~কালকে রাতে ফেইসবুকের একটা কবিতা প্রতিযোগিতার গ্রুপে একটা কবিতা দিয়েছিলাম। আজ সকালে ঘুম থেকে ওঠে ডাটা অন করতেই টোন করে একটা নেটিফিকেশন আসলো। আমি সেটা চেক করে অবাক হয়ে পড়ি। সেখানে লেখা ছিল “কবিরা কি কবিতার প্রেমে পড়ে প্রিয় মানুষগুলোকে ভুলে যায়?” লেখা টা দেখে আমি আইডি খেয়াল করলাম। আইডির নাম টা দেখে বুকের ভেতর ছেঁট করে ওঠলো। মেঘ বালিকা। এ মেঘ বালিকা তো আমরা সেই মেঘ বালিকা না। যার সাথে মিশে আছে হাজার হাজার অনুভুতির সম্পর্ক।
আজ থেকে দুই বছর আগে। তখন আমি টুকঠাক গল্প লেখা লেখি করি। সেই হিসেবে আমার একটু কদর ছিল।তো সেদিন একটা গল্প পোষ্ট করে নিউজ ফ্রীডে গুরা ঘুরি করছি আর দেখছি কেমন লাইক কমেন্ট পড়ে আমার গল্পে।
তো নিউজ ফ্রীড দেখতে দেখতে আমর সামনে ভেসে আসে একটা মেঘ বালিকা নামের আইডি। মেঘ বালিকা নাম দেখে আমার ভিষন ভাল লাগে। তাই আমি আইডি টার প্রোপ্রাইলে ঢকি চেক করার জন্য। না আইডি টা তেমন পরিচিত মনে হচ্ছে না। তবুও শুধু নামটার কারণে আমি ফেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাই। কিছুক্ষন পড়ে সেই আইডি থেকে রিকুয়েষ্ট গ্রহন করে আমাকে নক দেই।
-লেখক রাও দেখি পাঠক দের রিকুয়েষ্ট দেই।তা এই লেখকের কি কোন অন্য মতলব আছে নাকি? আমি রিপ্লে দিলাম
-কেন লেখকরা কি রিকুয়েষ্ট পাঠাতে পারে না? আর তেমন কোন মতলব নেই। আবার আছেও
-এটা তেমন কথা? তা কি মতলব শুনতে পারি?
-হুম। বেশি কিছু না শুধু আইডির নাম টা অনেক সুন্দর তো তাই রিকু পাঠালাম।
– এই যে লেখক আমাকে পঠানোর চেষ্টা করবেন না। আমি কিন্তু পঠবো না।
-আপনার যদি মনে হয় আমি আপনাকে পঠানোর জন্য রিকু দিছি তবে ব্লক মারেন? যদিও কথাটা বলতে মনের ভেতর দ্বিধা কাজ করে। কিন্তু মেঘ বালিকা আইডি থেকে মেসেজ আসার পর পুরো দমে কেটে গেল। সে পাঠায়
-আরে দুর আমি তো মজা করছিলাম। সেই থেকে তার সাথে কথা বলা শুরু। দুজন এক্রটিভ থাকলেই মেসেজ করতাম। দুজনের ভালা লাগা মন্দ লাগা শেয়ার করতাম।
মেঘ বালিকা আইডি টা সব সময় আমার গল্প কবিতার প্রশংসা করতো। আমি তাকে ধন্যবাদ দিতাম। একটা সময়ে এসে আমরা খুব বেশি কথা বলতাম। আর সেটাও আবার শুধু মাত্র ফেইসবুকে চ্যাটের মাধ্যমে। এভাবে কথা বলতে বলতে আমরা ভাল বন্ধু হয়ে গেলাম খুব অল্প সময়ের মাঝে। তখন আমরা নিয়ম করে প্রত্যেক দিন রাতে কথা বলতাম। আমি সব সময় তাকে মেঘ বালিকা বলে ডাকতাম। একদিন সেই মেঘ বালিকা আমাকে প্রশ্ন করলো
-আচ্ছা আমরা যে এত দিন ধরে কথা বলি এমন কি ভাল বন্ধুও তোমার কি কখনো আমার নাম জানতে ইচ্ছে করে না? তার এমন মেসেজে আমি শুধু হাসির ইমুজি পাঠাই। মেঘ বলিকা হাসির ইমুজি পেয়ে খুব বেশি রাগ করে ফেলে। বলে আমি নাকি তার সাথে মজা করছি । এ নিয়ে পুরো একদিন সে আমার সাথে কোন কথা বলে নি। এই এক দিনে আমি কমপক্ষের ১০০+ মেসেজ করেছি। সব মেসেজ সিন হলেও কখনো তার রিপ্লে আসে না।
মেঘ বালিকার সাথে কথা না বলতে পারে আমার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। সারা দিন ঘরে মধ্যে বন্দি ছিলাম সেদিন। সে দিনই বুঝতে পারি যে এই মেঘ বালিকা নামের আইডিটা কে আমি বন্ধুত্বের আড়ালে ভালবেসে ফেলেছি কতটা। পরদিনও তার সাথে কথা না বলতে পেরে যখন মন খারাপ করে সন্ধার সময় নিউজ ফ্রীডে ঘুছিলাম। তখন আবার মেঘ বালিকা নামের আইডি থেকে মেসেজ আসে। এবং সেটাই লেখা থাকে যে “এখন কি আপনি আমরা উপর রাগ করেছেন? আমি দ্রুত তার রিপ্লেতে বললাম, ভাল বন্ধুদের মাঝে কখনো রাগারাগি হয় না বা করা যায় না। আমি তোমাকে একজন ভাল বন্ধ ভাবি সব সময়। তার পর ধীরে ধীরে আবার আমাদের মাঝে আগের মতো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর মাঝে আমি অনেক গল্প কবিতা এমন কি তাকে মেসেজে আকারে ইঙ্গিতে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করি যে আমি তাকে ভালবাসি।
কিন্তু সে কখনো বুঝতো নাকি? নাকি, না বুঝার ভান করতো জানি না। তবে আমাকে সেও বন্ধুর থেকে বেশি ভাবতো এটা আমার বিশ্বাস ছিল। এবাবে কাটে দু বছরের উপরে। একদিন আমার জ্বর হয় ভিষন। এমন অসুস্থ ছিলাম যে বিছানা ছেড়ে ওঠতে পারি না। এই জ্বর টা থাকে দুই দিনের উপরে। আর এই দুই দিনে মেঘ বালিকা নামের আইডির সাথে কথা বলতে পারি নি। কি করে বলবো আমি তো তখন মোবাইলটা ধরার মতো অবস্থাই ছিলাম না। যখন সুস্থ হয় ওঠি সেদিন নিয়ত করি রাতে তাকে মেসেজ করে বলবো
-কি এমন বন্ধু তুমি আমার অসু্স্থের সময় পাশে থাকো নি? আবার মনে মনে ভাবি সে নিশ্চয় আমাকে মেসেজ করতে করতে ক্লান্ত।
রাতে ডাটা অন করে দেখি এই দুদিনে কোন মেসেজ আসে নি তার থেকে। রাগে অভিমানে একবার ভাবি আর মেসেজ করবো না। পরক্ষনে মনে হয় এ মেঘ বালিকা কে ছাড়া তো আমি থাকতে পারবো ভিষন ভালবাসি যে তাকে। তার পর মেসেজ করার জন্য মেসেন্জারে ঢুকে দেখি। মেঘ বালিকা দুইদিন ধরে এক্রটিভ নেই। কি ব্যাপার তার কি হল। কোন সমস্যা না তো। না আমার মতো সেও অসুস্থ।
এসব ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত আমি। তার পরও তাকে অনেক মেসেজ করি। অনেক চেষ্টা করি তার সাথে কথা বলতে। কিন্তু না আর কাজ হয় নি। সেই মেঘ বালিকা নামের আইডি আর কখনো এক্রটিভ হয় নি। আর তার কোন ফোন নাম্বার বা অন্য কোন যোগাোগের মাধ্যম ছিল না আমার কাছে। তাই তো শত চেষ্টা করেও আর যোগাযোগ করতে পারি নি আমি। আজকে হটাৎ আরেকটা মেঘ বালিকা নামের আইডি থেকে কেমেন্ট আসায়। তাড়াতাড়ি কমেন্টের রিপ্লে দিলাম, আপনি কি আমার সেই মেঘ বালিকা? কিছুক্ষন পর সেই আইডি থেকে রিপ্লে আসে, তাহলে চিন্তে পেরেছো? তারপর আমি সেই আইডি তে রিকু দিয়ে সাথে মেসেজ করি। আজকে তুমি আমার সাথে দেখা করবে না করো প্লিজ।
মেঘ বালিকা রিপ্লে দিল ঠিক আছে? আজ বিকাল পাঁচ টাই বটতলীর পার্কে আসতে। পাঁচ টা বাজতে আরো ১০মিনিট দেরী। ১৯মিনিট আগে পৌছে গেলাম। এদিকে আকাশের অবস্থা তেমন সুবিধার মনে হচ্ছে না। যে কোন সময় বৃষ্টি নামতে পারে। তবুও বসে আছি। পাঁচ টা বেজে ৫মিনিট এখনো আসছে না সে। হুট করে বৃষ্টি শুরু হল। আমি দৌড়ে পার্কের পাশে একটা ছাউনিতে গিয়ে দাড়ালাম। ছাউনিতে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে , মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দর। মনে মনে ভাবছি এ কি আমার মেঘ বালিকা? না মেঘ বালিকা হলে তো আমাকে মেসেজ করতো। তার জন্য ডাটা অন করে রেখেছি যাতে মেসেজ করলে টের পায়।
তখনি ফোনে মেসেজের শব্দ হল। বের করে মেসেজ দেখলাম। তাতে লেখা, ছ্বি লেখক সাহেব আমাকে রেখে অন্য মেয়ের সাথে ছাউনিকে দাড়িয়ে প্রেম করছেন? সেটা দেখার জন্য আমাকে ডাকলেন বুঝি? অবাক হয়ে গেলাম। কি বলে মেয়েটা প্রেম করছি নামে। আর সেই বা দেখলো কোথা থেকে। এদিকে আমার পাশে থাকা মেয়েটা মুখ টিপে হাসছে। তার মানে কাহিনী আছে এখানে? আমি ফোনটা পকেটে রেখে দিলাম। এবার আমার পাশের মেয়েটা বললাম,
-ভালবাসি খুব প্রিয় তোমাকে। মেয়েটা আমার কথা শুনে বোকার ন্যায় দাড়িয়ে আছে। কোন কথা বলছে না। এবার আমি তাকে জড়িয়ে ধরতে যাব তখনি সে চিৎকার করে বললো,
-খবর দার লেখক সাহেব উল্টা পাল্টা কিছু করার চেষ্টা করবেন না? এবার আমি সিউর হয়ে গেলাম। এই আমার সেই মেঘ বালিকা। আর সে আমাকে আগে থেকে দেখা মজা করার চেষ্টা করেছিল। ভাগ্যিস বুদ্ধি করে প্লেনটা করি না হলে আজকেও তার সাথে দেখা হতো নাকি কে জানতো?আর হলেও অপরিচিত থেকে যেতাম দুজন। আমার টেকনিকের কাছে হেয় হয়ে গেল। এবার আর ঠেকায় কে আমাকে, তার হাত ধরে বললাম, আমাকে ছেড়ে কোথায় হাড়িয়ে ছিলে?
-কেন আপনি আমাকে খুঁজেছেন বুঝি?
-জানো তোমাকে ছাড়া আমার এক দন্ড থাকতে কত কষ্ট হয়েছে?
-কেন কষ্ট হল আমি আপনার কে?
-জানি না তুমি আমার কে। তবে এটুকু জানি তুমি আমার মেঘ বালিকা। কি হতে কোন আপত্তি নেই তো?
-আপত্তি থাকলে কি খুব সমস্যা?
-না খুব সমস্যা না। তবে ভেবেছিলাম। আজকে এই বৃষ্টি মাখা বিকালটা মেঘ বালিকা কে উৎস্বর্গ করব । তা আর হবে না। একটু মন খারাপ করে বললাম আমি। এবার মেঘ বালিকা নিজ থেকে আমার হাতের আঙুল ধরে বললো,
-তবে দেরী করছো কেন। চল বৃষ্টিতে হাড়িয়ে যায় দুজন।
পায়ের জুটো খুলে ছাউনিতে রেখে নেমে পড়লাম বৃষ্টিতে। কোন এক মেঘ বালিকাকে সাথে নিয়ে উৎস্বর্গ করবো বলে তার নামে, জীবণের সেরা বিকাল গুলো। আজকের এই মেঘ যুক্ত বৃষ্টি ন্যায় বিকাল টা সাক্ষী রেখে নতুন করে। কোন এক মেঘ বালিকার উপন্যাস লিখতে।যে উপন্যাস হবে জীবণের সেরা উপন্যাস আর তার নায়কা মেঘ বালিকা।