কোন এক কারণে ভালবেসে অকারণে ছেড়ে যাওয়া জাতী’কে নারী বলে

কোন এক কারণে ভালবেসে অকারণে ছেড়ে যাওয়া জাতী’কে নারী বলে

– ভাইয়া।
– হুম।
– ভাবী ডাকছে।
– কোন ভাবী?
– রিহি।[দাত সব গুলো বের করে দিয়ে]
– রিহি তোর ভাবী হইলো কবে?
– বুঝবি না।এখন ছাদে যা।
– তোর মতলব কিছু ভালো ঠেকছে না।
– ভালো ঠেকতে হবে না।রিহি ভাবী তরে ভালবাসে।কিন্তু বলার সাহস পায় না।এই কথা তুই ছাড়া বাড়ির সবাই জানে।সকলে রিহি ভাবীর পক্ষে।বাকি বুঝতে তো পারছিস।

– বাড়ির সকলে ওর পক্ষে মানে?দাদু রাজি হইলো কিভাবে?দাদু এর আগে চা চাইছিলো,বানায় দেয় নাই বলে রিহিরে দেখতে পারে না।
– এখন তিন বেলা চা বানায়ে দেয় সাথে স্পেশাল ট্রিটমেন্ট তো আছেই।
– স্পেশাল ট্রিটমেন্ট!
– মাথায় তেল দিয়ে দেওয়া,বসে গল্প করা,দাবা খেলা এই আর কি।
– বাহ্!
– আম্মুরে নিশ্চয়ই একই ভাবে ভাবে হাত করছে।
– জ্বি নাহ্।আম্মু এমনিতে ভাবীরে খুব পছন্দ করে।
– আব্বুরে হাত করলো কিভাবে?
– অফিস থেকে যখন আসে জুতা খুলে দেয়,ফ্রেশ হতে গেলে যা যা লাগবে সব এগিয়ে দেয় এক কথায় আব্বু বাড়ি থাকলে সব দিক থেকে আব্বুর টেক কেয়ার করে।

– তোরে হাত করলো কিভাবে?
– প্রতিদিন চকলেট আইসক্রিম রেস্টুরেন্ট এবং গল্প করে।[উৎফুল্লতার সাথে]
– মেয়ের মাথায় বুদ্ধি আছে।
– অনেক বুদ্ধি।তুই এখন ছাদে যা ভাইয়া। এমনিতে দেরী হয়ে যাচ্ছে।ভাবী তোর জন্য অপেক্ষা করছে।
– হুম,সেটা তো যেতেই হবে।

রুমি ফিক করে হেসে ফেললো।অর্ক রওনা হলো ছাদের উদ্দেশ্যে। সাদা ড্রেসে এক কন্যা নীল আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে।মুখে লজ্জা মিশ্রিত মিষ্টি হাসি। গালে টোল পড়ছে। অর্ক হা হয়ে কিছু সময় সেই কন্যার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,’বাসায় বাপ ভাই নাই?’ রিহি হতভম্ব।চোখে ছোট্ট করে পলক ফেলে বললো,’মানে?’

– অন্যের ছেলের দিকে এভাবে নজর দেওয়া ঠিক?
– হুম।
– হুম কি?তুমি অনেক ছোট।মাত্র অনার্স সেকেন্ড ইয়ার্সে পড়ো।বড় হলে বুঝতে পারবা এগুলো আবেগ ছাড়া কিছু না।
– ফালতু ডায়লগ বন্ধ করেন।আমি বাচ্চা মেয়ে না।অনার্স থার্ড ইয়ার্সে উঠবো কয়েক মাস পর। তাছাড়াও যথেষ্ট ম্যাচিউরড।
– ভার্সিটিতে ভালো ছেলে নাই?ওদের পছন্দ করো।
– কারে পছন্দ করবো না করবো সম্পূর্ণ আমার ব্যাপার।আপনি নিজের চরকায় তেল দেন।
– তুমি দেখতে শুধু মিষ্টি।কিন্তু কথা মরিচের চেয়ে কম ঝাল না।
– এটা কিছুই না।আমি অনেক কষ্টে নিজেকে আটকে রেখেছি।না হয় কি যে করতাম আপনারে।
– কি করতা?
– ধাক্কা দিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দিতাম।
– কি?এত বড় সাহস!

নেক্সট টাইম যেন আমার ব্যাপারে নাক না গলাতে দেখি।আর আমার পরিবারকে হাত এভাবে ছেড়ে দাও।ভুলে যাও অর্ক নামে ছেলেটির কথা।গুড বাই। অতঃপর হাসি মুখে অর্ক ছাদ থেকে রুমে চলে গেলো।মনে এখন স্বস্থির নিশ্বাস প্রবাহিত হচ্ছে।এবার নিশচিন্তে ব্যাচেলর জীবন অতিবাহিত করা যাবে। নিশ্চুপ বিকেল।চারিপাশ শান্ত নীরব।এই সময় প্রকৃতির নিয়ম কিছু অন্য থাকে।শীতল এক ভাব। গাছের পাতা নড়ে না তবু বাতাস বয়,সূর্য থাকে না তবু আলো রয়। সময়টা অর্কর অতি প্রিয়।সে এই সময়ে সিগারেটের সাথে চা খেতে পছন্দ করে। প্রতিদিনের ন্যায় আজও চা সিগারেট হাতে দোকানে বসে। ঠিক তখন কোথা থেকে রিহি হাজির। অর্ককে দেখে সোজা দোকানে ঢুকে কলার ধরে বের করে আনলো।

– সাহেব দেখছি ধুমপান করেন?খুব সুন্দর।এই কথা আন্টি জানলে কি হবে?আন্টি তাও ক্ষমা করে দিতে পারে।কিন্তু আংকেল!আংকেল জানলে আপনায় রক্ষা করবে কে?আচ্ছা এগুলো কথা বাদ।কাল বিকালে খুব বড় বড় ডায়লগ ছাড়লেন আমার ব্যাপারে।ভাললাগছিলো তাইনা?অবশ্য লাগার কথা।আমায় কান্না যে করাতে পেরেছিলেন।এবার আমিও আপনায় কান্না করাবো।অনেক অনেক কান্না করাবো। ভেবে মন খুশিতে নেচে উঠছে।

– সিগারেটের ব্যাপারে বাসায় যেন কিছু না জানে।
– নিশ্চিন্তে থাকেন।জানবে না।তবে আমার হাত থেকে বাঁচবেন কিভাবে?
– মানে?
– আমি তো এখন আপনায় পিটাবো।
– পিটাবেন কেন?
– শালা তোরে ভালবাসছি আর তুই সিগারেট খায়ে আমার ভালবাসারে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে দিচ্ছিস।

ওই তোর ক্যান্সার হলে আমার কি হবে?তুই তাড়াতাড়ি মরে গেলে আমি কিভাবে থাকবো?সেকা খাইছিস?এর জন্য আমায় বিশ্বাস করতে পারছিস না?সেকা খায়ে সিগারেট হাতে ধরছিস?তোর জীবনে যদি কোন মেয়ে এসে থাকে তাহলে সেই মেয়েরে খুন করে তোরে আমার করে নিবো।তুই আমার,জাস্ট আমার।

– আ..আপনি তুই তুকারি করছেন কেন?
– ওওওও!আয় সোনা আয় তোরে আদর করে দেই।

শালা বদমাইশ কোথাকার।ফালতু বদ পুলা।নেক্সট টাইম যে সিগারেট খেতে না দেখি।চল এই মুহূর্তে বাসায় চল। অর্ক নিশ্চুপ।জবাব নেই তাঁর কাছে।অপর দিকে রিহি একপ্রকার টানতে টানতে বাসায় নিয়ে গেলো।চেয়ে মজা নিলো বাজারের কিছু লোক। সন্ধ্যা নামতে অর্কর বাবা বাসায় ফিরলেন। রুমে প্রবেশ করে দেখে রিহি বসে কান্না করছে।তিনি রিহির কাছে এগিয়ে এসে পাশে বসে বললেন,’কান্না করছিস কেন মা?’ রিহি কান্নার বেগ কিছুটা বাড়িয়ে জবাব দিলো,’তোমার ছেলে সিগারেট খায়।আবার বলে আমায় বিয়ে করবে না।আমার এখন কি হবে?’

– সিগারেট খেতে নিজের চোখে দেখেছিস?
– হ্যা।আজ বিকালে মার্কেট থেকে ফিরার পথে হাতেনাতে ধরেছি।
– বিয়ে না করার কথা কি ও নিজের মুখে বলেছে?
– হুম।[মাথা নাড়িয়ে]
– তাহলে কি ওরে পিটাবো?
– না,পিটাইলে আমার কষ্ট লাগবে।
– রাগ করবো?
– থাক রাগ করতে হবে না।আমি অনেক রাগ করেছি।
– উমমম ওয়েট দেখছি আমি। অর্কর বাবা কিছু সময় মাথা নিচু করে থেকে জোড়ে ডাক দিলেন,’অর্ক।’ কাজ হয়ে গেছে।সাথে সাথে অর্ক হাজির।

– আব্বু ডেকেছো?
– যা শুনলাম তা কি ঠিক।
– <অর্ক মাথা নিচু করে নিশ্চুপ>
– জবাব দে।যা শুনলাম তা কি ঠিক?
– হুম।
– সাত দিন পর যদি তোর এবং রিহির বিয়ে দিই তাহলে তোর কি কোন সমস্যা আছে?
– রিহি অনেক রাগি আব্বু।
– ঠিকঠাক জবাব দে।
– না সমস্যা নেই।
– ওকে,এখন রুমে যা।

রিহি মুচকি হাসছে।অর্কর বাবা রিহি হাসি দেখে জিজ্ঞাসা করলেন,’এখন ঠিক আছে মামনি?’ রিহি জোরে হেসে দিয়ে বললো,’ডেটটা আর একটু এগোলেই হবে।’ দরজার ওপাশে কান পেতে থাকা অর্ক আতংকে মনে মনে বলে উঠলো,’আমার ব্যাচেলর জীবন!’

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত