ভাবী

ভাবী

গত ২দিন হল বরের সাথে রাগ করে বাবার বাড়ি চলে এসেছি।মূলত ভাইয়ের বাড়ি কারণ মা নেই,আর বাবাকেতো ভাইয়া একপ্রকার অবহেলা করে। আমি যতবার বরের সাথে রাগ করে আসি ভাবী আমাকে দেখে খুশি হয় কিন্তু ভাইয়া আমার সাথে কথাই বলেনা।সকালে অফিসে যায় তো রাতে ফিরে।আমার সাথে খাওয়ার টেবিলে ছাড়া আর কোথাও দেখা হয়না।খাওয়ার সময় একটু কথা বলে।

ভাবী মানুষটা অন্যরকম মানুষ।খুবই ভালো মনের মানুষ।আমাকে খুব ভালবাসেন।আমি আসলে এ বাড়িতে সবচেয়ে বেশি খুশি হন তিনি।আমাকে মায়ের মত করে আগলে রাখেন। কিন্তু এত ভাল মানুষটাকে ভাইয়া খুব কড়া কথা শুনাই।ভাবী নিরবে সব শুনে,আর সবার আড়ালে কাঁদে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একজন মেয়ে আরেকজন মেয়ের কোন জায়গায় কষ্ট হতে পারে সেটা বুঝে।কিন্তু অনেকেই বুঝেও অবুঝ সেজে থাকে। আমিও বুঝি ভাবী কতটা কষ্টে আছেন।বিয়ের এত বছরেও বাচ্চা না হওয়ার কারণে ভাবীকে কম কথা শুনতে হয়না।ভাইয়ার অত্যাচার ও সহ্য করতে হয় ভাবীকে।

ভাইয়া এই পরিবারের কাউকেই হয়ত আর ভালবাসেন না।এর কারণ মা বাবা ভাইয়ার সাথে তার প্রেমিকার রিলেশনটা মেনে নেয়নি।কারণ মেয়েটা অতিরিক্ত আধুনিক ছিল।আধুনিকতার নামে অশালীনতা।এই ধরনের মেয়েরা ভাল পরিবারের ছেলেদের সাথে প্রেম অব্দি যায় কিন্তু বিয়ে পর্যন্ত খুব কম মেয়েই যেতে পারে।সেই আপুটার অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে যায়। বাবা মার কথায় বাধ্য হয়ে ভাইয়া তখন ভাবীকে বিয়ে করে ঘরে আনেন।প্রথমে মেনে নিতে না পারলেও মায়ের মৃত্যুর পর ভাবীর সাথে সবকিছু স্বাভাবিক করে।কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি হল অনেক বছর হওয়ার পরেও বাচ্চা না হওয়ার কারণে।তার ধারণা আমাদের পছন্দ করা মেয়ের সাথে বিয়ে দেওয়ার কারণে তার জীবনটা ধ্বংস হয়ে গেছে।

আমার ভাই ভাবীকে অনেক কষ্ট দেয়। তাও ভাবী আমার আর বাবার জন্য সারাদিন কত কিছু করে।বাবার সেবা করে।আমাকে আদর করে।আমার যখন যা খেতে ইচ্ছে হয় বানিয়ে দেয়।ভাবী তার ডাক্তার দেখানোর টাকাগুলো দিয়ে আমাকে নিয়ে ঘুরতে ও যায়।তার ধারণা আল্লাহ ছাড়া আর কোন ডাক্তারই তার শূণ্য কোল পূর্ণ করতে পারবেনা।প্রায়সময় দুজনে মিলে টুকটাক শপিং করে আসি,রেস্টুরেন্টে গিয়ে কিছু খেয়েও আসি।

সেদিন বিকেলে সাদমান(আমার বর) যখন আমাকে নিতে এসেছিল তখন ভাবী কেঁদে দিয়েছিল,খুব জোর করেছিল থাকার জন্য।আমার খুব ইচ্ছে হয়েছিল ভাবীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের ঘরে।ওনি এই বাড়িতে একা একা আর কত কষ্ট সহ্য করবে? যার জন্য কষ্ট করে সে তো তাকে মানুষ বলেই মনে করেনা।এবার ভাবী একটু বেশিই জোর করলেন থেকে যাওয়ার জন্য আমি মা হতে যাচ্ছি তাই।খবরটা পেয়েই সাদমান নিতে এসেছে।

নিজেকে খুব পাষাণ মনে হচ্ছিল ভাবীকে ছেড়ে আসার জন্য।শুনেছি বড় ভাবী মায়ের মত হয়,আমার ভাবী ও তেমন। সেদিন বাসায় এসে ভাবতে লাগলাম ভাবীর জন্য কি করা যায়।শহরের এমন কোন ডাক্তার নেই যার কাছে যাওয়া বাকি আছে। প্রায় সাড়ে নয় মাস পর আমার ব্যাথা উঠে।আমার একহাত ধরেছিল আমার ভাবী।যে হাতটা তার সমস্ত শক্তি আমার দেহে স্থানান্তর করে দিচ্ছিল হয়ত।আমার থেকেও বেশি কষ্ট তিনি পাচ্ছিলেন।

এরপর আমি ব্যথার তীব্রতায় অজ্ঞান হয়ে যায়।যখন জ্ঞান ফিরে তখন প্রথমে বুজে উঠতে পারিনি কি হচ্ছিল।আমার মুখ দিয়ে মা শব্দের পরেই বের হল ভাবী শব্দটা।ভাবী আমার ডাক শুনে একটা বাচ্চা কোলে করে এনে বললেন,”তোমার বাচ্চা।” ভাবী কথাগুলো বলার সময় চোখ দিয়ে জল পড়ছিল অথচ ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে উঠেছিল।আমি বাচ্চা কোলে নিতে চাইলে দেখি সাদমানের কোলেও আরেকটা বাচ্চা।আমার খুশিতে ইচ্ছে করছিল পুরো পৃথিবীকে চিৎকার করে বলি,”আজ আমার মত খুশি কেউ নেই।শুকরিয়া।” প্রতিটা রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে আমি খোদার কাছে টুইন বেবি চেয়েছি।এক ওয়াক্ত ফরয নামাজ ও বাদ দিইনি।আর তাই আল্লাহ আমার কথা শুনেছেন।

আমি যখন ভাবীকে একটা বাচ্চা দিয়ে দিতে চেয়েছিলাম ভাবী তখন আমাকে খুব বকা দিয়েছিল।আমার শ্বশুরঘরের সবাই ও নারাজ ছিল।কিন্তু পরে তারাও রাজি হয়।আর ভাবীও মেনে নেয়। যাক আমার ত্যাগ আমার ভাই ভাবীর মুখে হাসি ফুটাল।বাচ্চা দুটোতো এমনিতেও দুই ভাই হত।এখনো তারা দুই ভাই।নিজের ভাই হিসেবে নাহয় বড় নাইবা হল।তাতে কি? তারা এখন মামাতো ফুফাতো ভাই।আর সবচেয়ে বড় কথা তারা ইসলামের ভ্রাতৃত্বে একে অপরের ভাই।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত