শুভ নববর্ষ১৪২৭

শুভ নববর্ষ১৪২৭

সকাল থেকে রুপন্তীর আম্মু ক্যাচ ক্যাচ করছে ইলিশ মাছের জন্য। আজকে বৈশাখের দিনও ভালো করে ঘুমাতে পারছিনা। কোন এক মহাপুরুষ ঠিকই বলেছিলেন, পুরুষ মানুষ দুই প্রকার – জীবিত, বিবাহিত!

বাজারে আসলাম ইলিশ কিনতে! কি যে ভীড় এখানে। আর ইলিশের দাম তো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। যাক টানা দুঘন্টা ভীড় সামলিয়ে দুটো ইলিশ কিনে নিলাম। ইলিশ দুটোকে ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে মনের সুখে হাঁটতে লাগলাম। এমন সময় দুজন ছিনতাইকারী এসে হাজির। চাইনিজ চাপাতি দেখিয়ে বললো, ” ইলিশ চাই নইলে জবাই ” ভয়ে ইলিশ তাগোরে দিয়ে দিলাম। যেতে যেতে এদের একজন বললো, ” কিছুনা মনে করিয়েন না ভাই, গার্লফ্রেন্ড ইলিশ খাইতে চাইছে তাই এই পথ বেছে নেয়া “।

রুপন্তীর আম্মুরে ফোন দিয়ে জানালাম ঘটনা। সে কই, ” আমারে বোকা পাইছেন, কিপটা কোনহানকার বউরে ইলিশ খাওয়াতে পারেনা! আজকে ইলিশ ছাড়া বাসায় ফিরলে খবর আছে ” বড় ইলিশ সব সাবাড়, এখন বাচ্চা ইলিশ নেয়া ছাড়া উপায় নাই। ছয়টা বাচ্চা ইলিশ নিয়ে ফিরতে লাগলাম। পথে ধরলো পুলিশ, ” ওই খাড়া! থলের ভেতর কিতা, স্যার এইতো দেহি জাটকা! শালারে আটকা “। কোনরকম, পুলিশরে জাটকা মাছগুলোন ধরিয়ে দিয়ে মনের দুঃখে বাসায় ফিরলাম। ভাবছি রুপন্তীর আম্মুরে বৈশাখী মেলায় নিয়ে ইলিশ খাওয়ায় দিমু। ইনিয়ে বিনিয়ে বৈশাখী মেলায় নিয়ে গেলাম সাথে আছে আমাগো জরিনা খালা। মেলায় ঢুকতে কোন এক টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক এসে হাজির! আমি সুযোগ বুঝে কেটে পড়লাম।

রুপন্তীর আম্মুরে বললো, আপু মেলায় এসে আপনার কেমন লাগছে? পাশ থেকে জরিনা খালা বললো, মেলায় এহনো ঢুকি নাই আন্নেরা লাঠি এক্কান সামনে ধইরা জিগান কেমন লাগে। রুপন্তীর আম্মু বললো, আহা জরিনা খালা আপনি থামেন, ভাইয়া লাইভ চলতেছে? জ্বী! এক মিনিট! জরিনা খালা মেকাপ বক্সটা বের করেন। টানা দশ মিনিট সাজুগুজু করে আবার ক্যামেরার সামনে আসলো রুপন্তীর আম্মু।

আচ্ছা আপু বলেন তো এখন বাংলা সাল কত? জ্বী, বাংলাতে দু হাজার বিশ চলে, ইংরেজীতে টু থাউজেন্ড টুয়েন্টি। আপু আমি বাংলা সাল জিজ্ঞেস করছি? ও আচ্ছা, এটা রুপন্তীর পাপ্পা জানে। কোথায় জানি গেল। আচ্ছা, আপু বলেন তো, বাংলা নববর্ষের প্রবর্তন করে কে? পাশ থেকে জরিনা খালা বললো, ও সাংবাদিক ভাইজান আন্নে আরে জিগান। আই কইতাছি। বাংলা নববর্ষ প্রবর্তন কইরছে আনগো এলাকার চেয়ারম্যান শুক্কুর মিয়া! সাংবাদিক জরিনা খালার কথা শুনে পালাইছে!

আমি, ওদিকে বৈশাখী শাড়ি পরা ললনা দেখতাছিলাম। আহা কি সুন্দর ললনারা। বড় বড় স্পীকারে মেলা যাইরে গান চলছে, হঠাৎ জরিনা খালা রাস্তার মাঝখানেই নাচানাচি শুরু করে দিছে। ওইখানে দুইতিনজন আহত। রুপন্তীর আম্মু আমারে এদিকটা দেখে বললো, এই যে রুপন্তীর পাপ্পা, কি করতেছেন এখানে? আমাদের রেখে কোথায় চলে গেলেন? না মানে, ইলিশ মাছ খুঁজতেছিলাম! ওই যে ইলিশ মাছ চলেন! রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম। পান্তা ইলিশের রেস্টুরেন্ট! ওয়েটার আসলো, কি রকম ইলিশ খাবেন ভাই? জাটকা না টাটকা? ভাই টাটকা দেন?

আইচ্ছা, টাটকা ইলিশে অনেকরকম আইটেম হবে যেমন, ইলিশ ভাজা, ইলিশ রান্না, দই ইলিশ,ইলিশ বিরানী, ইলিশ পোলাও, ইলিশ ভর্তা, ইলিশ ভরা, ইলিশ টিক্কা, ইলিশ চাটনী, কাসুন্দি ইলিশ, সরিষা ইলিশ, মাংগো ইলিশ, পাইনেপল ইলিশ, মা ইলিশ, বাবা ইলিশ, দাদা নানা চাচা সব রকমের আছে। কোনটা দিমু! ইলিশ ভাজা দে! তেলে ভাজা না পানিতে ভাজা? তেলে ভাজা, কি তেল সয়াবিন তেল, সরিষার তেল, অলিভ তেল, জয়তুনের তেল, নারিকেল তেল? ভাই, সয়াবিন তেলে ভেজে দে! আধা ভাজা না পুরা ভাজা? ভাই, তুই পানি দিয়া ভাইজ্জা দে! মিনারেল পানি না জেনারেল পানি? চুপ শালা চুপ!!! ….. খাইতামনা ইলিশ মাছ!

রুপন্তীর আম্মু বললো, আচ্ছা নরমাল সবাই যেটা খাচ্ছে ওইটা নিয়া আসেন। পান্তা ইলিশ খাওয়ার পর রুপন্তীর আম্মু আর জরিনা ওদিকটা ঘুরতে গেছে। আমি এখনো বসে বসে কাটা চিবুচ্ছি। টাকা উঠাইয়া নিতে হবে তো। টাকা দিতে যাবো সেই সময় খেয়াল করলাম মানিব্যাগটাসহ পুরো পাঞ্জাবির পকেটটা হাওয়া! ওয়েটাররে কইলাম, ভাই পকেট মারা গেছে। সে চিল্লাইয়া বললো, ওস্তাদ ইলিশ মাছের আঁইষ ছাড়ানোর আরেকটা লোক পাওয়া গেছে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত