমায় মিস করি। তোমার মায়ায় নিজেকে ধ্বংস করছি রোজ। অথচ তোমার নেই কোন খোঁজ। আমি এখন প্রত্যেকটা ঔষধে প্রেসক্রিপশনে তোমার নাম খুজে পাই।
-আরে সরি বলতে হবেনা।
–জানো আমি তোমাকে যাতে না ভুলি তার জন্য ঔষধের নামের শেষ তোমার নাম লিখে রাখছি। এই দেখো নাপা রুবেল, কোট্রিম রুবেল, প্যারাসিটামল রুবেল, ফোনাক্স রুবেল।
-এসব কি পাগলামি কেন করছো?
–জানিনা, আমি তোমার জন্য সব করব।
-আচ্ছা আমি অসুস্থ পরে কথা হবে।
তন্নির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় আসলাম। হায়রে যেই মারিয়ার জন্য আমি পাগল ছিলাম। আর আমার জন্য কত মেয়ে পাগল অথচ আমি এই বালের ডিপ্রেশনে ভুগছি৷ উফফফ শিট। এ জীবনে কি করলামরে তালোই। ডাটা অন করে ফেসবুকে গেলাম। ওমা এসব কি!? মৌরি, টুনি, মিতালি, তানহা, পায়েল, আশা, আফরোজা, সবাই পোস্ট দিয়েছে ‘মিস ইউ রুবেল পাগলটা, কই তুমি?’
এসব দেখে আমার বুকটা গর্বে ফুলে উঠলো। তোমরা সবাই আমার। পাত্তা দিবনা, দূরে থাকবে কেমন? বিরিয়ানি রেধে নিয়ে আসলে অন্য কথা। ফুরফুরা মেজাজ নিয়ে ঘুমোবো তখনই মনে হলো সামনে ৩ তারিখ জান্নাতের সাথে দেখা করার কথা। উফফফ…! আমার দেখি কিছুই মনে থাকেনা। শিইইইট ম্যান!