বিয়ের আসর থেকে পালিয়েছি। আমার এ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলোনা। সিনেমায় নায়িকাদের অন্য কোথাও জোড় করে বিয়ে দিতে চাইলে নায়িকা নায়কের সাথে পালিয়ে যায়। আজ এমনটাই করলাম। প্রেম করলাম একজনের সাথে আর বিয়ে করবো অন্য কাউকে কাভি নেহি। আম্মুকে অনেক বোঝালাম যে আম্মু আমার একজন আছে এবং তাকে আমি অনেকগুলা ভালোবাসি। আর সে ও আমাকে আরও অনেকগুলা ভালোবাসে। আমাদের দুষ্টু-মিষ্টি প্রেমটা প্লিজ তুমি মেনে নাও। আম্মু আমাকে ছেলের ব্যাপারে একটা একটা করে প্রশ্ন করতে লাগলো…
–ছেলের নাম কি?
— ফরহাদ ইসলাম।
— কি করে?
–জব করে।
— কি জব?
— তাতো জানিনা।
— বাহ! প্রেম করস আর প্রেমিক কি জব করে তা জানিসনা…!
— ইয়ে মানে মা….
— চুপ।
আমি মাথা নিচু করে চুপ করে রইলাম। দুঃখে চোখে পানি টলমল করছে। চোখ বন্ধ করতেই দু- চোখ থেকে দু ফোটা পানি টুপ করে হাতে পরলো।
— তা ছেলে কই থাকে..? ( মায়ের আবারো প্রশ্ন)
— ঢাকায়। ( মাথা নিচু করেই)
— ঢাকায়! হোয়াট? তোর বাবা কখনো ঢাকা গিয়েছিলো?
— সেটা বাবা জানে।
— চুপ বেয়াদব মেয়ে।
— পরিচয় হলো ক্যামনে!
— ফেবুতে।
— দেখেছিস?
— না।
— তোকে দেখেছে?
— নাহহ।
— তোর এই কিচ্ছাকাহিনী দ্রুত শেষ করলে খুব খুশি হবো।
আমি ছেলে দেখে রেখেছি। সেখানেই তোর বিয়ে। তোর ত্য পছন্দের ব্যাপারে আমার ভালোই আইডিয়া আছে। বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নে। এবার আর আমি চুপ করে থাকলামনা। ফরহাদ কে ফোন করে বলে দিয়েছি। ওমুক তারিখে আমার বিয়ে তুমি ঐদিন সময় করে চলে এসো। আমি বিয়ের আসর থেকে পালাবো। যেমন করে নায়িকারা পালায়। ঠিক যেমন চিন্তা তেমন কাজ। বউ সাজার পর থেকে বুকের ভিতর টান টান উত্তেজনা একটু সুযোগ পেলেই আমি পগার পার। পুরো বাড়িতে লোকজন আনন্দে হৈ হৈ করছে। বিয়েটা আমার না তাদের বোঝা যাচ্ছেনা। তারা যতটুকু আনন্দ পাচ্ছে আমি ততটুকুই ঘামছি ভয়ে। কোনো একটা স্টেপ মিস করা যাবেনা। আমি ওয়াশরুমের কথা বলে যাবো, আর দড়জা বন্ধ করে জানালা দিয়ে হুশশশ।
ঠিক তাই হলো। ফোন আর পরনে শাড়ী গহনা ছাড়া কিছুই আনতে পারলামনা। যতটা ভয়ে দোড়াচ্ছি ততটাই আবার আনন্দ হচ্ছে ফরহাদ কে আজ প্রথমবার দেখবো কি যে ভালো লাগছেনা। সে বাসস্টপ দাঁড়িয়ে আছে। তাকে চেনার জন্য বলেছে লাল পাঞ্জাবী পরে আসবে আর হাতে একটা গোলাপ থাকবে। আর আমিতো বধূ সেজে থাকবোই। মেয়েরা নিশ্চয় বউ সেজে একা এতোরাতে বাসস্টপ যাবেনা। সুতরাং আমাকে খুব তাড়াতাড়ি চিন্তে ফরহাদের জন্য সুবিধা হবে। আমি দুইহাতে শাড়ীর দুই দিকে ধরে দোড়াচ্ছি। পাবলিকদেখছে, কেউ হাসছে, কেউবা মজা নিচ্ছে, বাকিরা হাততালি দিচ্ছে। সেইদিকে আমার বিন্দুপরিমাণ ভ্রুক্ষেপনেই।
অবশেষে হাঁপাতে হাঁপাতে বাসস্টপ আসলাম।চারিদিকে চোখ ঘুড়িয়ে লাল পাঞ্জাবীওয়ালা কেখুঁজছি। যার পরনে কিনা শুধু লাল পাঞ্জাবী নয়, হাতেলাল গোলাপ ও থাকবে।অনেক খোঁজাখুঁজির পর লাল পাঞ্জাবী পরা ২৫বছরেরকোনো যুবক কে দেখা গেলোনা। তবে লাল খয়েরী একটাপাঞ্জাবী পরা এক বুড়োকে দেখা যাচ্ছে। হায় আল্লাহতার হাতে ত্য দেখি লাল গোলাপ ও আছে। না, না এ হতেপারেনা।
আমি আরেকটু নিশ্চিত হওয়ার জন্য আড়ালথেকে তাকে ফোন দিলাম। ওহ নো বুড়োর হাতের ফোনটাবেজে উঠলো। এত্তোবড় ধোকা আমাকে! এর সাথেএতোদিন আমি প্রেম করলাম! আর সে বলল ২৫বছরের যুবক।ছিঃ ছিঃ ছিঃ এর চাইতে ত্য আমার হবু বর টাই ভালো ছিলো। এ ঘটনা নিজ চোখে দেখার পর মাথার ভিতর দিয়ে ঠান্ডা একটা কিছু নেমে গেলো দ্রুত। আমি আর ৫/৭ না ভেবে ফোন অফ রেখে বাসার দিকেছুটতে লাগলাম। এতোক্ষণে নিশ্চয় জানাজানি হয়ে গেছে যে আমি পালিয়েছি। ও আল্লাহ বিয়েটা যেনো না ভাঙ্গে। দৌড়াতে দৌড়াতে বাসায় এসে দেখি আমার বান্ধুবীর সাথে আমার হবু বরের বিয়ে হয়ে গেলো। না এ হতে পারেনা। আমি বিশ্বাস করিনা। আম্মুরাগেক্রোধে কটমট করতে করতে বলল পালিয়েছিস আবার ফিরে এলি ক্যানো? মানসম্মান ত্য যা যাওয়ার গিয়েছে।
আমি কি বলবো! কি করবো! কিছুই বুঝতে পারছিনা। মাটিতে বসেই হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম। এই কান্নার কারণ আমার হবু বরের সাথে বান্ধুবীর বিয়ে হলো, নাকি ফরহাদ ধোকা দিলো সেটার জন্য বুঝতে পারছিনা। অনবিরত কেঁদেই চলেছি। আর ঠিক তখন আমার হবু বর, না এখন আমার বান্ধুবীর বর সে আমার বান্ধুবীর হাত বগল থাবা করে। ৩২টা দাঁত বের করে বলল ভাগ্য ভালো আমার, তুমি বিয়ের আসর থেকে পালিয়েছো, নাহয় তো পরে বাসর থেকে পালাতে। তোমাকে ধন্যবাদ সায়মু আগে পালানোর জন্য।
আমি আবারো কাঁদতে লাগলাম। এবার হেঁচকি উঠে গেলো আমার। ঠিক সেইসময় লোকভর্তী মানুষের মাঝখান থেকে এক ছেলে এসে বলল আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই তোমার যদি আপত্তি না থাকে। হুরর বিলাই আপত্তি থাকবে ক্যান! মাশাল্লাহ দেখতে ছেলেটা খারাপ না। পুরো চমচম রসে টইটুম্বুর। যাক চোখ মুছে উঠে এসে বিয়েটা হলো। ভালোয় ভালোয় আমাদের বিদায় ও হলো। শশুড় বাড়িতে এসে আমিতো পুরাই ‘থ’। ফরহাদ বুড়োটা এখানে। আর আমার বর পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে ইনি আমার মামা। এখনও বিয়ে করেননি। তবে খুব শীগ্রই আমি মামি পাবো। মামার একজন পছন্দের আছে। আমি আমতা আমতা করতে করতে বললাম স্লামালাইকুম মাম্মাআআআআআ….