পাঁচ বছর পর প্রবাস থেকে দেশে আসলাম । দেশে আসার কয়েকদিন পরেই আমাদের বাড়ির পাশেই একটা মেয়েকে দেখলাম । মেয়েটার নাম সায়মা । সে দেখতে কোন রূপবতী সুন্দরী ছিল না । তবে চেহারাতে একটা মাধুর্য ছিল । তার মায়া ভরা চেহারা দেখে আমার কেনো জেনো খুব ভালো লাগে । মা বাবা অনেক আগে থেকেই আমার বিয়ে নিয়ে কথাবার্তা বলছিলো । তাই আমি মা-বাবাকে সায়মার কথা জানালাম , আমি সায়মা কে বিয়ে করতে চাই ।
আমাদের আর্থিক অবস্থা মোটামুটি ভালই ছিল ।কিন্তু তাদের আর্থিক অবস্থা তেমন একটা ভালো ছিল না । অনেক গরিব ঘরের মেয়ে ছিলো সায়মা । তাই প্রথমে মা-বাবা রাজি হলেন না । পরে আমার জন্য ঠিকই রাজী হতে বাধ্য হলেন । মা বাবা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেলে । তার বাবা মা বিয়ের প্রস্তাবে কোন আপত্তি করলেন না , উনারা রাজি হয়ে গেলেন । কিন্তু সায়মা বিয়ে করতে রাজি না । সায়মা বললো – সে প্রথমে পড়াশোনা শেষ করবে ,তারপর একটা জব নিবে, পরে বিয়ে করবে । যখন আমি তার ইচ্ছের কথা মা বাবার কাছ থেকে শুনলাম । তখন আমি বললাম – এখন আংটি পরিয়ে রাখি, বিয়ে না হয় পরে করব। যখন ও লেখাপড়া শেষ করে জব করবে তখন। আমার এমন প্রস্তাবে সায়মা রাজি হয়ে গেল । এর কয়েকদিন পরেই দুই পরিবার মিলে কথাবার্তা ফাইনাল করে তাকে আংটি পরিয়ে দেয় ।
এরপর থেকেই শুরু হয় নতুন করে ভালোবাসার গল্প ।তার সাথে সব সময় কথাবার্তা বলতাম তার সাথে ঘুরতে যেতাম তাকে নিয়ে হাজারো স্বপ্ন দেখতাম । বিয়ের পর কোথায় যাবো কি করবো এই সব নিয়ে সব সময় তার সাথে ডিসকাশন করতাম । এভাবে খুব ভালোই যাচ্ছিল দিনগুলো । এর তিন মাস পরে আমি আবার প্রবাসে ফিরে যাই । তার সাথে কথাবার্তা ফাইনাল হয় , সে পড়াশোনা শেষ করে জব পেলেই আমি দেশে আসবো তারপর বিয়ে হবে ।
আমি প্রবাসে ফিরে যাওয়ার পর থেকেই তার সবকিছুর দায়িত্ব আমি আমার কাঁধে নিলাম তার পড়াশোনা খরচ হতে তার সব । তার যখন যা লাগত আমি সবকিছুই দিতাম ।একজন স্ত্রীর প্রতি স্বামীর যে দায়িত্ব থাকে সেরকম দায়িত্বই পালন করছিলাম। তার সাথে কথাবার্তা বলে ,তার কথাবার্তা শুনে মাঝে মাঝে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হতো। এমন একজন মানুষকে জীবনে পেয়েছি বলে । এইভাবে দেখতে দেখতে প্রবাসে আমার দেড় বছর কেটে যায় । দেড় বছর পর সে আমাকে একদিন বলল- অনেক দিন ধরে প্রাইমারি স্কুলের একটা জবের জন্য চেস্টা করছিলাম। হয়তো জবটা এবার হয়ে যাবে তবে তারজন্য পাঁচ লক্ষ টাকা দিতে হবে, আর তা না হলে জবটা পাব না।
তখন আমার হাতে কোনো টাকা ছিল না । তারপরও আমি অনেক ভেবে চিন্তে দেখলাম , সায়মা যদি জবটা পেয়ে যায় , তাহলে আমাদের ভবিষ্যতের জন্য আমাদের সংসার জন্য ভালোই হবে । তাই আমি আমার আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে টাকা ধার করে তাকে পাঁচ লাখ টাকা দিলাম । সে টাকা দিয়ে প্রাইমারি স্কুলের জবটা পেয়ে যায় । সায়মা জব পাওয়াতে দুই পরিবারের সবাই অনেক খুশি হয় । সবাই তাকে নিয়ে একটা গর্ব বোধ করে ।
প্রাইমারি স্কুলে জয়েন করার কিছুদিন পর থেকে শুনতে পেলাম, এক স্কুল টিচারের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক। সম্পর্কটা নাকি অনেক আগের থেকেই ছিল। প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন, বন্ধুদের কাছ থেকে আর অনেক কিছু শুনতে লাগলাম। কিন্তু আমি কারো কথা বিশ্বাস করতাম না। আমি তাকে ভালোবাসি আর ভালোবাসার শক্তি হচ্ছে বিশ্বাস ।তাই সায়মা যা বলতো তাই সত্যি মনে করতাম।
আমি তাকে যখন জিজ্ঞেস করলাম , অনেকের কাছ থেকে অনেক ধরনের কথা শুনতে পাচ্ছি আসলে কি ঘটনা সত্য । সায়মা তখন বলছিলো – আমার প্রতি কি তোমার বিশ্বাস নাই তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করো না । আমি সত্যি বলছি ওই ছেলেটার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই ।আমরা একই স্কুলে চাকরি করি সেই হিসেবে মাঝে মাঝে কথাবার্তা হয় । এর চেয়ে বেশি কিছু আমাদের মাঝে নেই । আমার নামে মানুষেরা মিথ্যে কথা বলে আমার বদনাম করার চেষ্টা করছে । আমি তাকে অনেক বিশ্বাস করতাম বলে আমি তার সব কথা সত্য ভেবে নিলাম । আমি তাকে অন্ধ বিশ্বাস করতাম , তাই আমি ভাবলাম সেই সত্য কথা বলছে আর বাকিরা মিথ্যে কথা বলছে ।
কিন্তু আমার বিশ্বাস আমার সব ধারনা সে মিথ্যে করে দেয় ।যে দিন শুনতে পেলাম তারা দুইজন বিয়ে করে নিয়েছে কাউকে না জানিয়ে । এতদিন সায়মা আমাকে যা বলছিল সব মিথ্যে। আর বাকি লোক গুলো যা বলেছিল সব ছিল সত্য । ওই ছেলেটার সাথে নাকি অনেক আগ থেকেই তার সম্পর্ক । সেই ছেলেটার জন্য , ওই একই স্কুলে সায়মা চাকরি নিয়েছে । যাতে করে সেই টিচারের সাথে সব সময় থাকতে পারে ।
প্রায় দুইটা বছরের মত তার সাথে আমার সম্পর্ক। তাকে আমার পরিবার আংটি পরিয়ে দিয়েছে । কথাবার্তা সব ফাইনাল করে ফেলেছে । তার সব দায়িত্ব আমি আমার করে নিলাম । দুইটা বছর তাকে ভালবেসে গেলাম তার সব ইচ্ছে পূরণ করলাম ।সেই মেয়েটা কি করে পারল আমার সাথে এমন বিশ্বাসঘাতকতা করতে আমার সাথে চিট করতে । তার বিয়ে হয়েছে এই কথা শোনার পর, আমি অনেক চেষ্টা করছি তার সাথে কথা বলার জন্য কিন্তু পারিনি, সে আমার ফোন রিসিভ করতো না । আমি যদি অন্য কারো মোবাইলে কল দিয়ে তার সাথে কথা বলতে চাইতাম । তখন আমার কন্ঠ শুনলে সেই লাইন কেটে দিত । বিয়ের পর আর কোনদিনই তার সাথে আমার কথা বলা হয়নি , বলতে পারিনি ।
তার সাথে সংসার করার যে স্বপ্নটা আমি দেখছিলাম। সায়মা আমার সে স্বপ্নটা ভেঙে দিয়ে , সেই স্কুল টিচার এর সাথে সংসার করার নতুন পথ বেছে নিল । সায়মা বিয়ে করে এখন সুখে শান্তিতে বসবাস করতেছে । আর আমি তার চাকরির জন্য মানুষের কাছ থেকে যে টাকা ধার নিয়েছি । সেগুলো এখনও শোধ দিয়ে চলছি । আমার পরিশ্রমের টাকা গিয়েছে তাতে আমার বিন্দুমাত্র কষ্ট নেই। কিন্তু যে মানুষটাকে এত ভালবাসলাম এতটা বিশ্বাস করলাম । সেই মানুষটা কি করে পারল আমার সাথে এত বড় বেইমানি করতে, বিশ্বাসঘাতকতা করতে, চিট করতে, আমি এটাই ভেবে পাচ্ছি না । ।
আমার জীবনের গল্পটা সবার সাথে শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে একটাই । আমি আমার মত সব ছেলেদের একটা কথাই বলতে চাই । কোন মেয়ের সাথে যদি আপনার ভালোবাসার সম্পর্ক থাকে বা কোন মেয়ের সাথে যদি আপনার এনগেজমেন্ট হয়ে যায় । তারপরও কখনো সেই মেয়ের দায়িত্ব আপনি নিবেন না । একমাত্র বিয়ের পর থেকেই একটা মেয়ের সব দায়িত্ব আপনি আপনার করে নিবেন ।কারন মেয়েরা আপনার পরিশ্রমের টাকার মূল্য দিবে না আপনার ভালোবাসার মূল্য দিবে না, কারণ এরা যে বড় স্বার্থবাদী । এরা শুধু নিজের স্বার্থটাই দেখবে । তার স্বার্থের জন্যই আপনার জীবনে আসবে ,যখন তার স্বার্থ পূরণ হয়ে যাবে । তখন আর আপনাকে তার প্রয়োজন বোধ হবে না । তখন আপনার কাছ থেকে সে দূরে সরে যাবে ।