হঠাৎ করে আমাদের বাসার টিভিটা নষ্ট হয়ে যায়। মা যেহেতু সারাদিন বাসায় একা থাকে তাই টিভি বাদে মার সময় পার হয় না।তাই আমি মাকে বললাম, যতদিন নতুন টিভি না কিনছি ততদিন তুমি না হয় আমার একটা ফোনে ইউটিউবে নাটক দেখে সময় পার করো মা বললো, আমি এইসব ইউটিউব টিউটিউব বুঝি না।
আমি তখন মাকে বললাম, এইখানে গিয়ে তুমি শুধু মেহজাবিনের নাটক লিখবে তাহলেই সব নাটক চলে আসবে। মাকে অনেকক্ষণ বুঝানোর পর মা বুঝলো এখন মা সবসময় মোবাইলে শুধু মেহজাবিনের নাটক দেখে। নতুন টিভি কিনার পরেও মা টিভি দেখে না। সময় পেলেই ইউটিউবে ঢুকে মেহজাবিনের নাটক দেখে। সেদিন আমি মা বাবা আমার বিয়ের জন্য একটা মেয়ে দেখতে গেলাম। মেয়েটা শ্যাম বর্ণের হলেও মেয়েটাকে আমার পছন্দ হয়েছিলো কিন্তু মা হঠাৎ করে মেয়েটাকে বললো,
~আচ্ছা মা তুমি কি কান্না করতে পারো? মেয়েটি মার এমন কথা শুনে অবাক হয়ে বললো,
— মানে? মা বললো,
~ মানে হলো তুমি কি কান্না করতে পারো। কান্না করলে কি তোমার চোখ দিয়ে অল্প পানি বের হয় না কি বেশি পানি বের হয়? মার কথা শুনে আমি আর বাবা খুব অবাক হয়ে গেলাম।বাবা মার হাত ধরে বললো,
–আরে তুমি এইসব কি উল্টো পাল্টা কথা বলছো? মা বাবাকে ধমক দিয়ে বললো,
~ তুমি চুপ করো। যে মেয়ে মেহজাবিনের মত সুন্দর করে কান্না করতে পারবে না তাকে আমার ঘরের বউ কখনোই বানাবো না মা’র ধমক শুনে বাবা চুপ হয়ে গেলেন। মা তখন মেয়েটিকে বললো,
~আচ্ছা মা একটু কান্না করে দেখাও তো। মেয়েটি আমতা আমতা করে বললো,
— বিনা কারণে কাঁদবো কিভাবে? মা বললো,
~ তা ঠিক বলেছো।। মেহজাবিন তো বিনা কারণে কান্না করতো না। যখন ওর বিয়ে অন্য জায়গাতে ঠিক হয়ে যেতো তখন ও কান্না করতো। ইসসস মানুষ যে এত সুন্দর করে কান্না করতে পারে মেহজাবিনকে না দেখলে বুঝতাম না মা’র এইসব উদ্ভট কথা শুনে আমি আর বাবা মাকে কোন রকম টেনে বাসা থেকে বের করলাম। বাবা আমায় বললো,
– তোর মার মাথায় মেহজাবিন কিভাবে ঢুকলো? আমি মাথা নিচু করে বললাম,
— আমি মাকে বলেছিলাম ইউটিউবে মেহজাবিনের নাটক দেখতে বুঝতে পারি নি মা’র এমন অবস্থা হবে বাবা আমার দিকে রাগী রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,
– তোকে পন্ডিত গিরি করতে কে বলেছিলো? এখন আল্লাহ জানে তোর এই জীবনে বিয়ে হয় কি না। আমার বংশের বাতি মনে হয় এইখানেই নিভবে তার কয়েকদিন পর বাবার এক বন্ধুর মেয়েকে আমরা দেখতে গেলাম। যাওয়ার আগে মাকে ভালো করে বুঝিয়ে বললাম যে, মেহজাবিনের কান্নাটা সত্যিকারের কান্না না। এটা অভিনয়ের জন্য কাঁদে। তাই আগের মত উল্টো পাল্টা প্রশ্ন যেন না করে। বাবার বন্ধুর মেয়েকে দেখে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। তাছাড়া মা আজ কোন উল্টো পাল্টা প্রশ্ন করে নি। বিয়ে যখন প্রায় ঠিক তখনি মা বললো মেয়ের সাথে আলাদা একটু কথা বলবে। প্রায় ৩০ মিনিট হয়ে গেলো ওরা রুম থেকে বের হচ্ছে না। একটু পর রুম থেকে বাবার বন্ধুর মেয়ের চিৎকার কানে আসলো। আমরা সবাই দৌড়ে রুমে গেলাম। গিয়ে দেখি বাবার বন্ধু মেয়ে বিছানাতে গড়াগড়ি খাচ্ছে আর চোখ ধরে চিৎকার করে কান্না করছে। আমি মাকে বললাম,
— কি হয়েছে মা,এই মেয়ে এইভাবে কাঁদছে কেন?? মা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~আর বলিস না, মেয়েটাকে কত করে বললাম একটু কান্না করতে চোখ থেকে একফোঁটা জল বের করতে কিন্তু বেয়াদব মেয়ে আমার কথা শুনে শুধু হাসে তাই চোখে মরিচের গুড়া দিয়ে দিয়েছি। এখন তো দেখছি এই মেয়ে চিৎকার করে কান্না করে কিন্তু মেহজাবিন তো নিরবে কান্না করতো আমি আমতা আমতা করে বললাম,
— মরিচের গুড়া কোথায় পেলে? মা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
~মেয়েকে কাঁদানোর জন্য বাসা থেকে নিয়ে এসেছিলাম মার কথা শুনে আমি কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম। বাবার অবস্থা আরো খারাপ, বুকে হাত দিয়ে বসে আছে। বাবার বন্ধু বারবার চিৎকার করে বলছে,
-ইসলাম উদ্দিন আমার মেয়ের চোখের যদি কিছু হয় তাহলে তোদের চৌদগুষ্টিকে জেলের ভাত খাওয়াবো বুঝতে পারছিলাম না মার এই পাগলামি কিভাবে সারানো যায় সেদিন রুমে বসে মোবাইল টিপছি। এমন সময় মা আমার রুমে এসে হাসতে হাসতে বললো,
~পিয়াস, মেহজাবিনের মত কান্না করে এমন মেয়ে পেয়ে গেছি। ইসস মেয়েটা একদম মেহজাবিনের মত নিরবে চোখের জল ফেলে। আমি অবাক হয়ে বললাম,
— মেয়েটা কে? মা হাসি মুখে বললো,
~আমাদের পাশের বাসার দারোয়ানের মেয়েটা। মেয়েটা একটু মোটা বলে ওর প্রেমিক ওকে ছ্যাঁকা দিয়ে চলে গেছে। মেয়েটা আজো প্রেমিকের জন্য কাঁদে। আমি আজ মেয়েটাকে কাঁদতে দেখেছি। এই মেয়েকেই আমার ঘরের বউ বানাবো। মার কথা শুনে আমার মথা ঘুরতে লাগলো। আমি কোন রকম মাকে বললাম,
— আমি কোন মটকো মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো না মা রাগী রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
— তুই বিয়ে করবি তোর ঘাড়েও বিয়ে করবে..
এই কথা বলে মা চলে গেলো। আমি বুঝতে পারছি না মা কিভাবে দারোয়ানের জলহস্তী মার্কা মেয়েকে আমার জন্য পছন্দ করলো। আমি যদি এই বাসায় থাকি তাহলে মা যেভাবেই হোক ওই মেয়ের সাথে আমায় বিয়ে দিবে। তাই আল্লাহ নাম নিয়ে বাসা থেকে পালিয়ে গেলাম আজ ২ দিন ধরে অভিনেত্রী মেহজাবিনের সাথে দেখা করার চেষ্টা করছি কিন্তু পাচ্ছি না। দেখা হলে অভিনেত্রী মেহজাবিনকে বলতাম, আপনি কি কান্না করা বাদে আর কোন অভিনয় পারেন না? আপনার জন্য আজ আমি ঘর ছাড়া। এত চোখের পানি আপনি কোথায় পান?