~~আম্মু আগামী পরশু হিমির হলুদ সন্ধ্যা।হিমি আমাকে আজই যেতে বলেছে।ভাবছি বিকালে যাবো তোমাকেও যেতে বলেছে, যাবে?
~~আমি কি করে যাবো বল,আমি গেলে তোর বাবা রান্না করে খেতে পারবে বল?তার চেয়ে বরং তুই একাই চলে যা।আমি আর তোর বাবা পশুদিনই আসবো।
~~আচ্ছা ঠিকাছে আম্মু।বাবাকে বলে আমাকে কিছু টাকা দাও।
~~গত রবিবারেই তো নিলি,আজ আবার কেন?
~~হিমির জন্য কিছু গিফট্ নিতে হবে না বুঝি? কেন তোমাদের সময় দিতে না তোমার বান্ধবীদের গিফট্?
~~হ্যাঁ দিতাম! তবে তোদের মত এমন করে নয়।৫০টাকা করে ১০ জনে মিলে তারপর দিতাম বুঝলি।
~~আম্মু তোমাদের সময় আর এখন কি এক হলো বলো।তুমি প্লিজ আব্বুকে ম্যানেজ করে কিছু টাকা দিও।
~~আচ্ছা ঠিকাছে।একটু দাড়া আমি আসছি। এই নে আমার কাছে সাড়ে-চার হাজার ছিলো জমানো।
~~আমার লক্ষী আম্মুটা।
আম্মুর প্রসংসায় পঞ্চমুখ শান্তা।সকাল গড়িয়ে দুপুর,দুপুর গড়িয়ে বিকাল।ঘড়িতে তখন পৌনে-পাঁচটা।শান্তা ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে গেল হিমির বাড়ির উদ্দেশ্যে। হিমি আর শান্তা দুজনে একে-অপরের পরিপূরক। দুজনের বন্ধুত্ব খুবি ঘনিষ্ট।কেউ কাউকে ছাড়া চলতে পারে না।শান্তা এজন্যই একদিন আগেই রওনা হলো।শান্তা হিমির জন্য কিছু গিফট্ কিনে নেয় যাবার পথে।হিমির বাড়িতে পৌছাতে পৌছাতে রাত দশটা বেজে যায়। শান্তা সিড়ি বেয়ে হিমির রুমের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে।হিমির বাড়িতে এখনো বিয়ের মেহমান এসে পৌছায় নি।শান্তা হিমির রুমে পৌছায়। দুজনে মেতে ওঠে অট্ট হাঁসিতে।প্রিয় বান্ধবীর বিয়ে এ নিয়েই চলে কত কথা।হিমিদের বাসার কাজের মেয়ে দু-কাপ কফি নিয়ে আসে ওদের জন্য।শান্তা কফির কাপে চুমুক দিলো এবং বললো,
~~আশিক ভাই তোকে বিয়ে করেই ছাড়লো। হিমি বললো,
~~বিয়েটা না, এখনও হয় নি বুঝলি।
~~হয় নি তবে হবে তো।আর তো মাত্র দু-দিন বাকি। আশিক ভাই ও পারে খুব।তোর পরিবারের সবাইকে রাজি করিয়ে নিলো।
~~হুমমম! ওর মত ছ্যাচড়া আর দুইটা দেখিনি আমি। শান্তা বললো,
~~ছ্যাচড়া হলেও খুব রোমান্টিক আছে রে।
~~কচু আছে! সে আমাকে নাকি ভালোবাসে।আজ অব্দি নিজে কখনো এসে বলেছে আমায়? আমার সামনে এলেই কাপাকাপি শুরু হয়ে যায় ওর। শান্তা হাসতে হাসতে বলে,
~~তোর মনে আছে সেদিনের কথা।তোকে প্রোপজ করতে এসে যেই তোকে দেখলো কিভাবেই না দৌড় দিলো।
~~ওর কথা আর বলিস না তো ভীতুর ডিম একটা।
~~না জানি বাসর ঘরে তোকে দেখে দৌড়ে পালায়।
হিমি ও শান্তা দুজনে এক সাথেই হাসতে শুরু করে।ঠিক ঐ সময় হিমির বড় ভাবি রুমে প্রবেশ করে,হিমির ভাবি বললেন,
~~কি নিয়ে হাসা হাসি হচ্ছে শুনি। শান্তা বললো,
~~ভাবি শফিক ভাই হিমিকে যতটা ভয় পায়, না জানি বাসর ঘরে হিমিকে দেখে পালিয়ে যায়। হিমির ভাবিও হেসে দিয়ে বললেন,
~~না সেদিন আর পালাবে না।ওদিন তো আমার ননদিনীকে আদর করবে। কথাটি বলেই জোরে হেসে ওঠে ভাবি।
হিমি বললো,
~~ভাবি তুমি চুপ করো।আমার লজ্জা পায় না বুঝি। ভাবি বললেন,
~~তখন আর লজ্জা করবে না ননদিনী, আর আমাদের কাছে লজ্জা পেতে হবে না বুঝেছো।নেও রাত অনেক হলো এবার ঘুমাও।
আজ হিমির হলুদ সন্ধ্যা।হিমিদের বাড়িতে নেওয়া হচ্ছে হলুদের প্রস্তুতি।বাড়িটা সাজানো হয়েছে লাল,নীল,হলুদ বাতিতে।বেশ বড় করেই উৎযাপন হচ্ছে হলুদের অনুষ্ঠান।শান্তা,হিমি দুজনেই পরে নিয়েছে হলুদের কাপড়।শান্তাকে ছাড়া হলুদের স্টেজে যেতে চাইলো না হিমি।অবশষে দুজনে মিলে হলুদের স্টেজে এলো।একে একে হলুদ দিচ্ছে শান্তা ও হিমিকে।শান্তার চোখ গেলো পশ্চিম কর্ণারে পাঞ্জাবী পরা ছেলেটার দিকে।মুখে খোচা খোচা দাড়ি রয়েছে।চুলগুলো কেমন এলোমেলো। হাতে একটা ডায়েরী।গায়ে জড়ানো কালো শাল।সাদা পাঞ্জাবী ও কালো শাল বেশ লাগছে ছেলেকে।ছেলেটা শান্তাকে উকি-ঝুকি দিয়ে দেখছে।আর কি জানি লিখছে তার ডায়েরীতে। শান্তাও আড় চোখে দেখছে ছেলেটাকে।
শান্তার মধ্যে একটা কৌতূহল জাগতে শুরু করে।হলুদ পর্ব প্রায় শেষ।ছেলেটা হুট করেই শান্তার চোখের আড়াল হয়ে যায়।শান্তা ছেলেকে দেখতে না পেয়ে একটু মন খারাপই হয়। শান্তা মনে মনে ভাবছে, ছেলেটার জন্য আমার এমন হচ্ছে কেন? ওর সাথে তো আমার কোন চেনা-জানা বা কোন সম্পর্ক নেই তবে কেনইবা এমন হচ্ছে? তবে কি ছেলাটা আমার মনের রাজ্যে প্রবেশ করেছে?দূর কি ভাবছি আমি এসব।তবে যাই হোক না কেন ছেলেটার চাহনি নজর কাড়ার মত।হলুদ পর্ব শেষ।হিমি চলে গিয়েছে তার রুমে।হিমির হাতে মেহেদী দিচ্ছে শান্তা।শান্তা একটু শান্ত স্বভাবের মেয়ে।যে কাজ করে খুব মনযোগী হয়ে করে।তবে শান্তা আজ কেমন জানি অন্যমনস্ক হয়ে আছে।কিছু একটা নিয়ে ভাবছে শান্তা।হিমি শান্তাকে জিঙ্গেস করে,
~~কিরে তুই কি কিছু নিয়ে ভাবছিস শান্তা?? শান্তা কিছুটা অপ্রস্তুত সরে বললো,
~~কই না তো।
~~ না, তোকে আজ অন্য দিনের মত স্বাভাবিক দেখাচ্ছে না,কোন কিছু নিয়ে ভাবছিস মনে হচ্ছে।
~~না আসলে তেমন কিছু না।ঐ ছেলেটা আমাকে ভাবাচ্ছে খুব।কিছুতে ওকে আমার ভাবনা থেকে সারাতে পারছি না।
~~কোন ছেলেরে নতুন করে আবার তোর ভাবনায় এলো শুনি? শান্তা মুখের সামনে আচড়ে পড়া চুল বা-হাত দিয়ে সরিয়ে বললো,
~~আরে চিনি না আমি।তোর সাথে যখন বসে ছিলাম তখন ছেলেটা উকি দিয়ে দেখছিলো আর কি জানি লিখছিলো একটা নীল ডায়েরীতে।
~~তুই সাদ ভাইয়ার কথা বলছিস নাকি।
~~আমি কি চিনি নাকি সাদ না কে।
~~আচ্ছা আমি সাদ ভাইয়াকে ডাকতেছি।
~~না থাক প্রয়োজন নেই।তার যদি প্রয়োজন হয় তবে সে নিজেই আসবে।
~~এহেম! এহেম! আমি কি আসতে পারি? হিমি ও শান্তা দুজনেই ফিরে তাকায়।শান্তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।হিমি বললো,
~~আরে সাদ ভাই আপনি, আসেন!আপনার কথাই হচ্ছিলো। সাদ মৃদু হাসি হেসে বললো,
~~তা আমাকে নিয়ে কি গবেষণা হচ্ছিলো শুনি? শান্তা চোখের ইশারায় হিমিকে বারণ করে।হিমি মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
~~না এমনিই।আসেন পরিচয় করিয়ে দেই আমার বান্ধবীর সাথে। হিমি, সাদ ও শান্তা দুজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।শান্তা ও সাদের মধ্যে কিছু সময় আলাপচারিতা চলতে থাকে।সাদ ভুলে গিয়েছে যে ওকে ডাকতে পাঠানো হয়েছে।শান্তার নম্রতা, গুছিয়ে কথা বলা, চোখের নিচের কাজল সব মিলিয়ে সাদ হারিয়েছে শান্তার মাঝে।হারিয়েছে এক অজানা অনুভূতিতে। এই সময়ে ভাবির আগমন;
~~সাদ তোমাকে ডাকতে পাঠাতে হলো, আর তুমি এখানে বসে গল্প করছো? হুমমম!বুঝেছি। প্রেমে পড়লে এমনই হয়।
~~ভাবি তুমি না সব সময় মজা করো। হিমি বললো,
~~হ্যাঁ ভাবি তুমি ঠিক বলেছো সাদ ভাইয়া প্রেমেই পড়েছে। ভাবি বললো,
~~তা আমার আদরের দেবরজী,সেই ভাগ্যবতী মেয়েটা কে শুনি।যার জন্য তুমি পাগল হলে?
~~ভাবি সয়ম হোক তখন দেখাবো।তবে মেয়েটার চোখের লেপ্টে যাওয়া কাজল,কপালের কালো টিপ, মেয়েটার হাসি,আড় চোখের মায়া আমাকে তার প্রেমে ফেলেছে। শান্তা সাদের কথায় একটু লজ্জা পেলে।শান্তা বুঝতে পেরেছে, সাদ ওর কথাই বলছে।
~~হুমম চলো তোমাদের প্রেমের কথা পরে শুনা যাবে।নিচে সবাই খাবার টেবিলে অপেক্ষা করছে। শান্তা বললো,
~~ভাবি আর দুই মিনিট লাগবে।হাতে মেহেদী দেওয়া শেষ হোক তারপর আসছি।
~~সাদ তুমি আসো আমার সাথে। সাদ বললো,
~~ভাবি তুমি যাও আমি ওদের নিয়ে আসি।কতদিন পর গল্প করছি হিমির সাথে।
~~হুমম! করো করো।তোমাদের মাঝে আমি কাবাব মে হাড্ডি হতে চাচ্ছি না। ভাবি চলে যায় নিচে।সাদ আপন মনে শান্তাকে দেখছে।শান্তার থেকে চোখ ফিরাতেই পারছে না সাদ।মায়য় আটকে গেছে সাদ। হিমি বললো,
~~ভাইয়া তুমি কি আমার বান্ধবীকে গিলে খাবে?পলক ফেলছো না যে? সাদ থতমত খেয়ে বলে,
~~তোর না মুখে কিছু আটকায় না। কথাটা বলে সাদ চলে যায়।লজ্জা হচ্ছিলো খুব সাদের।তবে ভালোও লাগছিলো খুব। শান্তা বললো,
~~তুই পারিসও খুব।উনিতো চলে গেলো।
~~হুমম হয়েছে, খুব দরদ হচ্ছে তাই না।
~~দরদ হতে যাবে কেন শুনি।উনি চলে গেলেন তাই বললাম।
~~হুমম! বুঝেছি তুমিও প্রেমে পড়েছো।
~~চুপ তোকে বলেছে প্রেমে পড়েছি।পাকনামো করতে হবে না তোর।
এভাবে দুজনে তর্ক-বিতর্ক করতে থাকে।আসলে ওরা এমনই। দুজন দুজেনকে খুব বোঝে।অনেকটা বছর দুজনে চলেছে।ঝগড়া,মান-অভিমান সবই আছে ওদের বন্ধুত্বে।হিমির বিয়েটাও হয়ে যায়।আজ এক মাস হতে চলছে হিমির বিয়ের।আর শান্তা মনের ভিতর পুষছে সাদের জন্য ভালোলাগা গুলো।গত এক মাসে সাদের সাথে দেখা হয়নি আর।শান্তা ভেবেছিলো সাদ তাকে প্রপোজ করবে।শান্তা নতুন করে পথ চলতে চেয়েছিলো সাদকে নিয়ে।শত অভিমানও পুষতে থাকে সাদকে নিয়ে।
শান্তার বাবা-মা পাত্র দেখছে।মেয়েকে এখন বিয়ে দিতে চান।তবে শান্তা এতদিন অনুমতি দেয় নি বিদায় কোন পাত্র দেখেনি।আজ দেখতে আসবে ছেলে পক্ষ শান্তাকে।শান্তার মনে নতুন করে প্রেম জন্মেছিলো সাদকে নিয়ে।সে অনুভূতি শুধু আড়ালেই রয়ে গেলো।শান্তাও আর কত দিন অপেক্ষা করবে। প্রতিনিয়ত বিয়ের কথা শুনতে হয়।অবশেষে বাবা-মা কে ছেলে দেখতে বলে শান্তা।শান্তাকে সাজিয়ে দিচ্ছে চাচাতো বোন মেহা।ছেলে পক্ষ অপেক্ষা করছে মেয়ে দেখার জন্য।শান্তার মা নিতে আসে শান্তাকে।শান্তা চমকে যায় সাদকে দেখে।শান্তা ভাবে নি যে দেখতে এসেছে, সে সাদ। শান্তার চোখ অভিমান প্রকাশ করছে সাদের প্রতি।সাদ শান্তার চোখের ভাষা বুঝে নেয়।সবার আড়ালে কান ধরে শান্তার অভিমান ভুলাতে চায়।শান্তা না চাইতেই হেসে দেয়।শান্তার সাথে আলাদা করে কথা বলার জন্য অনুমতি চাইলো সাদ।অনুমতি নিয়ে সাদ এগিয়ে যায় শান্তার রুমের দিকে।শান্তার রুমটা বেশ গুছানো।বেলকোণিতে কয়েক প্রকার ফুলের গাছ টবে করে রাখা। শান্তা বললো,
