নিজের রুমে দরজা আটকে চুপ করে বসে আছি আর ভাবছি একটু আগের ঘটনার কথা আমার ভাইের বন্ধু আবির ভাইয়া..ছোটো বেলা থেকেই তাকে দেখে আসছি..ছোটো বেলা থেকে তার উপর একটা ভালো লাগা কাজ করলেও বড় হওয়ার সাথে সাথে এখন সেটা ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে। ছেলেটা বেশ গম্ভীর স্বভাবের কিন্তু দেখতে মাশাল্লাহ্ ..কোনো মেয়ের সাথে তেমন কথা-বার্তা বলে না…এমনকি আমার সাথে ও না… আমাকে সে এতোদিন যাবত দেখে এসেছে অথচ আমার নাম জানে কিনা সন্দেহ..আমি অনেকবার চেস্টা করেও কথা বলতে পারিনি একটু আগে অনেকদিন যাবত ভাবছি আবির ভাইয়াকে নিজের মনের কথা বলে দিবো কিন্তু কিছুতেই বলতে পারছি না…একটা মেয়ে হয়ে কিভাবে ভালোবাসার কথা বলবো…আমি তো লজ্জায় তার সামনেই যেতে পারছি না…
বারান্দায় দাড়িয়ে পায়চারি করছি হঠাৎ রাস্তায় একটা বাচ্চার উপর চোখ পড়লো…তাড়াতাড়ি একটা চিরকুট লিখে নিচে চলে আসলাম..তারপর বাচ্চাটাকে ডেকে কিছু চকলেট কিনে দিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে চিরকুট টা দিয়ে আবির ভাইয়াকে দেখিয়ে তাকে দিয়ে আসতে বললাম।ভাইয়ারা সবাই একটা দোকানের সামনে দাড়িয়ে কেরাম খেলছিলো..বাচ্চাটা ওখানে গিয়ে আবির ভাইয়াকে চিরকুট টা দিয়ে চলে আসছিলো কিন্তু ভাইয়া ওকে ডেকে দাঁড় করালো..আর এইদিকে আমি তো ভয়ে ঘেমে নেয়ে রীতিমতো খারাপ অবস্থা তার উপর কি বলছিলো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না..তাই একটু এগিয়ে গিয়ে দোকানটার পিছনের সাইড এ গিয়ে দাড়ালাম..এইবার সব কিছু স্পস্ট বোঝা যাচ্ছে কিন্তু এ কি ও তো বাচ্চাটাকে বকা ঝকা করছে…
আবিরঃএই পিচ্চি সত্যি করে বল এই চিরকুট টা তোকে কে দিয়েছে?না বললে কিন্তু তোকে বেধে রেখে দিবো…
ওর সাথে বাকি সবাই ও তাল দিচ্ছে সাথে আমার ভাইও আছে সেও তাল মিলিয়ে যাচ্ছে..মেজাজ টাই খারাপ হয়ে গেলো বাচ্চাটা ভয়ে রীতিমতো কান্না শুরু করে দিছে ইশশশ আমার জন্যেই বাচ্চাটা বকা শুনছে কেন যে ওকে পাঠাতে গেলাম এখন নিজেরই খারাপ লাগছে বাচ্চাটা কান্না করতে করতেই বললো আমি চিনি না একটা বল চুলয়ালা মেয়ে আমারে চককেট কিনে দিয়ে এইডা আপনারে দিবার কইছে(ভ্যা ভ্যা) আমি ওর কথা শুনে হা করে দাড়িয়ে আছি…এ কেমন বর্ননা….আবির ভাইয়ারাও সব হা করে দাড়িয়ে আছে…কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার বলে উঠলো আবির ভাইয়া…
আবিরঃ তুই মেয়েটাকে দেখলে চিনতে পারবি??
বাচ্চাটাঃ হ..
আবিরঃআচ্ছা তাহলে চল আমাদের সাথে…..
এইবার আমি শেষ ওখানে আর এক মুহুর্ত দাড়িয়ে না থেকে ওদের দেখে ফেলার আগে এক দৌড়ে বাসায় এসে নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলাম..সিদ্ধান্ত নিলাম কয়েকদিন আর বাসা থেকে বের হবোনা..না জানি বের হলে কপালে কি আছে…..
এখন ১ঘন্টা যাবত দরজা আটকে বসে আছি..এইদিকে আম্মু কয়েকবার এসে দেকে গেছে তাও দরজা খুলিনি…একটু পর পর পানি খাচ্ছি…তাও বার বার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে…কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না…এমন সময় আমার বান্ধবি রিয়া এসে দরজা গুটানো শুরু করলো..এমনিতেই প্যারায় আছি তার উপর এই আপদ এসে জ্বালাতন শুরু করছে….কিছু টা বিরক্ত নিয়েই দরজাটা খুলে দিলাম তারপর ওকে ভিতরে ঢুকিয়ে আবার দরজা আটকে দিলাম আধ ঘন্টা যাবত রিয়া মুখ ফুলিয়ে বসে আছে কিছুই বলছে না…এবার বেশ রাগ লাগছে..ওর অপেক্ষায় আর না থেকে নিজেই বলে উঠলাম…
আমি:কিছুই বলার থাকলে নাইলে এখন এইখান থেকে বিদায় হ অবশেষে রিয়া মুখ খুললো……
রিয়া: তুই তো রুমে আরামে দরজা আটকে বসে আছিস আর এইদিকে কি হইছে তার খবর রাখছিস!!!!! আমি অবাক হয়ে জিঙ্গেস করলাম , কী হয়ছে????
