বিয়ের ইতিবৃত্ত

বিয়ের ইতিবৃত্ত

এপর্যন্ত রাতের আঁধারে ১৪টা মেয়েকে বিয়ের আসর থেকে তুলে এনে তাদের বয়ফ্রেন্ডের কাছে পৌঁছে দিয়েছি ৷ টাকার বিনিময়ে এমন কঠিন কাজ করা কোনো ব্যাপার না আমার নিকট ৷ নেশার মত লাগে এটা করতে ৷ সমস্যা হচ্ছে সবার প্রেমকে সফল করি আমি, অথচ আজও নিজের কোনো গার্লফ্রেন্ড তৈরি হলোনা ৷ সিদ্ধান্ত নিলাম ফেসবুকের কোনো সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে প্রেম করার চেষ্টা করবো ৷ সেই মোতাবেক ফ্রেন্ডলিস্টের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েকে Hi লিখে নক দিলাম ৷

সে তিনদিনেও রিপ্লাই দিলোনা টেক্সট সিন করা সত্বেও ৷ যখন টেক্সট করলাম, “আপনার একটা পিকচারে একটু সমস্যা আছে!” তখন সে রিপ্লাই দিলো কোন পিকচারে? জবাবে আমি বললাম কোনো পিকচারে না, আপনার রিপ্লাই পেতে টেক্সটা করেছি মাত্র ৷ সত্যি বলতে আপনি এতটাই সুন্দরী যে, চারদিন ধরে সব মেয়েদের চেহারায় আপনার চেহারার প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠছে যা আমার দৃষ্টিতে ধরা পরছে ৷ একটু সিনেমাটিক ব্যাপার ঘটছে আরকি ৷ না, ভাববেন না আমি আপনার প্রেমে পরে গেছি ৷ প্রেমের লক্ষ্যণ আমি বুঝি, এটা প্রেমের লক্ষণ নয় ৷ হয়তো অন্য কিছুর লক্ষ্যণ হতে পারে ৷ আপনার সঙ্গে এই হ্নদয়টা কেন যেন বন্ধুত্ব করতে চাচ্ছে ৷ কিন্তু আপনার মত এত সুন্দরী মেয়ে আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে কি রাজি হবে?

মেয়েটা আমার টেক্সট সিন করা মাত্র ব্লক করে দিলো ৷ হতাশ হয়ে গেলাম ৷ তীব্র হতাশা ঘিরে ধরলো আমাকে ৷ বুকটা ধারাক করে উঠে ভোঁতা ব্যথা অনুভূত হলো ৷ মনে হলো এই বুঝি বিরহের অনলে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে বাতাসের সাথে মিশে যাবো ৷ এবং সেই বাতাসে বিরহ সংযুক্ত করে প্রেমিক পুরুষদের নিঃশ্বাসকে দূষিত করে যাবো প্রখরভাবে ৷ সিদ্ধান্ত নিলাম যে করেই হোক, মেয়েটিকে আমার করে নেবোই নেবো!

মেয়েটি ধানমন্ডির কোথায় থাকে সেটা জানা জরুরি হয়ে গেল ৷ তার ছবি আমার সংগ্রহে ছিল ৷ সেই ছবি নিয়ে খুঁজতে লাগলাম ৷ শেষপর্যন্ত পেয়েও গেলাম ৷ ওহ তার নামই তো বলা হলোনা, তার নাম আইরিন ৷ তার বাসা দেখে বুঝতে পারলাম অনেক উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে সে ৷ তাতে কি? আমাদের পারিবারিক অবস্থাও তো কম নয় ৷ বিয়ের প্রস্তাব দিলে আইরিনের পরিবার একবাক্যে রাজি হয়ে যাবে ৷ পাঠালাম ঘটক! বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হলে আইরিনের পরিবার সত্যি সত্যি রাজি হয়ে গেল ৷ তবে একটু কানাঘোঁষা শুনলাম আইরিন বিয়েতে পুরোপুরি রাজি নয় ৷ তার বাবা, মাকে বলছে, “যা ইচ্ছা তাই করো, আমার কিছু বলার নেই!” আইরিনের এমন কথা শোনার পরও মনটাকে শান্ত করছিলাম এই ভেবে যে তার বাবা, মা আশ্বস্ত ও আশ্বাস দিয়ে প্রখর আত্মবিশ্বাস জুগিয়ে বলছে যেভাবেই হোক বিয়েটা হবেই, বিয়ের আগে মেয়েরা একটু নারাজ থাকে ৷ কিন্তু বিয়ে হয়ে গেলেই সব ঠিক হয়ে যায় ৷ হবু শ্বশুর শ্বাশুরির কথায় মন যেমন শান্ত হলো তেমনি দুনিয়ার যাবতীয় ভাললাগাও কাজ করলো! .

১৫ দিন পর, আজ আইরিনের সঙ্গে আমার বিয়ে ৷ আইরিনকে বিয়ে করতে যাচ্ছি ল্যাম্বগিনিতে চড়ে ৷ মাঝরাস্তায় এসে গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম বিশেষ প্রয়োজনের কথা বলে ৷ আমার বন্ধুকেও নামতে বললাম ৷ এবং ড্রাইভারকে গাড়িটা বিয়ে বাড়ির দিকে নিয়ে যেতে বললাম ৷ গাড়িতে দুলাভাই ও আমার বাবা রইলেন ৷ তাদের এও বললাম যে আমি কাজ সম্পন্ন করে আসছি ৷ আমার বন্ধু রাহাতকে সঙ্গে নিয়ে অন্য একটি গাড়ি খুঁজতে উল্টোদিকে হাঁটা শুরু করলাম ৷ সন্ধ্যা পার হয়ে গেল ৷ এতোক্ষণে বিয়ে বাড়িতে হয়তো পৌঁছে যেতাম অথচ আমি এখন অন্য একটি গাড়িতে করে বিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে চলছি ৷ তবে আইরিনকে বিয়ে করতে তার বাড়ি যাচ্ছিনা, যাচ্ছি অন্য একটি বিয়ে বাড়িতে ৷ সেখান থেকে সাদিয়া নামের এক কনেকে তুলে আনতে হবে এবং তার বয়ফ্রেন্ডের নিকট পৌঁছে দিতে হবে ৷ প্রায় ৩ লক্ষ টাকার অফার পেয়ে এই শুভ কাজটা করতে রাজি হতেই হলো ৷ রাত ৯টার দিকে কাজটা সম্পন্ন করে আইরিনের বাড়িতে যাওয়া যাবে ৷

হয়তো একটু কথা হবে আমাকে নিয়ে, কৈফিয়তও দিতে হতে পারে ৷ তবে আমাকে মেনে নিতে দ্বিধা করবেনা আইরিনের পরিবার, যদি বিপদের কথা খুলে বলি ৷ এবং তারা আমার বিপদের কথাবার্তা বিশ্বাস করে নিয়ে তার সাথে বিয়ে পরিয়ে দিবে ৷ এসব ভেবেই সিক্রেট কাজটা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি ৷ বিয়ে বাড়ির ঠিকানা অনুযায়ী চললাম ৷ যে ঠিকানায় এসে পৌঁছলাম সেখানে দু-তলা বিশিষ্ট একটা বাড়ি ৷ গাড়িতে বসে থেকে কনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম ৷ কখন যে সে গাড়ির নিকট আসবে কে জানে? সময়মত কনেকে আমার গাড়ির সামনে চলে আসার কথা ৷ কিন্তু আমি জানিনা কনেকে দেখতে কেমন? তার ফটোই তো দেখিনি! সে বোরখা ও ভেতরে বিয়ের শাড়ি পরিধান করে আমার গাড়ির নিকট আসবে এটাই জানানো হয়েছে আমাকে ৷ প্রায় পনের মিনিট পর বোরখা পরা একটি মেয়ে গাড়ির নিকট এলো ৷

সে গাড়ির পিছন দিক থেকে চেঁচিয়ে উঠে বললো দরজা খুলুন ৷ বুঝতে পারলাম এটাই কনে হবে ৷ দরজা খোলা হলে কনে গাড়ির ভেতর ঢুকলো ৷ আমার পাশে বসামাত্র মুখ থেকে বোরখার নেকাপ খুলে ফেললো ৷ কনের চেহারা দেখামাত্রা আঁতকে উঠলাম ৷ থমকে গেলাম আতঙ্কে ৷ এটা কাকে দেখলাম? সে তো আমার হবু বউ আইরিন? সে এখানে কেন? আইরিনও আমার চেহারা দেখে চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে রইলো ৷ যেন সে ভূত দেখছে ৷ চমকানো কন্ঠে বললাম, “আইরিন, তুমি এখানে? তোমার তো বাসায় থাকার কথা; এখানে কেন? এই বাসাতেই বা কেন? আইরিন জবাব দিলো,

“সেটা আপনার না জানলেও চলবে ৷ কিন্তু আপনি এই গাড়িতে কেন? এতক্ষণে তো আপনাকে আমাদের বাসায় থাকার কথা ছিল ৷ আমার বান্ধবী সাদিয়ার বাসায় কেন?”
“তোমার বান্ধবীর বাসা এটা? তারমানে সাদিয়ার বিয়ে ৷ তার বিয়ে খেতে এসছিলে এখানে? তাও তোমার বিয়ের আসর ছেড়ে? না, কাজটা তো ঠিক করোনি ৷

“ঠিক কাজই করেছি ৷ আমি তো এই বাড়িতে বিয়ে খেত আসিনি ৷ এই বাড়িতে আসছিলাম আত্মগোপন করতে ৷ সাদিয়ার হেল্প নিতে ৷ তার বিয়ে হচ্ছে তাতে কি! এই অবস্থাতেই সে হেল্প করেছে ৷ সাদিয়ার পরিচিত এক ফ্রেন্ডের ফ্রেন্ড অনেক ধুরন্দবাজ, বিয়ের আসর থেকে নিখুঁত কায়দায় কনেকে তুলে নিয়ে যায় এবং বয়ফ্রেন্ডের নিকট পৌঁছে দেয় ৷ সেইরকম একজন ধুরন্দবাজের হেল্প পেতে সাদিয়া আমাকে সন্ধ্যা পরপরই বাসা থেকে বের হতে বলে এবং তার বাসায় উঠতে বলে ৷ সেই মোতাবেক সাদিয়ার বাসায় এসে উঠছি ৷ সাদিয়া আগে থেকে প্ল্যান করে ছিল ৷ তাইতো সে বললো সেই ধুরন্দবাজ গাড়ি নিয়ে বাসার সামনে অবস্থান করলে তার গাড়ির নিকট যেতে হবে এবং গাড়ির লোকটি আমার বয়ফ্রেন্ডের নিকট পৌঁছে দিবে ৷

ব্যাপারটা একদম সহজ, এতো সহজে উনি হয়তো কাউকে বিয়ের আসর থেকে তুলে নিয়ে যায়নি ৷ কিন্তু দূর্ভাগ্য আমি ধরা পড়ে গেলাম, ভুল একটা গাড়ির নিকট এলাম ৷ কারণ যাকে বিয়ে করবোনা বলে পালাতে চাচ্ছিলাম সেই আমি আপনার সামনে ৷ আপনাকে ভীষণ অপছন্দ বলে বিয়ে বাড়ি থেকে পালাচ্ছি ৷ এবং জাস্টফ্রেন্ডকে বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি, তাকে বিয়ে করতেই তো এভাবে পালাচ্ছিলাম ৷ কিন্তু পড়লাম বাঘের হাতে ৷ তবে, একটা বিষয় বুঝলাম না এসময়ে আপনি গাড়িতে কি করছেন? আমি পালাচ্ছি বিষয়টা কি জেনে গেছেন?

মৃদ্যুস্বরে জবাব দিলাম, “আমিই সেই ধুরন্দবাজ! এপর্যন্ত ১৪টা মেয়েকে বিয়ের আসর তুলে এনে বয়ফ্রেন্ডের নিকট পৌঁছে দিয়েছি ৷ তোমাকেও তুলে নিয়ে যাবার অফার পেয়েছি, যদিও তোমার ফটো দেখানো হয়নি, শুধু ভিন্ন একটা বাসার ঠিকানা দিয়েছিল, সেই অনু়যায়ী এসে দেখি কনে অন্য কেউ নয় তুমি ৷ ভেবোনা তোমাকে বয়ফ্রেন্ডের হাতে তুলে দিয়ে আসবো, কখনই না; তোমাকে তোমার বাবা মায়ের নিকট পৌঁছে দিবো যাতে দ্রুত আমাদের বিয়েটা হয়ে যায়! কথাটা শোনার সাথে সাথে আইরিন অজ্ঞান হয়ে গেল!!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত