বৈশাখের ভর দুপুরে পার্কে লোক সংখ্যা খুব কম থাকে। আমি আর শ্রাবণী পার্কের এক কোণে গাছের নিচে বসে আছি। গরমে শ্রাবণীর কপালে বিন্দু বিন্দু জমে থাকা ঘামের কণা গুলোকে দেখে মনে হচ্ছে মুক্তোর দানা। আমি অপলক হয়ে শ্রাবণীর দিকে তাকিয়ে আছি। শ্রাবণী কিছুটা লজ্জা পেয়ে বললো,
-তোমার ফোনটা একটু দাও তো আমি কিছু না বলে শ্রাবণীর দিকে তাকিয়ে থেকেই আমার ফোনটা ওর হাতে দিলাম। একটু পর খেয়াল করলাম শ্রাবণীর চেহারাটা কেমন জানি বদলে যাচ্ছে। গাল গুলো লাল হয়ে গেছে। চোখ দেখে মনে হচ্ছে আগুন বের হবে। আমি কিছুটা ভয় পেয়ে বললাম,
–শ্রাবণী, কি হয়েছে তোমার? শ্রাবণী আমার দিকে তাকিয়ে রাগে বললো,
-এ জন্যই তো বলি রাত ৩ টার সময় আমায় ফোন দিয়ে বলো, “বাবু তোমায় খুব মিস করছি”। মেঘলা দিনে বারবার আমায় ফোন দিয়ে বলো, “বাবু তোমায় আমি খুব ফিল করছি”। আমি তো তোমার কথা শুনে খুব খুশি হতাম। বুঝতে পারি নি তুই এইসব নোংরা জিনিস দেখে আমায় ফিল করতি । যদি জানতাম তাহলে তোর মুখে তখনি সেন্ডেল ছুড়ে মারতাম আমি শ্রাবণীর কথা শুনে অবাক হয়ে বললাম,
— বাবু, তুমি এইসব কি বলছো? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। শ্রাবনী রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললো,
– কুত্তা তোর কিছু বুঝতে হবে না। তুই যদি কখনো আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করিস তাহলে তোকে সেন্ডেল দিয়ে পেটাবে
আমি কিছু বুঝার আগেই শ্রাবণী চলে গেলো। এমন সময় আমার ফোন থেকে একটা আওয়াজ আমার কানে আসলো। আমি মাটিতে পড়ে থাকা ফোনটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে দেখি মিয়া খলিফা চিৎকার করছে।দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। আমার ফোনে এইগুলো আসলো কিভাবে? একটু পর মনে হলো গতকাল রাতে আমার ফোনটা আমার রুমমেট মামুন নিয়েছিলো। তারমানে মামুন এইগুলো ডাউনলোড করেছিলো। মেসে এসে দেখি মামুন নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। সালা আমার প্রেমের ১২টা বাজিয়ে এখন শখের ঘুম দিচ্ছে। আমি ওর পিছনে লাথি মেরে বললাম,
–ঐ, তুই ঘুম থেকে উঠ। তোর খবর আছে আজ মামুন ঘুম ঘুম চোখে উত্তর দিলো,
– দোস্ত, রাতে খুব দখল গেছে। আমার শরীরটা খুব দূর্বল। আমায় আরেকটু ঘুমাতে দে আমি রাগে বললাম,
–তোর ঘুমের গুষ্টি কিলাই। তুই আমার ফোনে এইগুলো রেখেছিস কেন?? তোর এই কাজের জন্য শ্রাবণীর সাথে আমার ব্রেকআপ হয়ে গেলো। মামুন কোন উত্তর না দিয়েই নাক ডাকা শুরু করলো রাত ১ টা বাজে আমি রাতে খাবার না খেয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে একমনে সিগারেট টানছি। এমন সময় কে যেনো আমার কাঁধে হাত রাখলো। তাকিয়ে দেখি মামুন। মামুন বললো,
-রাতে খাবি না? আমি অন্য দিকে তাকিয়ে বললাম,
–না.. মামুন বললো,
– তুই খাস নি দেখে আমারা মেসের কেউ খাই নি আমি রাগে বললাম,
–আমার জন্য তোদের না খাওয়ার কারণ কি ? মামুন মাথা নিচু করে বললো,
-তোর ব্রেকআপ হয়েছে৷ অথচ তুই ব্রেক-আপ পার্টি দিলি না। অথচ গতমাসে মুন্নির সাথে আমার ব্রেক-আপ হলো তোদের সবাইকে গলা অব্দি আমি খাইয়েছি। মামুনের কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বললাম,
–আমি তোর মত প্লে-বয় না যে দু দিন পর পর প্রেম করবো। আমি শ্রাবণীকে সত্যি মন থেকে ভালোবাসতাম। আমার কথা শুনে মামুন চুপচাপ চলে গেলো। মিনিট পাঁচেক পর শ্রাবণীর ফোন। আমি ফোন রিসিভ করতেই শ্রাবণী বলতে লাগলো,
-তোমার কি মাথা খারাপ। মানুষ মানুষকে এইভাবে মারে? আমি অবাক হয়ে বললাম,
— আমি আবার কাকে মারলাম? শ্রাবণী বললো,
– কাকে আবার, মামুন ভাইকে মেরে তো হাত ভেঙে দিয়েছো। তোমার মেসের ২ টা ছোট ভাই মামুন ভাইকে নিয়ে আজ বিকালে আমার কাছে এসেছিলো। আমায় সব বুঝিয়ে বলেছে। পর্ণগ্রাফি ওয়েবসাইট বন্ধ করার জন্য মামুন ভাই না কি একটা প্রজেক্ট তৈরি করছে। সেই জন্য কিছু ভিডিও তোমার ফোনে রেখেছিলো আর তুমি কি না তার জন্য ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে বারি মেরে উনার হাত ভেঙে দিয়েছো। এটা তুমি ঠিক করো নি। আমাকে তখন বিষয়টা ভালো করে বুঝিয়ে বললেই হতো যুব সমাজকে বাচানোর জন্যই মামুন ভাই এইসব ভিডিও নিয়ে কাজ করছে। শ্রাবণীর কথা শুনে আমি যা বুঝার বুঝে গিয়েছিলাম। মামুন শ্রাবণীকে উল্টো পাল্টা লজিক দেখিয়ে বিষয়টা সমাধান করে দিয়েছে। রুমে ঢুকে দেখি মেসের সবাই একসাথে বসে আছে। যেই আমি মামুনের কাছে যাবো তখনি মামুন বললো,
– আগেই বলে রাখছি এইসব ইমোশনালে কাজ হবে না। আজ বাহিরে সবাইকে খাওয়াতে হবে আমি ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর আব্বু প্রথম আমায় দেখতে আসছে। তাই মেসের পরিবেশ ঠিক করার জন্য সবাই উঠে পড়ে লাগলাম।আমার রুমে যত সিগারেটের প্যাকেট ছিলো সব বাহিরে ফেলে দিলাম। ৬ মাস ধরে না ধোওয়া বিছানার চাদরটা পাল্টে ফেললাম ।রুম একদম ধুয়ে পরিষ্কার করে চকচকা করে ফেললাম। বাবা আমার বিছানাতে বসার ৫ মিনিট পড়েই মামুন ল্যাপটপ হাতে তড়িঘড়ি করে আমার রুমে আসলো। এমন একটা ভাব ধরলো যে সে বাবাকে দেখেই নি। আমাকে ল্যাপটপ দেখিয়ে বললো,
-দোস্ত বিল্ডিংয়ের এই ডিজাইনটা করতে পারছি না। তুই তো এইসব ভালো বুঝিস আমায় একটু বুঝিয়ে দিবি? আমি মামুনকে বললাম,
–একটু পরে বুঝিয়ে দেই আজ বাবা এসেছে। বাবার সাথে মামুনকে পরিচয় করিয়ে দিলাম। মামুন হাসি হাসি মুখে বাবাকে বললো,
-আংকেল, আসলে আমি এইসব ডিজাইন তেমন বুঝি না। পিয়াস খুব ভালো বুঝে। তাই ও আমায় সব সময় বুঝিয়ে দেয়। তার কিছুক্ষণ পর মেসের ছোট ভাই সজিব এসে আমায় বললো,
– ভাই, এস্টিমেটিং এর এই অংকটা সারা রাত ট্রাই করলাম পারলাম না। একটু দেখিয়ে দিবেন?
আমি খাতা কলম নিয়ে আলফা বিটা কি যে কচুর মাথা বুঝালাম নিজেই জানি না। সজীব শুধু মাথা নাড়িয়ে বলে হে ভাই বুঝেছি। ইসস ভাই আপনি একটা জিনিস কত সহজেই বুঝিয়ে দিলেন। আড়চোখে তাকিয়ে দেখি বাবা আমাকে মুগ্ধ হয়ে দেখছে। বাবা যতক্ষণ ছিলো ততক্ষণ মেসের সবাই একমনে পড়েছে। কেউ বারান্দায় শুয়ে পড়েছে কেউ বাথরুমে সেভ করতে করতে পড়েছে কেউ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। আসলে সব ভন্ডামী। বাবাকে দেখালাম আমরা সবাই মেসে কত পড়াশোনা করি। বাবাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে মেসে আসতেই মামুন মুখ বাঁকিয়ে বললো,
-সালা, ল্যাপটপ ভালো করে অন অফ করতে পারিস না আর তুই কি না আমাকে ডিজাইন শিখাস। ছোট ভাই সজীব বললো,
-ভাই, আপনাকে তো কপি পেস্ট ছাড়া কখনো পাস করতে দেখি না। সেই আপনি কি না আমায় আজ অংক বুঝালেন আমি মুচকি হেসে বললাম,
— আরে বাবাকে খুশি করালাম। বাবাকে বুঝালাম তার ছেলে মেসে কত পড়াশুনা করে। আমি জানি বাবা পরের মাসে হাত খরচ বারিয়ে দিবে মাস দুই এক পরের কথা মেসে কারেন্ট নেই। আমার রুমে বসে খালি গায়ে সবাই কার্ড খেলছি। সাথে কোক আর সিগারেট। মাথাটা এমনিতেই গরম মামুন আশিকের কাছে ২ টা বাজি হেরে গেছি। আর এই বাজিটাও হারার পথে। এমন সময় কে যেন দরজায় টুকা দিলো। আমি বললাম,
— কে? কিন্তু কোন উত্তর এলো না। কিছুক্ষণ পর আবার দরজাতে টুকার শব্দ। আমি বিরক্তি মুখে দরজা খুলে বললাম,
— কোন সালারে কথা বলে না তাকিয়ে দেখি বাবা মা দরজার বাহিরে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমার মুখে সিগারেট, ডানহাতে গ্লাস তাতে কোক আর বামহাতে কার্ড বাবা আমতা আমতা করে বললো,
-তোর মাকে সারপ্রাইজ দিতে এইখানে নিয়ে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম তোদের পড়ার স্টাইল দেখে তোর মা চমকে যাবে বুঝতে পারি নি তুই সিগারেট মদ হাতে আমাদের এত বড় সারপ্রাইজ দিবি…