রিয়া: ওই যে আবির ভাইয়া আছে না তারে কোন একটা মেয়ে যেনো লাভ লেটার দিছে একটা বাচ্চার মাধ্যেমে…পরে ওই বাচ্চাটা কে নিয়ে ওই মেয়েরে খুজছে বাট পায় নাই পরে আমারে এসে অনেক বকা-ঝকা করে গেছে তার ধারনা আমি তাকে ওই লাভ লেটার টা দিছি আমি ওর কথা শুনে পুরাই অবাক….
আমি:এতো মেয়ে থাকতে ও তোকে কেনো সন্দেহ করছে!!!আর তোকেই বা কেনো বকা ঝকা করলো আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না…
রিয়া: আসলে আবির ভাইয়াকে আমি লাইক করতাম একদিন আমি তাকে প্রপোজ ও করি কিন্তু সে আমাকে সেইদিন খুব রাগারাগি করে…তুই জানিস ও কতো বড় শয়তান…তোর যদি আমাকে পছন্দ নাই হয় তাহলে আমাকে বলে দে কিন্তু না ব্যাটা আমারে একদফা ঝাড়ি দিয়ে আবার আামার বাসায় গিয়ে নালিস করে আসে..জানিস কী মাইরদাই না খাইছি ওইদিন আম্মুর হাতে..এখনো মনে পরলে কান্না আসে আমার ….এর পর থেকে ও আমার দুই চোখের শএু..আর আজকে হুডাই আমার বাসায় এসে আমাকে শাসিয়ে গেছে..আম্মুও এখন আমাকে সন্দেহ করতেছে…আমার কোনো কথাই বিশ্বাস করতেছে না….(কাঁদো কাঁদো ফেস এ)ওই আবির হারামিরে দেখলে ভদ্র মনে হইলে কি হবে আসলে বদের হাড্ডি একটা রিয়ার এসব কথা শুনে যেমন অবাক হয়েছি তার থেকে বেশি রাগ লাগছে কয়েকটা দিন আগে এসব বলতে পারলো না..তাহলে আর এমন কিছুই আজ হতো না ঠিক হয়ছে আমারে যেমন বলিস নাই তাই এখন বকা শুনছিস ঠিক হয়ছে একদম আমাকে চুপ থাকতে দেখে রিয়া আবার বলে উঠলো…..
রিয়া: কিরে তোর আবার কি হইলো??জানিস আমি না তোকে সব বলতে চাইছিলাম কিন্তু তুই যদি হাসাহাসি করতি তাই আর বলি নাই কিন্তু আজ না বলে আর থাকতে পারলাম না আমি রিয়ার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ইচ্ছে করছে ওকে একটা থাপ্পর মারতে ফাজিল মাইয়া বিকালে ভাইয়া বাসায় এসে আমাকে আজকের পুরা কাহিনি শুনাচ্ছে আর হেসে বিছানায় গরাগরি খাচ্ছে আমার খুব রাগ লাগছে আজ নিজের ভাইকেই নিজের শএু মনে হচ্ছে আমার…
ভাইয়া: জানিস আজকে আবিরের মুখটা দেখার মতো ছিলো..ও যে কি পরিমান রেগে ছিলো না জানি মেয়েটাকে পেলে কি করতো…আর মেয়েটাকেও বলি হারি আর মানুষ পাইলো না…ওকেই লাভ লেটার দিতে হলো…মেয়েটা নিশ্চই সুযোগ বুঝে ভাগছে ….না হলে এতো খুজলাম বাট পেলামই না…কিন্তু একটা ব্যাপার আমার খুব অবাক লাগছে মেয়েটার হাতের লেখা আর তোর হাতের লেখা প্রায়ই সেম..কাগজটা আবির ছিড়ে ফেলে দিছে না হলে তোকে দেখাতাম…..
আমার তো দম যায় যায় অবস্থা এসব কথা শুনে…তারপর অনেক কস্টে নিজেকে কনট্রল করি আর সিদ্ধান্ত নেই আর কোনোদিন কোনো ছেলের দিকে তাকাবো না একদম বিয়ে করে নিজের বৈধ্য জামাই ছাড়া এরপর তিনদিন আর বাসা থেকে বের হইনি…আর আবির ভাইয়ার সামনে যাওয়া তো দুরের কথা বাসা থেকে বের হলে বোরকা পোরে বের হই..বলা তো যায় না কবে ওই বাচ্চাটা আমাকে দেখে ফেলে তারপর ধরে নিয়ে যায় আবিরের কাছে…আম্মু তো আমার এমন পরিবর্তন দেখে রীতিমতো অবাক..সে তো আর জানে না তার মেয়ে প্রেম করতে যাওয়ার আগেই ছ্যাকা খেয়ে বসে আছে…….