ম‌ণি

ম‌ণি

আজ‌কে পরীর একটা বাবু হ‌বে । পরী বা‌দে সবাই অখু‌শি । ডাক্তার কাগজপত্র সাইন করার জন্য পরীর স্বামী‌কে থুঁজ‌ছে ।

– আপনার হাজ‌বেন্ড?
– আসে‌নি । আমা‌কে দেন, আমি পেপার সাইন ক‌রে দি‌চ্ছি ।
– আপনার সা‌থে আর কেউ আসে‌নি?
– এসে‌ছে । আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এসে‌ছে,‌ছোট বোন এসে‌ছে ।
– প‌রিবা‌রের কেউ?
– এত প‌রিবার ,প‌রিবার কর‌ছেন কেন? দিন তো সাইন ক‌রে দি‌চ্ছি ।

ডাক্তার আর কিছু বল‌লো না । সাইন কর‌তে যে‌য়েই পরী ‘আ’ ক‌রে উঠ‌লো । তারপর নি‌জে নি‌জে বল‌লো “ আস্তে বাবা, আস্তে লা‌থি দাও । আস‌বেই তো,আর পে‌টে থাক‌তে ইচ্ছা কর‌ছে না,হুম? আর একটু অপেক্ষা ক‌রো,তারপর দেখ‌বে কত বা‌জে পৃ‌থিবী,তখন আবার কিন্তু পে‌টে ঢুক‌তে মন চা‌বে ।‘ নার্স পরী‌কে ড্রেস চেঞ্জ করা‌লো । ডাক্তার সব চেক ক‌রে পরী‌কে ওটির দি‌কে নি‌য়ে যা‌চ্ছে এমন সময় র‌ণি এসে দাঁড়া‌লো ।

– পরী?
– তু‌মি? তু‌মি কেন এসেছ? কিভা‌বে জান‌লে? নিশ্চই দীপা কল ক‌রে‌ছিল । বেয়াদব একটা ।
– পরী থাক না । আমি স‌রি,ভীষণ স‌রি ।আমি ওটি পর্যন্ত হাতটা ধ‌রে নি‌য়ে যাই?
– না ।

এমন সময় বাবুটা আবার তার মা‌য়ের পে‌টে একটা লা‌থি দিল ।পরী চ‌লে গেল,র‌ণি তা‌কি‌য়ে থাক‌লো। পরী আর ফি‌রেও তাকা‌লো না । র‌ণির পিছ‌নে দীপা এসে দাঁড়া‌লো । প্রায় আটমাস আগের ঘটনা,পরীর ‌বি‌য়ের একমাস হ‌য়ে‌ছে। প্রে‌মের বি‌য়ে,প‌রিবার‌কে বুঝা‌তে বুঝা‌তে অনেক দিন লে‌গে গেল, অনেক ঝুট ঝা‌মেলা ক‌রে অব‌শে‌ষে বি‌য়েটা হল । হল মা‌নে,হল কোনরকম । বি‌য়ে কর‌ে তো পরীর বিপদ হ‌য়ে গেল আরও। সংসার চাকরী সব একসা‌থে সামলা‌তে অস্থির । এই সময় এক‌দিন অফিস থে‌কে বাসায় ফি‌রে হঠাৎ জ্ঞান হা‌রি‌য়ে ফেল‌লো পরী । র‌ণিও বাসায় ছিল,‌দৌ‌ড়ে এসে ধরার আগেই পরী প‌রে গেল । ডাক্তা‌রের কা‌ছে যে‌তে যে‌তেই র‌ণির মন বল‌ছিল কিছু একটা হ‌য়ে‌ছে ।স‌ত্যিই তাই পরী প্রেগ‌নেন্ট । কি যে খু‌শি লাগ‌ছিল । প‌রিবা‌রের প্র‌তিটা মানুষ কত খু‌শি । এর দুই মাস প‌রেই ঝা‌মেলাটা শুরু হল,পরীর অবয়‌বে মাতৃ‌ত্বের ছাপ পড়‌লো । সবাই কেমন জা‌নি কানাঘুষা শুরু কর‌লো, “ এই তিন মা‌সেই এত বড় পেট কেন! পে‌টে কি বাচ্চা আছে,না‌কি হা‌তি!”

তারপর কিছু‌দির পর আবার ডাক্তা‌রের কা‌ছে যাওয়া হ‌লে ডাক্তার বল‌লো থা‌র্টিন সপ্তাহ চ‌লে । র‌ণি অবাক হ‌য়ে গেল,‌বি‌য়ে হ‌য়ে‌ছে তিনমাস। আর বাচ্চার জন্য চেষ্টা ক‌রে‌ছে তারও অনেক প‌রে । কিন্তু কিছু বল‌লো না পরী‌কে । যে‌হেতু সম্পর্ক আগে থে‌কেই ছিল তাই গুরত্ব দিল না । কিন্তু আশেপা‌শের লোকজ‌নের তো কথার শেষ নেই,‌বি‌শেষত র‌ণির প‌রিবার । প‌রিবার মা‌ঝে এমন এক বাঁধা হ‌য়ে দাঁড়া‌লো যে র‌ণিরও স‌ন্দেহ হ‌তে শুরু কর‌লো । সেই স‌ন্দেহ থে‌কে প্রায় দি‌নের ঝগড়া,তারপর পরী আলাদাই হ‌য়ে গেল,‌ছোট বো‌নের কা‌ছে চ‌লে গেল । কিন্তু এর মা‌ঝেও বাচ্চা না রাখার জন্য কত চাপ আস‌তে থাক‌লো । র‌ণিও অনেক দিন যোগা‌যোগ ক‌রে‌নি । কিন্তু যোগা‌যোগ খোঁজ খবর রাখ‌তো পরীর এক বন্ধু আসিফ । সেই ব্যাপারটা এক‌দিন র‌ণি বুঝ‌তে পা‌রে ।

তখন থে‌কে সে একদমই যোগা‌যোগ বন্ধ ক‌রে দেয় । ত‌বে আসিফ যোগা‌যোগ বন্ধ ক‌রে‌নি । আসিফ পরী‌কে পছন্দ কর‌তো,এটা র‌ণি খুব ভা‌লো ক‌রে বুঝ‌তে পার‌তো । এত কিছু জানার পরও সে ডে‌লিভা‌রি হ‌বে শু‌নে ছু‌টে এসে‌ছে । একটু পর নার্স একটা ফুটফু‌টে মে‌য়ে‌কে নি‌য়ে বের হল । দীপা দৌ‌ড়ে গি‌য়ে কো‌লে নিল । ‌কো‌লে নি‌য়ে সে অবাক হ‌য়ে তার দুলাভাই এর দি‌কে তা‌কি‌য়ে থাক‌লো । র‌ণিও মুখ শুকনা ক‌রে তা‌কি‌য়ে থাক‌লো । কিন্তু সে আর কা‌ছে যাওয়ার সাহস পা‌চ্ছে না । এর মা‌ঝে আসিফ চ‌লে এল । এসেই সে ছোঁ মে‌রে বাচ্চা‌কে কো‌লে নিল । র‌ণি একটু একটু ক‌রে পি‌ছে পি‌ছিয়ে গেল । কিন্তু একটাবার তার পরী‌কে দে‌খে যে‌তে মন চাইছে । দীপা বল‌লো

– কি দুলাভাই যা‌চ্ছেন না যে এখনও?
– হুম। একটু পরী‌কে দে‌খে যাই?
– যা‌বেন । পরী তো এখা‌নেই,‌ছোট পরী‌কেই দে‌খেন বড় পরী দেখা হ‌য়ে যা‌বে ।

সাহস ক‌রে একটু এই পরী‌কে দে‌খেন ।
ছোট্ট পরী তখনও আসি‌ফের কো‌লে । দে‌খেই র‌ণির চোখ কপা‌লে উঠে গেল । বাচ্চাটা মিট মিট ক‌রে নতুন আলো দেখ‌ছে তার চোখ মে‌লে,আবার র‌ণি‌কেও দেখ‌ছে । র‌ণির এবার বুক ফে‌টে কান্না পেল,বাচ্চাটার চো‌খের ম‌ণিগু‌লো যে র‌ণির মতই হালকা নীল নীল হ‌য়ে‌ছে । আর এর জন্যই এত অব‌হেলা,অশা‌ন্তি হ‌চ্ছিল,যা‌কে মে‌রে ফেল‌তে চে‌য়ে‌ছিল তার বাবা ই ।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত