টাইম ট্রাভেলার

টাইম ট্রাভেলার

চীনের উহান শহরকে আজকে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আলো আর কুয়াশার আদলে ঢাকা উহান শহর।
আরেকটুপর ২০২০ নতুন বছর শুরু হবে। রাত এগারোটা বেজে চল্লিশ মিনিট। এই বরফ জমানো শীতে সাহেদ গরম সোয়েটার পড়ে রাস্তায় হাঁটছে। সাহেদ ওহানে মেডিকেলে পড়াশোনা করে। সাহেদ তার মামাকে ওহান এয়ারপোর্টে নিতে এসেছে। মামা গুয়াংজুতে থাকে।

হঠাৎ মামা ফোন করে জানালো আজকে অফিসের কিছু কাজ নিয়ে জামেলা হয়ে গেল তাই আসতে পারবেনা।
সাহেদ আবার হোস্টেলে ফিরে যাওয়ার জন্য রওনা দিল। বাসস্ট্যান্ডে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে সে। হঠাৎ তার পাশে একজন আগন্তক এসে দাঁড়ালো। বেশ লম্বা চওড়া, সুঠামদেহী, সুদর্শন একজন পুরুষ। যার পরনে কালো লম্বা জ্যাকেট যা হাঁটু পর্যন্ত নেমে এসেছে। লোকটার গতিবিধি বেশ চাঞ্চল্যকর। একটু অস্থির ভাব চেহেরায়। সাহেদের চোখে চোখ পড়তেই সাহেদ একটু মুখে হাসি রেখে মাথা নেড়ে বললো, ‘ হাই ‘! লোকটিও বিরক্তিকর চেহেরায় মাথা নাড়লো। বাস এসে থেমেছে! দুজনে বাসে উঠলো। বাসে এই মূহুর্তে তারা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই। বাস চলতে আরম্ভ করলো। হঠাৎ লোকটির পকেট থেকে একটা মহিলা কন্ঠে আওয়াজ আসলো, ” ডিভাইস এক্টিভেটেড “! লোকটি পকেট থেকে একটা বক্স বের করে সুইচ টিপ দিতেই বক্সটা ছোটখাটো ল্যাপটপের আকার ধারন করলো।

সাহেদ বেশ আগ্রহ নিয়ে দেখছে। এমন টেকনোলজি আগে কখনো দেখা হয়নি তার। লোকটা কি যেনো টাইপ করছে আর তা লোকেশন আকারে হলোগ্রাফিক স্ক্রিনের মতো ডিভাইসের উপরে শো করছে। তারপর লোকটি ডিভাইসের সাথে তার চোখের রেটিনা মিলাতেই বেশ বড় আকারে চার্ট চলে আসলো। এবার লোকটি আমার দিকে খেয়াল করে আবার হুট করে ডিভাইসটা অফ করে দিল। বাস থেকে নেমে একটু দ্রুত হাঁটতেই লোকটি কুয়াশার সাথে মিশে গেল।

কুয়াশার জন্য রাস্তা ক্লিয়ার না। রাস্তার সিগন্যালগুলোও বোঝা যাচ্ছে না। সাহেদ কোনরকম রাস্তাটা পার হওয়ার চেষ্টা করলো! হঠাৎ তার ডানপাশ থেকে দ্রুতগতিতে একটা কার ছুটে আসতে লাগলো। সাহেদ ভাবছে এবার বুঝি গেল। কিছু বুঝে উঠার আগেই কোথা থেকে যেনো একজন হাওয়ার মতো এসে তাকে ঝাপটিয়ে রাস্তার অপর পাশে নিয়ে আসলো। সাহেদ চোখ খুলে দেখে সেই আগন্তক লোকটি। লোকটি আবার চুপচাপ ভঙ্গিতে হাঁটা শুরু করলো।
সাহেদও উঠে তার পিছু পিছু হাঁটতে লাগলো, হে, ইউ সেইভ মাই লাইফ! থ্যাংকিউ! ওয়েলকাম! হো আর ইউ?

সে কিছু বললো না। চুপচাপ হাঁটতে লাগলো। কিছুক্ষণ উপরে তাকাচ্ছে আবার কিছুক্ষণ নিচে। বেশ অদ্ভুত গতিবিধি তার। সাহেদ আবার বললো, হে লিসেন! ক্যান ইউ হেয়ার মি? আই জাস্ট ওয়ানা থ্যাংকস টু ইউ! এন্ড টেল মি হো আর ইউ? লোকটি এবার থামলো! সাহেদের দিকে ফিরে তার গলার নিচে দুটো আঙ্গুল রেখে আবার সরিয়ে নিল। তারপর বললো, ওয়েলকাম! আমি ক্লিপটো টার্স! বাহ আপনি বাংলা জানেন? আপনাকে তো মোটেও বাঙালি মনে হচ্ছেনা। না এখন শিখলাম। এখন শিখলে মানে। এতো তাড়াতাড়ি?

ইয়েস! টার্স আবার হাঁটতে লাগলো। সাহেদ এখনো তার পিছু নিচ্ছে। লোকটা আবারও ফিরলো, তুমি হোস্টেলে ফিরে যাও সাহেদ। বাহ আপনি আমার নাম জানেন? সব জানি, ক্রোনোভাইজার দিয়ে সব রেকর্ড করা হয়ে গেছে। তুমি গত দুই বছর ধরে উহানে আছো। বাংলাদেশ ঢাকা মিরপুর বাড়ি। মামাকে নিতে আসছো। মামা গুয়াংজুতে থাকে। সাহের কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো তারপর বললো, তুমি কে বলো তো সত্যি করে? আমি বললে তুমি বিশ্বাস করবে না। আরে বিশ্বাস করবো। তুমি বলো শুধু। আমি ফিউচার থেকে এসেছি। আই এম এ টাইম ট্রাভেলার! আমি ৩০১২ থেকে এসেছি।

৩০১২! কি রসিকতা করছেন মশাই! এটাও কি সম্ভব? বলেছিলাম না। তুমি বিশ্বাস করবে না। আমি সত্যি ফিউচার থেকে এসেছি। ওএমজি! কিন্তু অতীতে কেন এসেছো? একটা সিক্রেট মিশনে এসেছি। বলা যাবেনা। প্লীজ আমাকে বলতে পারো। আমি তোমার খুব ভালো বন্ধু। সাহায্য ও করতে পারি তোমাকে। টার্স কিছুক্ষণ ভেবে বললো, আচ্ছা বলতে পারি, তুমি কাউকে কিছু বলবে না। একদম কিছুই না। আচ্ছা বলবো না! আমি একটা সিক্রেট মিশনে আছি। আমি ভবিষ্যত আমেরিকান এয়ারফোর্সের একজন রেগুলার পাইলট। ৩০১২ তে পৃথিবী পুরোটা ধ্বংসের পথে। পৃথিবীকে বাঁচাতে আমাকে অতীতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যতের সাথে অতীতের কি সম্পর্ক?

গভীর সম্পর্ক আছে। অতীতে নেয়া প্রতিটি স্টেপ সরাসরি ভবিষ্যতের উপর প্রভাব ফেলে। তুমি জেনে অবাক হবে, আর কিছুদিন পর উহানের এই জায়গা থেকে একটা ভাইরাসের সুত্রপাত ঘটবে। যা পুরো বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিবে। কোটি কোটি লোক মারা যাবে। একটা সময় ভাইরাস বন্ধ হয়ে গেলেও কিছুবছর পর আবার ভাইরাসটা জেগে উঠবে । তখনও অনেক মানুষ মারা যাবে। দুঃখের ব্যপার হল মানুষ এর কোন ম্যাসিভ ভ্যাকসিন বের করতে পারবেনা।
গ্লোবাল ওয়ার্মিং, গ্রীন হাউজ ড্যামেজ, এস্ট্রয়েট এট্যাক, নানারকম ভাইরাসের সংক্রমণ এসব মিলিয়ে ৩০১২ অনেকটা ধ্বংসের পথে। তাই অতীত থেকে তথ্য সংগ্রহ করে নিয়ে যেতে হবে। তুমি চাইলে তো অতীত চেন্জ করতে পারো? না এটা করা যাবেনা। এটা করলে প্যারাডক্স সৃষ্টি হবে তাহলে আমি আর ভবিষ্যতে ফিরে যেতে পারবো না। তাহলে উপায়?

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত