আমার মেয়ে আর আমার বয়সের ডিফারেন্স মাত্র ৮ বছর। আমাদের দুজনকে এক সাথে দেখলে কেউ মা মেয়ে বলেনা। সবাই বলে,আপনারা কি দু বোন?নাকি বান্ধবী? আমার মেয়ে ফিক করে হেসে দিয়ে বলে, সে আমার মা হয় মা।আমার মা।
আমিও মুচকি হেসে বলি বকুল আমার বোন বা বান্ধবী নয়,বকুল আমার মেয়ে। ১৫ বছর বয়সে আমার বাবা মারা যান। বাবা মারা যাবার পর সংসারটা যেন অচল হয়ে পড়ে। চাচার ঘাড়ে পড়ে সংসার চালানোর দায়িত্ব। চাচা কোন রকম একটা বছর আমাদের মা মেয়েকে টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করলেন। কিন্তু তারপরই একদিন হঠাৎ এক বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে আসলেন। পাত্র খুব ধনী,অনেক টাকা পয়সা তার। একটা মেয়ে সন্তানও আছে।পাত্রর প্রথম স্ত্রী মারা গেছে। খুব কান্না করলাম, বলে দিলাম এই বিয়ে আমি করবোনা। আমার মা ও না করলেন। কিন্তু চাচার একই কথা এই ছেলেকেই বিয়ে করা লাগবে। নয়তো সে আমাকে আর আমার মাকে খাওয়াতে পারবেন না।আর বাসা থেকে তাড়িয়ে দিবেন।
যেহেতু আমার মা ছিলেন নানা নানুর এক মাত্র মেয়ে তাই তার কোন ভাই বোনও নেই। নানা নানুও বেঁচে নেই যে মা আমাকে নিয়ে তাদের কাছে যাবেন। তাই চাচার কথায় বাধ্য হয়ে আমার এই বয়স্ক লোকটাকে বিয়ে করে নিতে হলো। যার বয়স কিনা আমার থেকে অনেক বেশি। বিয়ের পরই যখন বকুল আমাকে এসে মা মা বলে জড়িয়ে ধরলো, মেজাজ টা এত্ত খারাপ হয়ে গেলো বলার মত না। নিজেই ছোট,তার উপর এত বড় একটা মেয়ে এসে মা মা করছে। ওকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললাম, দূরে থাকো।আমার মাথা ব্যথা করছে। বকুলের বাবাকেও আমার সহ্য হতোনা।
তাকে তো বলেই দিয়েছিলাম, আপনি আমার বর ঠিক আছে।কিন্তু আমার কাছে কোন দিন বরের অধিকার চাইতে আসবেন না। আর আপনার রুচি টা কেমন,বলুন তো?এই টুকু একটা মেয়েকে বিয়ে করলেন কিভাবে? তিনি কিছু ক্ষণ চুপ থেকে বললেন, আমি আমার মেয়ের জন্য একজন মা এবং বান্ধবী এনেছি। আমাকে তোমার স্বামীর অধিকার দিতে হবেনা। শুধু আমার মেয়ের বান্ধবীর মত থেকো।একজন মা হয়ে থেকো।
প্রায় একটা বছর আমি তার থেকে দূরে দূরে থাকি। কিন্তু একটা সময় মনে হয় আমার একটা বাচ্চা দরকার।আর বাচ্চাটা হলেই হয়তো আমি ওকে নিয়ে আমার জীবন টা কাটাতে পারবো। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস।আমি দু বছর চেষ্টা করেও মা হতে পারিনি। ডাক্তার আমাকে সাফ সাফ জানিয়ে দিলেন আমি কোন দিন মা হতে পারবোনা।সমস্যা আমার। বকুলের বাবার নয়। আমি সেদিন খুব ভেঙে পড়লাম। কান্নাকাটি করলাম।খাওয়া দাওয়া ছেড়েই দিলাম। হঠাৎ কে যেন এসে আমার মাথায় হাত রাখে, তাকিয়ে দেখি এক প্লেট ভাত নিয়ে মেয়েটা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
_মা তুমি কাঁদছো কেন?কেঁদোনা মা। তুমি কাঁদলে আমার খুব কষ্ট হয়। প্লিজ তুমি কেঁদোনা।
সেদিন আমি আমার বকুলকে বুকে জড়িয়ে নিলাম। আর মনে মনে বলতে লাগলাম, কে বলেছে আমি মা হতে পারবোনা?কে বলেছে আমি কোন দিন মা ডাক শুনতে পারবোনা?আমি তো মা হয়েই আছি।এইতো আমার মেয়ে। আমার মেয়ে বকুল। আর আমিই যে ওর মা। ১০ বছর পর এখন আমাদের সবাই মা মেয়ে কম। বান্ধবীই বেশি বলে। আর সবার কথা শুনে আমার মেয়ে বকুল উত্তর দেয়, ইনি আমার মা হয় মা।