লাল শাড়ি

লাল শাড়ি

– ডাক্তার সাহেব ওর জ্ঞান কখন ফিরবে?
– দেখুন, এক্সিডেন্ট টা বেশ মারাত্মক ভাবে হয়েছে।আমরা এখনো কিছু বলতে পারছিনা। আমাদের যা করার আমরা করেছি।আপনারা আল্লাহ্ কে ডাকেন।

ওকে এভাবে দেখবো?ওর সাথে এভাবে দেখা হবে কখনো ভাবিনি।ওর আর আমার দেখা হওয়ার কথা ছিলো অন্যভাবে।এক বছর আগে ওর সাথে পরিচয় রং নাম্বারে।প্রথমে সম্পর্ক টা বন্ধুত্ব ছিলো।আমার মনে হয় পৃথিবীর সব সম্পর্ক ই বন্ধু থেকে শুরু।তারপর ভালোবাসা। আমিও ওর ভালোবাসায় পড়ে গেছি।পড়বো না, আচ্ছা ওর মত এত ভালো ছেলে হয় নাকি? আমার মত অগুছালো মেয়ে হয়ত পাওয়াই যাবে না।সেই অগুছালো মেয়েটাকে ঔ তো গুছিয়ে দিতে।প্রতিদিন সকালে ফোন দিয়ে ঘুম ভাঙ্গানো,ক্লাসে যেতে তাড়া দেওয়া,দুপুরে খেলাম কিনা,ক্লাস থেকে বাসায় ফিরলাম কিনা সব সবকিছু ও মনে করিয়ে দিতো।কত স্বপ্ন আমাকে নিয়ে দেখতো।আমি এতকিছু জানি না ওকে ভালো হতেই হবে আমার জন্য।

– তুমি বুঝি কাজল?
– জ্বি আপু।
– তোমার কথা আদিব প্রায় বলতো।এই তো আগামী মাসে তোমার সাথে নাকি দেখা করবে আমাকে বললো।অথচ দেখো এভাবে ও বেডে শুয়ে আছে নিথর দেহে।এই দৃশ্য আমাকে দেখতে হচ্ছে।

– আপু কাঁদবেন না।আমাদের ছেড়ে ওকে কোথাও যেতে দিবো না আমি।
– কাজল,কোথায় উঠেছো?
– আপু,এখানে খালাতো বোনের বাসা আছে।ওর বাসায় উঠেছি।
– আমার ভাইটার খুব পছন্দ আছে বলতে হয়। তোমার ছবি আদিব আমাকে দেখিয়েছে।অথচ তুমি ছবির চেয়ে বড্ড মায়াবতী।খুব ইচ্ছে ছিলো ভাইটার বিয়ে ধুমধাম করে দিবো।

– আপু এখন এসব বলে মন খারাপ করবেন না।ওর এক্সিডেন্ট কি করে হলো?
– সকালে তো গাড়ী নিয়ে অফিস যাবে বলে
বের হলো।দুপুরে হঠাৎ হাসপাতাল থেকে ফোন। জানি না কি থেকে কি হয়ে গেলো।কাজল আমাকে কাঁদতে নিষেধ করে তুমি কাঁদছো।

– আমি ভাবতেই পারছিনা।আদিব কে এভাবে দেখবো।কতবার দেখা করার কথা ওকে বলতাম। কাজের প্রেসার নতুন ব্যবসা তাই সময় করতে পারতো না।তবুও আমার কোন অভিযোগ ছিলো না।সবসময় খেয়াল রাখত আমার।আপু আমি আর ভাবতে পারছি না।

– কেঁদো না কাজল। আমার সাথে বাসায় চলো।ফ্রেশ হয়ে আবার আসবে।
– না আপু।আমি কোথাও যাবো না।ওর জ্ঞান আসুক।আমি ওর সাথে কথা বলবো তারপর যাবোযেখানে খুশি।

আপনি যান।আমি আছি। আপুকে বিদায় দিলাম।আমি আদিবের পাশেবসে আছি।কখন ওর জ্ঞান ফিরবে সেই অপেক্ষায়।আমাকে দেখলে ওতো খুব চমকে যাবে। বলবে, “তুমি এখানে কি করছো?এতদূর আসার কি দরকার ছিল।”আমি তার মাথায় হাতবুলিয়ে বলবো, ” খুব দরকার ছিল মশাই।আমি নাএলে কে আসতো?কে তোমার পাশে থাকতো।” কখন তোমার জ্ঞান ফিরবে আদিব?এভাবে প্রায় তিনদিন হয়ে গেলো।ডাক্তার রা খুব চেষ্টা করছে।আপু জোর করে আমাকে বোনের বাসায় পাঠিয়ে দিলো।আমি যেতে চাচ্ছিলাম না।মনে হতো ওর পাশ থেকে একমুহূর্তের জন্য সরে গেলে ওকে আর দেখতেপাবোনা।আপুর জোরাজুরি তে যেতে বাধ্য হলাম।

– আপু সবাই এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?আদিব ঠিক আছে তো?ওর জ্ঞান এসেছে তাই না?চুপ কেন আপু?কি হয়েছে?
– কাজল তুমি শান্ত থাকো।
– কি শান্ত থাকবো?আমি ভিতরে যাবো।
– এখন যেও না।একটু পরে যেও।
– আপু আমি এখুনি যাবো।আমি আমার আদিব কে দেখবো।সরে যান।কি ব্যপার নার্স সব খোলে ফেললেন কেন?

– দেখুন আপনি একটু শান্ত হোন।
– আমি আপনাদের কিছু জিজ্ঞেস করছি?
– আমরা খুব চেষ্টা করেছিলাম।শেষ রক্ষাকরতে পারিনি।দুঃখিত।
– আমি এসব মানি না।মানতে পারবোও না।

সব মিথ্যে কথা।সব আপনাদের চালাকি। আদিবকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চান তাইতো?আমি তো ওকে কোথাও যেতে দিবো না। এই এই আদিব,তাকিয়ে দেখো একবার তোমার কাজল।অনেক কথা জমা আছে।সব কথা বলবো। ওরা কি সব বলছে।তুমি নাকি নেই।আমাকে এটা মানতে হবে নাকি।আমি জানি তুমি চুপ করে আছো।আচ্ছা চুপ থাকো।আজকে সব কথা আমিই বলবো।দেখো আমি লাল জামদানী পরেছি।তোমার প্রিয় কালার লাল।এটা তুমি চিনছো?আমার জন্মদিনে এটা তুমি পাঠিয়েছিলে।সাথে ম্যাচ করে চুড়ি, গহনা সবকিছু। আর বলছিলে যেদিন আমাদের প্রথম দেখা হবে, ” কাজল তুমি লাল জামদানী টা পরে আসবে।সাথে হাত ভর্তি চুড়ি পরবে।চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ আমি শুনবো।আর শুনো চোখে কাজল পরবে।কাজল কালো চোখে আমি হারাবো।”

দেখো না আদিব আমি আজ সব পরে এসেছি। তুমি এভাবে ঘুমিয়ে থাকলে হবে?বাহিরে দাঁড়িয়ে আপু কাঁদছে।তুমি তো বলতে আপুকে কখনো কাঁদতে দিবে না।যদি কখনো আবার জন্ম হতো আপুর ভাই হয়ে আসতে।সবসময় তো এটা বলতে।তাহলে সেই আপুকে এভাবে কষ্ট দিবে?তুমি তাকাও একবার।আর অভিমান করো না।আদিব, আমি কিন্তু খুব রেগে যাচ্ছি। এবার কিন্তু আমি জোর করে তোমাকে জাগাবো। তুমি ফোন করতে তোমার কথার শেষ থাকতো না।তোমার কথায় নিজেকে হারাতাম আবার নিজেকে খুঁজে নিতাম।আর আজ চুপ থাকবে না?একবার চোখটা খোলো।দেখো তোমার কাজল তোমাকে বাড়ী নিয়ে যাবে।

তোমার জন্য কেঁদে কেঁদে আমার কাজল কালোচোখ গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তখন তো বলবে, “তোমার চোখে এত কালি কেন।” তুমি কি আমার কথা শুনছো না আদিব? আদিব এই আদিব উঠো আদিব কেটে গেল মাস…কেটে গেল বছর (মেয়েটি আর বিয়ে করেনি। মেয়েটিকে প্রায় সময়ই দেখা যায় খোলা আকাশের নিচে বাসার ছাদে বসে কান্না করে, সেই লাল জামদানী শাড়ি পড়া।)

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত