দুই বাল্য বান্ধবীর দেখা হয়েছে বহুদিন পর। মাঝখানে সময় গড়িয়েছে অনেক, দুজনেরই বিয়ে হয়েছে শিক্ষীত, সম্পদশালী পরিবারে। অনেকগুলো সন্তানের মা প্রথম বান্ধবী খুবই প্রাজ্ঞ এবং ডমিনেটর। বেশ কয়েকজন শিক্ষীত পুত্রবধূ নিয়েও এখনো নিজের প্রতিপত্তি এবং কতৃত্ব ধরে রেখেছেন শতভাগ। দীর্ঘদিন যোগাযোগ না থাকা দ্বিতীয় বান্ধবী বেড়াতে এসেছেন পুরো দিনের জন্য প্রথম বান্ধবীর বাসায়, ছুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। দ্বিতীয় বান্ধবী খেয়াল করলেন তাদেরকে রাণীর মত আদর যত্ন করা হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপরই পালাক্রমে পুত্রবধূরা আসছেন, তাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন আর খেদমত করছেন। বিনয়ের অবতার একেকটি পুত্রবধূ আর শাশুড়ী যেন মহারাণী-
একজন এসে জিজ্ঞেস করছে দুপুরের খাবার কী কী রান্না করবে? আরেকজন এসে জিজ্ঞেস করছে পোলাও নাকি সাদা ভাত? আরেকজন জিজ্ঞেস করছে মাংসের ভুনা করবে নাকি আলু দিয়ে ঝোল? ছোট বউ এসে জিজ্ঞেস করছে, “আম্মা সব কাজ তো শেষ, আমি কি গোসলে যাব? ” শাশুড়ী প্রতিটি বউকে ধমকাচ্ছেন আর নির্দেশ দিচ্ছেন এটা কর, ওটা কর, জোরে হাঁটো, হেলেদুলে হাঁটো ইত্যাদি। বান্ধবীর সামনে নিজের প্রভাব, কতৃত্বের নমূনা দেখাতে পেরে যথেষ্ট তৃপ্তির ঢেকুর তোলে ” আমার রাজ্যে আমার হুকুম ছাড়া শ্বাসও নেওয়া যায়না ” এরকম একটি প্রশান্তির অভিব্যক্তি চোখমুখ ফুটে বের হচ্ছে। অবস্থা দেখেতো দ্বিতীয় বান্ধবীর চোখ কপালে! তিনি খুবই ইমপ্রেসড! প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে বান্ধবীর কতৃত্বের জয়গান গাচ্ছেন আর বলছেন,
– আরে বাহ! তোমার পুত্রবধূ একেকটা দেখি জগতের লক্ষী! এই যুগে এরকম বিনয়ী, বাধ্য, আদেশ করা মাত্রই কুর্নিশে নত হওয়া পুত্রবধূ পাওয়া যায়? অবিশ্বাস্য! তারউপর মোটামুটি লেখাপড়া জানা মেয়ে সবগুলো। তুমি কীভাবে পার এমন অসীম প্রভাব বিস্তার করে সবগুলোকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাতে? বাহ্ বন্ধু! তোমার তুলনা নেই, এক্সিলেন্ট! অতুলনীয় তোমার প্রভাব! বান্ধবীর দাপটের নমুনা দেখে ভীষণ অবাক হয়ে তিনি বাড়ি গেলেন। নিজের ছেলের বউগুলোকে কোনভাবেই বাগে আনতে পারছেননা।
কিছুটা হতাশ, কিছুটা বিব্রত দ্বিতীয় বান্ধবী ভাবলেন আবার যাবেন ও’বাড়িতে বেড়াতে কিছু কৌশল শিখে আসতে পারলে কাজে লাগবে। অনেক আগ্রহ নিয়ে আরেকদিন গেলেন প্রথম বান্ধবীর কাছে বেড়াতে। তিনি খেয়াল করে দেখলেন সবগুলো পুত্রবধূ সেই আগের মতই অপরিবর্তিত আচরণ করছে। আলুভাজার আলু শক্ত থাকবে নাকি নরম হবে? ভুনা নাকি ঝোল? ব্লা ব্লা। তিনি কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বান্ধবীকে জিজ্ঞেস করলেন,” তোমার ছেলের বউগুলো এত গর্দভ কেন? শিক্ষীত মেয়েগুলো এতদিনেও কিছু শিখতে পারেনি? তরকারীতে লবণ দিবে নাকি চিনি? এটাও তোমাকে বলে দিতে হয়? তুমি কি দেশে আর মেয়ে পাওনি? তোমার মত বিচক্ষণ মানুষ ছেলের বউ খুঁজে নিতে বারবার ভুল করেছে এটি আমাকে বিশ্বাস করতে বল? ” আসলে ব্যাপার কী? এই ভেড়ার পাল কোথা থেকে জোগাড় করলে? তোমার জন্য এখন আমার মায়া হচ্ছে।
প্রথম বান্ধবী রহস্যজনক হাসি দিয়ে বললেন, এখানেইতো টুইস্ট। তুমি কি মনে কর আমি এমনি এমনিই সামাজ্রের রাণী? এই প্রভাব, প্রতিপত্তি, এই কতৃত্ব এমনিতেই ভেসে এসেছে? না, এরজন্য অনেক পরিশ্রম করে বেছে নিতে হয়েছে। আমি যদি চৌকস কোন মেয়েকে ছেলের বউ করে ঘরে আনতাম, নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাতে পারতাম? যেদিকে, যেমন চাই। আমার একক আধিপত্য বজায় থাকতো? নিজ নিজ যোগ্যতায় আলাদা ডাইমেনশন তৈরী করে ফেলতনা? আমি রীতিমতো সার্চলাইট দিয়ে খুঁজে সবচেয়ে অকর্মাগুলোকে আমার ঘরে তুলেছি। মজার কথা কী জানো? এই অকর্মণ্যদেরকে বাছাই করার জন্য ব্যবহার করেছি সবচেয়ে বিচক্ষণ মানুষজনকে। গাধা চিনতে ভুল করিনা এটাই আমার বিশেষত্ব। ছেলেগুলো মাঝেমাঝে মাথা তুলতে চায় কিন্তু, উপায় নেই – ওদের মাথা যে ভেড়ার আঁচলে বাঁধা।