কালো টিপ

কালো টিপ

আমি মিহির দিকে আরও একবার তাকালাম।কালো শাড়িতে মেয়েটাকে যতটা সুন্দর লাগার কথা আমার কাছে এবারও ঠিক ততটা সুন্দর লাগলো না।কেমন যেন খাপছাড়া ভাব।কোথায় যেন কি নেই। আমার এরকম অস্থিরতায় মিহির টেনশন আরও বেড়ে যায়।এত সময় নিয়ে সেজেও যদি কিছু মিসিং মনে হয় তাহলে আর যাই হোক আত্মিক শান্তিটা আসে না।মিহি আরও কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,

-কিছু পেলে? আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেই আগের মতই মলিন মুখে বললাম,
-উহু,পাইনি। আমার কথায় মিহির মুখটা আরও মলিন হয়ে যায়। অবশ্য মিহিকে এভাবে যে সুন্দর লাগছে না তেমন নয়।মেয়েটাকে এভাবেও বেশ সুন্দর লাগছে।আমি আরও কিছুক্ষন চুপ থেকে বললাম,

-আচ্ছা,চলো বের হই। মেয়েটা আমার কথায় মলিন মুখে বলে,
-কিন্তু মিসিংটা।

মিহির কথায় আমি মুচকি হাসি।হেসে বলি, “এভাবেই বেশ সুন্দর লাগছে। সুন্দর লাগছে। আমি যখন মিহিকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হই ততক্ষনে প্রায় বিকেল গড়িয়ে সন্ধা হয়ে গেছে।ইদানীং সময়টা হুট করেই চলে যাচ্ছে।এইতো বের হলাম কিছুক্ষন আগে,এখন ই সন্ধে হয়ে গেছে।আমি মিহির পাশে রিক্সায় চেপে বসতেই পাশে দাড়ানো মেয়েটার দিকে আমার চোখ আটকে গেলো।আমি আরও একটু ভাল করে তাকালাম।মেয়েটাও আমার দিকে বেশ তীক্ষ্ণ চোখেই তাকিয়ে আছে।আমি আর রিক্সায় চেপে বসলাম না।নামতেই কালো শাড়ি পড়ে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটা আমার দিকে এগিয়ে আসলো। আমি আরও কিছুক্ষন মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকতেই মেয়েটা আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো,

-আপনি, আপনি আহাদ না? আমি কিছুটা চুপ থেকে বললাম,

-আভা?

মেয়েটা আমার কথায় মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো।এতদিন পর এখানে এভাবে আভাকে দেখে আমি একটু অবাকই হলাম।চেহারায় বেশ পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।তবে কালো শাড়িতে মেয়েটাকে বেশ লাগছে। আমি আভার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বললাম,

-কেমন আছেন?
-জ্বী ভাল।আপনি?
– আলহামদুলিল্লাহ। এসময় এখানে?
– ও আসবে।একটু ভেতরে গেছে। আভার মুখে ও আসবে শুনে আমি কিছুটা ভাবনায় পড়ে গেলাম।ও টা আবার কে!আমি একটু চুপ থেকে চুপ থেকে বললাম,

-ও মানে?

আমার কথায় আভা মুচকি হাসলো।আমি এই মুচকি হাসিটা ক্রস করে মিহির দিকে তাকালাম। মেয়েটা আমার দিকে খুব একটা রাগি চোখে তাকিয়ে নেই।হয়তো আভাকে ও চিনতে পেরেছে।আভা আরও কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
“যার জন্যে পালিয়েছিলাম,ঠিক বিয়ের দু দিন আগে। আভার কথায় আমি মুচকি হাসলাম।মুচকি হেসে চলে গেলাম বেশ কিছুদিন আগে।আভার সাথে আমার পরিচয় আরও বছর খানেক আগে।নতুন চাকরির সাথে নতুন বিয়ে।সে হিসেবে আভা খুব একটা মন্দ ছিল না।কিন্তু আমাদের বিয়ের ঠিক দু দিন আগে মেয়েটাকে আর পাওয়া গেলো না।সে আসলো আরও মাস খানেক পর।সাথে ওনার সদ্য বিয়ে করা বরকে নিয়ে।অবশ্য ততদিনে আমিও আভার বিকল্প পেয়ে গিয়েছিলাম।আমি আভার দিকে তাকিয়ে কিছুটা চুপ থেকে বেশ গম্ভীর ভাবে বললাম,

-আপনাকে কেমন যেন এই সাজে অস্বাভাবিক লাগছে। আমার কথায় আভার সাথে মিহিও একটু অবাক চোখেই তাকালো আমার দিকে।এত সুন্দর করে সাজার পরও অস্বাভাবিক শব্দটা কেমন যেন যায় না।আভা মুখে চিন্তার ছাপ নিয়ে বললো,

– অস্বাভাবিক? কোথায়,কোন জিনিসটা? আমি একটু চুপ থেকে আভার কপাল থেকে টিপটা খুলে দিতে দিতে বললাম,

-এই টিপে তোমাকে একদমই মানাচ্ছে না।তবে এখন ঠিকঠাক। আমার কথায় যেন আভা হাফ ছেড়ে বাচলো।আসলে কেউই তার অস্বাভাবিক ব্যাপারটা সহ্য করতে পারে না।মিহি যেমন তার মিসিং ব্যাপারটা এখনও ভুলতে পারেনি।আমি আর দাড়াই না।আভার থেকে বিদায় নিয়ে রিক্সায় চেপে বসতেই মিহি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,

-এটাই তোমার সেই আভা? মিহির কথায় আমি মাথা নাড়িয়ে আভার কপাল থেকে সদ্য তোলা টিপটা মিহির কপালের মাঝ বরাবর বসিয়ে দেই।আমার এ আচরনে মিহি আমার দিকে বেশ শান্ত চোখেই তাকিয়ে বলে,

-তাহলে এটাই তোমার সেই মিসিং ছিল? মিহির কথায় আমি মাথা নাড়িয়ে জানান দেই,হ্যা এটার জন্যেই তোমাকে অসম্পূর্ণ লাগছিল। মিহি আর ও কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,

-মেয়েটাকে মিথ্যে না বললেও পারতে।
-মিথ্যেটা না বললে অসম্পূর্ণ জিনিসটা তোমার কপাল ছুতে পারতো না।
-তাই বলে,এভাবে?
-হুম এভাবেই।এটা ওর বিয়ের আগে পালিয়ে যাওয়ার শাস্তি।এখন ওর বর খুজুক,মিসিংটা।যেটা আমি খুজেছি।
আমার কথায় মিহি মুচকি হেসে বলে,

-হুম,অবশেষে তুমি পেয়েছো। মিহির কথায় আমি কিছু বলি না।মুচকি হাসি।যে হাসি অবলীলায় বলে দেয়, “হু,অবশেষে আমি পাইলাম,উহাকেই পাইলাম।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত