শেষ থেকে শুরু

শেষ থেকে শুরু

খাবার টেবিলে বসতেই মা বাবা আমার দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে নিজেদের খাবারের প্লেটটা মাটিতে ফেলে দিলেন এবং নিজের রুমে চলে গেলেন। এইটা নতুন কিছুই নয়। কয়েকদিন ধরেই এমনটা দেখছি। আমি নিজের প্লেটে খাবার নিয়ে খাওয়া শুরু করি এবং রহিমা খালা(কাজের বুয়া) কে ডাক দেই পরিষ্কার করতে। খাবার শেষে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পরি। আমি সব সময় মেনে চলি বাবা মাকে সম্মান করে চলা উচিত। কখনো তাদের মুখের উপর বলা উচিত নয়। তারা যেইটা ভালো মনে করেন ওইটা মেনে নেয়া উচিত।

কিন্তু আমি তা করতে পারিনি। কারন তারা একটা বড় ভুল করেছেন। এবং আমি সেটা মানতে পারিনি। কখনো তাদের বিপরিতে কথা বলবো আমি ভাবিনি৷ আর আমি আমার বাবা মাকে সবার সামনে বলেছিলাম তারা ভুল।তাদের এইটা করা অন্যায় ছিলো। আমি লন্ডনে পড়ালেখা করি৷ বাবা বড় ব্যবসায়ী। তাই টাকা নিয়ে কখনো ভাবতে হয়নি আমাদের। আমি যখন লন্ডনে ছিলাম নিজের দেশটাকে খুব মিস করতাম। দেখে এসে আমি বাবার সাহায্য নিয়ে নিজের একটা ছোট কম্পানি দিয়ে বসি৷ কিছুটা সময়েই যা দাড়িয়ে যায়৷

এর পর শুরু হয় বাবা মার চাপ। যেনো বিয়ে করি৷ আমার নাকি বিয়ের বয়স চলে যাচ্ছে৷ অনেকটা সময় পর রাজি হই৷ বাবা মা হাজারটা মেয়ের ছবি আর ডিটেলস আমাকে দেয়। আমি বলেছিলাম যে তাদের পছন্দ হলেই হলো। কিন্তু তারা বললেন আমার বিয়ে তাই আমি পছন্দ করতাম৷ তার পর তারা দেখবেন। উপায় না পেয়ে আমি কয়েকটা দেখি৷ একটা মেয়েকে খুব ভালো লাগে। দেখতে খুব সাধারন। আর ওতটা বড় ঘরের নয়। বাবা মাকে দেখালে তারা বলেন আর কোনোটা নয়? আমি বলি যে বিয়েতো একটাই করবো তাই একটাই পছন্দ করলাম। দেখ তোমাদের পছন্দ না হলে আমি বাদ দিবো৷
বাবা মায়ের চেহারা দেখে বুঝতে পারি হয়তো মেয়েটা তাদের ভালো লাগেনি।

দুদিন পর তারা মেয়ে দেখতে গেলেন। আমার খুব কাজ আমি তাই যেতে পারিনি। হঠাৎ কাজ পরে যায়। তাই তারা প্লেন কেন্সাল না করেই চলে যান। ফিরে এসে আমাকে জানান যে তাদের মেয়ে পছন্দ হয়েছে। তাদের মুখে দেখাই যাচ্ছিলো। কিন্তু হঠাৎ মত পালটানোর কারন আমি বুঝিনি। মা বলেছিলেন যে মেয়েটা বড় কোনো বাড়ির নয়৷ কিন্তু দেখতে খুব মিষ্টি আর তাদের পছন্দ হয়েছে৷ শুনে খুশি হলাম। তারা সব ঠিক করে এসেছেন৷ আমারতো আগেই পছন্দ ছিলো তাই বারন করার কারনটা আর নেই।

২ সপ্তাহ পর আমার বিয়ে। এর মাঝে কয়েকবার মেয়ের সাথে দেখা এবং কথা হয়। কিন্তু একবারো তাকে আমি খুশি দেখিনি। আমার দিকে তাকিয়ে তার মাঝে শ্রদ্ধা দেখিনি।ভেবেছিলাম হয়তো আমার মনের ভুল। দেখতে দেখতে বিয়ের দিনটা চলে আসে। বিয়ের দিন যখন কনের বাড়িতে যাই। আমাকে একটা রুমে বসতে দেয়া হয়। বাড়িতে সাজ দেখে বুঝাই যাচ্ছে না যে তারা আমাদের থেকে কিছু কম করেছে। কিন্তু তার পর যা হয় তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। একটু পর কনে মানে মাহি আমার রুমে আসে। বউ সাজে সেজে আছে। আমি ওকে দেখে অবাক। কারন এখনতো দেখা হওয়ার কথা না৷

আমিঃ তুমি এইখানে?

মাহিঃ আপনার সাথে কথা আছে৷ প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না।

আমিঃ হ্যা বস।

মাহিঃ আসলে কিভাবে বলি।

আমিঃ বল সমস্যা নেই।

মাহিঃ আসলে আমি চাইছিলাম আপনারা যদি যৌতুকটা না নিতেন৷নাহলে এই বিয়ের পর আমার বাবা মা সম্পূর্ণ পথে এসে যাবে৷ আমিতো শুনে অবাক। যৌতুক আবার কিসের। কি বলে ও।

আমিঃ যৌতুক?

মাহিঃ হ্যা। আপনার বাবা মা আসার পর আমাকে প্রথমে দেখেন এর পর আমার বাবা মার সাথে কথা বলেন। তারা যা যা চাইছিলেন সব আমার বাবা মা মেনে নেন আমার শুখের জন্য। আমি আরাল থেকে শুনে বাবা মাকে না করলেও তারা আমাকে বলেন তারা বাকি মেনেজ করতে পারবেন। আর এত বড় ঘরের সম্মন্ধ তারা ভাঙতে চাইছেন না। আমিতো কি বলবো ওর কথা শুনেতো আমি শেষ। আমিতো যৌতুকের কথা জীবনেও ভাবিনি। আর এইটা একটা সামাজিক অপরাধ। আমার বাবা মা এইটা করেছে শুনে আমি নিজেকে কানকেই বিশ্বাস করতে পারছি না। মাহি আমার সামনে হাত জোর করে দাড়িয়ে আছে। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আমার বা মাহির বাবা রুমে আসে। মা এসেই মাহির গালে একটা থাপ্পর মেরে বসে।

মা-বিয়ের আগেই মেয়ের এত লাই বেরে গেছে। বিয়ের পর জানি কি হয়। রিয়ান(আমার নাম) তুই এইটা নিজে ভাবিস না এইটা বড়দের মেটার। আমি মায়ের কথা শুনে অবাক। মাহির বাবা এইটা একটুও পছন্দ করেননি। মাহির বাবা-আপনি এইটা কি করলেন। আমার মেয়ের গায়ে আমরা কখনো হাত তুলিনি। আপনাদের বাড়িতে বিয়ে দিলে কি জানি করেন। দিবোনা বিয়ে আপনার বাড়িতে। আমি এইসব দেখে পুরো অবাক। এর মাঝেই বাবা এসে পরেন। মায়ের কথা শুনে সেও মাহির বাবাকে উলটা পালটা বলতে থাকেন। আর মাহি বাবাকে জরিয়ে ধরে কাদছে। আর আমি তাদের দিকে তাকিয়ে আছি।  আর সইতে না পেরে আমি চিতকার করে বলে উঠি- আপনারা প্লিজ থামুন। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।

আমিঃ মা এইটাকি সত্যি যে তোমরা যৌতুক চেয়েছো?

মাঃ আরে না তাকে বলেছিলাম যে কিছু বিষয়ে হেল্প করতে।

আমিঃ এইগুলা হেল্প? আর আমাদের কি কমতি আছে মা?

বাবাঃ দেখ তুই কিন্তু নিজের মায়ের সাথে উচু গলায় কথা বলছিস। বেয়াদবি করবিনা

আমিঃ মা বাবা আমি কখনো তোমাদের সাথে কিছু নিয়েই তর্ক করিনি। কিন্তু এইটা ভুল।

বাবাঃ এখন তুই আমাদের ঠিক ভুল শিক্ষা দিবি?

আমিঃ না বাবা তোমরা আমার বড় তোমরা আমার থেকে বেশি বুঝ যে কোনটা ভালো কোনটা খারাপ।কিন্তু এইটা ভুল। আমি একদমি এইটা মানতে পারবো না। আমি মাহির বাবার কাছে গিয়ে তার ধরে ক্ষমা চাই। সে কিছুই বলেননি। আরো বলি যে তার কথা রাখবো। আমরা এখনি চলে যাবো। আর প্লিজ আপনি ক্ষমা করবেন।আমি কখনো ভাবিনি আমার বাবা মা এমন করবেন। আপনি প্লিজ আপনার দিকটা দেখবেন। আমি সবাইকে বুঝিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷

মা- তুই আমাদের সম্মান এভাবে নষ্ট করবি?

আমিঃ না মা আনি করিনি তোমরা নিজেরাই করেছো। এর পর তাদের নিয়ে বাসায় চলে আসি৷ মা বাসায় এসে আমাকে একটা চর মারেন আর বলেন- তোর মত সন্তান আমি জন্ম না দিলেই ভালো হতো৷ এইভাবে কেউ সবার সামনে সম্মান নষ্ট করে৷তাদের জন্য আমাদের সাথে এমন ব্যবহার করল। নিজের বাবা মা থেকে অন্যের দাম বেরে গেলো। আমি কিছুই বলিনি। এর পর থেকে আর তারা আমার সাথে কথা বলেন না। আমিও তাদের রাগ আর ভাঙতে চাই না।

আজকে বাবা মা এসেছেন। আমি ভাবলাম হয়তো তারা মেনে গেছেন। কিন্তু না। বাবা এসে বললেন যে তারা আমাকে মাফ করবেন যদি আমি মাফ চাই আর তারা যেভাবে চান সেভাবে বিয়ে করি। কিন্তু আমিতো ভুল করিনি। আর তাদের ইচ্ছা মানে কি তাও জানি আর এইটা মানতে পারবো না।বাবা এইটাও বলেন যদি আমি না মানি তো আমাকে তার আর সন্তান হিসেবে মানবেন না। আমি হাসি দিয়ে দুইদিন পর নিজেই বাড়ি থেকে বের হই। একটা ছোট বাড়ি নেই। এত থেকেও বেশি সামর্থ ছিল। কিন্তু আমি চাইনি বড় বাড়ি। কারন আমি একা মানুষ। এর পর বাবা একদিন ফোন করে বলেছিলেন যেনো আসি। কিন্তু আর যাওয়া হয়নি। কারন তারা এইবারো বলেছিলেন তাদের কথা মেনে নিতে।

এখন প্রায় ৪ মাস কেটে গেছে। আজকে আমার ছোট ভাইয়ের বিয়ে। কিন্তু বাবা মা আমাকে বলেননি। ছোট ভাইয়া বাবা মার বিপরীতে বলেনি। আমাকে ফোন দিয়ে বলেছিলো যেনো আমি আসি বিয়েতে। কিন্তু ওকে বলেছিলাম যে তোর উপহারটা আমার কাছ থেকে একদিন এসে নিয়ে যাস। ওর সাথে আমার সম্পর্ক সব সময় ভালো। বাড়িতে কারো সাথে কথা না হলেও ওর সাথে হয়। এর পর ও বুঝতে পারে। তাই বলে বিয়ের পর ঠিকি বউ নিয়ে আসবে। ভাইটা আমার থেকে ৩ বছরের ছোট কিন্তু বাবা মা হয়তো রাগের মাথায় বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। ও বাবার সাথে কিছুটা সময় হলো সাহায্য করে। আমি জানি ও খুব ভালো ব্যবসায়ী হবে। অনেক মেহেনত করতে পারে।

আমি নিজের কাজের দিকে মন দিলাম। আজকে অফিসে কাজ একটু কম। আবার আজকে কয়েকটা নতুন জয়েন করেছেন। জয়েনের সময় ছিলাম না। তা কমিটি দেখেছে। আমি আমার চেম্বার থেকে বাহিরে তাকিয়ে আছি। আর দেখছি তাদের। কিন্তু একটা চেহারা আমাকে আটকে দেয়। সেই চেনা চেহারা। প্রথমে নিজেকে বিশ্বাস হয়নি। কিন্তু হ্যা এইটা মাহি ছিলো। কিন্তু ও এখানে। আমি কিছুই বুঝতে পারিনি। সে এসেই সবার সাথে হায় হ্যালো করছিলো। আমি আমার অফিসে দাড়িয়ে আছি চুপ চাপ। কি বলবো জানি না।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত