অফিসে যাবার পূর্বে আমার বউ সোনিয়া আমাকে থামিয়ে দিলো ৷ সে আমার ডান হাতটা ধরে হিমশীতল কন্ঠস্বরে বলল, “এই শোনো অর্ণব, তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরবে, তোমাকে নিয়ে একটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ পারসোনাল কাজ করবো!” বউয়ের কথা শুনে ভেতরটা ঝাঁকি মেরে উঠলো, সেইসাথে বুকটা ধারাক করে উঠলো ৷ হকচকিয়ে গেলাম এবং বউয়ের মায়াভরা চেহারার দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে রইলাম অবাক চোখে ৷ ভাবলাম বউ কি এমন বিশেষ কাজ করার কথা বলছে? বিষয়টা তো বেশ লজ্জাজনক ৷ লজ্জা পেলাম আমি ৷ ভ্রু নাড়িয়ে তাকে বললাম,
“কি কাজ করবে?”
“সেটা অফিস শেষ করে বাসায় ফিরলেই জানতে পারবে!”
“এখন বললে কি হবে?”
“এখন বলা যাবেনা!”
“কেন বলা যাবেনা?”
“আরে যাও তো অফিসে!”
“না, বলো আগে; না বললে যাবোনা ৷”
“বোকা, বিষয়টা চমকীয়, এখন সেটা বললে চমকটা আর থাকবেনা ৷”
“কি, কোনো রোমান্টিক বিষয় নাকি?”
বউয়ের চেহারা মুহূর্তেই পাল্টে গিয়ে রক্তবর্ণ হলো ৷ রেগে গেলো সে ৷ অগ্নিশর্মা চেহারা নিয়ে গরম চোখে তাকিয়ে নাক উঁচিয়ে বলল, “ধ্যাত্তেরি, শুধু আজেবাজে চিন্তাভাবনা! তিন পর্যন্ত গণনা করবো, এর আগে যদি বাসা থেকে না যাচ্ছো তবে তোমার খবর করে ছাড়বো” বউয়ের কথা শুনে ঢোক গিলে কাচুমাচু করতে করতে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম!
অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে রাত ৯টা বেজে গেলো ৷ বাসায় ফিরে বউয়ের সঙ্গে ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে খাবার খাওয়া শুরু করলাম ৷ বুঝলাম না, আজকে আম্মু খাবার টেবিলে কেন এলোনা? বউয়ের সাথে ঝগড়া হলো নাকি? কিন্তু আম্মুর সাথে সোনিয়ার সম্পর্ক তো ঠিক বান্ধবীর মত ৷ নাহ ভেবে পাচ্ছিনা কিছু ৷ বউকে আম্মুর কথা বললে সে বললো আম্মু খাবেনা ৷ কিন্তু কেন খাবেনা এর উত্তর জানতে পারলাম না ৷ আম্মুকে ডাকবো কি ডাকবো না বুঝতে পারলাম না ৷ শেষপর্যন্ত আম্মুকে ডাকলে আম্মু জবাব দিলো ক্ষুধা নেই ৷ বুঝতে পারলাম সোনিয়ার সাথে কিছু হয়েছে ৷ খাওয়া দাওয়া শেষ করে বেডরুমে গেলাম ৷ সোনিয়া বেড রুমে ঢুকেই দরজাটা ধারাম করে বন্ধ করে দিলো!
অতঃপর আমার কাছাকাছি এসে ফিসফিস করে বলল,
“তুমি কি রেডি আছো সেই কাজটি করার জন্য?” হকচকিয়ে উঠে বললাম,
“কোন কাজটা?”
“ওহ, বলা তো হয়নি, তবে শোনো কাজটা কি- তোমাকে মেয়ে হয়ে যেতে হবে ৷ আর আমি হবো ছেলে!”
বুকের ভেতরে কে যেন হাতুড়ি পিটিয়ে ঘন্টা বাাজাতে লাগলো ৷ বউয়ের কথা শুনে আকাশ থেকে এমনভাবে পড়লাম যে মরলাম না, শুধু বেহুশ হবার মত অবস্থা হলো ৷ হতভম্বের চোখে বউয়ের দিকে তাকিয়ে হতবুদ্ধি আমি বিস্ময়ের কন্ঠস্বরে বললাম,
“কি বলছো এসব? আমি মেয়ে হবো কেমনে?” বউ চোখ গোলগোল বানিয়ে বলল,
“বোকা, তুমি মেয়ে সাজলেই মেয়ে হতে পারবে ৷ এমন কস্টিউম ও মেকাপ ব্যবহার করবে যাতে একদম মেয়ে মেয়ে লাগে ৷ আর এখনই তোমাকে শেভ করিয়ে দিবো; যদিও তোমার মুখে কোনো দাঁড়ি, গোফ নেই তবুও শেভ করে নিলে চেহারাটা মেয়েলী মেয়েলী লাগবে ৷ তুমি ভাল করে জানো যে আমি ভাল মেকআপ আর্টিস্ট!”
“ও আচ্ছা, এই ব্যাপার ৷ ঠিকআছে, তোমার কাজটা করতে রাজি ৷ কিন্তু, এটা করে কি হবেটা কি?”
“কি হবে সেটা পরেই জানতে পারবে!”
“আচ্ছা, তাহলে শুরু করো”
“এখন না, কাল সকালে করবো ৷ ভাবছিলাম বিকেলের দিকে বাসায় ফিরে আসবে, কিন্তু তুমি তো এলে রাতে ৷ এজন্য
কাজটা কাল সকালে করবো ৷ কাল অফিসে যেতে হবেনা তোমার!” “ঠিকআছে, তাহলে কাল সকালেই কইরো!’ সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হবার পর সোনিয়া আমাকে রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো ৷ এরপর সে প্রথমে আমার ফেস শেভিং করতে লাগলো ৷ অতঃপর তার ব্লাউজ, পেটিকোট আমাকে পরতে বললো, পরে নিলাম ৷ এরপর সে আমাকে তার গোলাপী রঙের শাড়িটা পরিয়ে দিলো ৷ শাড়ি পরা সমাপ্তি হলে সোনিয়া আমাকে আয়নার সামনে বসিয়ে দিলো ৷ বসার পর সে তার মনমতন মেকআপ আমার চেহারায় লাগিয়ে দিলো ৷ মেকআপ করা শেষ হলে আয়নাতে নজর দিলাম ৷ নিজের চেহারা দেখে নিজেকেই চিনতে পারলাম না ৷ একদম আদিদস্ত একটা মেয়েকে আয়নাতে দেখতে পাচ্ছি! ভ্যাঁবাচেকা খেয়ে নিজের নারীরুপী চেহারাটা দেখতে লাগলাম ৷
আমাকে নারী সাজিয়ে দেবার পর সোনিয়া তার গা থেকে শাড়ি, ব্লাউজ সহ যাবতীয় পোশাক বদলে আমার জিন্সপ্যান্ট, গেঞ্জি ও শার্ট পরে নিলো ৷ এরপর চুলগুলো এমনভাবে বাঁধলো যে মনে হলো ছেলেদের চুল ৷ সে চেহারাতে ফেক গোঁফ লাগিয়ে নিলো ৷ এরপর মুখে এমনভাবে মেকআপ করলো যেন সে পুরুষ ৷ দেখে অবাকের শেষপ্রান্তে পৌঁছলাম ৷ থ হয়ে গেলাম বউকে দেখে ৷ আবেগে আপ্লুত হয়ে তাকে জড়িয়ে ধরতে তীব্র ইচ্ছা হলো, জড়িয়ে ধরতে গেলে সে আমার পেটে ঘুষি মেরে বলল, “খবরদার, আজ ভুলেও টাচ করবানা!'” বউয়ের ব্যবহারে ভয় পেয়ে গেলাম ৷ ভয়ের আতিসাহ্যে তার থেকে দূরে সরে গেলাম ৷ বউ তীক্ষ্ণকন্ঠে বলল, “এখন রুম থেকে বের হবে ৷ কিছুই বলবেনা ৷ একদম চুপ থাকবে ৷ শ্বাশুরি আম্মা কিছু বললে সেসবের উত্তরে যা বলার আমিই বলবো!”
মিনমিন গলায় বললাম, “ঠিকআছে, বউ!”‘ রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িংরুমে ঢুকলাম, ডাইনিং টেবিলের দিকে যেতে কিছু একটা ভাঙার শব্দ কানে এলো ৷ লক্ষ্য করে দেখলাম আম্মুর হাত থেকে গ্লাস পরেছে মেঝেতে, এজন্যই বিকট শব্দের সৃষ্টি ৷ আম্মু হতবাক হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে! অকস্মাৎ সোনিয়া আমাকে বলল, “অর্ণব, তুমি বাসায় থাকবে; রান্না করবে ৷ আজ ইলিশ মাছের ঝোল রাঁধবে ৷ আমি বিকেলে অফিস থেকে এসে তোমার হাতের রান্না করা খাবার খাবো!” সোনিয়ার কথায় বুকের ভেতর ভোঁতা যন্ত্রণা অনুভূত হলো ৷ কি বলে সে এসব? বউকে বললাম, “সোনিয়া কি বলছো এসব?”
সোনিয়া জবাব দিলো, “আমার শ্বাশুরি আম্মা ঝগড়ায় জিততে গি়য়ে বলেছিলে, কাজ করে টাকা আনে আমার ছেলে, সেই টাকা দিয়ে খাদ্য, দ্রব্য কেনা হয় ৷ সেই খাবার খেয়ে তুই বড় বড় কথা বলিস ৷ পারলে কাজ করে এনে খেয়ে-দেয়ে গলা বড় করিস!”
এটা ছিল তোমার মায়ের কথা ৷ তোমার মায়ের কথামত আমি আজকে অফিসে যাচ্ছি ৷ তবে মেয়ের রুপে কাজ করতে যাবোনা, কারণ আমি মনে করি নারীকে ঘরে মানায় অফিসে নয় ৷ তাই নারী সাজ বদলিয়ে পুরুষের সাজ নিলাম ৷ আর তুমি বাসায় থাকবে, কারণ আমি চাইনা তুমি বাইরে গিয়ে কাজ করো ৷ বাসায় থাকবে, বাসার কাজ করবে ৷ বাসার কাজ তো নারীরা করে, তাই তোমাকে কাজ করতে হলে নারী হয়ে কাজ করতে হবে! ব্যাস! আমি চাইনা আমার শ্বাশুরি আম্মার কোনো কথার বরখেলাপ হোক”” আম্মু বেহুশ, এদিকে আমিও মেঝেতে লুটিয়ে পরেছি!