মোখলেস সমগ্র

মোখলেস সমগ্র

রাত বাজে ১১ টা। সিগারেটের প্রসুর নেশা পেয়েছে। পকেটে একটা সিগারেটও নাই। পাশের রুমেই ড্রাইভার মোখলেস থাকে৷ মোখলেসকে মিসকল দিলাম, একটু পরই মোখলেস পাশের রুম থেকে বলল…

-ভাই সমস্যা কি?

–সমস্যা নাই, কি করস?

-অনলাইন বিজনেস করব।

–একটা সিগারেট দিয়ে যা…!

-সিগারেটের জন্য ফকিরের মতন মিসকল দেন কেন?

মোখলেসের মুখ থেকে ফকির ডাক শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো৷ তবুও কিছু বললাম না। শ্লা বক্সদ তোকে পরে দেখে নিব। আমি বিরক্ত হয়ে মোখলেসের রুমে গেলাম। গিয়েউ শকড, মোখলেস টেবিলের উপর লাইটিং সিস্টেম করেছে। বললাম…

–কিরে কাহিনী কি?

-অনলাইন বিজনেস করব।

–কেমনে কি?

-আরে লাইভে তরকারি বিক্রি করব, তাই এসব করেছি।

–তা তোর তরকারি কই?

-আছে…!

বলেই মোখলেস টেবিলের নিচ থেকে ৫ টা প্লেট বের করলো৷ পাঁচটায় পাঁচ পদের তরকারি, আলু ভর্তা, টমেটো দিয়ে কমলি শাক, ডালের বরা, বেগুন কুঁচি কুঁচি করে ভাজি, ভিআইপি হিসেবে রয়েছে ডিম ভাজি। মোখলেসের এমন কাণ্ড দেখে আমি শিহরিত হলাম। আমি কিছু বলার আগেই মোখলেস বলল…

–এগুলো বিক্রি করব লাইভে গিয়ে।

-কেমনে?

–আরে বিকেলে পাশের বাড়ির সমস্ত ভাবি কাকিদের ফেসবুকে এড করে এসেছি। লাইভে যাব উনাদের বলছি, উনারা অর্ডার করবে।

-তুই কেমনে সেগুলো দিবি?

–অর্ডার করলে আমি হোম ডেলিভারি দিব।

-আচ্ছা তুই কর দেখি আমি।

মোখলেস ডাটা অন করে ফেসবুকে গেলো। তারপর লাইভে গিয়ে বলা শুরু করলো ‘হাই প্রেন্ড আইএম তরকারি মোখলেস। আমি আপনাদের জন্য সুস্বাদু তরকারী নিয়ে এসেছি। এখনি অর্ডার করে ফেলুন। অনলি পাশের বাসার ভাবি, কাকিদের জন্য রয়েছে আমার ফ্রি হোম ডেলিভারি।’ একটু পরই চামেলি ভাবি কমেন্ট করলো, ‘এই মোখলেস আমার জন্য ডিমবাজি নিয়ে আসোতো।’ আমি অবাক হয়ে গেলাম মোখলেছের কাজে। আরে বাহ দারুণ বুদ্ধিতো। একটু পর আবার শর্মিলা ভাবি কমেন্ট করল…’মোখলেস বাবুতা, আমার জন্য ডালের বরা নিয়ে এসো ১০ ট, তোমায় ভাই চাচ্ছে।’ মোখলেস সাথে সাথে ডাটা অফ করলো, আমি বললাম….

–আরো কিছুক্ষণ থাক। অর্ডার আসবে!

-আগে দিয়ে আসি তারপর আবার যাব।

–তোরতো দারুণ বুদ্ধি, বাম্পার ব্যবসা হবেরে…!

-ভাইজান আপনেও চলেন আমার সাথে..!

আমিও মোখলেসের কথায় রাজি হয়ে গেলাম। মোখলেস পলিথিনে করে বরা, ডিম ভাজি নিলো। আমিও ওর পিছেপিছে গেলাম৷ চামেলি ভাবিদের বাসায় মোটামোটি আমাদের ভালো খাতির করলো৷ শর্মিলা ভাবিদের বাসা রাস্তার ওপাশেই, মোখলেস রাস্তা পার হতেই খপ করে পুলিশ ওর হাত ধরে ফেলল। ভয়ে আমি ঘুরান্টি দৌঁড় দিলাম। মোখলেসকে ওরা নিয়ে যাচ্ছে, আমি দৌড় থামিয়ে লুকিয়ে পরলাম। মোখলেস বলছে…

–স্যার ছাইড়া দেন আমায়…!

-হারামজাদা তুই এতরাতে কি করিস?

–স্যার আমি লাইভে এসে তরকারি বিক্রি করতেছি।

-ফাজলামো করছিস?

–না স্যার সত্যি, আমি এ বাড়ি ও বাড়ি হোম ডেলিভারি দেই। এই দেখেন ডিম ভাজি।

-ডিম তোর পাছা দিয়ে দিব, চল থানায়।

বলেই মোখলেসকে জিপে তুললো৷ তারপর নিয়ে গেলো। সমস্যা নাই এর আগেও মোখলেস পুলিশের ডিম থেরাপি খেয়েছে। ওর এতে অসুবিধে হবেনা। আমি বাসায় চলে আসলাম। টেবিলের উপর রাখা মোখলেসের পাঁচ পদের তরকারি খাওয়া শুরু করলাম। আহ! টেশশশ…যাক মোখলেসের রান্নার হাত ভালো আছে। লকডাউন শেষ হলে মোখলেস কে নিয়ে একটা হোটেল খুলব। নাম ‘মোখলেসের রান্না সব সুস্বাদু তরকারির হোটেল।’

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত