রেগ ডে

রেগ ডে

~ হেড মাষ্টারের রুম থেকে বের হয়ে আমার রুমে যাচ্ছি। আমার রুমের কাছাকাছি আসতেই দেখি। স্কুলের বামপাশের টয়লেটের পাশে আরাফ মন খারাপ করে বসে আছে। তাকে দেখে মনে হল আজকে তো স্কুলে রেগ ডে সবাই কত মজা করছে। আর আরাফ মন খারাপ করে বসে আছে কেন? কৌতহল বসত আমি তার কাছে গিয়ে তার কাধে হাত রেখে বললাম, কি হয়েছে আরাফ ওমন মন খারাপ করে বসে আছো কেন? রেগ ডে তে সবাই কত মজা করছে? আরাফ আমার উপস্থিতি টের পেয়ে ওঠে দাড়িয়ে বললো, না স্যার তেমন কিছু না। ভাল লাগছে না? কি বল রেগ ডে সবাই কত মজা করছে আর তোমার ভাল লাগছে না? হুম স্যার ভাল লাগছে না। আরাফ কি হয়েছে আমাকে খুলে বল? না স্যার কিছু হয় নি । দেখ আরাফ আমি তোমাদের অনেক আগেই বলেছি,ক্লাস বাদে আমি তোমাদের বন্ধুর মতো। আর তোমরাও আমাকে তাই ভাব!

জ্বী স্যার। তাহলে বলছনা কেন কি হয়েছে? স্যার! বলে আরাফ একটা দীঁর্ঘশ্বাস ফেলে। হুম বল কি হয়েছে? স্যার আপনি তো জানেন। নিধী আমাদের ক্লাসের সবার সেরা। সবাই আমাকে আর নিধীকে প্রতিধন্দি ভাবে। কিন্তু বিশ্বাস করেন স্যার আমি এক মুহুর্তের জন্য তা ভাবি না। নিধী কে আমি খুব পছন্দ করি। আমার বিশ্বাস সেও আমাকে পছন্দ করে? তো সমস্যা টা কোথায় এতে?

স্যার আজকে আমাদের রেগ ডে। শুনেছি পরিক্ষার পর নিধী এখান থেকে চলে যাবে অন্য কোথাও। কিন্তু তাকে আমি কিছু বলতে পারি নি এখনো। বলতে পারি নি নিধীকে আমার ভাল লাগার কথা। আজকের পর হয়ত আমাদের পরিক্ষা ছাড়া আর দেখা হবে না। তাই কি করবো। না করবো কিছু ভেবে পাচ্ছি না। এদিকে নিধীকেও বলতে পারি নি আমার ভাল লাগার কথা।

বলে আরাফ আরেক টা দীঁর্ঘশ্বাস নেয়। আমি আঁলতো করে তার পিঠে ছুয়ে বললাম তবে দেরী করছো কেন? যাও নিধীকে বলে দাও তোমার ভাল লাগার কথা। কি করে বলবো যদি নিধী না করে দেই। তখনই বা কি করবো? আরাফ তোমার ভালবাসার প্রতি বিশ্বাস আছে না?জ্বী আছে কিন্তু? শুন তোমাকে একটা গল্প বলি তারপর তোমার মনে যা চাই তাই করো?

বলে আমি একটা বড় করে দম নিলাম। আরাফের পাশে বসে বলতে শুরু করলাম, তখন আমি ক্লাস ৮ পড়ি।আমার ক্লাসমেট ছিল সাইবা নামের একটা মেয়ে। যাকে আমি কখনো পড়াই পিছনে ফেলতে পারি নি। সব সময় সে এক হতো। আর আমি দুই। ক্লাসের সকল বন্ধুরা ভাবতো এ নিয়ে আমরা দুজন প্রতিযোগিতা করি কে কার আগে যাব? কিন্তু আমরা জানতাম আমরা এমনটা করি না। সাইবা কে দেখতে আমার খুব ভাল লাগতো। তাকে লুকিয়ে দেখতাম ক্লাসের ফাঁকে। তবে তখনও তা সাইবা জানে না? এভাবে তাকে লুকিয়ে দেখা। বন্ধুদের ছলনা ধরে তার পাশে থাকা। দুষ্টমী করা মজা করা দিয়ে কেটে যায় একটা বছর। তখন সাইবার সাথে ঠুকঠাক কথা হয়। এই যেমন কেমন আছে? লেখা পড়ার কি অবস্থা? এই সব এর বাহিরে না।

