পরিবর্তন

পরিবর্তন

বিকালের দিকে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বাবা আমায় ডেকে বললো,

– কোথায় যাচ্ছিস? আমি বললাম,

— সারাদিন বাসায় বসে থেকে খুব একঘেয়েমি লাগছে। তাই একটু বাহির থেকে হেঁটে আসবো। বাবা খবরের কাগজ থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

– বালিশের নিচ থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা দে তো আমি বালিশের নিচ থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে বাবার হাতে দিতেই বাবা সেখান থেকে একটা সিগারেট বের করে আমার হাতে দিয়ে বললো,

-বাহিরে তো যাচ্ছিস চায়ের দোকানের পিছনে গিয়ে সিগারেট টানতে। তার চেয়ে বরং এই সিগারেটটা নিয়ে গিয়ে ছাদে গিয়ে খেয়ে আয়। বাহিরে যাওয়ার দরকার নেই। দেশের অবস্থা ভালো না আমি বাবাকে এই মুহূর্তে ঠিক কি বলবো বুঝতে পারছি না। তারমানে বাবা জেনে ফেলেছে আমি চুপিচুপি চায়ের দোকানের পিছনে গিয়ে সিগারেট খাই বাবার এইসব কথা শুনে আমি রেগে গিয়ে বাবাকে বললাম,

~ তোমার ছেলে সিগারেট খায়,তুমি তা জানো। তুমি তোমার ছেলেকে শাসন করবে; তা না করে তুমি আরো ছেলের হাতে সিগারেট দিচ্ছো খাওয়ার জন্য ? বাবা মা’র দিকে তাকিয়ে বললো,

-রেণু, তোমার ছেলে ক্লাস সেভেন/ এইটে পড়ে না যে বন্ধুদের সাথে ভুলে সিগারেট খেয়েছে দেখে ওকে আমার শাসন করতে হবে। তোমার ছেলে কলেজে পড়ে। এখন যদি তোমার ছেলেকে শাসন করি তাহলে তোমার ছেলে নিচে নেমে একটার জায়গায় ৩টা সিগারেট খেয়ে আমাকে গালি দিবে আর বলবে, ‘নিজে সিগারেট খায় এতে দোষ নেই, আর আমি খেলেই দোষ।’ আমি চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। এমনিতে বাবা আমার সাথে সব সময় বন্ধুর মত ব্যবহার করেছে। কিন্তু সিগারেটের বিষয়টা আমার কাছে কেমন যেন লাগছে বাবা আমার কাছে এসে আমার কাঁধে হাত রেখে বললো,

– সাকিব, আমি তোকে বলবো না তুই সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দে। কিন্তু আজ থেকে আমি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিলাম। আমি তোদের সাথে অনেক বছর বেঁচে থাকতে চাই  সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আমি সিগারেট হাতে নিয়ে ছাদের কার্ণিশে হেলান দিয়ে দূরের সুন্দর আবছা আলার প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে আছি। আজ যদি বাবা আমায় দুইটা থাপ্পড় মারতো তবুও এতটা খারাপ লাগতো না যতটা লাগলো বাবার কথা শুনে আমার এই মুহুর্তে লাগছে। এমন সময় বাবা ছাদে এসে বললো,

– তোর কি কষ্ট হচ্ছে? আমি কিছু না বলে চুপ হয়ে আছি। বাবা তখন হাসতে হাসতে বললো,

– খুব বেশি কষ্ট হলে নিকোটিনের ধোঁয়ার মত নিজের কষ্টটাকে আকাশে উড়িয়ে দিয়ে নিচে নেমে আয়। তোর মা আর বোন লুডু নিয়ে বসেছে। আজ বাপ বেটা মিলে ওদের মা বেটিকে হারাবোই বাবা নিচে নেমে গেলো। আমি সিগারেটে আগুন ধরলাম। খোলা আকাশের বুকে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে নিজেই নিজেত কাছে প্রতিজ্ঞা করলাম, আর জীবনে কখনো আমার ঠোঁট সিগারেটের স্বাদ নিবে না। এটাই আমার জীবনের শেষ সিগারেট খাওয়া। আমিও আমার পরিবারকে নিয়ে অনেক বছর বাঁচতে চাই শ্রাবণী কয়েকদিন ধরেই লক্ষ্য করছে ওর ছোটবোন অর্পিতার মাঝে কিছু পরিবর্তন এসেছে। কয়েকদিন আগেও অর্পিতা শ্রাবণীকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতো। সারাক্ষণ শ্রাবণীর পাশে ঘুরঘুর করতো। আর এখন অর্পিতা শ্রাবণীর থেকে একটু দূরে দূরে থাকে। সেদিন শ্রাবণী শুনে অর্পিতা মা’কে বলছে ওর আলাদা রুম লাগবে…

মাঝ রাতে শ্রাবণীর একটা অস্পষ্ট আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলো। পাশে ফিরে দেখে অর্পিতা নেই। অর্পিতা তখন বেলকণিতে দাঁড়িয়ে নিচু স্বরে কথা বলছে। শ্রাবণী আড়ালে দাঁড়িয়ে অর্পিতার সব কথা শুনলো। একটু পর খেয়াল করলো অর্পিতা ফোন দিয়ে বাথরুমে ঢুকলো। একটা অজানা ভয়ে শ্রাবণীর বুকটা কেঁপে উঠলো পরদিন সকালে শ্রাবণী অর্পিতাকে ডেকে বললো,

–অপু( শ্রাবণী অর্পিতাকে আদর করে অপু বলে ডাকে) তোকে পিয়াস আর আমার লাভ স্টোরিটা বলি? অর্পিতা খুব আগ্রহ নিয়ে বললো,

– হ্যাঁ বলো, আমি কতদিন ধরে জানতে চাইছি। তুমি তো বলোই না শ্রাবণী বলতে শুরু করলো,

— আমি তখন তখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারি পড়ি। যখন আমি কলেজ যেতাম তখন দেখতাম ছেলেটা আমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে আবার যখন কলেজ থেকে আসতাম তখনো দেখতাম ছেলেটা আমার জন্য দাঁড়িয়ে। ছেলেটা কখনোই আমায় ডিস্টার্ব করে নি এমন কি আমার সাথে কথাও বলে নি । শুধু আমাকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতো । আমার চোখের সামনে ফর্সা ছেলেটা আমার জন্য রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে কালো হয়ে গেলো। আমার খুব মায়া লাগতো ছেলেটাকে দেখে কিন্তু গাঁধাটা তো কখনো আমার সামনে কথা বলার সাহস পেতো না অর্পিতা অবাক হয়ে বললো,

-ছেলেটা কি কখনো তোমায় প্রপোজ করে নি? শ্রাবণী মুচকি হেসে বললো,

— হ্যাঁ করেছে। আমি যখন অনার্স থ্রার্ড ইয়ারে পড়ি তখন প্রপোজ করেছিলো। অর্পিতা অবাক হয়ে বললো,
– এত দিন অপেক্ষা করেছিলো? শ্রাবণী তখন অর্পিতার চোখে চোখ রেখে বললো,

— অপু, মানুষ যে জিনিস সহজে পেয়ে যায় সেটা মানুষ সহজে ভুলেও যায়। ভালোবাসার প্রথম শর্ত হলো ভালোবাসার মানুষকে সম্মান করা আর দ্বিতীয় শর্ত হলো ভালোবাসার মানুষের জন্য অপেক্ষা করা। তুই জানিস পিয়াস এখন পর্যন্ত আমার হাত ধরে নি। কখনো আমাকে খারাপ কিছু করার ইঙ্গিত দেয় নি। এমন কি মাঝ রাতে আমাকে কখনো ফোন দিয়ে উল্টো পাল্টা কিছু করতেও বলে নি। কারণ পিয়াস আমায় আর আমার ভালোবাসাটাকে অনেক সম্মান করে। আর এটাই হলো সত্যিকারের ভালোবাসা রাত ১টা বাজে। অর্পিতার ফোনে মামুনের এসএমএস আসলো, “বাবু, ওয়াসরুমে গিয়ে তোমার হট একটা পিক দাও না। আমার খুব ফিল হচ্ছে তোমাকে হট অবস্থায় দেখতে।” অর্পিতা খেয়াল করে দেখে ওর আপু ঘুমাচ্ছে। চুপিসারে অর্পিতা ওয়াসরুমে গেলো। ২০ মিনিট পর যখন অর্পিতা ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে আসলো তখন শ্রাবণী বললো,

–কি রে, এতক্ষণ ওয়াশরুমে কি করলি? অর্পিতা বিছানায় শুতে শুতে বললো,

– একটা জানোয়ারের বাচ্চাকে হট ছবি তুলে দিলাম তো তাই দেরি হলো। শ্রাবণী আমতা আমতা করে বললো,

— মানে? অর্পিতা বললো,
– আমার কাছে একজন হট ছবি চেয়েছিলো। তাই ওয়াসরুমে গেলাম। হট জিনিস ত্যাগ করলাম। আর ফ্ল্যাশ করে করে কয়েকটা ছবি তুলে জানোয়ারের বাচ্চাকে দিলাম অর্পিতার কথা শুনে যখন শ্রাবণী হাসছিলো তখন অর্পিতা শ্রাবণীকে জড়িয়ে ধরে বললো,

– আপু, পিয়াস ভাইয়ার মত আমার জীবনে ও কি কেউ একজনকি আসবে না? যে আমাকে ভুল পথে না নিয়ে গিয়ে সঠিক ভাবে ভালোবাসবে? শ্রাবণী মুচকি হেসে বললো,

— অবশ্যই আসবে পড়া চলাকালীন রাকিব ওর স্টুডেন্ট তন্ময়কে বললো,

— তোমার ফোনে এমবি আছে? তন্ময় বললো,
– জ্বি ভাইয়া আছে। রাকিব তন্ময়ের ফোনটা হাতে নিলো। গুগলে গিয়ে যখন একটা জিনিস সার্চ দিবে ঠিক তখনি খেয়াল করলো অপেরার পুরো হিস্টরি জুড়ে পর্ণসাইড ভিজিট করা। রাকিব কিছুক্ষণ চিন্তা করলো। তারপর ফোনটা রেখে তন্ময়কে বললো,

— আজ পড়তে হবে না। আজ তোমাকে আমার জীবনের একটা গল্প বলি। তন্ময় কিছুটা অবাক হয়ে বললো,
– জ্বি ভাইয়া বলেন। রাকিব বলতে শুধু করলো,

— তখন আমি তোমার মতই ক্লাস টেনে পড়ি। আমাদের সময় তোমাদের মত এত ফোন-টোন ছিলো না। আর ইন্টারনেট ব্যবহার করা দূরের কথা। এইসব বুঝতামি না । আমি অনেক কষ্টে মামার থেকে পুরোনো একটা ফোন নিয়েছিলাম। এই ফোন নেওয়ার পরেই আমার জীবনে অধ:পতন শুরু হয়। বন্ধুদের থেকে পর্ণ ভিডিও নিতাম আর রাতে পড়া বাদ দিয়ে এইসব দেখতাম। আর আস্তে আস্তে আমি এতটাই আসক্ত হয়ে গেলাম যে এটা থেকে বের হতেই পারছিলাম না। আমি সারাক্ষণ রুমে থাকতাম আর এইসব দেখার পর হস্তমৈথুন করতাম। এই হস্তমৈথুন আমাকে সাময়িক সুখ দিলেও পরবর্তীতে আমার খুব খারাপ লাগতো। খেলাধুলা করতাম না। সারাক্ষণ মেজাজ খারাপ থাকতো। পড়ায় মন বসত না। একদিন রাতে নিজের আপন চাচাতো বোনকে নিয়ে খারাপ স্বপ্ন দেখে ফেললাম। শুধু একটা ভয়ে সেদিনের পর থেকে এইসব ভিডিও দেখা বাদ দিলাম। আজ নিজের চাচাতো বোনকে নিয়ে দেখেছি কিন্তু কাল যদি নিজের রাকিব আর কিছু বলে নি। তাকিয়ে দেখে তন্ময় কানে হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। এমন সময় তন্ময়ের বড় বোন আমাকে নাস্তা দিতে আসলো। আর রাকিবকে বললো,

~আপনার স্টুডেন্ট খুব ফাঁকিবাজ। পড়াশুনা একদম করে না সারাক্ষণ শুধু মোবাইল টিপে বিকালের দিকে তন্ময়ের বন্ধু অভি তন্ময়কে ফোন দিয়ে বললো,

— আমার কাছে নতুন কালেকশন আছে। পুরাই এইচডি। তোর লাগবে না কি? তন্ময় বললো,
– না৷ আমার দরকার নেই। এখন ফোন রাখ আমি ক্রিকেট খেলছি…

সময় বদলে গেছে। আপনার বাবা আপনাকে যেভাবে শাসন করতো আপনি চাইলেও সেইরকম ভাবে আপনার সন্তানকে শাসন করতে পারবেন না। সিগারেট খেয়েছে দেখে সাকিবের বাবা যদি সাকিবের গায়ে হাত তুলতো তাহলে কিন্তু সাকিব সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিতো না বরং এটা বলতো বাবা যেহেতু জেনেই গেছে এখন থেকে বেশি করেই খাবো শ্রাবণী যদি ওর বোন অর্পিতাকে শাসন করতো। ওর থেকে ফোন কেড়ে নিতো তাহলেই কি অর্পিতা ওর ভুলটা বুঝতে পারতো? না পারতো না। দেখা যেতো অর্পিতা ফোনে কথা না বললেও মামুনের সাথে বন্ধুর বাসায় গিয়ে রুমডেট করছে…

রাকিব যদি ওর স্টুডেন্ট তন্ময়কে পর্ণ ভিডিও দেখেছে বলে বকাঝকা করতো তাহলে কিন্তু তন্ময় ঠিক হতো না। দেখা যেতো বিকালে তন্ময় আর ওর বন্ধুরা সবার আড়ালে পর্ণ ভিডিও আনা নেওয়া করছে অভিভাবকদের বুঝতে হবে, শাসন করে না বরং ভালোবেসেই সব পরিবর্তন করা সম্ভব…

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত