আজ ছাত্রীকে পড়াতে গেলাম তার বাসায়। পাশাপাশি বাড়ি হওয়াতে হোমকোয়ারেন্টাইনের ঝামেলা পোহানোর এতো সুযোগ নেই। কিছুক্ষণ পর যখন ছাত্রীর বাসার দরজায় এলাম, এমন সময় কোয়েনবেল বাজানোর আগেই ছাত্রীর মা আন্টি এসে হাজির। রহস্যময় একটা হাসি দিয়ে ঠাস করে আমার হাতটা ধরে সোজা নিয়ে গেলেন ওনার রুমে।
–কি ব্যাপার আন্টি আজকে এত খুশি খুশি লাগছে যে?মুক্তা (ছাত্রী) কোথায়?
–খুশি আবার হবনা,’তোমার জন্যই তো এতোক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম..
-কেন?
আন্টি আমার কথার জবাব না দিয়ে সোজা চলে গেলেন ড্রয়িং রুমের দিকে। ছাত্রীর ছোট ভাই অপু বেশ দুষ্টু ছেলে, কিন্তু আজ সে আমার সাথে কোন দুষ্টুমি না আড় চোখে আমাকে দেখছে আর মিটিমিটি করে হাসছে। আজকে মুক্তাদের বাড়িটা বেশ গুছানো লাগছে। আবার বেলুন ফেলুন দিয়ে দেয়ালে বেশ সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে। আমি মনে মনে ভাবলাম হয়তো আজ কারো জন্মদিন নয়তো কোন অনুষ্ঠান আছে.. কিন্তু না পরক্ষণেই মনে পড়লো আজ আমার ছাত্রী বা তাঁর ভাইয়ের কারো জন্মদিন না; কারণ কারো জন্মদিন হয়েছে আবার কারো টা অনেক দেরি আছে। তাহলে??? প্রায় ১৫মিনিট পর বেশ সেজেগুজে মুক্তা এলো, আমাকে দেখেই মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল,
–ম্যাম আজ আমাকে বেশিক্ষণ পড়াতে পাড়বেন না।
–কেন??কি হয়েছে!
–এমনি ম্যাম , আসেন আমার রুমে (লজ্জা কণ্ঠে)
আমিও আর বেশি কথা না বাড়িয়ে চলে গেলাম ছাত্রীকে পড়াতে। প্রায় ঘন্টা খানেক পর ছাত্রীর ভাই অপু এসে আমার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ হাসলো ,’এরপর ছাত্রীর কানে কি যেন ফিসফিস করে কিছু একটা বলে দিল এক ভৌ দৌড় আর ছাত্রী আমার ছোট ভাইয়ের ফিসফিসানি শুনে লজ্জায় যেন লাল হয়ে যাচ্ছে…আর আমার দিকে তাকিয়ে যেন চুপসে গেল। নাহ্ এবার তো মূল ঘটনা জানতেই হবে…
–কি হয়েছে মুক্তা,অপু কি বলেছে তোমাকে?আর এতো সব আয়োজন কিসের জন্য??
–কিছুনা ম্যাম (নিচের দিকে তাকিয়ে)
–সত্যি করে বলতে বলছি কিন্তু (রাগ দেখিয়ে)
–না ম্যাম আজ এগেঞ্জমেন্ট হবে তো তাই!!
এ বলে ছাত্রীও দিল চেয়ার ছেড়ে এক দৌড়। সবার সাজুগুজু আর ছাত্রীর লজ্জা দেখে বুঝতে বাকি রইল না আজ আমার ছাত্রীর আংটি বদল করা হবে। হতাশার চোখ নিয়ে ভাবতে লাগলাম–বেচারা ছাত্রী আমার, নবম শ্রেণীতে পড়েই এ অবস্থা! আর আমি এতোকাল কিসের ঘাস কাটলাম??? মনলজ্জা নিয়ে কাউকে কিছু না বলে সোজা বেড়িয়ে আসবো, এমন সময় দেখলাম সোফায় একটা ছেলে বসে আছে আর তার পাশে একজন মহিলা। তাদের কে দেখে ভদ্রতার খাতিরে সালাম দিয়ে যেই বেড়িয়ে পড়ব,অমন সময়ে ছাত্রীর মা আন্টি চিৎকার করে বলে উঠল’ এই নিশি কোথায় যাচ্ছ’?? হুট করে আন্টির চিৎকার শুনে কিছুটা বিব্রত বোধ করি। যেই না আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম তখনই আন্টি আমার হাত ধরে ও ছেলেটার পাশে দাঁড় করিয়ে বলছে
–মাশাআল্লাহ , দুজন কে একসাথে বেশ মানিয়েছে দেখছি।
— এসবের মানে কি আন্টি(অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে)??
–বুঝতে আর হবেনা মা (পাশের মহিলা)
–মানে কি আর কি বলছেন এসব!
–ম্যাম আজ থেকে আপনি আমার খালাতো ভাইয়ের বউ মানে ভাবী হবেন (হাসতে হাসতে ছাত্রী)
–মাথা খারাপ নাকি সবার!!
—এই মুক্তা নিশির হাত টা ধর,আর বাবা রাফি আংটি টা পড়িয়ে দেও তো বাবা(আন্টি)
ও আল্লাহ গো আমারে কেউ বাঁচাও (আমি) অনেক চিল্লাচিল্লি করলাম, কিন্তু কেউ কোনো আমার কথার কর্ণপাত করেনি! নাহ্ নিজেকেই নিজে বাঁচাতে হবে।সবাই যখন আমার হাত নিয়ে জোরাজুরি করতে লাগলো ঠিক তখনই বুদ্ধি করে হিজাবের ক্লিপ পিন দিয়ে দিলাম সবার হাতে ইচ্ছে মতো গুঁতো, এরপর সবাই কে জোরে এক ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে দিলাম এক দৌড়। দৌড় দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে ঠুস করে খেলাম একটা পিছলা! অতঃপর আমি অজ্ঞান কিছুক্ষণ পর আমার মায়ের চিল্লানিতে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি,’আমি আমার বিছানায় শুয়ে আছি আর আমার মোবাইল টা টুং টুং টুং করে বেজেই চলেছে। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি মুক্তার মায়ের ফোন। ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলার আগেই আন্টি বলতে লাগলেন,
–হ্যালো নিশি আজ কি মুক্তাকে পড়াতে আসবা না???
–না মানে !
–না একঘণ্টা হয়ে গেল ত্যো আর তুমি এখনও আসনি তাই…
—(একটা শান্তির ঢোপ গিলে)এইতো আন্টি এক্ষুনি আসছি।
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি এখন মাত্র বিকাল ৪টা বাঝে। বুঝতে আর বাকি নেই–আমি যে এক ভয়ংকর স্বপ্ন দেখেছি!!
১৫মিনিটের মধ্যে তৈরি হয়ে ছাত্রীর বাসায় দিকে যাচ্ছি ,আর যেতে যেতে ভাবছি ‘এটা কেমন স্বপ্ন ছিল?!