তো ক্লাস ৯ ওটার পর থেকে আরেকটু বেশিই তার সাথে কথা হতো। তবে সেটা বন্ধুদের সামনে। দুজন আলাদা ভাবে কখনো কথা হয় নি। ক্লাস ৯ এ যখন বার্ষীক পরিক্ষার রেজাল্ট দেই। তখন আমি খুব খারাপ রেজাল্ট করি। এতটাই খারাপ ছিল যে ২থেকে ২০ এর পিছনে চলে গেল আমার রোল। তাই মন খারাপ করে ক্লাসের পিছনে দাড়িয়ে থাকি। হঠাৎ সাইবা আসে আমার কাছে এসে আমার কাধে হাত রেখে বলে, মন খারাপ করো না আরিয়ান। একবার খারাপ করেছে তাতে কি? ভাল করে পড়লে দেখবে সামনে খুব ভাল করবে? আমি তখন আবেগী হয়ে কান্না করে দেই। সাইবা আমাকে শান্তানা দেওয়ার জন্য তখন বলে,

দুর বোকা খারাপ রেজাল্টের জন্য কেউ এভাবে কাঁদে। আর এ ত আসল পরিক্ষা না । ভাল করে পড় দেখবে এস এস সি তে আমার থেকে ভাল রেজাল্ট করেছ। আমি তখন বললাম। কি করে পড়বো আমার তো এখন পড়াতে ইচ্ছে করে না। মন বসে না যে পড়াই। চেষ্টা তো করি অনেক। সাইবা আমার হাত ধরে বলে,এখন থেকে হবে। আর না হলে আমি আছি না। আমি তোমাকে ভাল করে পড়তে বাধ্য করবো। তারপর থেকে সাইবার সাথে বন্ধুত্ব হয়। তার অনুপ্রেরনাই ভাল করে আবার পড়া শুরু করি। বেশ সফলও হয়। অনেক সময় ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে সাইবা কে দেখতাম। স্যারের কথা না শুনে সাইবার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। তারপর সাইবার থেকে পড়া বুঝে নিতাম। তার কারণ কি ছিল জানো?

শুধু সাইবা কে দেখা, কাছ থেকে। তার সাথে কথা বলব বলে! তার কলম ছুঁব বলে। তার খাতায় আমার নাম লিখবো বলে? তার পর থেকে অনেক ভাল ভাবে কাঁটে আমার দিন। পড়া শুনা বাদে সারাক্ষন সাইবার সাথে লেগে থাকতাম। বিভিন্ন ভাবে মজা করতাম দুজন। বন্ধুরা আমাদের নিয়ে তখন হিংস্রা করতো। আমাদের বন্ধুত্ব দেখে।

এবাবে কেঁটে যায় দিন কাল। আমাদের স্কুল জীবণ শেষের দিকে আসে। রেগ ডের দিন ঠিক তোমার মতো মন খারাপ করে ছিলাম যে আমি সাইবা কে পরিক্ষার পর এভাবে পাব কি? দেখা হবে কি আমাদের? কথা হবে কি আগের মতো।সাইবা কি আমার মতোই আমাকে ভালবাসবে? এসব ভেবে যখন আমি বসে থাকি মন খারাপ করে। আর বাকিরা রেগ ডে তে মজা করতে আত্মহাড়া। কিছু সময় বাদে সাইবা আসে আমার কাছে। তখন ও জানতে কেন মন খারাপ? কেন আমি সবার মতো রেগ ডে টা উপভোগ করছি না।

তখন আমি সাইবা কে খুলে বলি আমার মনের কথা। তাকে জানাই আমার পরিক্ষা খারাপের কারণ ছিল সে। আমার লেখাপড়ার কারণ ছিল সে। সাইবা আমার কথা শুনে। আমার মতো সেদিন সে ও খুলে বলে তার মনের সকল কথা। আমাকেও জানিয়ে দেই সে আমাকে পড়াশুনার প্রতিধন্দি ভাবতো না। আমাকেও লুকিয়ে লুকিয়ে ভালবাসতো। আমার ক্লাসের ফাঁকে লুকিয়ে তাকে দেখাটা সেও খুব উপভোগ করতো। তার খাতার পাতা বইয়ের পাতা জুরে আমার মতোই সে আমার নাম লিখে রাখত। রেগ ডে তেই দুজনের মনের কথা বলি দুজন কে। জানিয়ে দেই একে অন্যের অনুভুতি। জানো সে সবের কারণ কি আর কেন বা সে দিন সাইবা তার মনের কথা বলে? শুধু মাত্র রেগ ডের কারণে। যদি তখন না স্বীকার করতো।তার মনের কথা তবে তো হাড়িয়ে যেত আমাদের জীবণ থেকে সেই ভালবাসাগুলো।

তারপর থেকে চলে আমাদের প্রেম যদিও আমরা দুজন ভিন্ন ভিন্ন কলেজে পড়তাম। তবে আমরা আবার একই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়। তখন আরো গভীর হয় আমাদের প্রেম। দেখতে দেখতে চলে আসে ভার্সিটির জীবনের রেগ ডে। সেই দিনও আমরা দুজন মনের আনোন্দে কাঁটিয়ে দেই আমাদের জীবনের রেগ ডে গুলো। তবে এর মধ্যে একটা রেগ ডে ভিন্ন ভাবে স্বরণীয়? ভিন্ন ভাবে কি স্যার?

সে আরেকদিন বলবো। এখন তুমিই ভাব তুমি কি করবে ? হয়তো ভয়ে বলতে না পেরে হাড়াবে নিধীকে। আর বলতে পারলে সেও হয়তো তোমার হবে। স্বরনীয় হয়ে থাকবে তোমাদেরও রেগ ডে টা। আরাফ আমার কথা শুনে হাঁসতে হাঁসতে বলে স্যার আমি আপনার মতো হতে চাই। আপনার মতো করেই আমি আমার রেগ ডে কে স্বরণীয় রাগতে চাই। বলে সে ওঠে চলতে লাগলো। স্যার নিধীর কাছে যাচ্ছি।দোয়া করবেন।
চিৎকার করে বলে আরাফ।

আমি মুঁছকি হেঁসে আমার কাজে গেলাম। বিকাল বেলা স্কুল ছুটি হয়েছে সবাই চলে গেছে। আমিও রুম থেকে বের হলাম বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তখন আরাফ আর নিধী আমার সামনে এসে বলে, স্যার আপনার মতো আমাদের জীবনটাও হতে চললো। দোয়া করেন আপনার মতোই যেন আমরা প্রত্যেকটা রেগ ডে কাটাতে পাড়ি। চোখের চশমা খুলে জল আড়াল করে জবাব দেই,

না আমাদের মতো না তোমাদের টা হ্যাপি এনডিং হোক আমার কামনা। আরাফ নিধী দুজনে বলে মানে কি স্যার আপনার টার হ্যাপি এনডিং হয় নি? এটা আরেকদিন বলবো যাও এখন বাসায় যাও। পড়াশোনা করতে হবে না। নিধী আরাফ চলে গেল।আমি স্কুলে বসে চোখের জল মুছে ভাবতে লাগলাম। ভাল করেছি তাদের না জানিয়ে অন্য রকম স্বরনীয় রেগ ডে টা। আমি চাই না তারা তাদের সুখের মুহুর্তে আমর কষ্ট শুনে ব্যতিত হোক।

সেদিন ভার্সিটির সময় টা ভাল ভাবে কাটালেও তা আর শেষ হয় নি ভাল ভাবে। বন্ধুদের সাথে আনন্দো শেষে যখন আমি আর সাইবা বাসায় ফিরি। তখন আমি ফোনে কথা বলতে বলতে বেখায়ালি হয়ে রাস্তার মাঝখানে চলে আসি। ঠিক তখন একটা ট্রাক আসে পিছন থেকে। হর্ন দেই কিন্তু তা আমার কানে পৌছাই নি। তখন সাইবা আমাকে ধাক্কা মেনে রাস্তা সাইডে ফেলে দিয়ে নিজে ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে । সাইবা পারে নি সরে আসতে। তবে আমাকে ঠিকি সরিয়ে ছিল।

সেদিনই আরেকটা রেগ ডে কাটে আমার। যে রেগ ডে ছিল। সাইবার জিবনের শেষ দিন। আমার ভালবাসার শেষ দিন। আমাকে বাঁচাতে নিজে বেছে নেই মৃতুর জগৎটা কে। আমি পারি সেদিন সাইবা কে বাঁচাতে?
সাইবার রং দিয়ে মাখা মুখটা রক্ত দিয়ে ভরে যায়।তাতক্ষনিক হয় তার।

কথা গুলো মনে করে বুকের ভেতর চাপা ব্যাথাটা নতুন করে শুরু হয়। আমি সেখানেই বসে পড়ি। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসতে থাকে। জানি না এ ঝাপসার শেষ কোন রেগ ডে তে।তবে আমাকে বাঁচতে হবে এটা জানি। বাচাতে হবে এমন শত প্রমিকের রেগ ডের ভালবাসাকে। এ যে আমার কাছে চাওয়া শেষ ইচ্ছে সাইবার।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত