নিশীথ শ্রাবণধারা

নিশীথ শ্রাবণধারা

আগামীকাল আয়েশার বিয়ে। সারা বাড়িতে উৎসবের রেশ। কিছুক্ষণ আগেই গায়ে হলুদের আয়োজন শেষ হয়েছে। আয়েশার গায়ে এখনো হলুদ শাড়ি জড়ানো। বিকেলের হলুদ আলোয় ওকে সত্যিই বউ বউ লাগছে। আমার মনে পড়ে গেল, এমনই এক বিয়েতে আমাদের বাড়িতে এসেছিল আয়েশা। সেদিন বিয়ের বাজার সেরে বাড়ি ফিরতে দুপুর গড়িয়ে গেল।

নিজের রুমে ঢুকতেই অল্পবয়েসী অপরিচিত এক মেয়েকে আবিষ্কার করলাম। সোফায় পা তুলে, থুতনীতে হাত লাগিয়ে গভীর মনোযোগে টিভি দেখছিল মেয়েটা। দুপুরের খাবারে বসে মাকে জিজ্ঞেস করলাম মেয়েটার সম্পর্কে। মা বলল, তার এক দুরসম্পর্কের বোনের মেয়ে। হাতের কাজে খুব নাকি পটু; তাই বড়দিকে সাজানোর জন্য মা-ই ওকে ডেকে এনেছে। মা ফিসফিসিয়ে বলল, সকলের মুখে আমি ওর অনেক প্রশংসা শুনেছি। ছোট হলে কি হবে, মেয়েটা অনেক গুনের। তবে, মা যাই বলুক- ঐটুকুন মেয়ের গুণ সম্পর্কে তখন খুব একটা উচ্চ ধারণা আমি পোষণ করিনি।

বাজারের একটা আইটেম ছিল পেইন্ট। আল্পনা আঁকার জন্য বড়দি আনতে বলেছিল। আমি না বুঝে রক্সি পেইন্ট নিয়ে এসেছিলাম। সেই জন্য বড়দি মেয়েটার সামনেই আমাকে অকর্মার ঢেঁকি বলে উপহাস করল। মেয়েটিও সেই পরিস্থিতির সুযোগে আমাকে নিয়ে একগাল ব্যঙ্গাত্বক হাসি হেসেছিল। যার জন্য প্রথম থেকেই ওকে আমি শত্রুপক্ষে ফেলে দিয়েছিলাম। বিয়ের আয়োজনের প্রয়োজনে ওকে সামনে পেলেই তাই “এটা ওটা এনে দে”, এই বাহানায় আচ্ছা মতো খাটিয়ে নিতে ছাড়তাম না।

তবে বড়দিকে সাজিয়ে, সমস্ত ঘরগুলোতে আঁল্পনা এঁকে, গায়ে হলুদের প্যান্ডেল বানিয়ে আর সকলের হাতে মেহেদী লাগিয়ে, মাত্র দুদিনেই সকলের মন জয় করে নিলো আয়েশা। তাই আমাদের বাড়িতে ওর একটা শক্ত অবস্থান সহজেই তৈরী হয়ে গেল। সেই স্পর্ধায় আমার আদেশ অবলীলায় অগ্রাহ্য করতে আরম্ভ করল ও। টিভি দেখার খুব নেশা ছিল ওর। আমাদের বাড়িতে একটা মাত্র টিভি ছিল, আর তা ছিল আমার ঘরে। টিভি দেখতে তাই সময়ে-অসময়ে আমার ঘরে আসতো ও। আর শত-প্রশ্নে আমাকে জর্জরিত করে ছাড়তো।

– আচ্ছা, আপনার পছন্দের নায়ক কে?
– আমির খান।
– আমার হৃত্বিক। আর নায়িকা?
– নেই!
– কেনো? ও বুঝেছি! আপনি বোধহয় ছ্যাকা খেয়েছেন। ওর কথা শুনে মেজাজটা চড়ে যেত আমার।

– ছ্যাকা খেয়েছি মানে?
– আমি জানি, ছ্যাকা খাওয়া ছেলেরা মেয়েদের পছন্দ করেনা।
– এই মেয়ে, কোন ক্লাসে পড়িস রে তুই? উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম আমি।
– কেনো?
– যা জিজ্ঞেস করছি উত্তর দে।
– ক্লাস টেনে।
– কেবল টেনে পড়িস, আর এখনি তোর এই অবস্থা পড়াশুনা করিস, না প্রেম-পিরিতি নিয়ে গবেষণা করিস?
– না, পড়াশুনা করি না; ছ্যাকা দিতে স্কুলে যাই। আপনিও সাবধানে থাকবেন, বলা তো যায় না কখন কি হয়!

এভাবেই ওর সাথে আমার তুমুল ঝগড়া বেঁধে যেত। বড়দির বিয়ের আগের রাতে আমার হাতে মেহেদী লাগাতে এসেছিল আয়েশা। একগাল হেসে জিজ্ঞেস করেছিল, মেহেদী লাগাবেন? হঠাৎ আমার প্রতি ওর এমন আন্তরিকতায় আমি অবাক হই। বলি, না- লাগবে না।

– ভয় নেই, টাকা লাগবে না। ফ্রি সার্ভিস। আমাকে খোঁচা মেরে উত্তর করল আয়েশা। আমি বললাম, আমার হাত দেখেছিস- এমনিতেই সুন্দর আছে; খামোখা মেহেদী লাগাতে যাবো কেনো? তবুও বড়দির নির্দেশ বলে জোর করেই আমার হাতে মেহেদী লাগাতে আরম্ভ করল ও।

– এই, তোর নাম কিরে?
– আয়েশা।
– উঁহু, আমি তোকে জ্বালাতন বলে ডাকব। খুব জ্বালাতে পারিস বটে তুই। ও হেসে বলল, খবরদার; বাবা আকীকা দিয়ে নাম রাখছে কিন্তু। তখন ঘরে কেউ ছিল না। দুষ্টুমি করে বললাম, আয়েশা তোর ঠোঁট দুটো না খুব সুন্দর। ও কোন ভ্রুক্ষেপ না করেই বলল, আমি জানি।

– তবে তোকে একটা কিস করি?

অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলল আয়েশা। আমি থতমত খেয়ে গেলাম। কয়েকবার সরি বললে, তবেই ওর কান্না থামল। বড়দির বিয়ের দিন শাড়ি পড়েছিল আয়েশা। শাড়িতে ওর বাচ্চাসূলভ চেহারা কোথায় যেন হারিয়ে গেল। আমি বললাম, বুঝছি না আজ কার বিয়ে!

– আগে শিউলি আপুর, তারপর আমার। হেসে উত্তর করল আয়েশা।
– তাই? তা কার সাথে?
– আপনার মতো এমন পাত্র থাকতে আর কাকেই বা খুঁজব বলুন?

ওর ওমন উত্তরে সবাই হেসে ফেললো। আমি লজ্জায় ওখান থেকে সরে পড়লাম। তারপর বিয়ের ঝামেলাতে ওর খোঁজ রাখা সম্ভব হয়নি। বড়দির সাথে ওর শ্বশুরবাড়ি দুদিন কাটিয়ে বাড়ি ফিরে শুনি ও চলে গেছে। আমিও দুদিন পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসি। পরের বার ওর দেখা পাই প্রায় ২ বছর পর। সেবার ৬ষ্ঠ সেমিস্টার ফাইনাল দিয়ে বাড়ি এসেছিলাম আমি। ততদিনে আয়েশা আমাদের বাড়িতে পার্মানেন্ট আইটেম হয়ে গেছে। ওদের গ্রামে কলেজ ছিল না, আর আমাদের বাড়িতেও লোক ছিল না। তাই মা ওকে আমাদের কলেজেই ভর্তি করে দিয়েছে।

অনেকদিন পর দেখা হওয়ায় প্রথম কয়েক দিন আমাদের ঝগড়া ছাড়াই কাটলো। কিন্তু দুদিন যেতেই আবার দা-কুমড়া সম্পর্ক ফিরে এলো। বাড়িতে মাঝে মাঝে আমি ছাদে গিয়ে লুকিয়ে সিগারেট খেতাম। একদিন রাতে আয়েশা তা দেখে ফেলল। আমি ওকে ধমকিয়ে বললাম, এতরাতে ছাদে এসেছিস কেনো? ও তাতে একটুও ভড়কালো না, উল্টো হেসে বলল, এসেছিলাম বলেই তো জানতে পারলাম আপনি লুকিয়ে লুকিয়ে সিগারেট খান।

– আচ্ছা, তুই কি ঝগড়া না করে থাকতে পারিস না?
– না, পারি না।
– আচ্ছা ফাযিল তো তুই; বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানিস না?
– জানি, কিন্তু আপনি অতটা বড় নন।
– আমি বড় নই? তুই জানিস, আমি যখন সিগারেট খাওয়া ধরেছি তখন তোর দাঁতও ওঠে নাই!
– এই জন্যই তো বলি আপনার ঠোঁট এত কালো কেনো?

ওর কথায় আমি প্রচন্ড রেগে গিয়ে বলি, আমার ঠোঁট কালো, না? ভালো; তবে শোন মিস লাল ঠোঁট, তুই বয়সে অনেক ছোট বলে তোকে কিছু বলিনি এতদিন। কিন্তু শেষবারের মতো তোকে সাবধান করছি, আর যদি এমন ইঁচরে পাকামী দেখি- তবে আমার হাতের এক চড়ে তোর লাল ঠোঁটের মতো মুখটাকেও লাল করে দেব। আমার কথায় সেদিন বেশ ভয় পেয়েছিল মেয়েটা। ভেবেছিলাম শুধরে যাবে হয়তো। কিন্তু পরদিন সকালেই আমার লুকিয়ে সিগারেট খাওয়ার সংবাদ মাকে দিয়ে মায়ের কাছে আমাকে বকা খাওয়ায় ও। আমিও তাই ওর সামান্য কোনো দোষ-ত্রুটি দেখলেই আচ্ছামতো চুল টেনে মনের ঝাল মেটাতে ছাড়তাম না।

সাধারনত হেঁটেই কলেজে যেত ও। একদিন ওর অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমার সাইকেলে চড়িয়ে ওকে কলেজে নিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু একটা ট্রাক ঝড়ের বেগে সামনে চলে আসায় রাস্তার ভাঙায় সাইকেল নামাতে হলো। আর তাতে কন্ট্রোল হারিয়ে পড়ে গেলাম আমরা। আমি অক্ষত থাকলেও আয়েশার হাতে ও কপালে বেশ জখম হলো। আমি প্রায় পাগলপারা হয়ে ওকে কোলে নিয়ে পাশের হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। ওর হাত ও কপালে ব্যান্ডেজ করিয়ে বাড়ি আনতেই মায়ের কোপানলে পড়তে হলো আমাকে। তবে আয়েশা সমস্ত দোষ ট্রাকের উপর দিয়ে সে-যাত্রা আমাকে রক্ষা করল।

সেই ঘটনার পর থেকে ওর প্রতি খুব মায়া হতো। ওকে সবসময় খুশি রাখার চেষ্টা করতাম। বাজার থেকে ওকে এ-ও কিনে দিতাম প্রায়ই। আয়েশাও কোন দ্বিধা ছাড়া আমার সব উপহার গ্রহন করতো। মাঝে মধ্যে ওকে নিয়ে মেলায় বা পার্কেও ঘুরতে যেতাম। ঝগড়া বা হাতাহাতি যে হতো না তা নয়, তবে তার মধ্যেও তখন ভালোবাসা, স্নেহ-মমতা চলে আসতো। আর ঐ এক্সিডেন্টের পর থেকে আমার হাতে সাইকেল দেখলেই ও হাসতো। একদিন ওর চুলের মুঠি ধরে সে হাসির রহস্য উৎঘাটন করলাম, তবে ওর উত্তর শুনে অবাক হলাম। সেদিনের সেই ক্ষত-ব্যাথা আয়েশা ভুলে গেছে, কিন্তু ওর প্রতি আমার বিচলতায় ভরা চোখ, দুঃচিন্তাগ্রস্থ মন, আর কাছে টেনে নেওয়া হাত দুটোকে আয়েশা আজও মনের গভীরে লালন করে চলেছে। কিন্তু সেটা তো নিছক দূর্ঘটনা। স্বজ্ঞানে ওকে অতটা কাছে না আমি টানতে পারি, না ও আসতে পারে। তবে কেনো এই মনে রাখা?

বড় ভাবনায় পড়ে গেলাম। ছুটি শেষে ক্যাম্পাসে ফিরেও সে ভাবনার কোন সূরাহা করতে পারলাম না। সূরাহা করে দিলো বাবা-মা। আচমকা আয়েশার বিয়ে ঠিক করে ফেলল এক ডাক্তার ছেলের সাথে। প্রথমে ওর বিয়েতে আসতে চাইনি, কিন্তু মায়ের জুরাজুড়িতে শেষে আসতেই হলো।

আগামীকাল আয়েশার বিয়ে। কিছুক্ষণ আগেই গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে। বাড়ির মাঝখানে জটলা করে সবাই বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছে। আয়েশার গায়ে এখনো হলুদ শাড়ি জড়ানো। পড়ন্ত বিকেলের ম্লান আলোয় ওকে সত্যিই বউ বউ লাগছে। আমার কাছে এই আয়োজন কেনো জানি অসহ্য ঠেকতে লাগলো। তাই সাইকেলটা নিয়ে বাইরে যাবার জন্য বের হলাম। কিন্তু আয়েশা পথ রোধ করে দাঁড়ালো।

– কোথায় যাচ্ছেন?
– কোথাও না, এমনিতেই ঘুরবো।
– চলেই তো যাবো; শেষবারের মতো আমাকে চড়াবেন না আপনার সাইকেলে?
– না ভাই, আজ তোকে ফেলে দিলে আমার আর রক্ষে থাকবে না।
– ভয় নেই, সেদিনের মতো আপনাকে বাঁচাতে আজও না হয় মিথ্যা বলব। আমি হেসে বললাম, ঠিক আছে; চড়। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সাইকেলের সামনে বসে পড়ল আয়েশা।

– কিরে সামনে বসলি যে?
– এবার ফেলে দিলে যেন আপনাকে সাথে নিয়েই পড়তে পারি, তাই!
– কিন্তু লোকে কি ভাববে বল?
– শুধু কি লোককেই আপনি ভয় পান, নিজের মনকে ভয় পান না বড়দা? অবাধ্য মন যে আপনাকে একদিন জ্বালিয়ে মারবে, তা কি বুঝতে পারেন না?

– ভবিষ্যতে কি হবে, সেকথা বোঝার ক্ষমতা আল্লাহ আমাদের দেননি।
– আমি বুঝতে পারি।
– কি বুঝতে পারিস?
– আমার বিয়ের পরে আপনি নিজেকে সামলাতে পারবেন না!
– সেকথা এত জোর দিয়ে কি করে বলছিস?
– কেনো, আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন না?
– সেকথা জানা এখন অর্থহীন, কোনো কাজেই আসবে না।
– আমি তবুও জানতে চাই।

আয়েশার কথার জবাব দিলাম না। নিজের মনে সাইকেল চালাতে লাগলাম। আয়েশার চুল, শাড়ির আঁচল উড়ে আমার চোখে-মুখে লাগতে লাগল। আমি বড্ড ঘোরের মধ্যে ডুবে গেলাম। ধোপাঘাটা ব্রিজ পার হতেই আমার জ্ঞান ফিরল। বললাম, চল আয়েশা ফিরে যায়।

– বড়দা, আমি ফিরে যাব বলে আসিনি।
– তার মানে?
– আপনি কি কিছুই বোঝেন না?
– সত্যিই বুঝি না। কিছু একটা আন্দাজ করতে পারি, কিন্তু প্রশ্রয় দিতেও পারি না।
– কেনো পারেন না? আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন না?
– যদি বাসিও, তাতে খুশি হবার কিছু নেই আয়েশা।
– আমার এখনো বিয়ে হয়নি; আপনি চাইলে এখনো একটা উপায় হতে পারে।
– কিন্তু বাবা-মা কোনোভাবেই মানবে না।
– একবার তাদের বলেই দেখেন না?
– সে সাহস আমার নেই। আগে হলেও একটা কথা ছিল, কাল তোর বিয়ে। এখন বাবা একথা শুনলে আমাকে মেরেই ফেলবে!
– তবে চলেন আমরা পালিয়ে যাই। আয়েশার কথায় আমি চমকে উঠলাম। সাইকেল থামিয়ে বললাম, দেখ আয়েশা- জীবন এতটা সহজ নয়। তারপর ফেরার জন্য সাইকেল ঘুরালাম।

– বিয়ের পর তুই ভালো থাকবি। আমিতো এখনো বেকার, অথচ তোর বর ডাক্তার। আমাকে তুই ভুলে যা।

আমার কথায় আয়েশা রেগে গেল। বলল, আমার ভালো থাকা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না; আপনি বাড়ি চলেন।
আমি নীরবে বাড়ির দিকে আগাতে থাকলাম। কিন্তু পথ যতই ফুরিয়ে আসছিল ততই এক অজানা আশংকায় আমি যেন মিইয়ে যাচ্ছিলাম। আর কে যেন আমার কানে-কানে এক অসাধ্য সাধনের মন্ত্র দিয়ে যাচ্ছিল। শেষমেশ আমার মনে হলো, না- এখনি সব শেষ হয়ে যায়নি। এখনো উপায় আছে। তাই সাইকেল আমাকে ঘুরাতেই হলো। আচমকা আমার সাইকেল ঘুরানো দেখে আয়েশা বলল, কি হলো- সাইকেল ঘুরালেন কেনো? আমি বললাম, চুপ; একদম চুপ। অনেক জ্বালিয়েছিস তুই। এবার তোকে আমি সারাজীবনের জন্য জ্বালাব। আয়েশা মুচকি হাসল। ধোপাঘাটা ব্রিজের পথ ধরে চলতে থাকল সাইকেল, দুঃসাহসিক এক স্বপ্নযাত্রায়!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত