সকাল সকাল প্রেমিকার মেসেজ, শুভ নববর্ষ। আমি উত্তর দিলাম, “ শুভ নববর্ষ। শাড়িটাড়ি পরলে ছবি দিয়ো। ”
“ ওসব ঢঙ করতে আমার ভালো লাগে না। তাছাড়া আমার কোনো শাড়ি নাই! ”
“ ওমা, এতে ঢঙের কী আছে? তোমার আম্মার আছে না? বড় বোনেরও তো থাকার কথা! ”
“ ওদের শাড়ি আমি পরবো কেনো? ”
“ মা বোনের শাড়ি ওদের হয়? আচ্ছা বাদ দাও। ”
এর মাঝে দেখি আব্বা হাতে করে কী যেন নিয়ে এসেছে। জিজ্ঞেস করার আগেই আব্বা বললেন, “ দেখতো তোর আম্মার লাগি শাড়িটা আনছি। পছন্দ করবো কিনা? ” প্যাকেটটা খুলতে না খুলতেই আম্মা হাজির। শাড়ির রংটা দেখে বললো, “ বাচ্চা মেয়েদের শাড়ি লইয়া আইছে উনি! ” আব্বার মুখে হতাশার ছাপ! আব্বার আবার এক অভ্যাস। নিজের পছন্দে সব করবেন। তা কারো পছন্দ হোক আর না হোক।
“ তোমার কী শাড়িটা পছন্দ হয় নাই? ”
“ দিন দিন আমার বয়স বাড়ছে না কমছে? ” আব্বা কোনো জবাব দিলেন না। আমাকে বললেন, “ মনের কোনো বয়স আছে? ”
“ আমি মনের ব্যাপারে কী জানি আব্বা? ”
“ তুমি মনের ব্যাপারে জানবা কীভাবে? পাতে মুরগীর রান হলেই হয়! ” আমি মাথা নাড়ালাম। উনি আবার বললেন, “ শাড়িটা কী ফেরত দিয়ে আসবো? ”
“ আম্মা যদি আবার চিল্লায়? ”
“ পছন্দও তো করলো না! আচ্ছা এক কাজ কর তুই রাখ। ”
“ আমি শাড়ি দিয়ে কী করবো? ”
“ গিলে খাবি, পারবি না? মুরগীর রান ভাইবা চাবানো শুরু করে দিবি! ”
বলে উনি শোবার ঘরে চলে গেলেন! প্রেমিকার কথা মনে হয়ে গেলো। ফোন দিলাম তুলছে না। কিছুক্ষণ পর মেসেজ দিলো, কী ব্যাপার?
“ আম্মার জন্য শাড়ি আনছিলো আব্বা। আম্মা বললো রঙটা নাকি বাচ্চা মেয়েদের। সেই শাড়ি আমার হাতে গছিয়ে দিয়ে গেলো আব্বা। কী করি বলো তো? বাচ্চা মতো কোনো আত্মীয় আছে বলে আমার মনে হচ্ছে না! ”
“ তুমি একটা কানা। আমাকে কী তোমার বুড়ি মনে হয়? ”
“ কিন্তু এটা তো আম্মার জন্য এনেছিলো। ”
“ শ্বাশুড়ি আম্মার শাড়ি আমি পরতেই পারি। নিয়ে আসো আমার জন্য! ”
“ ভাইরে বিয়ের আগেই যুদ্ধ লাগিয়ে দিতে চাই না আমি। ”
“ ভীতুর ডিম! ” হাতে ছিপি নিয়ে আম্মা রুমে প্রবেশ করলো।
“ শাড়িটা কই রে? দে আমারে! ”
“ তোমার না শাড়িটা পছন্দ হয় নাই? ”
“ আমার পছন্দ অপছন্দ দিয়ে তোর কাজ নাই। ”
এই বলে আম্মা শাড়িটা নিয়ে গেলো। বিকেল বেলা দেখলাম আয়না ছবি পাঠিয়েছে। ওর নাম ফজিলাতুন্নেছা আয়না। শাড়ি চুড়ি আর হালকা সাজে আয়নাকে কদম ফুলের মতো লাগে। কথা সেটা না। কথা হলো আয়না যে শাড়িটা পরে ছবি দিলো। ঠিক সেই শাড়িটাই যেন সকালে আব্বা আম্মার জন্য এনেছে! ওর গায়ের শাড়িটাও একদম নতুন। মাথায় তো কিছুই ঢুকলো না! আয়নাকে কিছু বলার আগে আম্মার শরণাপন্ন হলাম।
কাঁথা সেলাই করছিলেন উনি।
“ আম্মা, সকালে যে আব্বা শাড়িটা আনছিলো। কই রাখছো? ”
“ তুই শাড়ির পিছনে পড়লি কেনো? শাড়ি কী ছেলেরা পরে? যা ভাগ! ”
তাড়িয়ে দিলো আম্মা। প্রেমিকাকে ফোন দিলাম, “ ঐ তুমি শাড়ি পাইছো কই? ” কী এমন বললাম বুঝলাম না। সে ভারি গলায় বললো, “ মানে কী? তুমি আমাকে শাড়ি দাও বলে কী আমাকে শাড়ি দেওয়ার মানুষ নাই? ”
“ নিজে কামাই করতে পারলে শাড়ি চুড়ি সব দিবো। এখন তুমি বলো তোমাকে শাড়িটা কে দিছে? ”
“ কিপ্টার ছাও, আমার আম্মা আমাকে নববর্ষের উপহার দিছে। হইছে টা কী? ”
“ কেমনে কী ভাই? এই শাড়ি তো আম্মার জন্য আব্বা আনছিলো! ”
“ তোমাকে কানা তো আমি এমনি এমনি বলি না। বাজারে কী ঐরকম শাড়ি একটাই? ”
“ না, তাও না। ”
“ ফোন রাখ বেটা। মেজাজ খারাপ করে দিতে এক নাম্বার! ”
মুখের উপরে ফোন কেটে দিলো! আমারই বুঝা উচিৎ ছিলো। বাজারে এক ধরণের শাড়ি অনেক পাওয়া যায়। শাড়িতে তোমাকে দারুণ লাগছে এই কথাটাও বলতে পারলাম না। মেসেজ দিচ্ছি কোনো উত্তর নাই! এদিকে আম্মা তন্নতন্ন করে কী যেন খুঁজছে। বললাম, “ কী হারাইছে? ” আম্মা আমার দিকে আগুনচোখী হয়ে বললো, “ কোনো কিছু হারায় নাই। তোর বাপ মনে হয় আরেকটা বিয়ে করছে! ”
“ ছিঃ, এরকম কথা বলতে পারলা আব্বার নামে? ”
“ আরে এতো ছিঃ ছিঃ করিস না। তোর বাপে যদি আরেকটা বিয়েই না করে। তাহলে আমার জন্য আনা শাড়িটা গেলো কই? আলমারিতে সকালে রাখছিলাম। দুপুরে তোর বাপ বাইরে গেলো। এখন বল শাড়িটা পাচ্ছি না কেনো? ” কাহিনী তো কিছুই মাথায় ঢুকছে না। দুজনে মিলে ভালো করে খুঁজে দেখলাম। কোথাও শাড়িটা পেলাম না আমরা। আমরা যখন একরকম হয়রান। তখন আব্বার আগমন। আম্মা সামনে দাঁড়িয়ে বললো, “ কতো দিন হয়েছে শুনি? ”
“ কীসের কতোদিন? ”
“ এহ, ভাজা মাছটা যেন উল্টা করে খেতে পারে না। আপনার নতুন সংসারের কথা জিজ্ঞেস করছি স্যার! ”
আব্বা আমার দিকে একবার তাকালো। তারপর আম্মাকে জবাব দিলো, “ এই বয়সে আমাকে কেউ বিয়ে করবে? ”
“ সে কথা তো আমি জানি না। আমার প্রশ্নের জবাবটা আগে দেন। ”
“ আরে বাবা হইছেটা কী? কেনো মনে হচ্ছে আমি আরেকটা বিয়ে করছি? ”
“ তো শাড়িটা গেলো কোথায়? ”
“ শাড়ি মোমেনাকে দিয়ে এসেছি! ”
“ মোমেনা কে? ”
“ সেটা তোমার ছেলে জানে! ” মোমেনা, এই নামে কারো সাথে আমার পরিচয় নাই। আম্মা আমার দিকে চেয়ে বললো, “ মোমেনা কে রে? ”
“ আমি তো জানি না, মোমেনা কে আব্বা? ” আব্বা আমার দিকে এমন চাহনি দিলো। আমি ভয় পেয়ে রুমে চলে এসেছি। দরজা বন্ধ করে দিলাম। আয়নাকে মেসেজ দিলাম, “ আচ্ছা তোমার আম্মার নাম কী মোমেনা? ”
“ হুম, কেনো? ”
“ ঘটনা তো প্যাচ খেয়ে গেছে। আমার আব্বা তো তোমার মাকে ঐ শাড়ি দিছে! ”
“ মানে কী? তোমার আব্বা কেনো আমার মাকে শাড়ি দিবে? ”
“ তা তো জানি না৷ কিন্তু ঘটনা সত্য! ”
দরজা খুলার জন্য আব্বা আম্মা চিল্লাচ্ছে। আমি দরজা খুলছি না। ঘুমিয়ে পড়েছি এমন একটা ভাব নিয়ে শুয়ে থাকলাম। কিন্তু দরজার ধাক্কাধাক্কির কারণে তা পারলাম না। দরজাটা খুললাম। দরজা খুলে দেখি আয়না!
সে মুচকি মুচকি হাসছে! মাথায় ঘোমটা দেওয়া। আব্বা আম্মা পিছনে দাঁড়িয়ে আছে! কাহিনী কী? সবাই নীরব! আম্মা বললো, “ মেয়ে তো বেশি চিকনা। ফু দিলেই উড়ে যাবে মনে হয়। কিন্তু কীভাবে যে তোর আব্বাকে পটিয়ে ফেললো!”
আমি তো লজ্জায় মরি মরি। কী বলবো কিছুই বুঝতে পারছি না। সকাল হতেই দিনটা কেমন যাচ্ছে। আম্মা আবার বললো, “ তোমরা আলাপ করো আমরা আসছি! ” ভয়ে আমার শরীর কাঁপছে! ঘেমে একাকার হয়ে গেলাম। আমার এই অবস্থা দেখে আয়না বললো, “ তুমি দেখছি ভয়ে মরেই যাচ্ছো! ”
“ কীভাবে কী হলো আয়না? আমাকে একটু বলো তো। ”
“ তার আগে তোমার এক লিটার পানি খাওয়া উচিৎ! ”
কী যে একটা অস্থিরতায় পড়লাম। আয়না মুচকি মুচকি হেসে বললো, “ তোমার আশায় থাকলে যে আমার বুড়ি হতে হবে তা আমি আগেই বুঝেছিলাম। তাই সবকিছু আমাকেই করতে হলো। আচ্ছা আমি কী বেশি শুকনা? ”
“ হ্যাঁ, বেশি শুকনা। ” আয়না মুখ ঘুরিয়ে বসলো। আজকাল সত্য অনেকের ভালো লাগে না। কী যে করি।
“ শুনো, মোটা হওয়ার অনেক ট্যাবলেট পাওয়া যায়। এটা কোনো বিষয় না। ”
“ তোমার কী মনে হয় আমি মোটা হওয়ার জন্য ট্যাবলেট খাবো? আচ্ছা যাহোক, আজকে তোমার সাথে কোনো ঝগড়া করবো না। এখন বলো শাড়িতে আমাকে কেমন লাগছে? ”
“ যেমন লাগে। কদম ফুলের মতো। তোমার হাতটা ধরি? ”
“ কেনো? ”
“ আমি স্বপ্নে আছি না বাস্তবে তা দেখার জন্য! ” আয়না মাথা নাড়ালো।
“ হাত তো ধরা যাবে না। তবে তুমি শাড়ির আঁচল ধরে দেখতে পারো। ”
আমি আয়নার শাড়ির আঁচলটা ধরার সাথে সাথেই কে যেন একটা থাপ্পড় মারলো! আমি গালে হাত দিয়ে উঠে বসে পড়লাম! “ আমার লুঙ্গি নিয়ে টানাটানি করছিস কেনো? ” কথাটা জাফর বললো! জাফর আমার বড় ভাই! কী সুন্দর স্বপ্নটা হারামজাদা ভেঙ্গে দিলো! গরীবের গরীব! ”