চারুলতা

চারুলতা

“আপনার ফোন নাম্বারটা দেওয়া যাবে?” মেয়েটা চোখ পিটপিট করে তাকালো।তারপর এক ভয়ংকর ধরণের সুন্দর মুচকি হাসি দিয়ে বললো “হ্যাঁ, নিন ২৪৪১১৩৯” অনিক ক্যাবলার মতো তাকালো মেয়েটির দিকে।মেয়েটি এবার শব্দ করে হেসে উঠলো।হাসতে হাসতেই বান্ধবীদের নিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে।অনিক তখনো ক্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছে।চশমা পড়া একজোড়া চোখ,গোলগাল ফর্সা মুখ আর মাথা ভরা কোকড়া চুলে অনিককে এখন সুন্দর গাধার মতো দেখাচ্ছে।অনিক নিজের বোকামি দেখে নিজেই অবাক হলো।প্রথম দিনেই মেয়েটার ফোন নাম্বার চেয়ে বসলো সে!অথচ সে চেয়েছিলো মেয়েটির নাম জিজ্ঞেস করতে।এত বড় ভুল কি করে করলো সে!কিন্তু মেয়েটিই বা ওই নম্বরটা কেন বললো?ওর নাম কি বেলা বোস নাকি!!!!

মেয়েটিকে অনিক আজই দেখেছে প্রথম।আজ তাদের ভার্সিটির কালচারাল ফাংশন ছিল।অনিক এবছর মাস্টার্স পরিক্ষার্থী।অনিক বরাবরই কালচারাল ফাংশনে আসে মূলত আড্ডা দিতে।ফাংশন দেখার আগ্রহ তার খুব একটা নেই,কখনোই ছিল না।বরাবরের মতোই আড্ডা দিচ্ছিলো সে।হুট করে এক কিন্নর কন্ঠ অনিকের কানে বেজে উঠলো।স্টেজের দিকে তাকিয়েই অনিকের চোখ আটকে গেলো।কে এই মেয়েটা!মারাত্মক সুন্দর একজোড়া চোখ,একরাশ লম্বা কেশ,কেশবতী শব্দটা যেন ওরই জন্য!কি সুন্দর করে মিটমিট করে হাসছে আর হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে গান গাইছে!বেগুনি রঙের শাড়িতে কি অপূর্ব সুন্দর লাগছে মেয়েটিকে!ঘোর লেগে গেছে অনিকের।
পাশে থেকে অনিকের বন্ধু রাতুল ওকে খোঁচা মেরে বলে উঠলো, “এ কি রে!অনিক খন্দকার তাকিয়ে আছে একটা মেয়ের দিকে!যে ভুলেও কোনো মেয়েকে পাত্তা দেয় না, সে আজকে মেয়ে দেখছে!এই তোরা দেখ।শেষ পর্যন্ত আমাদের অনিকেরও ঘন্টা বেজে গেছে।”

বলেই অনিকের সব বন্ধুরা হাহা করে হেসে উঠলো।ওদের আর কি দোষ?অনিক নিজেও তো কিছু ভাবতে পারছে না।সত্যিই তো!সে কেন একটা মেয়েকে এভাবে দেখছে?!আগে তো কোনো মেয়েকে দেখে এমন হয় নি। মেয়েটির গান শেষ হতেই তার নাম জানার জন্য অনিক ছুটে গেলো তার কাছে।কি হাস্যকর!ভার্সিটির সব মেয়ের ক্রাশ কিনা মেয়ের পিছনে দৌড়াচ্ছে।মেয়েটির কাছে অনিক পৌঁছালো ঠিকই,কিন্তু মেয়েটির সামনে দাঁড়াতেই সেই মারাত্মক চোখ জোড়ার দৃষ্টিতে সব গুলিয়ে গেলো অনিকের।ফলাফল নামের জায়গায় ফোন নম্বর চেয়ে বসা।কি লজ্জা!কি লজ্জা!মেয়েটা কি ভাবলো কে জানে! অনেকক্ষণ ধরে ভার্সিটির গেইটে দাঁড়িয়ে আছে অনিক।সে আসলে অপেক্ষা করছে,চারুলতার জন্য।হ্যাঁ,সেই মেয়েটির নাম চারুলতা।

সেদিন যখন অনিক মেয়েটির নাম জানার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল,তখনই তার মনে পড়ে মাহিনের কথা।আরেহ!মাহিন তো কালচারাল ফাংশনের উপস্থাপনা করেছে।ওর কাছে নিশ্চয়ই সব পার্টিসিপ্যান্ট এর নামের লিস্ট আছে।অনিক মাহিনকে বলতেই মেয়েটির নাম বলে দিলো।অনিক তারপর থেকে চারুলতা নামটা নিয়েই ভেবে চলেছে।
“চারুলতা…বাহ! কি সুন্দর নাম!চারু…লতা…কি বলে ডাকবো ওকে?চারু?নাকি লতা?নাকি চারুলতা?? ” অবশেষে অনিক তার চারুলতার দেখা পেলো।দূর থেকে ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে চারু।সাদা জামায় অসম্ভব মায়াবী লাগছে চারুকে।অনিক পলকহীন চোখে চারুর দিকে তাকিয়ে আছে।এই মূহুর্তে অনিকের মনে হচ্ছে দুনিয়ার সমস্ত শুভ্রতা চারুর মধ্যেই আটকে আছে। “এই অনিক,এভাবে হ্যাং মেরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”

এমন কথায় অনিকের ঘোর কাটলো।ঘোর কাটিয়ে সে আবিষ্কার করলো,তার সামনে রাতুল দাঁড়িয়ে।কিন্তু চারু কোথাও নেই।চারু তো এদিকেই আসছিল।কোথায় গেলো!সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে চারু চলে যায় নি তো!! শিট!! “এই অনিকের বাচ্চা!আবার কোন ভাবনায় মরলি রে?” “হু…হ্যাঁ… না না,কিছু না কিছু না।এমনি দাঁড়িয়ে ছিলাম।চল যাই।” রাতুল ভ্রু কুঁচকে তাকালো অনিকের দিকে। “সত্যি করে বল তো,অনিক।তোকে এমন হ্যাং মারতে তো দেখি নি আগে।হয়েছে টা কি?তোর মধ্যে একটা আবুল্লা মার্কা ভাব চলে এসেছে।”

“হোয়াটটট…!আবুল্লা মার্কা ভাব চলে এসেছে মানে!?ফাইজলামি করিস?তুই ভুলে যাচ্ছিস কেন?আই’ম দ্য টপার অব দিস ভার্সিটি।”

“ধুররু তোর টপার!আরেহ মামা,প্রেমে পড়লে সবাইরেই তোর মতো আবুল্লা রোগে ধরে।” (দাঁত কেলিয়ে)
“দাঁত কেলানো বন্ধ কর,রাতুল।কোথায় বন্ধুকে একটু সাহায্য করবি,তা না মজা নিচ্ছিস!”
“আরেহ চাপ নিস না।চারুলতার,আই মিন ভাবির সব খবর নিয়ে ফেলেছি।”
“তো এতক্ষণ সেটা না বলে বাওয়াল মারতেছিলি কেন?বল তাড়াতাড়ি…” রাতুল দাঁত কেলিয়ে বললো,

“আরেহ দোস্ত,ধৈর্য ধৈর্য!…এসব কথা কেউ গেইটে দাঁড়িয়ে বলে?এগুলো বলতে হয় ক্যান্টিনে বসে বার্গার খেতে খেতে।”

“হ্যাংলার মতো দাঁত কেলাবি না।তুই এত খাই খাই করিস কেন,রাক্ষস?তোকে ট্রিট দিতেই আমার অর্ধেক টাকা চলে যায়।কালই তোকে পিজ্জা খাইয়েছি।আজকে তোকে আমি কিচ্ছু খাওয়াব না।”

“ভাবির খবর লাগবে না??ওকে,তাহলে আমি যাই।”
“এই দাঁড়া দাঁড়া।চল খাওয়াচ্ছি।”(দাঁতে দাঁত চেপে)
“এইতো পথে আয়..হিহিহিহি।” ক্যান্টিনে চরম বিরক্তি নিয়ে বসে আছে অনিক।রাতুল এই পর্যন্ত ৩ টা বার্গার খেয়ে ফেলেছে।কিন্তু সব কথা এখনো বলে নি।

“ওই হারামি,ওর বাবা কি করে সেটা বলছিস না কেন?”
“হ্যাঁ অনিক,আসলে সবই ঠিক আছে।ভাবি এবার ফার্স্ট ইয়ারে,আমাদের ডিপার্টমেন্টেই।মা,বাবা আর ছোট ভাই নিয়ে পরিবার।উনারা খুবই ভালো মানুষ। আর….”

“আরেহ!এগুলা তো বললি এতক্ষণ।এরপরের কথা বল না এবার!”
“একটা সমস্যা আছে।ভাবির বাবা হচ্ছেন পুলিশের এস.আই।”
“কিহহহ…!!”
“জিইইই…।ভয় লাগছে??” (ভ্রু নাচিয়ে)
“নাহ,কিসের ভয়?নো ভয়।পেয়ার কিয়া তো ডারনা কেয়া?”
“গুড।তাহলে আমার কাজ শেষ। এবার তোর কাজ তুই কর।”

পড়ন্ত বিকেল।সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিমে।আজ চারুলতার প্র‍্যাক্টিক্যাল ক্লাস ছিল।সে সবেমাত্র ভার্সিটি থেকে বেরুচ্ছিল।অনিক চারুলতার অপেক্ষাতেই ছিল।চারু বেরুতেই অনিক ওর পিছু নিলো।অনেকখানি সাহস সঞ্চয় করে চারুকে ডাকলো,

“চারুলতা…” চারুলতা পিছনে ফিরে তাকালো।অনিককে দেখে দাঁড়িয়ে গেলো।
“আপনি?কিছু বলবেন?” অনিক চারুকে ডেকেছে ঠিকই।কিন্তু কি বলবে বুঝতে পারছে না।একটু ইতস্তত করে বললো,

“সর‍্যি…”
“সর‍্যি!!কিসের জন্য?”
“না..মানে,সেদিন আমি তোমার নাম জানতে চেয়েছিলাম।কিন্তু ভুল করে তোমার ফোন নম্বর চেয়ে ফেলেছিলাম।তাই..।” চারুলতা হেসে উঠলো।আবার সেই মারাত্নক হাসি।

“এই মেয়ে তো দেখছি।হেসে হেসেই একদিন আমাকে মেরে ফেলবে।উফফ!কি মারাত্মক!আবার সব গুলিয়ে যাচ্ছে।আল্লাহ দেখো,কিছু ভুলভাল যেন বলে না ফেলি আবার!”(বিরবির করে)

” কিছু বলছেন?”
“নাহ।আমি তো সর‍্যি বলছিলাম।”
“ইট’স ওকে অনিক ভাইয়া।” অনিক বেশ চমকে গেলো।অবাক ভঙ্গিতে জানতে চাইলো, “তুমি আমাকে চেনো নাকি?” চারুলতা আবার সেই মুচকি হাসিটা দিয়ে বললো,

“আপনাকে কে না চেনে!ভার্সিটি টপার।তার উপর এত হ্যান্ডসাম।প্রথম দিন ক্লাসে এসে থেকে সব টিচারদের কাছে আপনার ব্যাপারে শুনে শুনেই সব মুখস্ত হয়ে গেছিলো।আর তাছাড়া ডিপার্টমেন্টের প্রায় সব মেয়েই তো আপনার প্রেমে অর্ধেক পাগল হয়ে গেছে।হা হা হা…”

“এভাবে হেসো না চারু।আমার হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে।”
“কি বললেন!!!???”
“ককই?কিছু না তো।” চারুলতা এখনও বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে আছে অনিকের দিকে।কথা ঘুরাতে অনিক বললো,
“তুমি প্রতিদিন এভাবে বিকেল করে একা একা বাসায় যাও?”
“প্রতিদিন একাই যাই।তবে প্রতিদিন এতো বিকেল হয় না।আজ প্র‍্যাক্টিক্যাল ক্লাস ছিল।যাই হোক ভাইয়া,আমি আজ আসি।”
“হ্যাঁ? আচ্ছা,সাবধানে যেও।”

চারু ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেলো।অনিক একপলকে তাকিয়ে আছে চারুর যাওয়ার দিকে।চারু যেতেই অনিকের মনে পড়লো বুক পকেটে রাখা বেলী ফুলের মালাটা সে চারুকে দিতে ভুলে গেছে।একবার ভাবলো,থাক পরে কখনো দেবে।পরক্ষনেই কি মনে করে ছুট লাগালো।বাইরে বেরুতেই দেখলো চারু রিকশায় করে বেরিয়ে যাচ্ছে।অনিক আর দেরি না করে লাফিয়ে আরেক রিকশায় উঠে পড়লো “মামা,ওই রিকশাটাকে ফলো করুন।” “কি করমু?” “” আরেহ মামা,ফলো করেন ফলো।মানে ওই রিকশার পিছনে পিছনে চলেন।জলদিইই..” চারুলতা তার বাসার সামনে গিয়ে রিকশা থেকে নামতেই অনিকও হন্তদন্ত হয়ে রিকশা থেকে নামলো।রিকশা থেকে নামতে নামতেই অনিক চারুকে ডেকে উঠলো। “চারুলতা….দাঁড়াও…।”

চারু পিছনে তাকিয়ে অনিককে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে গেলো।অনিক দৌড়ে চারুর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।এতক্ষণে চারু খেয়াল করলো,অনিক ব্ল্যাক শার্ট আর ব্লু জিন্স পরেছে।কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে অনিক হাঁপাচ্ছে।ফর্সা নাক লাল হয়ে উঠেছে।অনিককে দেবদূতের মতো মনে হচ্ছে চারুর।অনিক কিছু বলছে।তবে সেসব চারুর কানে ঢুকছে বলে মনে হচ্ছে না। ঘোর লাগা চোখে সে শুধু অনিককেই দেখছে।অনিক হুট করে বেলী ফুলের মালাটা চারুর সামনে ধরলো।চারু এক ঘোর কাটিয়ে না উঠতেই আরেকবার অবাক হলো।

“বেলী ফুল!!!!”

“হ্যাঁ, বেলী ফুল।আসলে তখন দিতে ভুলে গেছিলাম।তাই তোমার পিছনে পিছনে আসতে হলো।নেবে ফুলটা?”
“এটা আমার জন্য এনেছেন!!!?সত্যিই!!?” অনিক হাসলো। “হ্যাঁ,তোমার জন্য এনেছি।নেবে না?” চারুর কেন যেন ভীষণ আনন্দ হচ্ছে।ভীষণ…! মনের উচ্ছ্বাস কোনোমতে সংবরণ করে চারু ফুলটা হাতে নিলো।হেসে বললো, “শুধু এই ফুল দিতে আপনি আমার বাড়ি অবধি চলে এলেন!মহা পাগল তো আপনি!” চারুর শেষ কথাটা অনিকের কানে সুরের মতো বেজে উঠলো।তার মনে হলো,কানের উপর মোম লাগিয়ে কান দুটো সিল করে দিতে,যাতে চারুর এই কথার রেশ কখনো শেষ না হয়।

চারুর সাথে অনিকের সম্পর্কটা বেশ সহজ হয়ে উঠেছে।চারুলতা থেকে অনিক চারুতে নেমে এসেছে।তুমি থেকে তুই,আর চারুলতা আপনি থেকে তুমিতে এসেছে।তবে ফোন নম্বরটা এখনও নেওয়া হয় নি। কদিন পর পহেলা বৈশাখ।সেই দিনের প্রোগ্রাম নিয়ে প্ল্যানিং করছিলো চারুদের ডিপার্টমেন্টের সবাই।পহেলা বৈশাখের পরপরই অনিকের ফাইনাল পরীক্ষা।পরীক্ষার আগে অনিক সাধারণত পড়াশোনা নিয়েই সময় পার করে।কিন্তু এবার সে অতি উৎসাহে পহেলা বৈশাখ নিয়ে প্ল্যান করছে।তার কারণ হলো চারু।সেই দিনের অনুষ্ঠানে চারু আবার গান গাইবে।তাই এইসবের মধ্যে অনিক নিজেকে জড়িয়েছে।প্রতিদিন রিহার্সালের সময়টা অনিক কখনো মিস করে না।কারণ,চারুর গান শোনার সুযোগ সে কোনোমতেই হারাতে চায় না।আজ বিকেলে রিহার্সেল শেষে অনিক চারুকে বাড়ি পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলো।রিকশা থেকে নেমে ওরা কথা বলতে বলতে চারুদের বাড়ির দরজার দিকে যাচ্ছে।

“অনিক ভাই,তুমি সবসময় এরকম সাদা কালো শার্ট কেন পরো বলো তো? ”
“সাদা আর কালো আমার সবচেয়ে প্রিয় রঙ।”
“প্রিয় বলে সবসময় পরতে হবে?এখন থেকে রঙিন রঙিন শার্ট পরবে,বুঝেছ?”
“জি,বুঝলাম মহারানী।”
“গুড…ভেরি গুড।” বলেই চারু একটা প্যাকেট অনিকের দিকে এগিয়ে দিলো।
“নাও অনিক ভাই।এটা তোমার জন্য।”
“কি আছে এতে?”
“তুমি নিজেই দেখে নাও।”

এতটুকু বলে একটু হেসেই চারু বাড়ির ভেতরে অদৃশ্য হয়ে গেলো।অনিক দেখলো, প্যাকেটের ভেতর একটা লাল পাঞ্জাবি।সাথে একটা ছোট্ট চিরকুট।সেখানে লেখা “অনিক ভাই,কাল রাতে স্বপ্নে দেখলাম তুমি পহেলা বৈশাখের দিনে লাল পাঞ্জাবি পড়েছ।কি অদ্ভুত স্বপ্ন,তাই না?স্বপ্নটা কেন যে দেখলাম!কিছুই বুঝতে পারছি না।তুমি কি কিছু বুঝতে পেরেছ?আর হ্যাঁ,স্বপ্নের মধ্যে তুমি তোমার কালো চশমাটার বদলে একটা নীল ফ্রেমের চশমা পরেছিলে।” চিরকুট পড়ে অনিকের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।সে চিরকুটে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো।তারপর সেটা সাদা শার্টের পকেটে রেখে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো। পহেলা বৈশাখের দিন লাল পাঞ্জাবি আর নীল ফ্রেমের চশমা পরে এসেছে অনিক।সে চারুর জন্য অপেক্ষা করছে।সাথে রাতুলও আছে। “অনিক।বি কনফিডেন্ট।টেনশন নিস না।মনে রাখ,আজ তোকে বলতেই হবে।আজ বলতে না পারলে তুই আর কখনো ভাবিকে বলতে পারবি না।তখন চারু শুধু আমার না,তোরও ভাবি হয়ে যাবে।”

“শাট আপ,রাতুল।কি বলছিস এগুলো?”
“আরেহ,তোকে সাহস দিচ্ছি।তুই পারবি,পারবিই।কিন্তু একটা সমস্যা আছে।”
“কি সমস্যা?”

“তুই যতবার চারুকে ভালোবাসার কথা বলতে গেছিস,তুই ক্যাবলার মতো উলটাপালটা বলে এসেছিস।চারুর সামনে কথা বলতে গেলেই তুই আবুল হয়ে যাস।” “রায়াতুললল…আমি টেনশনে মরে যাচ্ছি,আর তুই এখনও মজা নিচ্ছিস?থাপ্পড় খেতে চাস?” রাতুল দাঁত কেলিয়ে হাসতে লাগলো।অনিক বিরক্তি নিয়ে বললো,

“দাঁত কেলাস কেন?হোয়াই?”
“পিছনে তাকা।সাবধানে, ধীরে ধীরে তাকা।মরে যাস না যেন।”

অনিক পিছনে ঘুরে তাকালো।চারুলতা আসছে।চারু লাল শাড়ি পরেছে।খোঁপায় বেলী ফুলের মালা লাগিয়েছে।হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি পরেছে।অনিক স্তব্ধ হয়ে গেছে।ওর শ্বাস চলছে কিনা,সেটা অনিক নিজেও বুঝতে পারছে না।হি ইজ আউট অফ মাইন্ড।পাশে থেকে রাতুল বললো, “দোস্ত,কন্ট্রোল!কন্ট্রোল!নিজেকে সামলা।আমি গেলাম।আজকে কিন্তু ক্যাবলার মতো করিস না।বাই।” বলেই চারুকে ইশারায় দেখিয়ে চলে গেলো। অনিক নিজেকে সামলে নিলো।চারু কাছে আসতেই অনিক বললো,

“চারু…”
“চলো অনিক ভাই।স্টেজের দিকে যাই।”
“পরে যাবো।এখনও সময় হয় নি।তার আগে আমি তোকে কিছু বলতে চাই।”
“বলো অনিক ভিতরের উচ্ছ্বাসকে সংবরণ করে বললো,
“চারু,আমি তোকে….”
“কি?বলো।”
“না মানে তোর শাড়িটা খুব সুন্দর।”
“আমাকে কি?!”
“হ্যাঁ… না মানে,তুই খুব সুন্দর।”
“কিহহ?”
“না,কিছুনা।চারু,এই যে ধর।তোর জন্য এই ফুলগুলো এনেছি।”

বলেই অনিক একগুচ্ছ হলুদ গোলাপ এগিয়ে দিলো।চারু মৃদু হেসে ফুলগুলো নিলো।”তুমি এতো ক্যাবলামি কেন করো,অনিক ভাই? ‘তুই কি চারু থেকে আমার চারুলতা হবি?’ এই কথাটা ফুলের মধ্যে চিরকুটে না লিখে রেখে সরাসরি বলা যেতো না?” এবার অনিক সব অস্বস্তি কাটিয়ে বলে উঠলো, “তাহলে তো আমি একা নই।তুইও ক্যাবলা।লাল পাঞ্জাবি আর নীল ফ্রেমের চশমা পরতে হবে,সেটা সরাসরি বললেই হতো না??”

চারু লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলেছে।মাথা নিচু করেই বললো, “আজও যদি তুমি না বলতে অনিক ভাই,তাহলে কি হতো জানো?” “কি আবার হতো?তুই সত্যি সত্যিই আমার জন্যে বেলা বোস হয়ে যেতিস।” চারু আর অনিক একসাথে হেসে উঠলো।আজ নববর্ষের দিনে তাদের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত