শঠ

শঠ

সেদিন ভোরবেলা একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে শাওনের ফোনে। শাওন তখন গভীর ঘুমে বিভোর। মধ্যরাত পর্যন্ত নাইট ক্লাবে সময় কাটিয়ে শেষ রাতে বাসায় ফেরে সে। তারপর বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমের রাজ্যের সকল ঘুম তার চক্ষু জুড়ে বসে। যার কারণে সে ফোনকলটা রিসিভ করতে পারে না। সকালে যখন ঘুম ভাঙলো, তখন সে ফোনটা হাতে করে দেখলো একটা অাননোন নাম্বার থেকে তাকে বেশ কয়েকবার কল করা হয়েছে। সে বিছানা থেকে নামতে নামতে কল ব্যাক করলো। কয়েকবার রিং হতেই রিসিভ হয়ে গেল। অপর প্রান্ত থেকে একটা মেয়েলি কণ্ঠ তাকে বলে উঠলো, কেমন আছো শিহাব? শাওন বললো, সরি! আমি শিহাব না।

– তাহলে?
– শাওন।
– ও হ্যাঁ, শাওন। ভুলেই গেছি একদম।
– আপনি কে?
– রিমি।
– কোন রিমি?
– চিনবেন না।
– কী প্রয়োজনে কল করেছিলেন?
– কোনো প্রয়োজনে না। আসলে আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে।
– মানে?
– আজ ক্যাম্পাসে যাবেন না?
– হ্যাঁ, যাবো।
– ওকে আসুন, তারপর সরাসরি কথা বলি।
– ওকে।

শাওন কল রেখে দিল। সে মনে করার চেষ্টা করতে লাগলো, রিমি নামের কাউকে সে চিনে কিনা। অনেক চিন্তা করার পরেও যখন সে রিমি নামের কারো কথা মনে করতে পারলো না। তখন ভাবলো, মেয়েটা হয়তো গত রাতে নাইট ক্লাবে তাকে দেখেছে। বন্ধু-বান্ধবের ইচ্ছে ছিল নাইট ক্লাবে একটা রাত কাটানোর। শাওন তাদের ইচ্ছাটা পূরণ করেছে। বাপের অর্থ সম্পদের অভাব নেই শাওনের। কখনো ভাল কাজে আবার কখনো খারাপ কাজে টাকা ব্যয় করে সে। খারাপ কাজে বলতে ঐযে নাইট ক্লাবের খচরাদি! অবশ্য সেও মাস গেলে প্রচুর টাকা ইনকাম করে। এক্সপোর্টের ব্যবসায় আছে তার। দেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে সে।

ফ্রেশ হয়ে বাইক নিয়ে ক্যাম্পাসের দিকে রওনা দিল শাওন। ক্যাম্পাসের এক পাশে একটা গাছের নিচে বাইক থামিয়ে রিমিকে কল করলো। রিং হওয়ার সাথে সাথেই রিসিভ হয়ে গেল। রিমি বললো, আমি দেখেছি আপনাকে। আপনি একটু অপেক্ষা করুন। আমি আসছি। শাওন তার ফোনটা পকেটে রাখতেই রিমি তার সামনে এসে হাজির। মেয়েটাকে সে গতরাতে নাইট ক্লাবে দেখেছিল। সাথে সোহানা নামের একটা মেয়ে ছিল। সোহানার সাথে শাওনের পরিচয় বেশি দিনের না। এইতো মাস কয়েক হবে। তার এক বন্ধুর জন্মদিনে সোহানার সাথে পরিচয়।

– কেমন আছেন? (রিমি)
– জ্বী, ভালো। আপনি?
– এইতো যেমন দেখছেন।
– তা হঠাৎ আমাকে, কী মনে করে?
– দেখুন আমি সবকিছু সরাসরি বলতে পছন্দ করি। কোনো রকম ভণিতা একদম পছন্দ করি না আমি।
– বলুন।
– আপনাকে ভাল লেগেছে আমার।
– থ্যাংকস।
– মানে?
– মানে ধন্যবাদ।
– আমাকে পছন্দ হয়নি আপনার? শাওন একটু ভেবে বললো, উমমম অল্পস্বল্প হয়েছে।

– চলবে।
– মানে?
– মানে অল্প স্বল্প হলেই চলবে।
– বুঝিনি।
– চলুন ঐ দিকটাতে গিয়ে বসি।
– না, আজ বসতে পারবো না। কাজ আছে আমার।
– কী কাজ? সরি পার্সোনাল প্রশ্ন করে ফেললাম।
– ইট’স ওকে। আজকে কিছু প্যান্ট এক্সপোর্ট করতে হবে।
– ও।
– আপনাকে বিকেলে সময় দেই?
– উমমম, আচ্ছা ঠিক আছে।
– আচ্ছা আসি। ভালো থাকুন।

শাওন বাইক ঘুরিয়ে চলে গেলো। রিমি খুশিতে ইয়েস বলে একটা লাফ দিয়ে ক্লাসের দিকে চলে গেল। এই বছর পরেই তার অনার্স শেষ হবে। আর শাওন সবে মাত্র মাস্টার্সে এডমিট করেছে। বিকেলে শাওন রিমিকে কল করে ধানমণ্ডি লেকে যেতে বললো। রিমি আকর্ষণীয় একটা বসন গায়ে জড়িয়ে বের হয়ে গেল। যেন শাওন তার প্রতি আসক্ত হয়। রিমি লেকের গেটে এসে শাওনকে কল করলো। শাওন তাকে গেট থেকে রিসিভ করে ভেতরে নিয়ে গেল।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও শাওনকে রিমির সাথে সন্ধ্যে পর্যন্ত থাকতে হলো। থাকতে হলো বলতে রিমি তাকে থাকতে বাধ্য করলো। রিমির নয়া যৌবন, রঙিন বসন সবকিছু তাকে আকর্ষণ করছিল থাকতে। এর মাঝে সে রিমিকে একবার ছুঁয়েও দেখেছে। মেয়েদের হাত যে এতোটা নরম হয়, সেটা সে আজ প্রত্যক্ষ করলো। দেখতে দেখতে মাস দু’য়েক কেটে গেল। এর মাঝে শাওন রিমির প্রতি বেশ দারুণভাবে দূর্বল হয়ে পড়েছে। রিমির কথা বলা, চাল-চলন, চেহারা, হাসি, সবকিছু তাকে দূর্বল হতে বাধ্য করেছে। পাটের সময় চলছে। এই সময়টা ব্যবসায়ের জন্য একটা মোক্ষম সময়। শাওন ব্যবসায়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। সারাদিন পরিশ্রমের ফলে শেষ বেলায় গিয়ে সে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই আর রিমির সাথে তার যোগাযোগ কিংবা কথা বলা হয়ে ওঠে না।

প্রতিদিনের মতো আজও সে অফিস থেকে বাসায় ফিরছিল। হঠাৎ করেই রিমি তাকে কল করে তার বাসায় যেতে বললো। শাওন বাসার ঠিকানা জিজ্ঞেস করাতে সে ঠিকানা দিয়ে দিল। তাদের সম্পর্ক প্রায় তিন মাস হতে চললো, তবুও শাওন রিমির বাসার ঠিকানা জানতো না। ব্যাপারটা শাওন নিজেই একবার প্রত্যক্ষ করলো। সে বাইক ঘুরিয়ে ধানমণ্ডি ২৭ এর দিকে রওনা দিল। যেতে মিনিট ত্রিশেক লাগবে। জ্যাম না থাকলে বিশ মিনিটেই পৌঁছে যাবে।

উক্ত ঠিকানায় পৌঁছে সে রিমিকে কল করলো। রিমি বাসার নিচে নেমে তাকে উপরে নিয়ে গেল। শাওন লিফটে একবার রিমিকে জিজ্ঞেস করলো, হঠাৎ বাসায় ডাকলে যে? আংকেল আন্টি আমাকে দেখতে চেয়েছে নাকি?
রিমি হ্যাঁ বা না কোনো উত্তরই দিলো না। সুসজ্জিত, পরিপাটি একটা বাসা। শাওন ভাবছে, মেয়েটার পরিবার কত গোছালো। কত সুন্দর করে গুছিয়ে রেখেছে সবকিছু। শাওন তাকে জিজ্ঞেস করলো, বাসায় কেউ নেই? সে বললো, না। কেউ নেই।

– তাহলে আমি যাই।
– এই না না, কোথায় যাবে?
– বাসায় কেউ নেই, তো এখানে আমার কী কাজ?

দু’টো প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়ে একাকী এমন নির্জন বাসায় একত্রিত হলে তাদের সঙ্গে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে যোগ দেয় শয়তান। অতঃপর তারা অসামাজিক প্রেম লীলায় মত্ত হয়ে উঠলো। নারী দেহে যে এতো সুখ, শাওন তা উপলব্ধি করতে পেরে রিমিকে ছাড়তেই চাইছে না। রিমিও চাচ্ছে শাওন তার সাথে অনেক্ষণ এই প্রেম খেলায় মেতে থাকুক।দু’জনেই যখন ভীষণভাবে ক্লান্ত হয়ে উঠলো। তখন শাওন বললো, আমি এখন যাই। তোমার বাবা মা চলে আসতে পারে। রিমি বললো, আসবে না।

– মানে?
– তারা আজ বাসায় ফিরবে না। যাওয়ার সময় বলে গেছে আমি যেন দেখে শুনে থাকি।
– ও। তবুও এখন আমার যেতে হবে। সন্ধ্যে হতে চললো।
– আরেকটু থাকো না সোনা। সন্ধ্যে হলেই না হয় যেও।

শাওন তার এমন সঘন প্রেমের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করতে পারলো না। তারা আবারও পূর্বের ন্যায় প্রেম খেলায় মেতে উঠলো। রাতে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে এসে লম্বা একটা ঘুম দিল সে। বড্ড ক্লান্ত লাগছে তার। সকালে ঘুম থেকে উঠে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো একটা মেইল এসেছে। সচরাচর কেউ মেইল করে না। সবাই মেসেন্জার, ইমো কিংবা হোয়াটস্যাপে নক করে। সে মেইলটা চেক করতে গিয়ে দেখে রিমির সাথে তার গতকালের সংস্রব মুহূর্তের ভিডিও। ভিডিওতে রিমির মুখটা বুঝা যাচ্ছে না। তবে শাওনের মুখটা বেশ স্পষ্টভাবেই বুঝা যাচ্ছে।

ভিডিওটির সাথে ছোট্ট একটা টেক্সট, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বার দিয়ে দিলাম। অতি যত্ন সহকারে পাঁচ লক্ষ টাকা এই অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিও। নচেৎ বুঝতেই পারছো ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হতে বেশি সময় লাগবে না। আর ভাল থেকো, গুড বাই মাই ডিয়ার। কী থেকে কী হলো, শাওন এর কিছুই বুঝতে পারছে না। তার মাথাটা ঘুরাচ্ছে। সে শুধু ভাবছে, ভিডিওটা ভাইরাল হলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। কাউকে এ বিষয়ে জানানো যাবে না। কিছু একটা করতে হবে। কিন্তু বিকল্প কোনো উপায়ও সে দেখতে পাচ্ছে না। আর রিমি এমনটা করলো কেন? নাকি সে একজন শাওন দুপুরবেলা গতকালের ঐ বাসাতে রিমির সাথে দেখা করতে গেল। বাসার কলিংবেল বাজিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সে। কিয়ৎকাল বাদে একজন ভদ্রলোক দরজা খুলে দিলেন। সে সালাম দিয়ে বললো, আংকেল রিমি বাসায় আছে?

ভদ্রলোক ভ্রু কুচকে বললেন, রিমি কে? শাওন বুঝতে পারলো, এই বাসাটা রিমির না। কিন্তু রিমি গতকাল এই বাসা, নাহ! কিছুই মাথায় আসছে না। সে বললো, ওহ! সরি আংকেল। উপর তালাতে হবে মেবি। শাওন বাসা থেকে বের হতে হতে সোহানাকে কল করলো। সোহানার সাথে অনেকদিন হলো কথা হয় না তার। সোহানা কল রিসিভ করলে সৌজন্যসাক্ষাত শেষে সে বললো, আচ্ছা সোহানা সেদিন নাইটক্লাবে আড্ডা দেওয়ার সময় তোমার সাথে যেই মেয়েটি ছিল। সে তোমার কে হয়? সোহানা বিস্ময় কণ্ঠে বললো, কোন মেয়ে?

– ঐযে রিমি নামের মেয়েটা।
– কই? আমার সাথে তো সেদিন কোনো মেয়ে ছিল না।
– তাহলে ঐ মেয়েটা!
– কোন মেয়েটা?
– আচ্ছা রাখি এখন, পরে কল করবো।

শাওন কল রেখে দিলো। তার মাথা কাজ করছে না। পাঁচ লক্ষ টাকা তার কাছে কোনো বড় ব্যাপার না। কিন্তু টাকা দেওয়ার পরও যদি ভিডিওটা ভাইরাল হয়ে যায়! সে এ বিষয়ে পুলিশকেও ইনফর্ম করতে পারছে না। মান সম্মানেরও তো একটা ব্যাপার আছে।

অবশেষে সন্ধ্যের দিকে সে রিমির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিল। আর সাথে সাথে তার মেইলে একটা মেসেজ এলো, গুড বয়। আর হ্যাঁ, তোমার ভিডিওটি সযত্নে আমার কাছে রেখে দিলাম। আমরা দুই নম্বর কাজ করতে পারি। কিন্তু কথার বরখেলাপ করি না কখনো। তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো, ভিডিওটি ভাইরাল হবে না। আর আরেকটা কথা, আমাকে খুঁজার চেষ্টা করলে তুমি তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করবে। বাই বাই।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত