কে ছিলো?

কে ছিলো?

হিয়ান আর উর্বশী’র আজ দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকী। দুজনেই বেশ হাসিখুশি আজ। হিয়ান বিকেলেই অফিস থেকে চলে আসছে। সন্ধার পরে দুজনে আজ এক সাথে ঘুরবে। উর্বশী’র ইচ্ছে বাইকে করে গ্রামের দিকে ঘুরে আসবে। প্লান মত দুজনে সন্ধার আগেই বের হয়েছে। হিয়ান বাইক চালাচ্ছে, আর পিছনে উর্বশী। দুজনে তাদের বিয়ের সময়ের কথা বলছে, যার ফলে হিয়ান প্রায়ই পিছনে ঘুরে তাকাচ্ছে।

সন্ধ্যা হয়ে গেছে মাগরিবের আজান ও হয়ে গেছে। হিয়ান বাইকের গতি একটু বাড়িয়ে দিলো। তখনই দূর থেকে একটা ছেলে বাইক থামানোর ইশারা দিলো। ছেলেটার ডান হাতে একটা হলুদ শপিং ব্যাগ, বা হাতে প্যাচানো কিছু কাগজ, পড়নে সাদা গেঞ্জি আর নেভি ব্লু প্যান্ট, চোখে চশমা পড়া । হিয়ান বাইক থামিয়ে ভালো মত লক্ষ করলো ছেলেটার বয়স আনুমানিক ১৮/২০ হবে। ছেলেটাই প্রথমে বললো,

-ভাই এভাবে যে বাইক চালাচ্ছেন দুর্ঘটনা ঘটবে তো। আপুর সাথে তো পরেও কথা বলতে পারবেন। এভাবে বার বার পিছনে তাকাচ্ছেন এতে তো বিপদ হতে পারে। হিয়ান চিন্তা করে দেখলো কথা ঠিক, সে কিছু বলার আগেই ছেলেটা চলে গেলো। “আজব ছেলে তো”, এই টুকু বলে হিয়ান আবার বাইক চালাতে লাগলো। তবে এবার আর পিছনে ঘুরে কথা বলছে না।

একটু এগোতেই রাস্তার মাঝে ছোট খাটো একটা ভিড় দেখলো ওরা। ইচ্ছে না থাকলেও বাইক থামাতে হলো। একটা লোকের থেকে হিয়ান জানতে পারলো প্রায় মিনিট দশ পনেরো আগে এখানে এক্সিডেন্ট হয়েছে। একটা দ্রুত গতিতে আসা বাইক অল্প বয়সি এক ছেলেকে ধাক্কা দিয়েছে। বাইক টিতে একটা ছেলে একটা মেয়ে ছিলো। ঘটনা হঠাৎ ঘটাতে কেউ ধরতে পারেনি বাইক টাকে। তবে ধাক্কা খাওয়া ছেলেটি মারা গেছে। ইতিমধ্যে এম্বুলেন্স সহ পুলিশ এসে গেছে। লাশটিকে এম্বুলেন্স এ তোলা হচ্ছে। কি ভেবে হিয়ান ছেলেটার মুখের দিকে তাকালো। মৃত ছেলেটাকে দেখেই হিয়ান এর শরিরে যেন কাটা দিয়ে উঠলো। হিয়ান এর অবস্থা দেখে উর্বশী ও ছেলেটার দিকে তাকালো।

উর্বশী এক পর্যায়ে ভয়ে হিয়ান এর হাত খামচে ধরলো। তারা দুজনেই অবাক ও ভয় পেয়ে গেছে। কিছুক্ষন আগেই যে ছেলেটা তাদের বাইক থামিয়ে কথা বললো, তার লাশ এখানে কি ভাবে? পড়নেও সেই একই পোষাক। এক পাশেই সেই হলুদ ব্যাগটি পড়ে আছে। দুজনের মনে একটাই প্রশ্ন তবে তখন কে ছিলো? এমনিতেই শীতকাল তার উপর বাইরে ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছে। নানা ভাইয়ের আসার কথা সন্ধার আগেই। এখন ও এসে পৌঁছায়নি। তার উপর মাগরিবের নামাজ পড়তে গিয়ে ছাতাটা হারিয়ে এসেছি। মানুষ গুলো কেমন যেন, মসজিদে এসেও এদের শান্তি নেই। অন্যের ছাতা কি সুন্দর ভাবে নিয়ে গেলো।

আম্মুর চিন্তা যেন বেড়েই চলছে। আম্মুর আর কোন বোন নেই তো.. তাই নানা ভাই আম্মুকে অনেক আদর করেন। নাতি নাতনীদের ভিতরেও আবার আমাকেই নানা বেশি ভালোবাসেন। হঠাৎ ফোন এর স্ক্রিনে নানার নাম্বার, আমি মুচকি হেসে আম্মুকে বললাম, “দেখো তোমার বাপে ফোন দিছে” রিসিভ করে কানে ধরতেই একটা বিকট শব্দ হলো। মনে হলো যেনো স্টিলের পাইপের উপর কেউ ভারী লোহা দিয়ে আঘাত করেছে।

ফোন কেটে দিবো ভাবলাম, তখন নানা ভাই সালাম দিলো। বিকট শব্দটা আর নেই, আমিও সালামের জবাব দিয়ে কোথায় আছে জিজ্ঞেস করলাম। নানা জানালেন তিনি স্টেশনে আছেন কিন্তু বৃষ্টির জন্য কোন রিকশা পাচ্ছেন না বলে আসতে পারছেন না। আমি নানাকে স্টেশনে অপেক্ষা করতে বললাম। আম্মুকে বলে আরেকটা ছাতা নিয়ে বাস স্টেশনে চলে গেলাম। কাছেই, অটোতে করে আট মিনিট লাগে, তারপর দুই এক মিনিট হাটা লাগে স্টেশনের ভিতরে যেতে। গিয়ে দেখি নানা ভাই ভারী দুইটা ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে বৃষ্টির কারনে একটু ভিজে গেছে যদিও । আমায় দেখে জড়িয়ে ধরলো। নানার শরির থেকে চেনা সেই আতরের ঘ্রাণ টা পেলাম যেটা সে সব সময় ব্যবহার করে।

এতক্ষনে বৃষ্টিও থেমে গেছে। রিকশা খুজতে যাবো এর ভিতরেই একটা রিকশা সামনে এসে থামলো। রিকশাওয়ালা হেসে জিজ্ঞেস করলো, “মামা যাবেন নাকি?” আমি হ্যা বলে ঠিকানা বললাম। ভাড়া ঠিক করে নানাকে সহ রিকশায় উঠে বসলাম। এরই মাঝে আবার ফোন বেজে উঠলো, স্ক্রিনে আম্মুর নাম্বার। রিসিভ করলাম কিন্তু কিছু শুনা যাচ্ছে না ঠিকমত, নানা বললেন একটু সরে কথা বলতে হয়তো নেট সমস্যা। রিকশা থেকে নেমে একটু সামনে গেলাম। তারপর আম্মুর কান্নার আওয়াজ পেলাম ওপাশ থেকে। আম্মুকে থামতে বলে জিজ্ঞেস করলাম,

-আম্মু কি হইছে, হঠাৎ কাঁদতাছো কেন?

-তো…তোর নানা..

-হ্যা নানা তো রিকশাতে আছে,

এই বলে আমি পিছনে ঘুরে দেখি রিকশা সহ নানা নেই। ফোনের ওপাশে আম্মু বলে উঠলো, “তোর নানা আমাদের বাসায় আসার সময় এক্সিডেন্ট করেছে। সে যেই রিকশায় ছিলো সেই রিকশাওয়ালা ও মারা গেছে” আমার মুখ দিয়ে যেন কথা বের হচ্ছে না। এটা কি করে হতে পারে? তবে আমায় ফোন করেছিলো কে? আমি কাকে নিতে আসলাম?

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত