ঠিকানা

ঠিকানা

— তোমাকে না বলেছি , বারবার এত ফোন করে বিরক্ত করবে না ? (আমি)
— জানো সজীব ?

যে সুখের জন্য তোমাকে ছেড়ে অন্য মানুষের সাথে আসলাম সেই সুখ টা আমি পাইনি ।প্রতিদিন চোখের পানি দিয়ে বালিশ ভিজিয়ে একা একা ঘুমিয়ে পরি । আমি তোমাকে কত কষ্ট দিয়েছি কিন্তু তুমি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করোনি কখনো । নীরবে একা একা কেদেছো তুমি কিন্তু সত্যি সত্যি আমি ভালো নেই সজীব ৷ ( বৃষ্টি )

— বারবার একই কথা শুনতে ভালো লাগে না বৃষ্টি , তুমি স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করো । তোমার স্বামী সন্তাননিয়ে সুখে থাকো সেই দোয়া রইল । (আমি)

— আমাকে ক্ষমা করবে না ?
— করছি তো ।
— তাহলে আমার এত কষ্ট কেন ?
— জানিনা ৷
— একটা অনুরোধ করবো ?
— হুম ।
— তুমি একটা বিয়ে করো ।
— কেন কেন কেন ?
— এভাবে তুমি একা একা জীবন পার করো যেটা আমার কষ্ট আরো বাড়িয়ে দেয় ।
— আমি তোমার কে ?
— এখন কেউ না , কিন্তু এক সময় আমি আমার সন্তানের পিতা মনে করতাম তোমাকে । কিন্তু আমার নিজের জন্যআজকে আমাদের দুজনের জীবন টা বেদনা ।

— আমি আমার ভালবাসার স্মৃতি নিয়ে কাটিয়ে দেব সমস্যা নেই । আমি জানি তুমি শুধু তোমার ঐ শরীর টা নিয়ে গেছো কিন্তু আমার নাজমা আক্তার বৃষ্টিরভালবাসা নিতে পারোনি ।

— সজীব?
— রাখলাম তাহলে ।
— আরেকটু কথা বলি ?
— বলো ।
— ডিনার করছো ?
— হ্যা ।
— এখন কোই তুমি ?
— ট্রেনের মধ্যে । আচ্ছা তুমি ঘুমাবে না ?
— স্বামী বাসায় আসে খুব কম , এই দেখো রাত দুটো বেজে গেছে কিন্তু আসেনি । একা একা কতটা কষ্ট নিয়ে থাকি তুমি বুঝতে পারবে না ।

— হাহাহা হাহাহা হাহাহা হাহাহা হাহাহা তাই ?
— হাসছো কেন ?
— একা একা থাকার কষ্ট আমি যদি না বুঝতে পারি তবে আর কে বুঝবে ?

আকাশের কোটি কোটি তারা দেখে তোমাকে ভালবাসি ৭ বছর হয়ে গেছে কোন দেখা নেই । প্রতিটি মুহূর্ত চোখের পানি দিয়ে বালিশ ভিজিয়ে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে থাকি । কোই একটা রাতও তো তোমার কথা না ভেবে পার করতে পারি নাই ।আজও অপেক্ষা করি তোমার জন্য কিন্তু এর শেষ হবে না কখনো সেটাও জানি । তবুও অপেক্ষা করতে ভালো লাগে ।

— তোমার এই কথা গুলো শুনলে আমার আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে করে । আমি কেন যে সেদিন তোমার কাছ থেকে চলে আসলাম ? আমি এখন রোজ স্বপ্ন দেখি সজীব । আমার মনে হয় হঠাৎ করে একদিন নতুন একটা সকাল দেখতে পাবো ৷ যে সকালের মৃদু বাতাস তোমার শরীরের গন্ধ নিয়ে আসবে আমার কাছে ।

— আমি আর স্বপ্ন দেখছি না , আর স্বপ্ন পূরণ করা আমার ইচ্ছে নেই ।
— কেন ?
— স্বপ্ন মানুষের বেঁচে থাকার প্রেরণা , মানুষ যতদিন বাঁচবে এ-ই স্বপ্ন নিয়েই বাঁচবে , যতই তা অপূর্ণ থাকুক । সব স্বপ্ন যদি পূরণ হয় ,তাহলে , মানুষ কল্পনা ও বাস্তবতার মধ্যে কোন পার্থক্য খুঁজে পাবেনা ।

— যদি জানতাম তোমার কষ্টের কারন হব আমি । তোমার এক ফোটা অস্রুর কারন হব আমি । তবে সত্যি বলছি কখনোই আসতাম না তোমার জীবনে শুধু দুর থেকে ভালোবাসে যেতাম তোমায় ।

— সমস্যা নেই বৃষ্টি , কষ্ট মানুষ কে পরিবর্তন করে কষ্ট মানুষ কে শক্তিশালি করে । আর প্রতিটি কষ্টের অভিজ্ঞতাই আমার জন্য নতুন শিক্ষা । কেউ জীবন থেকে চলে গেলে জীবন থেমে থাকে না কিন্তু তার রেখে যাওয়া স্নৃতি আর স্বপ্ন গুলো জীবন কে বিষন্ন করে তুলে। কখনো ভাবিনি চলে যাবে তুমি আমাকে এভাবে কাঁদিয়ে কখনো বুঝিনি ফিরে আসবেনা আরআমার পৃথিবী রাঙিয়ে।

— আজ বুঝতে পারছি আমি কতটা ভুল করেছি ।
— না বৃষ্টি , ভুলটা আমার ছিল কারণ স্বপ্নটা যে আমি একাই দেখে ছিলম ।
— সজীব , জীবনের গতির কথা ভাবলে পা দুটোর গতিও থেমে রয় নিঃসঙ্গ এই পথে তখন আত্মবিশ্বাস টুকুই সঙ্গি হয়।

— তোমার শহরের কোথাও আমি নেইঅথচ আমার পুরো শহরটাই তুমি । তুমি আমার ব্যস্ততা আর আমি তোমার অবসর ।

— ৭ বছর হয়ে গেল দেখা হয়না , একবার চট্টগ্রাম আসবে ?
— কেন ?
— আমার সাথে দেখা করতে ।
— কি লাভ ?
— আমি তোমাকে দু-চোখ ভরে দেখবো , আর তুমি আমার হাতের রান্না করা নুডলস খাবে ।
— আমার সময় হবে না ।
— আমার মুখ দেখতে চাওনা তাই না ?
— হাহাহা হাহাহা হাহাহা ।
— হাসছো কেন ?
— বৃষ্টি ,আজও সকাল বেলা ঘুম ভেঙ্গে গেলে ফ্রেমে বাঁধানো তোমার ছবি টার দিকে তাকিয়ে দেখি । মোবাইলে ওয়ালপেপারে তোমার ছবি , বালিশের পাশে তোমার ছবি রেখে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরি এর শেষ কোথায় বলতে পারো ?

— প্লিজ! সজীব ।
— রাখলাম বায় ।

অফিসের কাজের জন্য পাবনা গেছিলাম , সেখান থেকে রাতের ট্রেনে রওনা দিলাম খুলনার উদ্দেশ্যে । কুষ্টিয়ার পোড়াদহ স্টেশনে আসার পরে আমার পাশের সিটের মেয়েটা ট্রেনে উঠছিল । মেয়েটা ট্রেনে উঠে বসার একটু পরেই আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেল । তার নরম শরীরের স্পর্শে আমি বারবার শিহরিত হয়ে যাচ্ছি । পারফিউম আর ঘামের গন্ধ মিশ্রিত হয়ে আলাদা একটা গন্ধ পাচ্ছি । এই মুহূর্তে আমার কি করা উচিত বুঝতে পারছি না তবে যেমন আছে তেমন থাকুক , ক্ষতি কি ? আমিও সিটের সাথে মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর ভান করে বসে আছি । মেয়ে টা খুব পরম স্নেহের মহিমায় মহিমান্বিত হয়ে আমার ডান হাত জড়িয়ে ধরে কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে মনে হয় । আমি চোখ বন্ধ করে ছিলাম , কিন্তু পরক্ষনেই মেয়ে টা আমার ভাবনা ভুল প্রমাণ করে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো ;-

— মনে হয় খুব বড় ধরনের ছ্যাঁকা খেয়েছেন তাই জনাব ? (মেয়ে)
— আমি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি সে আগের মতো চোখ বন্ধ করে আছে । তাই আমি তার চোখ বন্ধ করা মুখেরদিকে তাকিয়ে বললাম ;- জ্বি , আপনার ধারণা সঠিক । (আমি)

— খুব ভালবাসতেন তাকে তাই না ?
— হ্যাঁ ।
— সেজন্য ৭ বছর ধরে আজও তার জন্য অপেক্ষা করেন ?
— আপনি এতক্ষণ ঘুমের অভিনয় করেছেন তাই না মেডাম ?
— আমার নাম ( ফারিয়া সুলতানা ) ।
— ওকে মিস ফারিয়া ।
— না , ফারিয়া সুলতানা ।
— ঠিক আছে ফারিয়া সুলতানা ।
— হুম এবার বাধ্য ছেলের মতো আপনার প্রেমের গল্প টা আমাকে বলুন ।
— কেন ?
— বিচার করবো ।
— কার বিচার ?
— আপনাদের প্রেমের মধ্যে কার দোষ আর কার গুন ছিল সেটা যাচাই করবো । আর তাছাড়া সামান্য কৌতূহল ও বলতে পারেন ।

— ওহহ আচ্ছা ।
— বলবেন না ?
— হ্যাঁ ।
— হুম শুরু করেন ।

ওর নাম ( নাজমা আক্তার বৃষ্টি ) আমি ছোটবেলা থেকে চট্টগ্রাম শহরে বড় হয়েছি সে খানেই মা-বাবা আর আমি থাকতাম । চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ পড়ার সময়ে আমি যখন তৃতীয় সেমিস্টারে পড়ি তখন প্রথম সেমিস্টারে সে ভর্তি হলো। তার গ্রামের বাড়ি ছিল ফেণী জেলার ছাগলনাইয়া থানার মধ্যে । তার সাথে পরিচয় টা খুব অদ্ভুত ভাবে হয়েছিল যেটা মনে পরলে এখনো মাঝে মাঝে হাসি । যোগাযোগ হবার পরে আমি সাত দিনের মধ্যে তাকে প্রেমের প্রপোজ করি কিন্তু সে রাজি হলো না । প্রায় তিন মাস অক্লান্ত পরিশ্রমের পরে সে আমার ভালবাসার ডাকে সাড়া দিলো ।

পলিটেকনিক জীবনের বাকি দিনগুলোতে দুজনেইপাশাপাশি কাটিয়ে দিলাম ৷ আমি যখন বের হলাম তখন তার আরো এক বছর বাকি ছিল । কারণ সে আমার চেয়ে একবছর পরে ভর্তি হইছে তাই বের হবে একবছর পরে । আমি বিএসসি করার জন্য ঢাকা শহরে চলে গেলাম আর আমার ভালবাসার গল্প টা পরে রইল চট্টগ্রাম শহরে ৷ কিন্তু প্রতি মাসে মাসে আমি ট্রেনে করে তার সাথে দেখা করতে চট্টগ্রাম যেতাম । এত ভালবাসার পরেও তাকে আমি ধরে রাখতে পারি নাই। আমি বের হবার ৬ মাসের মধ্যে সে একটা চট্টগ্রামের স্থানীয় ছেলের সঙ্গে প্রেম করা শুরু করে । ওর একটা বান্ধবী প্রথম আমাকে জানালো । আমি প্রথম প্রথম মনে করতাম হয়তো বৃষ্টির বান্ধবী বৃষ্টির ক্ষতি করার জন্য আমার সঙ্গে মিথ্যা কথা বলে কিন্তু আমি ভুল ছিলাম । বৃষ্টি কে যখন আগের মত কথা বলতে আর পেতাম না তখন একদিন তাকে আমি জিজ্ঞেস করি । বৃষ্টি সাথে সাথে নতুন রিলেশন এর কথা শিকার করছে ।

আমি তাকে জিজ্ঞেস করছি আমার অপরাধ টা কি ? সে বলে আমি নাকি তার যোগ্য না তাই সে আমার সাথে সারাজীবন একসাথে কাটাতে পারবে না । আমি জিজ্ঞেস করলাম তাহলে এতদিন প্রেম করার কারণ টা জানতে পারি ? সে বলে , এতদিন পরে নাকি সে বুঝতে পারছে যে আমার সাথে থাকা যায় না । নতুন ছেলের সঙ্গে প্রেম শুরু করার পরে মাত্র তিন মাসের মধ্যে তারা বিয়ে করে । অবশ্য বিয়েতে যাবার জন্য দাওয়াত দিয়েছিল আমাকে । বিয়ের কিছু দিন আগে সে আমার ফেসবুকের মধ্যে মেসেঞ্জারে মেসেজ দিয়েছিল ।

তোমার সাথে আমি দীর্ঘ অনেক টা সময় প্রেম করে ভালবেসে কাটিয়ে দিলাম । কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তোমার চেয়ে এখন যার সাথে বিয়ে হবে সেই আমার জন্য যোগ্য । তাই নিজের সুখের জন্য আমি তার হাতটা ধরলাম আর কোন কারণ নেই । তবে তুমি আমাকে স্বার্থপর ভাবতে পারো আর সেটাই স্বাভাবিক কারণ আমি সুখী ৷ তুমিও অনেক ভালো একটা ছেলে তাই হয়তো আমার চেয়ে অনেক সুন্দর একটা মেয়ে পাবে জীবন সঙ্গী হিসেবে । তোমার ভবিষ্যত জীবনের জন্য আমার দোয়া রইল । যদি পারো ক্ষমা করে দিও । কিন্তু বৃষ্টি মিথ্যা কথা বলেছিল কারণ , ৭ বছর হয়ে গেছে আজও কাউকে ভালবাসতে ইচ্ছে করলো না । আজও বৃষ্টি কে নিয়ে রোজ স্বপ্ন দেখি , রাতের আঁধারে কল্পনা করি , সকাল বেলা বৃষ্টি হয়তো আমার সামনে আসবে । দিনের বেলা কল্পনা করি , রাত হলেই বাসায় গিয়ে বৃষ্টি কে দেখতে পাবো । রাত শেষ হয়ে যায় , দিনের সূর্য পশ্চিমে চলে যায় কিন্তু আমার অপেক্ষা শেষ হয়না ।

৫২ বছর বয়সে বাবা হঠাৎ করে আবার বিয়ে করে , মা সেই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে । বাবা আমাকে বললেন , আমি যেন তার জন্মদাতার ঋণ পরিশোধ করি ৷ বাবার কাছে আর কিছু বললাম না তবে সেই থেকে আর তার সাথে দেখা করিনি । একা একা বাস্তবতা মেনে নিয়ে কাটিয়ে দিচ্ছি নিজ জীবনের পথচলা ৷ কিছু দিন আগে খবর পেলাম বাবা নাকি খুব অসুস্থ আমাকে দেখতে চান । কিন্তু আমার দেখা করার ইচ্ছে করছে না তাই যাবনা বলে দিলাম । বাবা ফোন করে কান্নাকাটি করে কিন্তু আমার কানে সেই কান্না পৌঁছাতে পারে না । পরশু রাতে মা’কে স্বপ্নের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি । মা আমাকে বাবার কাছে যেতে বলে তার কারণ বাবা নাকি ওপারে মায়ের কাছে চলে যাবে । কিন্তু আমার সঙ্গে দেখা না করে মরেও শান্তি পাবে না । মা তার স্বামী কে মরার আগে কষ্ট দিতে চায় না তাই আমি বাবার কাছে যাবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম ।

— আর কিছু শুনতে চান ?
— কি বলবো বুঝতে পারছি না ।
— বোঝার দরকার নেই ।
— আপনি চাকরি করেন কিসে ?
— সিভিল এ একটা কোম্পানির চাকরি করি ।
— খুলনা থাকেন ?
— হ্যা , তবে বেশি দিন না , ৮ মাস হলো খুলনা শহরে আসছি । আচ্ছা আপনার বাসা কোথায় ?
— বাগেরহাট জেলা ৷
— কুষ্টিয়া কেন গেছিলেন ?
— ভালবাসার টানে ।
— মানে ?
— আপনার মত আমার একটা গল্প আছে । কিন্তু আমিও আপনার মত এ জীবনে কোনদিন বিয়ে করবো না ৷ মা- বাবা বিয়ে দিতে চায় কিন্তু আমার ইচ্ছে নেই বলে বাড়ি যাইনা ।

— তাহলে কার কাছে থাকেন ? আপনার স্বামীর কাছে থাকেন নিশ্চয়ই ?
— হাহাহা হাহাহা হাহাহা আমার বিয়ে হয়নি ।
— ওহহ আচ্ছা । আপনার গল্প টা শুনতে পারি ?
— যদি বেঁচে থাকি , আর এ জীবনে আবারও দেখা হয়েযায় তবে সেদিন বলবো । কিন্তু আমার মনে হয় সে দিন টা  আর কোনদিন আসবে না ।

— কেন ?
— আমি ট্রেনে উঠার আগে ১৫ টা ঘুমের ঔষধ খেয়ে তারপর উঠেছি ।
— আজব মানুষ আপনি । কেন খাইছেন ?
— ঘুমের মধ্যে নিশ্চিন্তে মরবো বলে ।
— কিন্তু কেন ?
— বেঁচে থাকলে বলবো ।

বাহিরে ভোর হয়ে গেছে , আকাশ পরিষ্কার হয়ে সূর্য কে নিমন্ত্রণ করার জন্য প্রস্তুত । মেয়েটি আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে নিঃশ্বাস নিচ্ছে কিনা সেটা বারবার পরীক্ষা করি ।

ট্রেনের গতি কমে আসছে , যশোরের নোয়াপাড়া স্টেশন ঘন্টা খানিক আগে পার হয়ে গেছে । তাহলে এটা মনে হয় দৌলতপুর স্টেশন । আমি নামতে চেয়েছিলাম খুলনা মেইন রেলস্টেশনে কিন্তু মেয়েটি যদি সত্যি সত্যি ঘুমের ঔষধ খেয়ে থাকে তবে তাকে হাসপাতালে নেয়া জরুরি । দৌলতপুর স্টেশনে দুটো মানুষের সাহায্য নিয়ে মেয়ে টাকে নিয়ে নেমে পরলাম । একটা মাহিন্দ্রা রিজার্ভ করে সরাসরি ( আদ্বদীন হাসপাতালে যাচ্ছি ) কারণ সেখানে আমার একটা পরিচিত ডাক্তার আছে ৷ আগে থেকে পরিচয় ছিল না , কিন্তু কিছুদিন আগে একটা রোগীকে রক্ত দিতে গেছিলাম । সেই থেকে তার সাথে আমার পরিচয় । হাসপাতালে পৌঁছে দ্রুত জরুরি বিভাগের ডাক্তার ডেকে মেয়েটাকে ভিতরে পাঠিয়ে আমি অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছি । হাসপাতালের ক্যাশে টাকা জমা দিয়ে অপেক্ষা করছি । প্রায় ৩০ মিনিট পরে জরুরি বিভাগের ডাক্তার এসে আমাকে বললেন ;-

— আপনার স্ত্রী এখন বিপদ মুক্ত আছে , কিন্তু একটা বিষয় বুঝতে পারছি না । স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হতেই পারে কিন্তু তাই বলে গর্ভবতী অবস্থায় পেটে সন্তান নিয়ে কেউ ঘুমের ঔষধ খায় ?

— ডাক্তারের কথা শুনে চমকে উঠলাম , প্রথমত সে মেয়েটাকে আমার স্ত্রী মনে করেছে । দ্বিতীয়ত তো মেয়েটি বলেছে তার বিয়ে হয়নি তাহলে মেয়েটি গর্ভবতী মানে কি ? ডাক্তার কে বললাম ;- আপনি কি শিওর , যে সে গর্ভবতী?

— ডাক্তার বললো , ১০০% শিওর , কেন আপনারা জানেন না ?
— আমি বললাম , না জানিনা আমি ।
— মনে হয় আপনার স্ত্রী আপনাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছে ।
— আপনি বলেছিলেন আপনার বিয়ে হয়নাই কিন্তু ডাক্তার বলে আপনি তিন মাসের গর্ভবতী ৷ তাহলে আমি এখন কার কথা বিশ্বাস করবো আপনি বলতে পারেন ? (আমি)

— ডাক্তারের কথা বিশ্বাস করুন । ( ফারিয়া সুলতানা )
— মানে কি ?
— মানে আমি সত্যি সত্যি তিন মাসের গর্ভবতী একটা অবিবাহিতা মেয়ে ৷
— পরিষ্কার করে বলেন ৷
— রাতে ট্রেনের মধ্যে বলেছিলাম না ? আমার এই জীবনের একটা গল্প আছে ।
— হ্যাঁ ।
— আমি যখন বেঁচে আছি তখন আপনাকে আমার বলা উচিত, কারণ আমি আপনাকে কথা দিছি যে বেচে থাকলে বলবো ।
— হ্যা বলেন , কিন্তু তার আগে বলেন আপনার কিছু লাগবে নাকি ?
— না ঠিক আছে ।
— বলেন তাহলে ।

আমি খুলনা শহরে আসছি ৩ বছর হয়ে গেছে , বয়রা মহিলা কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ পরীক্ষা শেষ হইছে কিছু দিন আগে । এখানে একটা মেসের মধ্যে বান্ধবীদের সঙ্গে থাকি আর নিজেরা রান্না করে খাই । বছর খানিক আগে আমরা তিন বান্ধবী মিলে ভৈরব নদীর তীরে চরের হাট ঘুরতে গেছিলাম । সেখানে বসে খুলনা পলিটেকনিক এর একটা ছেলের সঙ্গে আমার পরিচয় হলো। আমরা তখন ফুসকা খাবার জন্য দাঁড়িয়ে আছি আর তারাও সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল।

আমি ভেবেছিলাম কাহিনি এখানে শেষ , কিন্তু না , সে আমার পিছনে ফলো করতে করতে আমার মেস পর্যন্ত এসেছিল যেটা আমি পরে জানতে পারি । এর সপ্তাহ খানিক পরে আমি কলেজ থেকে ফেরার পথে সে বয়রা বাজারে আমারে সঙ্গে দেখা করে । এবং সেদিনই আমাকে প্রপোজ করে কিন্তু আমি তাকে গ্রহণ করিনি । তবে সে হাল ছাড়েনি তাই তার ধৈর্যের কাছে আমি পরাজিত হয়ে ২ মাস পরে তার সাথে সম্পর্ক করতে রাজি হলাম । সে আমার খুব কেয়ার করতো , তার ভালবাসার যত্ন দেখে আমি মুগ্ধ ছিলাম । আর তাই আমার নিজের সবকিছু দিয়ে তাকে ভালবাসা শুরু করলাম ৷ মেসের মধ্যে থাকতাম তাই ও যখন যেখানে দেখা করতে চাইতো তখন সেখানে দেখা করতে যেতাম । সত্যি বলতে , তাকে না দেখে আমিও আর থাকতে পারতাম না । কারণ আগেই বলেছি আমি আমার সবকিছু দিয়ে তাকে ভালবাসা শুরু করেছি ।

ওর নাম ছিল ( রাশেদ ) আর বাড়ি কুষ্টিয়া । হঠাৎ করে মাস তিনেক আগে একদিন ও বললো দুদিন পর ওর জন্মদিন । তাই ওর কথা ছিল , রাত ১২ টা বাজে আমি সামনে দাড়িয়ে ওকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই । কিন্তু আমি বললাম সেটা কিভাবে সম্ভব ? তখন অনেক ভেবে চিন্তে ও বললো , ওর মেসের মধ্যে আমি যেন যাই । আর রাত ১২ টা বাজে ওকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে আসি । আমি প্রথমে অমত করলেও পরবর্তীতে আবেগের কারণে ওর কথায় রাজি হলাম । মেসের মধ্যে বান্ধবী দেরকে বুঝিয়ে আমি রাত ১০ টার দিকে রাশেদ এর মেসে চলে গেলাম । মেসের মধ্যে তেমন কেউ ছিল না , পলিটেকনিক এর সেমিস্টার পরীক্ষা শেষে অনেকে বাড়িতে ছিল । আর রাশেদও তখন পলিটেকনিক এর ৭ম সেমিস্টার পরীক্ষা শেষ করেছে ।

রাত ১২ বাজে কেক কেটে জন্মদিন পালন করে আমি মেসে ফিরতে চাইলাম । কিন্তু রাশেদ বললো , রাতে যাবার দরকার নেই কাল সকালে যাবে । কথা ছিল আমি এক রুমে থাকবো আর রাশেদ ওর বন্ধুর সাথে পাশের রুমে থাকবে । কিন্তু সত্যি বলতে , রাতে ঘুমাতে গিয়ে নিজের কাছে অস্বস্তি লেগেছে । তাই ওকে বললাম, তুমি আমার সাথে থাকো । তারপর আমরা দুজন একই বিছানায় ঘুমানোর ব্যবস্থা করলাম । আর আমাদের পবিত্র ভালবাসা কে অপবিত্র করে সেই রাতেই ফিজিক্যাল রিলেশন হলো । পরদিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি মেস ত্যাগ করে আমার মেসে চলে গেলাম । গোসল করে ঘুম দিলাম আবারও তবে তখনও নিজের মধ্যে কোন অনুশোচনা বোধ ছিল না । রাশেদ কলেজ ইন্টর্নি করার জন্য গাজীপুর চলে গেছে । আর আমি আমার মেসের মধ্যে আছি কিন্তু সবসময়ই কথা হতো আমাদের ।

পরের মাসে আমি যখন লক্ষ্য করলাম যে , আমার নিয়মিত ঋতুস্রাব টা ঠিক সময়ে হচ্ছে না তখন বুক টা কেপে গেল । খুব কাছের এক বান্ধবী কে বলে ওর বিএফ এর মাধ্যমে ফার্মেসি হতে অন্তঃসত্ত্বা পরীক্ষা করার ক্লিপ আনলাম । ফলাফল পজিটিভ আসলো আর আমি বুঝতে পারছি যে আমার মাঝে আমি একা নই । আমি রাশেদ কে সবকিছু খুলে বলছি আর অনেক কান্না করছি । রাশেদ বলে এভোরশন করিয়ে ফেলে বাচ্চা নষ্ট করে দেও । কিন্তু আমি রাজি হলাম না তাই তার সাথে অনেক ঝগড়া হলো । ঝগড়ার একটা পর্যায়ে সে আমার সাথে সমস্ত সম্পর্ক শেষ করার হুমকি দিল । আমিও তাকে রাগের মাথায় অনেক কিছু বললাম কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না । রাশেদ আমার সাথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিল ।

আমি রুমের মধ্যে গৃহ বন্দি হয়ে একা একা কান্না করতাম। এর আগে আমি সারাদেশে বহুবার বহুসময় পত্রিকা,টেলিভিশনে খবরে দেখেছি । ড্রেনে শিশু বাচ্চার লাশ ,বিভিন্ন ঝোপঝাড় নালার মধ্যে শিশুদের লাশ । কত হাজার মেয়ে অবৈধ মেলামেশা করে বাচ্চা প্রসব করে ফেলে দিছে । আমি সেই সব খবর পত্রিকা আর টেলিভিশনে দেখতাম আর তাদের কে গালি দিতাম । কিন্তু আজকে আমি সেই সব নষ্ট মেয়েদের মাঝে একজন । আমার বেঁচে থাকার জন্য ইজ্জত দরকার , আর সেই ইজ্জত বাঁচাতে আমার একটা ( ঠিকানা ) দরকার ৷ কিন্তু রাশেদ আমাকে ঠকিয়েছে , না না ভুল কথা , আমি নিজেই নিজের ভুলের জন্য ঠকেছি । দেশের বিভিন্ন পরিস্থিতি দেখে আমার শিক্ষা নেবার দরকার ছিল কিন্তু আমি তা করিনি । যার জন্য আজ আমি আমার ( ঠিকানা ) হারিয়ে ফেলেছি । আমার পেটে সন্তান বড় হচ্ছে তার কোন ( ঠিকানা ) নেই । তাই আমি আমার সন্তানের ( ঠিকানা ) খোঁজার চেষ্টা করতে লাগলাম ।

রাশেদ এর একটা ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপিআমার কাছে ছিল । সিম কেনার সময় দরকার পরেছিল তাই ফটোকপি করা হয়েছে কিন্তু এক কপি বেশি ছিল সেটা আমার ভ্যানিটি ব্যাগের ভেতর ছিল । রাশেদ এর ন্যাশনাল আইডি কার্ড দিয়ে ওর গ্রামের বাড়ি যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম । খুলনা রেলস্টেশন হতে ( রূপসা এক্সপ্রেসে ) করে সকালে কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম । সেখানে গিয়ে একা একা ওদের বাড়ির ঠিকানা বের করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল । ওদের বাড়িতে সবাই কে সবকিছু খুলে বলছি কিন্তু তারা আমাকে উল্টো অপবাদ দিলেন । রাশেদ কে ফোন করা হয়েছে কিন্তু সে আমাকে চেনেনা বলে সবাই কে জানিয়ে দিল । সকল অপমান আর গ্লানি সহ্য করে একা ফিরে আসতে বাধ্য হলাম ।

কুষ্টিয়ার পোড়াদহ এর বিভিন্ন ফার্মেসি হতে একটা একটা করে ঘুমের ঔষধ কিনলাম । নিজের উপর অনেক ঘৃণা জন্ম নিল । পোড়াদহ রেল স্টেশন এসে ঘুমের ঔষধ খেয়ে বসে ছিলাম । রাত দুটোর দিকে ট্রেন আসলো আর আমিও ট্রেনে উঠে পড়লাম । বাকি টা আপনি তো জানেন । ফারিয়া সুলতানার কথা শুনে আমি কিছুক্ষণ চুপ করেজানালার দিকে তাকিয়ে রইলাম । ভাবলাম পৃথিবীর সব মানুষ যদি ভালো হতো তবে ভালবাসা কে কেমন এক ঘেয়ে মনে হতো । আঘাত পেতে পেতে জীবনের গভীরতম বোধকে আমিঅনুভব করতে পারি। সে আমার হতে বার বার হাত ফসকে যায় । দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী জেগে আমি তার জন্যঅপেক্ষা করি । কোন দিন কি পারব সেই মহান বোধকে স্পর্শ করতে ? নিজেকে বোঝাই – ভাগ্যে যা আছে তা হবে । কিন্তু আমার তো চেষ্টা করতে হবে । ফারিয়া কে বললাম :-

— যা হবার হয়ে গেছে কিন্তু আল্লাহ যখন তোমাকে বাচিয়ে দিয়েছেন তাই দ্বিতীয় বার মৃত্যুর চেষ্টা করো না । আল্লাহ হয়তো তোমার আর তোমার সন্তানের জন্য ( ঠিকানা ) তৈরি করে রেখেছেন । তাই সেই ( ঠিকানা )তোমাকে গ্রহণ করতে হবে এবং জীবনের সাথে লড়াই করতে হবে । আমি আমার যায়গা হতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো তোমার জীবনের পরবর্তী গল্প টা সুন্দর করে সাজানোর জন্য । ( আমি )

— আমি আমার মা-বাবা কে কি জবাব দেব বলতে পারেন ? ( ফারিয়া সুলতানা )
— সেটা সময় বলে দেবে কিন্তু আপাতত কিছু বলার দরকার নেই ।
— আমাদের পাপের জন্য আপনি ঝামেলার মধ্যে যাবেন কেন ?

— সবকিছুর একটা সমাধান আছে , আর সেই সমস্যা সমাধানের জন্য কেউ না কেউ দায়িত্ব নিবে এটাই স্বাভাবিক ।

— এখন বুঝতে পারছি , আপনার সেই নাজমা আক্তার বৃষ্টি কেন এতটা আপসোস করে ।
— কেন ?
— আপনার মতো মানুষ কে হাতছাড়া করা যায় না ।
— হাহাহা হাহাহা হাহাহা । তুমি থাকো , আমি একটু অফিসে যাব কারণ আমার জরুরি কাজ আছে ।
— আচ্ছা ঠিক আছে ।
— তুমি চাইলে তোমার বান্ধবীদের ফোন করে আসতে বলতে পারো । তাতে করে তোমার সময়টা কেটে যাবে ।
— আচ্ছা ঠিক আছে তাই করবো আপনি তাহলে চলে যান তবে আশা করি আবারও দেখা হবে ।
— হ্যা অবশ্যই ।
— খোদা হাফেজ ।

সেদিন থেকে ফারিয়ার সাথে আমার পরিচয় , তার সুস্থ হতে সপ্তাহ খানিক লেগেছিল । তারপর ফারিয়া ওর মেসে চলে গেছে আর আমি আমার বাসায় । তবে প্রতিদিন অফিস শেষ করে ফারিয়ার সাথে দেখা করে তারপরবাসায় যেতাম । আমার নিজের বাইক ছিল তাই খুলনার মত ছোট একটা শহরে তাকে নিয়ে মাঝে মাঝে ঘুরতে গেছিলাম । শুধুমাত্র তার মনটা হাসিখুশি রাখার জন্য । অফিসের কাজের চাপ বৃদ্ধি পেল তাই বাবার সাথে দেখা করতে যাব যাব করে যাওয়া হয়নি । আসলে মন চাচ্ছে না সেটাও একটা কারন ।

ফারিয়ার আর তার সন্তানের ( ঠিকানার ) জন্য আমি নিজেকে নিযুক্ত করতে চাইলাম । সেদিনের পরে প্রায়
২০ দিন কেটে গেল তাই একদিন ফারিয়া কে ডেকে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করলাম । তাকে বললাম , আমি হতে চাই তোমার আর তোমার সন্তানের ( ঠিকানা ) । ফারিয়া রাজি হলো না । তাকে বারবার বোঝালাম , কিছুদিন পরে তার পেট স্বাভাবিক হতে বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করবে তখন নানা রকম প্রশ্ন উঠবে । তার আগেই যদি আমরা বিয়ে করে নেই তবে আর সমস্যা হবে না । পরিবার পরে বোঝানো যাবে কিন্তু সাম্প্রতিক সমস্যার সমাধান করতে হলে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে । ফারিয়ার হাতে একটা নীল শাড়ি দিয়ে বললাম , নীল শাড়ি আমার খুব পছন্দ । অনেক স্বপ্ন ছিল নিজের প্রিয় ভালবাসার মানুষটাকে নীল শাড়ি পরিয়ে তার সাথে পাশাপাশি হাঁটবো । ফারিয়া ভাবার জন্য দুই দিনের সময় নিয়ে আমার কাছ থেকে চলে গেল । এই ফারিয়ার সাথে আমার শেষ দেখা ।

পরদিন বিকেলে ফারিয়ার বান্ধবী কল দিলো , সে আমাকে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে যেতে বললো কারণ ফারিয়া সেখানে অসুস্থ । আমি অফিস থেকে বেরিয়ে সরাসরি হাসপাতালে চলে গেলাম । কিন্তু ফারিয়ার সাথে দেখা করতে পারি নাই । ডাক্তার আর ফারিয়ার বান্ধবীর কাছে যা শুনলাম তা হচ্ছে , ফারিয়া সকাল বেলা কাপড় ধোঁয়ার হুইল পাউডার ( সাবানের সোডিয়াম ) খেয়েছে । তার বান্ধবীরা টের পেয়ে তাকে জরুরি হাসপাতালে নেবার চেষ্টা করে । কিন্তু হাসপাতালে আসার পরে ফারিয়া মা-রা গেছে ৷

ডাক্তার বললো :- খালি পেটে খাবার জন্য পেটের মধ্যে গিয়ে দ্রুত কাজ করেছে তাই তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে ফারিয়া গর্ভবতী যার কারণে শরীর আরো বেশি দুর্বল ।

এতকিছুর পরও যখন ফারিয়া আমার কথা রাখেনি তাই তার লাশের সামনে যেতে ইচ্ছে করলো না । হাসপাতাল থেকে বের হয়ে রাস্তা দিয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছি । একটু পরে মোবাইলে কল এলো , বাবা একটু আগে মা-রা গেছে । আমি যেন আজ রাতের মধ্যে বাড়িতে যাই কারণ আমি না গেলে নাকি বাবার লাশ দাফন করা হবে না । তুমি অন্ধকার চারিদিকে অন্ধকার । আমার জীবনের মধ্যে কোন স্টেশন নেই , নাহ মনে হয় ভুল বললাম । কারণ হুমায়ুন আহমেদ এর ( স্টেশন ) উপন্যাসের মধ্যে পড়েছিলাম ।

সব মানুষের মধ্যে একটা ইষ্টিশন থাকে । সেই ইষ্টিশনের সিগন্যাল ডাউন করা । ইষ্টিশনে সবুজ বাতি জ্বলছে । আনন্দময় ট্রেনের জন্যে অপেক্ষা । কারো কারো ষ্টেশনে ট্রেন সত্যি সত্যি এসে থাকে । কারো কারো ষ্টেশনে আসে ঠিকই , কিন্তু মেলট্রেন বলে থামে না । ঝড়ের মতো উড়ে চলে যায় । কিন্তু দিন শেষে সবাই একটা যায়গা খুঁজে বেরায় , সেটা হচ্ছে ( ঠিকানা ) ।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত