জীবন তরী

জীবন তরী

তামিম একটা ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে। এই সময় তার মা তাকে বললেন ” তামিম মেঘাদের বাসায় এই ইফতার গুলো দিয়ে আয়। তামিম মনে মনে একটু খুশি হলো। মেঘা তামিমের দুই মাসের সিনিয়র। এর কারণে মেঘা এক ক্লাস উপরে পড়ে। তামিম মেঘাদের বাসায় গিয়ে প্রথমে মেঘা কে দেখতে পায়। মেঘা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বলছে না। তামিম কে খুব শাসন করে। তামিম মেঘাকে দেখলেই লজ্জায় লাল হয়ে যায়। পছন্দের মানুষের কাছে অবহেলা টা একটা মারাত্মক কষ্টের কারণ। মেঘা বলল ” কি রে তুই এই সময় আমাদের বাসায়? তামিম ইফতারের দিকে চেয়ে বলে ” মা এই গুলা দিতে বলছেন তাই আমি নিয়ে এসেছি। ” মেঘা ইফতার টা হাতে নিয়ে বলল ” ওয়াও কি মজার খাবার। যা আন্টিকে গিয়ে বলিস আমি খুব খুশি হয়েছি।”

” আপু তুমি আজ কলেজে যাও নি ? ”
” তুই জেনে কি করবি? বাসায় যা। এই কথা বলে মেঘা রান্নাঘরে চলে গেল। তামিমও চলে আসল।
” মেঘা আপু দাড়াও। ” এই কথা বলে তামিম মেঘার কাছে আসল। মেঘার কাছে এসে বলে ” চলো দু’জন এক সাথে কলেজে যাই। ”

” না। একসাথে কেন যাব? তুই যা। আমি তোর সাথে যাব না। ”
” আপু একটা রিক্সা ডাকি? ”
” তোকে আমি বলছি। তুই কেন আমাকে জ্বালাতে আসছিস। তুই যা তো। আমার বান্ধবী অনিকা আসবে। ”
” তুমি অনিকার সাথে কেন যাবে? অনিকা আমাকে দেখলেই বলে ” কি রে মেঘার আশিক। লজ্জাবোধ বলতে কিছু নাই। আমি তোমাকে ভালবাসি। এতে লজ্জার কি আছে। মেঘা রাগে লাল হয়ে গেল। মেঘা তামিমের দিকে রাগিভাবে থাকিয়ে বলে ” তোর লজ্জাবোধ বলতে কিছু আছে? মাথায় তো কিছু নাই। শুধু বাসায় বসে বসে খাস। এরপর আর কিছু নাই। তুই তো ঠিকমতো করে খেতেও পারিস না।

” হেহে। তুমি আছো না। ”
” বুঝতে পারছি। তুই যাবি না। আমাকে ওই যেতে হবে। ”

তারপর মেঘা ঠ্যাং ঠ্যাং করে চলে গেল। বাহিরে খুব বৃষ্টি। মেঘা একটা চাউনির তলে বসে আছে। এখানে অনেক ছেলে। হাসিতামাশা করতাছে। মেঘার খুব অসহ্য লাগতাছে। একেবারে অসহায় ভাবে সব শুনতাছে। তামিম ছিল রাস্তা ওইপাশে। আরেক টা ছাউনির তলে। তামিম মেঘা কে দেখতে পায় খুব চুপচাপ বসে আছে। তামিম ছাতা নিয়ে মেঘার কাছে আসে। মেঘা তামিমের দিকে চেয়ে আছে। তামিম বলে ” এই নেও ছাতা বাসায় যাও। মেঘা খুব খুশি হয়ে বলে ” এই একটা ভালো কাজ করলি। ” ছাতা নিয়ে মেঘা হাঁটছে। মেঘা এক সময় দেখতে পায় তামিম বৃষ্টিতে ভিজে হেঁটে হেঁটে আসছে। মেঘা দাড়িয়ে বলে ” বৃষ্টিতে ভিজে আসিস কেন? ”

