আজ শুক্রবার। আমি ভুল করে আজ টিউশনে চলে গেলাম। শুক্রবার ছুটির দিন তাই আজ ছাত্রী নানু বাড়ি বেড়াতে গেছে। কিন্তু আন্টি বলল, আজ বিরিয়ানি রান্না করছে আমাকে কিছুক্ষন বসতে। আমি যদিও না না করছিলাম পরে আন্টির জোরাজুরিতে বসতে বাধ্য হলাম। বিরিয়ানি বলে কথা। টেবিলে বসতে গিয়ে হঠাৎ একটা ডায়েরী চোখে পড়ল। ডায়েরীর উপরে নাম লিখা তানজিম তামান্না। অবাক করার বিষয় হলো আমার ক্লাস এইটে পড়ুয়া স্টুডেন্ট ডায়েরী লিখে আর আমি ক্লাস এইটে থাকতে বাড়ির কাজ না করার জন্য স্যারের হাতে কান মলা খেতাম।
কৌতুহল বশত খুলে দেখলাম কি লিখছে ভিতরে। আশাহত হলাম দেখি কিছু লেখা নেই। কয়েক পেজ যেতে লেখা দেখতে পেলাম। তাহার লেখা দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছ। যা লিখছে সব আমাকে নিয়া লেখা। সে যেভাবে লিখছে সেভাবে লেখার চেষ্টা করছি। গুটিগুটি হাতের লেখা- আমার স্যারের নাম মিরাজ আহমেদ পাবেল।সবসময় ফুলহাতা শার্ট, আর চোখে চশমা। সহজ, সরল চেহারা কিন্তু হাসি খুশি প্রাণবন্ত একজন সুখী মানুষ। স্যার খুব গল্প প্রেমী।যে দিন গল্প শুরু করতেন, সে দিন আর পড়াতো না। আমি খুব মনোযোগ দিয়ে স্যারের গল্প শুনি অথচ পড়াতেও অতটা মনোযোগ দেই না।
স্যার খুব হাসির গল্প বলতো, একদিন স্যার বলল কোনো ক্লাসে নাকি অংকে শূন্য পেয়েছে। এজন্য স্যার বেঞ্চের উপর কান ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। একথা শুনে আমি হাসতে হাসতে শেষ। আর আমি অংক না পারলে খালি বকা দেয়। স্যাররে কেমনে বুঝাই অংক আমার ভাল্লাগে না। স্যার খুবই রুচিশীল মানুষ, কখনো অভদ্র আচরণ করতেন না। শুধু আমি দুষ্টুমি করলে স্যার আমার গাল টেনে দিতো, আমার কি যে ভালো লাগতো ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
স্যার যাতে গাল টেনে দেয় এজন্য আমি ইচ্ছে করেই বেশী দুষ্টুমি করতাম। ঠিক তখনই স্যার হুংকার ছেড়ে বলতো- এই পিচ্ছি বেয়াদব। দুষ্টুমি করলে একদম কানের নিছে দিবো একটা। [আমিও বললাম: দেন না দেখি আপনার কতো সাহস। এতো বড় হলাম এখনো বলে আমি নাকি পিচ্ছি।] (মনে মনে) একটু এদিক সেদিক হলে স্যার একটা কথা বলেই বকা দেন আর সেটা হলো পিচ্ছি বেয়াদব। এটা একটা জাতীয় ডায়ালগ। মনে হয় সব স্টুডেন্ট দের এটা বলে বকা দেন।
স্যার বলল- আজ মেয়ে না হলে তোমাকে ১ঘন্টা মুরগী বানিয়ে রাখতাম। আর যদি পড়ার মাঝে একটা দুষ্টুমি করো তাহলে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখবো। স্যার দেখতে ভদ্র হলেও ভিতরে ভিতরে একটা বদের হাড্ডি। শুধু ধমক দেয়। উঁহু আবার বলে আমাকে নাকি মুরগী বানাবে। দরকার হলে আর পড়বোই না তবুও স্যারের সামনে কখনোই মুরগী হবো না। যদিও স্যারের উপর আমি একটু রাগ অভিমান করি কিন্তু একদিন স্যার না আসলে আমার একটু পড়তে ইচ্ছে করে না। যতই দিন যায় স্যারের প্রতি আমার আর্কষণ ততই বাড়তে থাকে। একদিন ভাবছিলাম স্যার কে জিজ্ঞাস করবো, স্যার কোনো রিলেশন করে কিনা। কিন্তু স্যারের সামনে আসলে ভয়ে সব ভুলে যায়। সেদিন স্যারকে নিয়ে একটা কবিতা লিখলাম।
প্রিয় স্যার,
তোমায় খুঁজি আমার পড়ার টেবিলে। তোমায় এঁকেছি আমার হৃদয়ের ক্যানভাসে। তোমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখি রোজ সকালে। তোমার ছবি সাজিয়েছি আমার মনের পিঞ্জরে। তোমায় নিয়ে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে ঐ দূর নীল আকাশে। কি এমন ক্ষতি হয় আমায় একটু ভালোবাসলে। এতোটুকু পড়ার পর আমার মাথা ভোঁ ভোঁ করে ঘুরছে। বাকিটুকু পড়ার সাহস পায় নি। মনে হচ্ছে সেন্সলেস হয়ে পড়ে যাবো। এর পর আমার কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরার পর নিজেকে আবিষ্কার করলাম বাসায়।
আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না, এতোটুকু পুচকে মেয়ে প্রেমের কবিতা লিখে আর আমি তখন ক্রিকেট মাঠে ম্যাচ জিতাছে ব্যস্ত। প্রতিটি মেয়ে মনে হয় তার স্যার কে নিয়ে তার অন্তরালে এতো কিছু কল্পনা করে যেটা আমার বোধগম্য নহে। কারণ আমি স্কুল জীবনে প্রেম কি সেটাই বুঝতাম না। সিনামাতে দেখতাম নায়ক নায়িকাকে প্রপোজ করে জড়িয়ে ধরলে প্রেম হয়। আর বাস্তবে তার পুরো বিপরীত। এই ডায়েরীটা যদি আমার গার্লফ্রেন্ড তরী পড়তো তাহলে আমাকে কেটে টুকরো টুকরো করে আকাশে ঝুলাই রাখতো।
সঙ্গত কারণে কিছুদিন পরে টিউশনিটা ছেড়ে দিলাম। না হলে পরবর্তী অনেক সমস্যা হতো। ভাগ্যিস ডায়েরি টা আগেই পড়ে ছিলাম। নাকে খড় দিয়ে শপথ করলাম- এ জীবনে আর কোনো দিন মেয়ে টিউশনি করাবো না। ইসসসসস একটা কথা লিখতে ভুলে গেছি, ডায়েরীর প্রথম পেজে বড় বড় করে লেখা ছিলো। “বিনা অনুমতিতে কারো ডায়েরি পড়া দন্ডনীয় অপরাদ। যদি কেউ আইন অমান্য করে তাহলে তাহার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড”।