~~হিমি ফোন দিচ্ছে একটু কথা বলে আসি।আপনি কিছু লাগলে জানাবেন।
সাদ শান্তার রুমের এদিক ওদিক হেটে দেখছিলো।হটাৎই সাদে টেবিলে রাখা ডায়েরীতে চোখ যায়।অন্যের ডায়েরী অনুমতি ছাড়া ধরতে নেই তবুও সাদ ডায়েরীটা হাতে নিলো। নিজের অনেক কিছুই লিখে রেখেছে শান্তা। নিলয়কে নিয় অনেক কথা শান্তার ডায়েরীতে।নিলয় হলো শান্তার অতীত।যার কাছে প্রতারিত হয় শান্তা।শান্তাকে ঠকিয়ে নিলয় অন্য এক মেয়েকে বিয়ে করে নেয়।শান্তার ভাঙা মনের কথা গুলো জমিয়ে রেখেছে ডায়েরীর পাতাতে।একে একে পড়তে থাকে সাদ।শেষের দিকে একটা কবিতা লিখা রয়েছে।কবিতাটি হলো, তুমি আমায় ডেকেছিলে,ছুটির নিমন্ত্রণে! বলে ছিলে, পিঠের সাথে পিঠ লাগিয়ে গল্প করবে, আমি গিয়েছিলাম,বসে ছিলাম, তোমার পথ চেয়ে। তুমি আমায় ডেকেছিলে, ছুটির নিমন্ত্রণে! তুমি আরো লিখিছিলে, আমি যেন শাড়ী পরে আসি, আমি পরে ছিলাম, গিয়েছিলাম,বসেও ছিলাম,তোমার পথ চেয়ে। তুমি আমায় ডেকেছিলে, ছুটির নিমন্ত্রণে! তুমি বলেছিলে, কপালে কালো টিপ নিতে, আমি নিয়েছিলাম, গিয়েছিলাম,বসেও ছিলাম, তোমার পথ চেয়ে।
তুমি আমায় ডেকেছিলে, ছুটির নিমন্ত্রণে! তুমি চিঠিতে লিখেছিলে, আমার পায়ে যেন নূপুর থাকে, তুমি বলেছিলে, আমার অঙুলে আঙুল রেখে হাটবে, নূপের ঝুনঝুনানি তুমি কান পেতে শুনবে, আমি পরে ছিলাম, গিয়েছিলাম, বসেও ছিলাম, তোমার পথ চেয়ে। তুমি আসো নি, আমার পাশে বসো নি। আমি! মুচকি হেঁসে ওদের বুঝতে দেই নি, তোমার পথ চেয়ে বসে থাকার গল্পটা। তুমি আমায় ডেকেছিলে,ছুটির নিমন্ত্রণে! আমি গিয়েছিলাম,বসেও ছিলাম তোমার পথ চেয়ে, তুমি আসোনি! তুমি আসোনি! তুমি আসোনি! তুমি ডেকেছিলে,ছুটির নিমন্ত্রণে। শান্তার মনে চেপে রাখা কষ্টগুলো নিজের করে অনুভব করে সাদ।শান্তা কথা বলা শেষ করে ভিতরে এসে সাদের হাতে ডায়েরীটা দেখে কিছুটা চমকে যায়।শান্তা তাড়াহুড়ো করে সাদের হাত থেকে ডায়েরীটা কেড়ে নেয়।একটু কর্কট সুরে শান্তা বললো,
~~আপনি কি ভদ্রতা বলে কিছু জানেন না নাকি? সাদ বললো,
~~হুমম জানি তো।
~~তবে আমার অনুমতি ছাড়া আমার ডায়েরী ধরেছেন কেন? জানেন না, অনুমতি ছাড়া অন্যের কোন কিছু ধরতে নেই।
~~হুমম সেটাও জানি। এবার শান্তা কপাল কুকচে বললো,
~~ধরেছেন কেন?
~~জানা বিষয় নতুন করে জানতে।
~~মানে কি বলতে চাচ্ছেন বুঝিয়ে বলুন। সাদ মুচকি হেসে শান্তাকে বলে,
~~এত উত্তেজিত হবার প্রয়োজন নেই।আমি আপনার ব্যপারে কম বেশি একটু আধটু আগে থেকে জানতাম।
শান্তা ভ্রু কুকচে বললো,
~~কীহহহহ!
~~আগ্গে জ্বি।
~~তার মানে আপনি নিলয় সম্পর্কে আগে থেকেই জানতেন??
~~হুমম! আগে থেকেই।
কথা শুনে শান্তা চোখ নামিয়ে নেয়।এক নিমিষেই মনটা খারাপ হয়ে যায় শান্তার।অতীতের স্মৃতি ও সাদকে হারানোর ভয় কাজ করছে শান্তার ভিতরে।চোখের কোণায় জমতে থাকে নোনাজল। সাদ বিষয়টা লক্ষ্যে করে।সাদ এগিয়ে যায় শান্তার দিকে। সাদ বললো, সেদিন গোলাপ নিয়ে যাচ্ছিলাম,তোমাকে প্রপোজ করবো সেই উদ্দেশ্যে।অন্য রকম একটা ভালোলাগা কাজ করছিলো তখন।ঠিক তখনই হিমির সাথে দেখা।হিমি আমাকে তোমার অতীত সম্পর্কে বলে।হিমি বলেছিলো, নিলয় তোমার সাথে ইচ্ছে করে এমনটা করেছে।তোমাকে ঠকিয়েছে সবটাই হিমি আমাকে বলেছে।তারপর থেকে তুমি কোন ছেলেকে সহ্য করতে পারতে না।জীবনে কখনো আর সম্পর্কে যাবেনা বলে সংকল্প করেছো।কথাগুলো শুনে আমার মনটা খারাপ হয়ে যায়।তোমাকে হারানোর ভয় কাজ করছিলো তখন।
হিমি তখন বলেছিলো,ভাইয়া তুমি যদি শান্তাকে সত্যি ভালো বেসে থাকো তবে তুমি নিজে আগে প্রতিষ্ঠিত হও।তারপর একেবারে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাও।আমি তোমার পাশে থাকবো সব সময়। আমি সেদিন থেমে গিয়েছিলাম।তোমার প্রতি অনেকটা দূর্বল ছিলাম।সেদিনের দেখায় এতটা দূর্বল হয়ে যাবো ভাবিনি।তোমার মায়াতে জড়িয়ে গিয়েছি।আজও তোমার মায়াতে জড়িয়ে আছি।আমি সেদিনই বিষয়গুলো মেনে নিয়ে তোমায় নিজের মত করে ভাবতে থাকি।তোমাকে নিজের মনে করে,স্বপ্ন বুনতে থাকি।তবে তুমি কেন মন খারাপ করছো? আমি যদি তোমার অতীত মেনে নিতে পারি তুমি কি অতীত মেনে নিয়ে আমার সাথে নতুন করে চলতে পারবে না। সাদ হাত বাড়িয়ে শান্তার চোখ মুছিয়ে দেয়।
~~তুমি কাঁদবে না বলে দিলাম।তুমি কেন কাঁদবে শুনি? যে মানুষ তোমাকে ঠকিয়েছে তার জন্য কেন তোমার চোখের পানি ঝরবে?তুমি তার জন্যই চোখের পানি ঝরাও যে তোমার চোখের পানির মূল্যে দিতে জানে।
~~হুমম!আমি কাঁদছি ঠিকি তবে নিলয় এর জন্য নয়।আমি কাঁদছি তার জন্য যে আমার চোখের পানির মূল্য দিতে জানে।
~~হুমম আর কাঁদতে হবে না। এবার আমার বুকে একটু আসবে আমার অশান্ত মনটাকে তোমকে জড়িয়ে একটু শান্ত করে নেই। শান্তা এক -পা, দু-পা করে এগিয়ে মাথা গুজে নেয় সাদের বুকের মাঝে।সাদ শান্তাকে জড়িয়ে নিয়ে বলে,আজ থেকে আমাদের মাঝে কোন আপনা-আপনি নেই।
~~আচ্ছা শান্তা শোনো।
~~হুমম
~~তুমি কিন্তু খুব সুন্দর কবিতা লিখতে পারো।আচ্ছা তুমি কি আমার জন্য এমন করে সাঁজবে??
~~হুমম সাঁজবো।তোমার জন্য নতুন করে নিজেকে গুছিয়ে নিবো আমি।এখন চুপ করো তোমাকে জড়িয়ে থাকতে দাও বিরক্ত করো না।
সাদ শান্তার কথায় মুচকি হেসে একটু শক্ত করেই জড়িয়ে নিলো।শান্তা নতুন আস্থার ঠিকানা খুজে পায়।শান্তা মনে মনে নিলয়কে ধন্যবাদ দিতে থাকে। কারণ ওর চলে যাওয়াতেই সাদকে নিজের করে পেলো।ভুল মানুষকে হারিয়ে ঠিক মানুষের আশ্রায়তলে আশ্রয় পেলো।সাদের জন্য নিজেকে গুছিয়ে নিতে হবে আমায়।নানান কথা ভাবতে থাকে শান্তা।নতুন জীবনে পদার্পণ করে শান্তা ও সাদ।সাদের প্রতি সব সময়ই খেয়াল রাখে শান্তা।শান্তা নতুন করেই স্বপ্ন দেখে সাদকে নিয়ে।নতুন করে স্বপ্নগুলো গুছিয়ে নেয় শান্তা।অপূর্ণ স্বপ্নগুলো পূরণ হতে শুরু করে সাদের মাধ্যেমে।
শান্তার মত এমন হাজার মেয়েরা নিজের কষ্টকে লুকিয়ে হাসি মুখে ঘুরে বেড়ায়।তাদের দেখে আলাদা করা যায়না সহজে।নিজের কষ্ট লুকিয়ে রাখে আড়ালে।নিলয়ের মত ছেলেদেরও সমাজে অভাব নেই। এদের মত ছেলেরা শান্তার মত মেয়েদের প্রয়োজনে ব্যবহার করে নতুন কাউকে খুজে।নতুবা বিয়ে করে নেয় অন্য কাউকে।শান্তার মত মেয়েরা সাদের মত ছেলেদের কে নিয়ে বুনতে থাকে নতুন স্বপ্ন। অতীতের কিছু স্মৃতি ভুলে যেতে চায়।গুছিয়ে নিতে চায় নিজেকে। সমাজে শুধু ছেলেরা বা মেয়েরা দোষী নয়।
ভালো খারাপ উভয়ের মাঝেই আছে।তবে মূলে কিন্তু একটাই কারণ। আমরা নিজ নিজ জায়গা থেকে নিজেকে শুধ্রে নেই। নিজের জীবনে যে আছে তাকে আপন করে নেই।তকে ঠকিয়ে অনুতপ্ত কেন হতে যাবো? তবে কিছু প্রেক্ষাপট ভিন্ন হয়ে থাকে।ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও প্রিয় মানুষকে আপন করে নিতে পারে না।সেখানে নতুন কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।তাই নিজের জায়গা থেকে নিজের জন্য যোগ্য সঙ্গী বিচার করুন।যাকে হারাতে হবে না কোন প্রতিবন্ধকতাতে।নিজের সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্দান্তই হবে আপনার আগামী দিনের সুখের বাহক।