আমার দুটো ছেলে মেয়ে আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ মতিঝিল এ পড়ে ।বিয়ের পর থেকেই স্বপ্ন ছিল সন্তানকে কোনো নামিদামী স্কুলে পড়াব।প্রথম পছন্দ ছিল ভিকারুন নেসা নুন স্কুল এন্ড কলেজ।তবে যখন মেয়ের জন্মের ১৪ মাসের মাথায় ছেলে জন্ম নিল তখন মনে মনে আইডিয়াল স্কুলের কথাই চিন্তা হলো।যেহেতু ওটা ছেলে মেয়ে উভয়েরই স্কুল।মেয়ে ভর্তি হলো ২০১১তে ছেলে ২০১২ তে।ভর্তি করানোর পর স্বপ্ন ভঙ্গ হলো।শুধুই লেখাপড়া নামে শিক্ষকদের বাড়ীতে,কোচিং এ ছুটোছুটি করার অসুস্হ প্রতিযোগিতা ।আমার ছেলে মেয়ে প্রকৃতির নিবিড় সাহচায্যে বেড়ে ওঠা ।স্কুল ওদের ভালো লাগল না।বোঝালাম সব স্কুলেই মোটামুটি এক অবস্হা।পালাবি কোথায়?
অভিভাবকদের সাথে পরিচয় হলো।মনে হলো এ শ্রেণীকে আমি চিনি না।বাচ্চার সিটি পরীক্ষার সময় তার দাদা দাদীর বাসায় এন্ট্রি মানা।মূল পরীক্ষার সময় এক সপ্তাহের খাবার রেঁধে ফ্রিজে রেখে দেয়া গরম করে খাওয়া,বাচ্চার স্কুল শেষে কোচিং করিয়ে দিনশেষে বাসায় ফেরা,একটা কোচিং শেষ করে নাকে মুখে কিছু গিলিয়ে আরেকটা কোচিং এ ঢুকানোর গল্প শুনে অস্হির লাগত।আমি সকালে মেয়েকে স্কুলে দিয়ে বাসায় চলে আসতাম আবার ছেলেকে সাথে করে স্কুলে দিয়ে মেয়েকে নিয়ে ফিরতাম।বিকেলে ছেলের বাবা কাজ শেষে ছেলেকে নিয়ে আসত।কোচিং এ ছুটোছুটি করতাম না বলে স্কুলে সবাই আমাকে হয় অলস,না হয় টাকার অভাবে কোচিং করাই না নতুবা কেয়ারলেস অশিক্ষিত মনে করতো।আমিও কারও কাছে কোনো ব্যাখ্যা দিতাম না। মাঝে মাঝে বাচ্চাদের আনা নেয়ার সময়ে ভাবীদের সাথে অল্প বিস্তর কথা হতো।আমি বাসায় কুকুর পালি শুনে একজন বলেই ফেলল “ওমা আপনার তো নামাজ হয় না” আমি আরও যোগ করি যে আমার বাসায় চারজন সনাতন ধর্ম পালনকারী পরিবার ভাড়া থাকে।শুনে শ্বশুড় শ্বাশুড়ীকে বাসায় ঢুকতে না দেয়া একজন বলে ফেলল যে আমার হিন্দুদের বাসা ভাড়া দেয়া উচিত হয় নাই।
এরকম মানসিকতা সম্পন্ন অভিভাবক থেকে একজন সন্তান কি শিখবে?আমার বাচ্চারা দেখে অভ্যস্ত তার দাদা দাদীর জন্য বড় মাছ,মাথা,মুরগীর রান বরাদ্দ।তার দাদীর পছন্দ অনুযায়ী মাছ ঘরে আসে,তার মা মাছ নামানোর আগে তার দাদীকে জিজ্ঞাসা করে নেয় তিনি কোন মাছ খাবেন,বিভিন্ন পদের ভর্তা,মাছ রান্না করে যাতে করে তার দাদীর মুখে যেটা ভালো লাগে সেটা দিয়ে যাতে করে একটু খেতে পারে,তারা তার দাদীকে জুতা পরিয়ে দেয়।আমার মেয়ে রাঁধতে খুবই পছন্দ করে সে নাস্তা বানিয়ে প্রথম দাদীকে পরিবেশন করে তারপর বাকিদের।
আমাদের সন্তানদের প্রায়োরিটি শেখানোর দায়িত্ব আমাদের।একখন্ড মাটির টুকরো দিয়ে আমরা দেবতা গড়ব না দৈত্য গড়ব তা আমাদের উপরই নির্ভর করবে। প্রায়ই অনেকে আমাকে প্রশ্ন করে “আপনার শ্বাশুড়ী আপনার সাথে থাকে?” আমি বলি আমি আমার শ্বাশুড়ীর সাথে থাকি।মালিকানাতো বাবা মায়েরই হয়ে থাকে তাই তো উচিত নাকি? সন্তানেরা আমাদের যে পথে চলতে দেখবে সে পথেই চলবে। আমার দুবছরের বাচ্চা যে নতুন নতুন কথা বলতে শিখেছে তার দু একটি কথা বলে লেখা শেষ করব।
ঘটনা ১ —মশার কামড়ের ভয়ে তাকে দুপুরে মশারি টানিয়ে ঘুম পাড়ানো হয়।কয়েকদিন আগে হঠাৎ একটু আগে ভাগেই তার ঘুম ভেঙ্গে যায়।ডাইনিং টেবিলের চেয়ার টেনে চেয়ারে উঠতে যেয়ে(এটা তার প্রিয় কাজ টেবিলে উঠে বসে থাকা) সে দেখে তার দাদী মশারি ছাড়া ঘুমাচ্ছে।সে বাসার স্হায়ী সাহায্যকারী মেয়েকে প্রশ্ন করছে “ আপু দাদী মছারি দাও নি কিন?” আমি শুনে দুষ্টুমি করে বললাম তুমি দাও।সে চেয়ার থেকে নেমে দৌড়ে দাদীর রুমে যেয়ে বলে চাবি কুই? ওয়ারড্রবের ভিতরে মশারি থাকে সে তা জানে।
ঘটনা ২— দাদী ঘুমাচ্ছে ড্রইংরুমে ফোনে আমি জোড়ে জোড়ে কথা বলছি” মা চুপ চুপ। চুপ কলো আমাল দাদী গুমায়।”
ঘটনা ৩—- দুটো বিস্কুট দুই হাতে নিয়ে কুকুর কে বলছে “ কুকু বিক্কু খাবি?”
বিস্কুট,পাউরুটি পেলেই বিড়ালকে দিয়ে দিবে।আমার মেয়ে দশম শ্রেণীতে পড়ে।বাসায় একটা মেয়েকে এনেছি তিনমাস হলো।বাথরুমে প্রায় আধা ঘন্টা ব্যয় করে সকালে ৮ টার পর ঘুম থেকে উঠে।মূলত সে ফ্রেশ হয়ে লিপিস্টিক,কাজল,টিপ অর্থাৎ সাজগোজ করে বের হয়।মেয়েকে বললাম মা আমি বললে ভালো দেখায় না তুমি একটু বলবে ঘরে না সাজতে? বেড়াতে গেলে সাজবে।মেয়ের প্রশ্ন মা ওর ওতো ইচ্ছে করে,ওরতো এখন আমার মতো লেখাপড়া করার কথা? কি উত্তর দিব? আমার ছেলেমেয়ের পশুপাখির প্রতি ভালোবাসার গল্প না হয় অন্যদিন বলব।