চোরের উপর বাটপারি

চোরের উপর বাটপারি

আমি নিজের বাড়িতেই চুরি করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এর আগে কখনো চুরি করিনি তাই একটু ভয় ও লাগছে। করিনি বললে ভুল, পকেট মারার অবিজ্ঞতা আছে। কিন্তু আজ টার্গেট আলমারি। তাও আবার রাতের বেলা, ধরা পড়লে কি হবে কোন ধারনা নেই।

চাবি দাদির বালিশের নিচে রাখা, যাতে আমার সন্দেহো না হয়। এর আগে আম্মুর কাছে থাকতো কিন্তু দুই দিন হলো দাদুর বালিশের নিচে। গোপনে জেনেছি এটা। আসোলে দাদুকে ঘুমের ভিতর কেউ সামান্য টাচ করলেও সে পুলিশের গাড়ির মত প্যা পু করে উঠে। খুবই নরম ঘুম তার। আর দাদুর আলাদা কোন রুম নেই। ডাইনিং রুমেই একটা ছোট বিছানা তার জন্য। সে প্যা পু করলেই সর্ব প্রথম ভাইয়া ভাবী টের পাবে মানে আমার রক্ষা থাকবে না। মূল কথায় আসি। গত চার দিন যাবৎ আমি ফোন শূন্য হয়ে আছি। আর সেটা এখন আলমারিতে অবস্থান করছে। ফোনের জন্য নাকি আমি দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছি তাই আমার থেকে ফোন কেড়ে নেয়া হইছে।

যাই হোক, নিজেকে চোর বলতে একটু সম্মানে বাধছে, তবে কি আর বলবো? চোরের মতই এখন দাদির খাটের কাছে যাচ্ছি। বিভিন্ন ফিল্মে দেখেছি চোরেরা তেল মাখে শরীরে আর লুঙ্গি পড়ে। আমার লুঙ্গি পড়ার অভ্যেস নেই আর তেল দেখলে শরীর গিজ গিজ করে। ধীরে ধীরে দাদির খাটের কাছে গেলাম। বুড়ি এমন ভাবে শুয়ে আছে চাবি বের কঠিন না শুধু, একে বারে অসম্ভব। হঠাৎ ভাইয়ের ঘরে আলো জ্বেলে উঠলো। আমার হৃদস্পন্দন বাড়তে লাগলো ইতিমধ্যে দরজা খুলে গেছে। উপায় না পেয়ে দ্রুত খাটের তলায় চলে গেলাম।

দেখলাম নেহা ভাবী হাই তুলতে তুলতে ডাইনিং টেবিলের কাছে আসছে। আমার খেয়াল ছিলো না, রাতে ভাবী পানি খেতে উঠে। প্রতিদিন ই পানি নিয়ে ঘুমায় তবে প্রায় সময় নিতে মনে থাকে না। পানি খেয়ে ভাবী চলে গেলো, আমি বের হতে যাবো তখন কানে একটা আওয়াজ আসলো ” মামা কি এলাকার চোর?” এটা দৈব বাণী কিনা চিন্তায় পড়লাম। ফেরেশতারা নিশ্চই আমায় মামা বলবে না। মোড় দিয়ে উলটো ঘুরে একটা কালো মুর্তি দেখলাম। ভয়ে চিৎকার দেয়ার আগেই একটা তেলতেলে হাত আমার মুখ চেপে ধরে বলতে লাগলো “মামা থামেন আমিও আপনার মত চোর”

এখন, সে মানুষ বলে আমি খুশি হবো! নাকি আমায় চোর বলাতে বেদম মাইর দিবো!, কনফিউশন এ পড়ে গেলাম। আমায় চুপ দেখে বেটা বলতে লাগলো “মামা যা পাইবো ভাগ কইরে নিমু নে। আপনে খালি আমারে একটু হ্যাল্প কইরেন” প্রথমে বুঝিনি, পড়ে খেয়াল করে বুঝলাম সে হেল্প মানে সাহায্য চাইছে। একটু চিন্তা করে দেখলাম। এই বেটা জাত গত চোর এরে দিয়ে আমার মোবাইল টা হাতানো যাবে। এছাড়া আরো কিছু কাজ করানো যাবে। তার আগে বেটার সাথে আলাপ করতে হবে।

– আমি এলাকার চোর, কিন্তু বেটা তুই কে?
-মামা, আমার নাম রতন, আমি দূরের এক গ্রাম তে আইছি।
– হুম বুঝলাম। তবে শোন, এই বাড়িতে তেমন কিছু নাই। অন্য বাড়িতে চল পাশের এলাকায় মালদ্বার পার্টি আছে।

আমার কথা শুনে রতন তাড়াহুড়া করে যেতে চাইলো। আমাদের বাড়ির সাথে একটা গাছ আছে, বেটা সেগুলার সাহায্যে ছাদে উঠছে তারপর সিড়ি দিয়ে ভিতরে। সি সাংঘাতিক, কালকেই গাছ কাটতে হবে।

বাইরে এসে রতনের চাঁদ মুখ দেখলাম। সাড়া শরীরে তেল মাখা, আর পড়নে শুধু লুঙ্গি। মোবাইল থাকলে একটা সেল্ফি তুলে রাখতাম। আমার পড়নে থ্রি-কোয়ার্টার আর টি-শার্ট দেখে রতন বললো “আচ্ছা মামা? শহরের চোর কি এই সব পোষাক পড়ে চুরি করে?” এই ব্যাটা আমারে বার বার চোর বলে ইনসাল্ট করতাছে। রতেনর দেখি রিকশা ও আছে। দিনের বেলাতে নাকি ও রিকশা চালায়। ওর রিকশা করে এক্স এর বাড়ি যাচ্ছি। আজ এক্স এর বাড়ির দফারফা করে দিবো।

বাড়ির সামনে এসে রতন কে এক্স এর রুমের নকশা বুঝায় দিলাম। নকশা বুঝে রতন চলে গেলো ভিতরে। তিন মাস হলো ব্রেকাপ হইছে। এক্স এর বর্তমান বফে ওরে আই ফোন দিছে কিছুক্ষণ পরে ওইটা আমার হবে ভাবতে গা শিউরে উঠে। আধ ঘন্টা পর রতন বাইরে আসলো। বাহ বেটা চোর হইলেও লোক ভালো। আই ফোন দেইখা আমি আবেগে আপ্লুত হয়ে গেলাম। রতন বললো “মামায় কি জীবনে মুবাইল দেহেন নাই? আমি তো জীবনে কত মুবাইল ইউস করলাম ” মনে মনে বললাম “ওরে রতন আই ফোন এর মুল্য তু কি বুঝবি? ”

রতনে আরো দুইটা মোবাইল আনছে। এর ভিতর একটা আমি গিফট করছিলাম। এছাড়া আমার দেয়া অনেক গিফট ই রতন চুরি করে আনছে, সাথে এক্স এর ভ্যানিটিব্যাগ ও, রতন বেটা তো আর জানে না এই ব্যাগে মেকাপ ছাড়া কিছু নাই। রতনের একটু প্রশংসা করলাম। প্রশংসা পেয়ে রতন লজ্জা পেলো। ভুলভাল বুঝিয়ে ওরে আবার আমার এলাকায় নিয়ে আসলাম। ওরে দিয়ে আরেকটা কাজ করানো বাকি। সেটা হলো আমার ফোনটা আমার চাই ই চাই। ওইটা আমার ভালোবাসা, ওর সামনে আইফোন ও কিছু না। পুর্বের বাড়িতে আসছি বলে রতন জিজ্ঞেস করলো “মামা! এই বাড়িতে না একবার ঢুকছিলাম?” আমি বললাম “আসলে এই বাড়ির আলমারিতে কিছু গয়না আছে, যেগুলার কথা ভুইলা গেছিলাম”

– গয়না?

-হুম, কেন তোর লাগবে না?

-কি কন না কন মামা। গয়না বাগড় বিয়া করতে পারিনা। গেরামে আমারা বাড়ি ঘর সব আছে। এহন গয়না পাইলেই বিয়া করুম।

-বাড়ি ঘর আছে তাও চুরি কেন করিস?

– ভাল লাগে মামা। অ আপ্নে বুজবেন না। চুরি করতে একটা মজা আছে।

প্রথমে ভাবছিলাম আমার মোবাইল পেলে ওরে ছেড়ে দিবো। কিন্তু এ বেটা তো অভাবে চুরি করে না। চুরি করা ওর স্বভাব। এখন প্লান বি প্রয়োগ করতে হবে। বাড়ির ভিতর ঢুকলাম। রতন কি সহজে দাদির বালিশের নিচ থেকে চাবি বের করলো। আলমিরা টা, এই রুমেরই এক পাশে। রতন কে বললাম যা আলমিরা খোল। রতন আলমিরার দিকে যাচ্ছে আর আমি আস্তে আস্তে পিছনে সরে আমার রুমের দরজার কাছে যাচ্ছি।

যেই না রতন আলমিরার দরজা খুললো আমি “চোর চোর” বলে চিৎকার দিয়েই রুমের লাইট অন করলাম” আগেই বলছি আমার দাদির ঘুম নরম। সেও তার প্যা পু শুরু করে দিলো। রতন আহাম্মক এর মত দাঁড়িয়ে আছে। রফি ভাইয়া তার রুমে দরজা খুলে আমায় দেখলো নিজ রুমের সামনে আছি। আর রতন কে আলমিরার সামনে, ভাইয়ের জিম করা বডি দেখে রতন ভয়ে শেষ। ও আমায় কিছু বলার আগেই ওর মুখ বেধে দিলাম। তারপর উরাধুরা মাইর।

রাতেই পুলিশ ডাকা হলো। আশ পাশের বাড়ির লোকেরাও চেঁচামিচিতে চলে আসছে। সবাই আমার প্রসংসা করছে, আহ বেশ ভালোই লাগছে। এক্স এর আই ফোন রেখে বাকি সব পুলিশ কে দিয়ে দিলাম। সখের চুরির ধাক্কা এবার রতন জেলে গিয়ে বুঝবে। আব্বা আমার এমনথ কাজে খুশি হয়ে আমার মোবাইল ফেরত দিয়ে দিলো। আহা শান্তি, আমার জানু, এখন আমার সাথেই থাকবে”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত