মেয়েটাকে যখন প্রথম দেখেছিলাম গ্রামে,খুব ভালো লেগেছিল তখন। দুটি চোখ ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। পায়ে মোজা,হাতে মোজা,বোরকা পড়া। সম্পূর্ণ শরীর বোরকা দিয়ে ঢাকা। বুঝতে বাকী রইলো না যে,মেয়েটা কোনো পরহেজগার পরিবারের মেয়ে।
ছোটবেলা থেকেই শহুরে পরিবেশে বড় হয়েছি। আমার জন্মটা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ শহরে। বাবার চাকরির সুবাধে দেশের অনেক জেলাতেই ঘুরা হয়েছে। কখনও এখানে ট্রান্সফার,আবার কখনও ওখানে ট্রান্সফার। আমার নানু বাড়ি ঝিনাইদহে। খুব একটা যাওয়া হয় না সেখানে। অনেক দূরের রাস্তা। আমার আবার জার্নি করার তেমন একটা অভ্যাস নেই। বাবা এপর্যন্ত যতবারই বদলি হয়েছেন,আমি রাতে গাড়িতে ঘুমিয়েছি আর সকালে উঠে যেখানে যাওয়ার কথা সেখানে পৌঁছে গেছি। অতটা কষ্ট করতে হয়নি। কারণ নিজেদের প্রাইভেট গাড়ি আছে।
‘মেয়েটা থাকে কোথায়?’
‘কোন মেয়েটা?’
‘একটু আগে যে আমাদের সামনে দিয়ে গেলো!’
‘ওহহ ওইটা! এইতো একটু সামনেই। কেন বলোতো?’
‘এমনি।’
নানু বাসায় আসলে এই ছেলেটা সবসময়ই আমার সাথে থাকে। সম্পর্কে মামাতো ভাই,নাম সায়েদ। বয়সে ৩/৪ বছরের ছোট হবে আমার,কিন্তু এখানে আমার সমবয়সী তেমন কেউ না থাকায় ওর সাথেই সবসময় থাকতে হয়। ‘মেয়েটাকে খুব ভালো লেগেছে আমার।’সায়েদ আমার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-
‘মোল্লা বাড়ির মেয়ে ভাই। ফ্যামিলি অনেক রাগী,কঠিন।’
সায়েদের এমন দীর্ঘশ্বাস ফেলে কথাটা বলার আসল রহস্যটা কী সেইটা খানিকটা হলেও আঁচ করতে পারছি আমি।
‘এপর্যন্ত না হলেও ১৫/২০ টার মতো বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল,কিন্তু প্রতিবারই মানা করে দিয়েছে। তারা তাদের মনের মতো ছেলে পেলে তবেই মেয়েকে বিয়ে দিবে।’ তাদের মনের মতো?? কোন ছেলেই বা চাইবে মেয়ের বাবার মনের মতো হতে?? সব ছেলেরাই তো চায় মেয়েটা তার মনমতো হোক। কারণ বিয়ে তো আর দু-চারদিনের জন্য না,সারাজীবনের জন্য।
‘মেয়েটার নাম কী?’
‘নীলিমা।’
‘কিসে পড়ে?’
‘মাদরাসায় পড়ে,তবে কোন ক্লাসে তা জানি না।’
মেয়েটাকে দেখে মনে হয়েছে,বয়স খুব বেশি হলে সতেরো কী আঠারো হবে। এর থেকে কমও হতে পারে। জীবনে অনেক মেয়ের চোখ দেখেছি,তবে এই মেয়ের মতো এমন নজরকাঁড়া,মায়াবী,তীক্ষ্ণ চোখ অন্যকারো দেখিনি। মেয়েটার চোখের মধ্যে কেমন যেন একটা মায়া আছে। মনে হচ্ছে তার এই মায়াবী চোখের চাহুনী দিয়েই লক্ষ লক্ষ যুবকের তাজা হৃদয় ধ্বংস করে দেয়া গুটিকয়েক সেকেন্ডের ব্যপার মাত্র। এক কথায় মায়াবতী। সেবারের মতো গ্রাম থেকে বিদায় নিয়েছিলাম বটে,তবে মেয়েটাকে কিছুতেই মন থেকে সরাতে পারছিলাম না। বাসায় ফেরার পর সবসময় শুধু মেয়েটার কথায় মাথায় আসতো। ঠিকমতো পড়তেও পারতাম না। চোখ দু’টা বন্ধ করলেই মেয়েটার সেই মায়াবী দুটি চোখ ভেসে উঠতো। ভীষণ যন্ত্রণার মধ্যে ছিলাম তখন। বাসাতে মন যেন কিছুতেই মানতে চাইছিল না। শুধু মেয়েটার কাছে যেতে ইচ্ছে করতো। যদিও তার মুখ আমি দেখতে পারতাম না কিন্তু তার মায়াবী চোখ দুইটা একবার দেখার জন্য হলেও সেখানে যেতে খুব ইচ্ছে করছিল।
‘আম্মু,আমি নানু বাড়ি যেতে চাই।’
‘কিছুদিন আগেই তো সেখান থেকে এলে।’
‘আবার যেতে চাই।’
‘এখন আর না।’
‘প্লিজ আম্মু!’
‘তোমার বাবাকে ছাড়া আমি কিছুই বলতে পারব না।’
বাবা খুব রাগী স্বভাবের ছিলেন। মেজাজ সবসময় ২০০০ ভোল্টেজের মতো হয়ে থাকতো। তাই বাবার সামনে সাহস করে কখনও কিছু বলতে পারিনি। আমার স্পষ্ট মনে আছে,কলেজে ওঠার পর একবার বাবাকে বলেছিলাম আমি বন্ধুদের সাথে কক্সবাজার ঘুরতে যাবো,আমাকে দশ হাজার টাকা দাও। তারপর বাবা আমাকে এমন এক ধমক দিয়েছিলেন সাথে সাথে আমি প্যান্টেই হিসু করে দিয়েছিলাম। তারপর থেকে ভয়েও বাবার সামনে কিচ্ছু বলতে পারি না।
দশ হাজার টাকা দেওয়া আমার বাবার কাছে তেমন কিছুই না। কিন্তু তিনি আমাকে কোথাও একা ছাড়তে খুব ভয় পান। আর বন্ধুদের সাথে দূরে কোথাও যাওয়া তো ভুলেও এলাউ করবেন না। কারণ বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়ে অনেকেই লাশ হয়ে ফিরে আসে। হয়তো কোনো এক্সিডেন্টে,আবার হয়তো অন্যকোনো কারণে। এসব প্রায় প্রতিদিনই টিভিতে খবরের মধ্যে দেখায়। সেখান থেকেই বাবা ভয় পান। বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে হলে যা হয় আর কী! সবকিছুতেই ছেলেকে নিয়ে ভয় থাকে তাদের।
বাবাকে খুব কষ্টে আম্মু রাজী করিয়েছিলেন নানু বাড়ি যেতে। গিয়েছিলামও কিন্তু আসার সময় একটা এক্সিডেন্ট করে এসছি। নানু বাড়িতে বাইক চালানো শিখতে গিয়ে রোড থেকে পুকুরে পড়ে গিয়েছিলাম। ডান পায়ে খুব ব্যথা পেয়েছি। ডান পায়ের বুড়ো আঙুলের হাড়টা ভেঙে গেছে। পুরো পা ব্যান্ডেজ করা ছিল। বাসায় আসার পর একে তো আম্মুর মরাকান্না শুরু,অন্যদিকে বাবার মুখে কঠিন বকা শুনা। খুব বকেছিলেন আব্বু। আমার তো নানু বাড়ি যাওয়া একদমই বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বাবার সাফ কথা,আর কখনও নানু বাড়ি যেতে পারব না। যাওয়া টোটালি অফ। মাসখানিক পর আমার পা একদম ঠিক হয়ে গেলো। পুরোপুরি না অবশ্য,তবে শতকরা ৮০% ই ঠিক হয়ে গিয়েছিল।
‘আসিফ?’
‘জ্বি আম্মু!’
‘এইদিকে আসো একটু।’
আম্মুর সাথে আমার সম্পর্কটা অনেকটাই বন্ধুর মতো। বলতে গেলে একমাত্র আম্মুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
‘কিছু বলবে?’
‘একটা কথা জিজ্ঞাসা করার ছিল তোমাকে।’
‘হ্যাঁ কর।’
‘কোনো মেয়েকে ভালো লাগে কী তোমার?’ আম্মুর মুখে হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে খুব অবাকই হয়েছিলাম। কী বলবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
‘না আম্মু। হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন?’
‘আগে বলো কাউকে ভালো লাগে কিনা?’
‘আরে কী যে বলো না তুমি আম্মু! আমার কাউকে ভালো লাগলে তোমাকে আবার না বলবো!’
‘তাহলে নানু বাড়ি গিয়ে রাস্তা আটকিয়ে কোন মেয়েকে তার নাম তার জিজ্ঞাসা করেছিলে শুনি?’
আম্মুর কথা শুনে আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম। আমি নানু বাড়ি গিয়ে কোনো মেয়েকে রাস্তা আটকিয়ে তার নাম জানতে চেয়েছিলাম এইটা আম্মু কীভাবে জানল?? নাহ মেয়েটাকে যখন তার নাম জিজ্ঞাসা করেছিলাম তখন তো আশেপাশে কেউ ছিল না। তাহলে আম্মুকে এই ব্যপারে বললো কে??
‘চুপ কেন?’
‘না মানে আম্মু আসলে!’
‘আসলে কী?’
‘কিছু না আম্মু। আমি একটু আসছি। কাজ আছে।’
বলেই আম্মুর রুম থেকে সোজা একদৌড় দিলাম। বাইরে বেড়িয়ে এসে ভাবতে লাগলাম,আচ্ছা আমি যে মেয়েটাকে দাঁড় করিয়ে তার নাম জিজ্ঞাসা করেছি সেইটা আম্মুকে কে বললো?? নাম জিজ্ঞাসা করার সময় তো আশেপাশে বা তার দশ মিটারের ভিতরেও কেউ ছিল না। তাহলে আম্মুকে এই ব্যপারে বললো’টা কে?? কে দেখেছে আমাদেরকে?? আমার মাথা ঘুরছে। ভাবনার জগৎটা যেন আরও প্রশস্ত হচ্ছে। মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে,কে হতে পারে?? কে কে কে??
আজ প্রায় ছ’মাস হয়ে গেছে মেয়েটাকে দেখি না। মনটা সবসময় মেয়েটার জন্য কাঁদে। কিন্তু বুঝাতে পারি না কাউকেই। আচ্ছা,আমি কী খুব বোকা?? নাকি মানসিক রোগী?? শুধুমাত্র দুইটা চোখ দেখেই মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেলাম!! আজ অব্দি মেয়েটাকে আমি দেখলামই না। মেয়েটা দেখতে কেমন,তার চেহারা কেমন ভালো করে তার কিছুই জানি না। সামান্য দুইটা চোখ দেখেই এমন দিওয়ানা হয়ে গেলাম?? বর্তমান সময়ে এমন অত্যাধুনিক যুগে আমার মতো এইরকম বলদ আরও দু একটা আছে কী সারাদেশে??
আসল কথা হচ্ছে,ভালোবাসার জন্য সুন্দর চেহারা,গায়ের রঙ ওসব কিছুই লাগে না। ভালোবাসার জন্য শুধু একটা সুন্দর মনই যথেষ্ট। চামড়া সাদা তো কুকুরেরও হয়। তাই বলে কী আপনি কুকুরের সাথেই প্রেম-ভালোবাসা করবেন?? অবশ্যই না। মেয়েটার চোখে এক অদ্ভুত মায়া আছে যেটা কিনা আমার হৃদয়কে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছে। এখন সে যেমনই হোক না কেন একমাত্র তাকেই আমার চাই। সে যদি দেখতে একদম বিশ্রীও হয় তবুও আমি তাকেই চাই। আমি তার মায়াবী সেই চোখ দুটি দেখেই সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারব অনায়াসে।
‘আম্মু!’
‘কী?’
‘ওই মেয়েটাকে আমি বিয়ে করতে চাই।’
‘কোন মেয়েটা?’
‘নানু বাড়িতে গিয়ে যার পথ আটকিয়ে নাম জিজ্ঞাসা করেছিলাম।’
কথাটা শোনার পর আম্মু আমার দিকে কেমন করে যেন তাকালো। আম্মুর এমন অদ্ভুত চাহুনীর উদ্দেশ্যটা কী সেইটা আমি বুঝতে পারছি না।
‘বিয়ের বয়স হয়েছে তোমার?’
‘হ্যাঁ হয়েছে।’
‘তোমার বাবাকে গিয়ে বলো।’
‘তুমি আব্বুকে বলো।’
‘বিয়ে তো আমি করছি যে তোমার আব্বুকে গিয়ে বলবো,তাই না!’
আম্মুর এই কথার মানেটা খুবই সোজা। আম্মু বলবে না। কথাটা বললে আমাকেই বলতে হবে। একদম সশরীরে। না আজকে সাহস করে কথাটা আব্বুকে বলতেই হবে। এই বিষয়টা নিয়ে চুপ করে থাকলে খুব বড় একটা বিপদে পড়ে যাব। আব্বুর রুমে যাওয়ার আগে একটা সেন্টার ফ্রুট খেয়ে নিলাম। টিভিতে দেখেছি,সেন্টার ফ্রুট খেলে নাকি যেকোনো কথা অনায়াসেই বলে দেয়া যায়। কখনও ট্রাই করিনি। আজকে ট্রাই করতে হবে। দেখি সেন্টার ফ্রুটের কত ক্ষমতা!
‘বাবা,কিছু কথা ছিল তোমার সাথে।’ ‘বলো।’ বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে বাবাকে বললাম-‘না মানে বাবা বলছিলাম কী,আম্মু তো সারাদিন বাসায় একা থাকে। তুমিও অফিসে চলে যাও আর আমিও ভার্সিটিতে চলে যাই। এখন বাসাতে যদি একটা!’ ‘একটা কী?’ ‘না মানে একটা মেয়ে!’ ‘আচ্ছা ঠিক আছে। আমি কালই একটা কাজের বুয়াকে বাসায় এনে দিবো।’ এইটা কোনো কথা! ভাবলাম কই বলবে,আচ্ছা তোমাকে একটা বিয়ে করিয়ে দিব তা না বলছে কাজের বুয়া আনবে!
‘না বাবা কাজের বুয়ার কথা বলছি না আমি।’
‘তাহলে?’
‘না আসলে আমি…!’
‘তুমি কী?’
‘আমি বলতে চাচ্ছিলাম!’
‘এক চড়ে সব ক’টা দাত ফেলে দিব ফাজিল। যা বলবি স্পষ্ট করে বল। এরকম ম্যান্টালদের মতো করছিস কেন?’ বাবা খুব জোর গলায় আমাকে ধমক দিলেন। বুকটা আচমকা কেঁপে উঠল বাবার ধমক শুনে। নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলাম,নাহ প্যান্ট ঠিক আছে। হিসু করি নাই। ‘বাবা আমি বিয়ে করতে চাই।’ আমার কথা শুনে বাবা উপরের দিকে তাকালেন। ‘কী করতে চাস?’ ‘বিয়ে করতে চাই বাবা।’ ‘তোর বয়স কত?’ ‘২৩ বছর।’ ‘কিসে পড়ছিস?’ ‘অনার্স ফাইনাল ইয়ারে।’
বাবা আর কিছু বললেন না। সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলেন। তারপর বিছানার কাছে গিয়ে সাইডে হাত দিলেন। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম বাবা কী করতে চাচ্ছেন আসলে। হঠাৎ দেখি বাবার হাতে একটা বড়,মোটা লাঠি। তিনি লাঠি নিয়ে আমার দিকে তেড়ে আসছেন আর বলছেন- ‘হারামজাদা,আমি ৩১ বছর বয়সে তোর মাকে বিয়ে করেছি ভালো একটা চাকরি পাওয়ার পর। আর তুই চাকরি করিস না,পড়াশোনা করিস,বয়স সবেমাত্র ২৩,নাক টিপ দিলে এখনও দুধ বের হবে আর তুই করতে চাস এখন বিয়ে! আজকে এই লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তোর বিয়ের সাধ মিটায় দিব দাঁড়া!’
চাচা আপন প্রাণ বাঁচা!! আব্বুর কথা শুনে উত্তরদিকে ঘুরে দরজা দিয়ে সোজা দিলাম একদৌড়!! মিনিক পাঁচেক একটানা দৌড়ালাম। আমাকে আর পায় কে!! ‘কিরে তুই এখনও পাঞ্জাবী পড়িস নাই?’ ‘হ্যাঁ হ্যাঁ! কী কী!’ ‘এখনও পাঞ্জাবী পড়িস নাই কেন?’ ‘এইতো আম্মু আর পাঁচ মিনিট।’ ‘জলদি কর। যেতে ৯/১০ ঘন্টা লেগে যাবে কিন্তু। সবাই বসে আছে।’ ‘আচ্ছা তুমি যাও আমি এই আসছি।’ ‘একটা কাজ যদি সময়মতো করতে পারত! সব জ্বালা হয়েছে আমার!’ বলেই আম্মু রুম থেকে চলে গেলো। ওহহ হো এতক্ষণ তো আমি ভাবনার জগতে ডুবে ছিলাম। আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আজকে আমার এংগেইজমেন্ট!!
ফাইনাল ইয়ার পরিক্ষা শেষ হবার পর আব্বু-আম্মু দু’জনই ঠিক করেছিলেন আমার বিয়ে দিবেন। বাবা শুধু আমার পরিক্ষার জন্যই এতদিন দেরি করছিলেন। পরিক্ষা শেষ হবার পর তিনি নিজেই আমাকে বিয়ে করানোর জন্য অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। পরবর্তীতে বাবাকে বলেছিলাম আমার একটা মেয়েকে খুব ভালো লাগে। মেয়েটার নাম নীলিমা। বাসা নানু বাড়ির এখানে। মাদরাসায় পড়ে। বাবা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন,আমি মেয়েকে কখনও দেখেছিলাম কিনা। আমি মানা করেছিলাম। তারপর সবাই মিলে নানু বাড়ি গিয়েছিলাম নীলিমাকে দেখতে।
নীলিমাকে যখন প্রথম দেখেছিলাম,আমার যেন কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিলো না যে এইটা নীলিমা। এত্ত সুন্দরী,এত্ত মায়াবী মেয়ে আমি আগে কখনও দেখিনি। আমি কল্পনায় ঠিক যতটা এঁকেছিলাম নীলিমাকে,আসলে নীলিমা তার থেকেও বেশি অপরূপা ছিল। নীলিমাকে প্রথম দেখার পর আমার পুরো পৃথিবীটা কিছুক্ষণের জন্য যেন থমকে গিয়েছিল। আমার মনে হচ্ছিলো পুরো পৃথিবীটা আমার চারপাশে ঘুরছে। আমার চোখের পলক একটুও নড়ছে না। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি নীলিমার দিকে। মনে হচ্ছে আস্ত একটা পুতুল। মনে হচ্ছে নীলিমার চেহারা থেকে নূরের আলো বের হচ্ছে। চেহারাটা একদম জ্বলজ্বল করছে। মাদরাসার মেয়ে,কুরআনে হাফেজা,হয়তো সেজন্যই এইটা আল্লাহর তরফ থেকে একটা কুদরতি শক্তি।
আমাদের বংশ কিংবা ফ্যামিলি নিয়ে মেয়েদের কোনো আপত্তি ছিল না। কারণ আমরা খুব উচ্চবংশীয় ছেলে। সমাজে আমাদের একটা আলাদা সম্মান আছে। আর মেয়েদের বংশ নিয়েও আমাদের কোনো সমস্যা ছিল না। কারণ তারা ‘মোল্লা’ বাড়ির। অনেক পরহেজগার। এদিক থেকে তারা আমাদের কাছে কোনো কথা ছাড়াই কোয়ালিফাইড। সবকিছুই ঠিকঠাক তবে মেয়েদের একটা শর্ত আছে। আমি শহুরে পরিবেশে বড় হয়েছি। সেজন্য আমার ভিতরে শহুরে মনোভাবই কাজ করে। স্টাইল করি একটু বেশিই। চুলের স্টাইল,দাড়ির স্টাইল আরও অনেক কিছু। তাদের একটাই কথা। আমাকে ইসলামের পথে চলতে হবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে,দাড়ি রাখতে হবে,দাড়ির কোনো ফ্যাশন করা যাবে না। মানে এক কথায় সম্পূর্ণ ইসলামিকভাবে নিজের জীবনকে সাজাতে হবে। ইসলামিক নিয়মে আমাকে চলতে হবে।
আমি তাদের কথার বিন্দুমাত্রও আপত্তি করিনি। আর আপত্তি করবই বা কেন?? আপত্তি করার তো কোনো প্রশ্নই ওঠে না। নীলিমাকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে পেতে সামান্য এইটুকু আমি করতে পারব না?? আর তাছাড়া এইটা শুধুমাত্র নীলিমার জন্য কেন হতে যাবে?? একজন মুসলমান হিসেবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা,ইসলামী নিয়মে নিজেকে পরিচালনা করা কী আমার জন্য ফরয কাজ না?? আজকে আমার আর নীলিমার এংগেইজমেন্ট। সবাইকে নিয়ে ঝিনাইদহ যাব এখন। কারণ নানু বাড়ির সবাই আমাদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। নতুন এক দিগন্তের পথে হাটা যাক!! লেট’স স্টার্ট দ্য জার্নি টুগেদার!!