আমার প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করলাম শ্রাবণীকে। শ্রাবণীকে বিয়ে করতে যদিও আমার কোন ইচ্ছে ছিলো না। শ্রাবণী আমার এক আত্মীয়ের শালী। আমি শ্রাবণীকে বিয়ের আগে যখন দেখতে গিয়েছি তখনই তাকে কেমন জানি একটু রাগী বা একাকিত্ব মানুষ মনে হলো।
আমার দুটা বাচ্চা আছে তা শুনে এই মেয়ে যে রাজী হবে তা জানতাম না। শ্রাবণীকে দেখতে ভালোই। বয়স হবে তার ২০কোঠায়। আমি যদিও তার থেকে বয়সে খানিকটা হলে ৮-৯বছরের বড় হবো। শ্রাবণীকে আর আমাকে একটা রুমে দিলো কথা বলতে। কখনো কারো সাথে প্রেম ভালবাসা করা হয়নি। যা ছিলো সবই বউয়ের সাথে, আর বউকে তো ইনিয়ে বিনিয়ে সাঁজিয়ে কথা বলতে হয় না। তাারপর ভালবাসা কম ছিলো না। শ্রাবণী আমার সামনে চুপ করে বসে রইলো।
আমি সেইদিন শ্রাবণীকে বলেছিলাম সে বিয়েতে রাজী কিনা। সে তখন উওরে বলে ছিলো মনটা যদি নিজের হতো সবটাই দিতাম। অধিকারটা বাবা-মার তাই বিয়েতে অমতের প্রশ্ন আসে না। আমি তখন বলেছিলাম সে যদি কিছু বলতে চায় সব মেনে নেবো। সে বলে তার কোন জানতে চাওয়ার কিছু নাই এমন কি বলারও। আমার দুটা ছেলে-মেয়ে আছে যা জমজ আছে, তাদের বয়স ৫বছর করে। শ্রাবণী বলে সব কিছু জানি আর এইসব জেনেই বিয়ে করতে চাই। সেইদিন শ্রাবণীর সাথে বিয়েটা ঠিক করে আসি। মানে শ্রাবণীকে আংটি পরিয়ে আসি।
কিছুদিন পরই বিয়ে করে নিয়ে আসি ঘরে শ্রাবণীকে। গ্রামের বাড়িতে বিয়ে হলো। বিয়ের দিন সন্ধ্যায় চলে আসি সিলেটের দিকে।বাসর রাতটা গাড়িতেই কাটে। পরেরদিন আমার অফিস খুলা তাই আর থাকতে পারলাম না। বাচ্চা দুটা গাড়ির পিছনের সিটে ঘুমিয়ে আছে। আর শ্রাবণী সামনের সিটে, গাড়ির ড্রাইভার সিটে আমি। চট্রগ্রাম এয়ারপোর্টে গেলে দেখি ফ্লাইট নাই দুদিন।
রাত ৩টার দিকে গাড়ি নিয়ে চলে আসলাম চট্টগ্রাম থেকে সিলেট। ফাঁকা রাস্তা রাতের বেলায় তাই চলে আসতে পারতছি ৮-৯ঘন্টায়ই। মা বাবা সবাই চট্টগ্রামে থাকে আমি চাকুরীর কারনে থাকতে হয় সিলেটে। পরিার নিয়ে চলে আসছি তাই। বাসায় এসে সবাই ক্লান্ত শুয়ে পরলো। আমার চোঁখে ঘুম নেই। বারান্দায় বসে ভাবছি অরুর কথা। অরু আমার প্রথম স্ত্রী। আমি যখন পড়াশোনা শেষ করে চাকুরীতে যোগ দেই,তার কিছুদিন পরই আমি দুর্গা পুজার ছুটিতে গ্রামে যাই। নতুন চাকুরী আর টাকা থাকায় নিজের ভিতর এখন অন্য রকম লাগে। সব কিছুতে বড় বড় ভাব।
বাসায় যখন গিয়েছিলাম তখন রাত হয়ে গেছে। সকালে দুর্গা পূজার প্রথমদিনের পূজা শুরু। আমি সেই দিন অরুকে দেখি পূজার মন্ডবে। আর তখন তাকে খুঁজে বের করে নিয়েছি ঠিকানা। গ্রামে বন্ধুর অভাব নাই। মায়ের কাছে বলেছি বিয়ে করবো। মাও মহাখুশি, দুদিন পরই বিয়ে করিয়ে দিলো অরুকে। তখন আমার বয়স ২২বছর।
বিয়ের একবছর পরই জমজ বাচ্চা হয়। অরু আর আমার জীবনে সুখের অভাব ছিলো না। সেই সুখ বিয়ের চার বছর পরই চলে গেলো। অরুর ক্যান্সার হয়। ক্যান্সারের সাথে লড়ে ৬মাস আগেই মারা গেলো। এখন বাচ্চা দুটার দিকে তাকিয়ে বিয়ে করতে হলো শ্রাবণীকে। জানি না বাচ্চাদের সৎ মা কি করে দেখে রাখে।
সকাল হতেই আমি ফ্রেশ হয়ে অফিসে চলে গেলাম। সারাদিন আর বাসা ফেরা হয়নি। বিকালে বাসায় এসে দেখি বাচ্চারা ঘুমায় আর শ্রাবণী মন খারাপ হয়ে বসে আছে। আমি তাকে বুঝাতে চাইলাম। আমাদের নতুন জীবন সম্পর্কে। রাতে খাবার খেয়ে শুয়ে পরলাম। আজকেই শ্রাবণীর সাথে নতুন জীবনের শুরু। শ্রাবণীর হাতটা ধরে বলি আমার বাচ্চাদের যেনো আপন মায়ের মতোই ভালবেসে বড় করে। সে আমার কথার কোন উওর দেয় নি।
সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে চলে গেলাম অফিসে। দুপুরে বাসায় এসে দেখি শ্রাবণী বাসায় নাই। আর বাচ্চারা না খেয়ে কান্না করছে। শ্রাবণীর কথা জানতে চাইলে বলে শ্রাবণী সকালেই চলে যায়। গতকালও এমন করছে। বিকাল হতেই শ্রাবণী আসলে জানতে চাইলে বলে একটু কাজে গেছে। আর কিছু বললাম না। প্রতিদিনই বাসায় ফিরলে দেখি বাচ্চাদের বিভিন্নভাবে কষ্ট দেয় শুনি। কোনদিন মারে তাদের, কোনদিন খাবার দেয় না আবার কোনদিন বাথরুমে আটকে রাখে দুষ্টামি করে দেখে।
শ্রাবণীকে রোজ বুঝাই। সে আমার সাথে কিছু বলে না তবে একবারে সীতার মতো আচরন করে। যেনো তার মতো পবিত্র আর কেউ নাই। রোজ শুক্র,শনিবার বাসায় থাকি। শ্রাবণীকে দেখি। শনিবার শেষ রাত মানে বরিবার ভোরে সূর্য উঠার সময় পূজা করে প্রসাদ থেকে উপস করে দুপুর পর্যন্ত। এছাড়া পুরো একসপ্তাহ আর কখনো প্রসাদ খায় না। আমার বাচ্চা গুলোও আমার মতো প্রসাদ খেতে পারে না। অরু বেঁচে থাকতেও আমার নানান রকম বলতো। ভগমান আমাদের নাকি রুচি দেয়নি। বিয়ের ৩মাস পর। একদিন অফিস থেকে বাসায় আসলে শ্রাবণী বলে সে মা হবে। তার পেটে ৩মাসের বাচ্চা আমি স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নিলাম কিছু বলিনি। আমি মনকে এটাই বলে সান্ত্বনা দিতাম শ্রাবণী মা হলে আমার অরুর বাচ্চাদেরও ভালোবাসবে।
সৎ মা বলে ছেলে মেয়ে দুটাকে কখনো আদর করতো না। তবে ছেলে মেয়েরা এত কিছুর পরও শ্রাবণীকে ভালবাসে বুঝতে পারি। বিয়ের ৬মাস পর একদিন। অফিস থেকে ফিরে একদিন শ্রাবণীকে বলি আমরা চট্টগ্রাম যাচ্ছি সে বলে যাবে না। সেইদিনটা ছিলো বৃহস্পতিবার। শ্রাবণীকে বলি আমরা ৫দিনের জন্য যাচ্ছি। মানে ফিরবো মঙ্গলবার। শ্রাবণী আসতে রাজি হয়নি। বলে আমরা ঘুরে যেতাম সে বাসায় থাকবে।
আমরা যে বাসায় থাকি তার পাশেই আরো একটা পরিবার থাকে। আসার আগে পাশের বাসার তাদের কাছে বলে আসি শ্রাবনীকে দেখতে। আমাদের পাশের বাসার মানুষের সামনেই বিদায় দিলো শ্রাবণী। আমরা তিনজন চলে আসি সিলেট এয়ারপোর্টে। বিমানে করে চলে আসি চট্টগ্রাম। আমরা গ্রামে ভালোই আছি। সবার সাথে ভালোই কাটাচ্ছি ছুটি। বরিবার সকালে দুপুরে কল আসে আমার মোবাইলে। থানা থেকে কল দেয়। শ্রাবণী আত্মহত্যা করছে। আমি বিকালেই সিলেট এসে হাজির বাচ্চাদের চট্টগ্রাম মা -বাবার কাছে রেখে আসি। পুলিশ বলে শ্রাবণী বিষ খেয়ে মরে গেছে। আর সকাল থেকে দরজা না খুললে পাশের বাসার মানুষই পুলিশকে খবর দেয়।
পুলিশ আমাকে বললো আত্মহত্যা করছে নাকি মেরে ফেলছে?আমি কি করছি? নানান কথা জানতে চায়। আমি বৃহস্পতি বারের টিকেট দেখাই চট্টগ্রাম যাওয়ার। আর ওখানে কি করছি সব কিছু জেনে পরে আত্মহত্যার কারন নিয়ে শ্রাবণীর পরিবারকেও আনে সিলেট। শ্রাবণীর পরিবার কোন মামলা করেনি আত্মহত্যা করছে মেনে নেয়। পুলিশও শ্রাবণীর ফাইল বন্ধ করে দেয় দুদিন পর। শ্রাবণীর লাশ নিয়ে চলে যায় তার পরিবার। আমি আর চট্টগ্রাম যাই নাই অফিস খুলে যাওয়ায়। বাচ্চারা মা বাবার কাছে আছে চট্টগ্রাম। আমার বোনরা দেখবে তাই আর বেশি টেনশন করতে হয়নি।
শ্রাবণী মারা যাওয়ার পরের সপ্তাহে রবিবার বাসায় বসে ভাবছি। শ্রাবনীকে মেরে দিলাম কেউ বুঝতেই পারলো। আসলে তাকে মারার বড় ঘটনা লুকিয়ে ছিলো। যে দিন শ্রাবনী বলে ছিলো মা হবে তার আগের দিনই, আমি অফিসে না গিয়ে শ্রাবণী কোথায় যায় তা দেখতে বাসা থেকে বের হয়ে। অফিসে যাই নাই। আমি বাসা থেকে বের হয়ে বাসার কাছে যে টং দোকান সেখানে বসে আছি। শ্রাবণী কোথায়ও যেতে চাইলে টং দোকানের কাছে দিয়েই যেতে হবে।
আমি বাসা থেকে বের হওয়ার ১ঘন্টা পরই শ্রাবণী বাসা থেকে বের হয়। আমি তার পিছনে পিছনে গেলাম শ্রাবণী একটা ক্লিনিকে গেলো। আমি ভাবছি সে কি করে। শ্রাবণী ক্লিনিকে ভিতর থেকে বের হয়ে চলে যাচ্ছে। তখন আমি গিয়ে জানতে চাইলে একজনকে জিজ্ঞেস করলে যার কাছে যায় শ্রাবণী তার কাছে গেলাম। ডাঃসিরিনার কাছে গিয়ে জানতে চাইলে শ্রাবণী নামের মেয়েটা কি জন্য আসে। ডাঃ যা বলে তা শুনতে প্রস্তুত ছিলাম না। ডাঃ বলে,শ্রাবনী মেয়েটা ৪মাসের অন্ত্বঃসত্বা। আর সে আসছে এবরশন করতে। আমি মানা করে দিছি। বাচ্চার বাপ ছাড়া করবো না।
আমি আর কিছু না বলে চলে আসি সারাদিন ঘুরে বিকালে বাসায় যাই। পরের দিন শ্রাবণী বলে সে মা হবে।
আমি আর কিছু বলি নাই। হিসাব মিলিয়ে দেখি বিয়ে হলো তিনমাস বাচ্চা চার মাসের তার মানে বিয়ের আগেই সে অন্তঃসত্ত্বা । তারপরও মেনে নিতাম বাচ্চাটা যদি আমার বাচ্চাদের আদর করতো। সেতো চাইছে আমার গুলকে মেরে তারটা নিয়ে থাকবে। তাই অনাহারে, নির্যাতন করতো যাতে মারা যায়। আর আমরা তার অবৈধ সন্তান নিয়ে থাকি। আমি জানি, শ্রাবণী রবিবার সকাল ভোরে পুজা করে প্রসাদ খেয়ে উপস করবে। তার আগে পুরো সপ্তাহে প্রসাদ খায় না। আমি বৃহস্পতিবার যাওয়ার আগে প্রসাদে বিষ দিয়ে যাই যাতে রবিবার খেয়ে মারা যায় আর আমার দোষ না হয়। তাই তিনদিন আগেই চলে যাই চট্রগ্রাম।
সৎ মা বলে আমার বাচ্চাদের মারতে চায় তাই আমিই দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিলাম। ধোকা দিছে বিয়ের আগেই মা হবে তা না জানিয়ে আবার বাচ্চাদের উপর অত্যাচার সব কিছুর সাঁজা দিয়ে দিলাম। এ মাসেরই শেষে চলে যাবো চাকুরী ছেড়ে। গ্রামে গিয়ে মা-বাবার কাছে থাকবো গ্রামে একটা ব্যাবসা শুরু করবো। আর বাচ্চাদের ভালো করেই যত্ন নিবো।