” আমার ছাতা নেই। তাই ভিজে আসছি। ”
” ছাতার নিচে চলে আয়। কিন্তু কোনো কথা বলবি না একদম চুপ করে হাঁটবি। ”

তামিম চুপ করে হাঁটছে। মুচকি মুচকি হাসি দিচ্ছে। মেঘা গাল ফুলিয়ে বলে ” নে তোর ছাতা। আমাকে ছাতা দিয়ে একেবারে হিরু হয়ে গেছত। তামিম ছাতা টা মেঘার হাতে দিয়ে বলে ” হাসব না। এবার হাঁটো। তামিম মেঘা কে একদিন দেখতে পায় নি। তাই মেঘাদের বাসায় যায়। বাসায় গিয়ে জানতে পারে মেঘা অসুস্থ। তামিম মেঘার কাছে বসল । মেঘার কাছে বসে মেঘাকে দেখতে লাগল। মেঘার চেহারা মলিন হয়ে আছে। মেঘা তামিম কে দেখে বলতে লাগল ” তুই কেন এখানে এসেছিস? যা তুই যা। ”

” এভাবে বলছ কেন? আমি দেখতে কি একেবারে পঁচা? আমাকে দেখলেই রেগে যাও কেন? ”
” কারণ তুই সীমা অতিক্রম করে ফেলছিস। এরজন্য তোকে আমার সহ্য হয় না। ”

তামিম অসহায় ভাবে থাকিয়ে আছে। তামিম একটু লজ্জাবোধ করল। তামিম উঠে দাঁড়াল। তামিম পথ দিয়ে হাঁটছে। ভাবতে লাগল। মেঘা কে ভালবাসা তামিমের উচিৎ হয় নি। তামিম ভাবতে লাগল মেঘার কাছ থেকে দূরে চলে আসবে।

কয়েক দিন পর হঠাৎ মেঘা কে তামিম একটা রাস্তায় দেখতে পায়। তামিম নিজের কাছে নিজে লজ্জা পেল। তাই সে মেঘার কাছে যায় নি। মেঘা যখন একটা রিক্সায় উঠে তখন দেখতে পায় একটা চুর মেঘার ব্যাগ নিয়ে দৌড় দিচ্ছিল। তামিম এইটা দেখে চুরের পিছন দৌড় দেয়। চুর কে ধরে পেল। একটা থাপ্পড় দেয়। তারপর মেঘার কাছে এসে ব্যাগ টা হাতে দেয়। মেঘা ঠাস করে একটা থাপ্পড় দেয়। মেঘা বলতে শুরু করে ” তুই এইটা ইচ্ছা করে করেছিস । সে চুর না। তুই তাকে টাকা দিয়ে আমার ব্যাগ টা চুরি করতে বলছিস। তামিম গালে হাতে দিয়ে বলে ” সত্যিও না। আমি কিছু জানি না। ” চুপ। একদম চুপ। কোনো কথা বলবি না। ”

তামিম চুপ করে থাকে। কোনো কথা বলছে না। তামিম ভাবতে লাগল উপকার করতে এসে থাপ্পড় খেলাম। এরজন্য মানুষের উপকার করতে নেই। হাতে এতো শক্তি। গাল টা লাল করে দিল। হাত নয়তো যেমন লোহা। তামিম কলেজে যাওয়ার পর। কলেজ ক্যাম্পাসে বসে আছে। কত নিরিবিলি পরিবেশ। খুব ভালো লাগছে। কলেজ থেকে মেঘা আসল। তামিমের গাল টা দেখে মুচকি মুচকি হাসি দিতে লাগল। মেঘা তামিমের দিকে চেয়ে বলে ” খুব আঘাত পাইছত। আসলে ইচ্ছা করে মারে নি। সন্দেহ হয়েছিল। তাই থাপ্পড় টা মারছি। চল বাসায় যাই। ”

” ওমা তাই। চলো বাসায় যাই। ”

আজ মেঘার বিয়ে। এই খবর টা শুনে তামিমের একটু একটু কষ্ট হয়েছিল পরে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিল। মেঘা তার নয়। তাই সে মেঘা কে পায় নি। তামিমের মাথায় একটা কিছু আসছে না। কোনো অতিথি নেই। কে জামাই তার কিছু ওই জানে না। কিছু বুঝতে পারছে না। মেঘার কাছে তামিম বসে আছে। তামিম এক সময় বলে ” আচ্ছা আন্টি জামাই কোথায়? আন্টি মুচকি হাসি দিয়ে বলেন ” সেটা তোমার জানতে হবে না। তুমি চুপ করে বসে থাকো। একটু পর ঠিকি বুঝতে পারবে। ” তামিমের মা এসে তাকে বললেন ” বাবা আজ তোর বিয়ে। এই মেয়েটার তোর বউ হবে। ” তামিম লাফ দিয়ে উপরে উঠল। বিশ্বাস করতে পারল না। তামিম মেঘা কে বলে ” আমার হাতে একটা চিমটি দেও তো। ”

” কেন? ”
” দূর দেও তো। মেঘা দিতেই চিৎকার দিয়ে উঠে ।
” এতো জোরে কেউ কি চিমটি দেয়? ”
” তুমি ওই তো বললে তাই দিলাম। ”
” আমাকে তুমি করে বলা হচ্ছে। বাহ বাহ। ভালো। ” এরপর বিয়ে হয়ে যায়। আজ বিয়ের ১০ দিন হলো।
” ঘুম থেকে উঠবে নাকি পানি ঢেলে দিব। খুব ঘুম। কলেজে কে যাবে শুনি? ”
” আজ যাব না। ”
” কি বললে? মা ও মা তোমার ছেলে কে ঘুম থেকে তুলেন। নইলে আজ কিন্তু ভালো হবে না। ”
” আমাকে কি করতে হবে একটু ভালো করে ঘুমাতেও পারি না। তোমার সমস্যা কি? ” তামিমের মা আসলেন এসে বললেন ” তুই ঘুম থেকে উঠে কলেজে যাবি। তারপর আসার সময় বাজার করে নিয়ে আসবি। ”

” আমি পারব না। ”
” তুমি পারবে না। যাও তোমার খাবার আজ বন্ধ। ”
” ঠিক আছে দেও। যাচ্ছি। ” এরপর তামিম মন খারাপ করে কলেজে চলে গেল। তামিম পকেটে হাত দিয়ে দেখে টাকা নাই।

” একটু শুনছ? একটা কথা ছিল। ”
” তোমার মতো ফাজিল ছেলের কি কথা থাকতে পারে শুনি। ”
” আসলে হয়েছে কি আমার কিছু টাকা লাগবে বাবার কাছ থেকে এনে দেও না। ”
” আমি একটা জিনিষ বুঝলাম না। তোমার টাকা লাগবে তুমি আনবে। তুমি আমাকে টাকা আনার জন্য বাবার কাছে পাঠাচ্ছ কেন? ”

” সেটা তুমি বুঝবে না। যাও বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসো। আমার আদেশ। ”
” আমি পারব না। দরকার হলে তোমার টাকা তুমি নিয়ে আসো। ”
” যাও না গো। ”
” তোমার বাবা। তোমার টাকা দরকার। তুমি নিয়ে আসো।
” তাইলে তুমি কিসের জন্য? ”
” আমি কিসের জন্য? তোমার রান্নাবান্না কে করে দেয়? আমি করি দেই। ”
” আচ্ছা বাবা মানলাম। এবার আরেক টা কাজ করো। যাও বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসো। ”
” আনতাছি। ”

” বাবা। তোমার ছেলের কিছু টাকা দরকার। ”
” বউমা। তামিম কে ডাক দেও তো। ”
” জ্বী বাবা। বাবা আমাকে ডাক দিয়েছ?
” হয়। তোর নাকি টাকা দরকার? ”
” বাবা একটা শার্ট দরকার। নতুন শার্ট কিনব। ”
” বউমা একে নিয়ে যাও তো। কোনো টাকা দিব না। ”
” তুমি টাকা দিয়ে শার্ট কিনবে? লজ্জা করে না। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শার্ট কিনবে? ”
” দূর তুমি একটুও বুঝতে পার না। আসলে তোমার জন্য একটা শাড়ি কিনব। তাই মিথ্যা কথা বলছি। আমার কথা বলে তোমার জন্য শাড়ি কিনে আনব। ”
” সত্যি। মিথ্যা বলার কি আছে সত্য কথা বলবে। এই নেও ৫ হাজার। আমার জন্য শাড়ি কিনে বাকী টাকা তুমি শার্ট কিনে আনবে। ”

” ও বাবা। তুমি এতো ভালো। জানতাম না। ”
” এবার দেখবে আমি কত ভালো। যাও মার্কেটে যাও। ” মেঘা দূর দিয়ে এসে তামিম কে বলতে লাগল ” শাড়ি কোথায়? ” আসলে কি হয়েছে জানো? ”
” কি হয়েছে? ”
” বকা দিবে নাতো? ”
” ঠিক আছে। বলো বকা দিব না। ”
” রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি । এমন সময় দেখতে পেলাম। একজন মহিলা রাস্তায় দাড়িয়ে আছেন।

কান্নাকাটি করতে লাগলেন। আমি জিজ্ঞাস করলাম কান্না করেন কেন? তিনি বললেন আমার বাসায় খাবার নেই। আমার কাছে টাকাও নাই। আমার মেয়েটা কান্না করছে খাবার খাওয়ার জন্য। আমার মন টা খারাপ হয়ে যায়। চোখ থেকে এক ফুটা পানি পড়ল। আমি ইচ্ছা করে সব টাকা মহিলা কে দিয়ে দেই। তাই তোমার জন্য শাড়ি কিনে আনতে পারি নি। কিন্তু তোমার জন্য একটা পায়েল কিনে আনলাম।

” তুমি টাকা পেলে কোথায়? ”
” ঘড়ি টা বিক্রি দিয়েছি। ”

মেঘা কিছু বলল না। শুধু তামিমের দিকে চেয়ে রইল। একটা মুচকি হাসি দিল। সেহরির সময় হয়ে গেছে মা – বাবা কেউ উঠেন নি। তামিম মেঘা কে বলল ” কি হয়েছে ডাকছ কেন? ” ” তাড়াতাড়ি উঠো। আযান পড়ে যাবে। মাত্র ১০ মিনিট। ” মেঘা একটা দৌড় দিল। মা – বাবা কে তুলল। তামিম আজ খুব দায়িত্বশীল হয়ে উঠেছে। মেঘা ও মা- বাবা কে টেবিলে বসিয়ে সব খাবার টেবিলে আনতে শুরু করল। এসব করতে করতে আযান পড়তে শুরু করল। মেঘা ও মা – বাবা খুব অবাক হলেন এক সাথে বলে দিলেন ” তামিম আযান পড়ে তুই খেতে বসিস না কেন? ” মেঘা বলল ” তুমি খেতে বসো না কেন? ”

তামিম মুচকি হাসি দিয়ে এক ক্লাস পানি খাইল। তারপর বলল ” মা – বাবা তোমরা ঠিক মতো খাইলে ওই ভালো। আমি যদি খেতে বসতাম তাইলে তোমরা এসব আনতে আনতে পরে তোমরাও খেতে পারতে না। তাই আমি আনলাম। মেঘাও সারাদিন কষ্ট করে। তাই আমি তাকে বলে নি যে এসব খাবার আনতে। আমার একটুও কষ্ট হবে না। তোমাদের ভালবাসা আমার সাথে আছে। ” মেঘা এসে হাত টা ধরল। মা – বাবা গাল টা হাতিয়ে দিলেন। ” আমার ছেলে টা কত বড় হয়ে গেছে মা – বাবার খেয়াল করতে শিখে গেছে। ” এই কথা বলে তারা রুমে চলে গেলেন। মেঘা মুচকি হাসি দিয়ে এসব ঘুচাইতে লাগল। তামিমও একটু সাহায্য করল।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত