“যেভাবে করোনা ভাইরাসকে হারিয়ে দিল বাংলাদেশ” করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশ শুরু থেকেই সাফল্য দেখিয়ে আসছে। কোয়ারেন্টাইন, লক ডাউন, আইসোলেশন ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করেই ভাইরাস অর্ধেক শেষ করে ফেলেছে। এ সাফল্যের মিডিয়া পার্টনার হিসেবে আছে প্রথম আলো। তাঁরা সারা বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের পরিস্থিতির তুলনামূলক লাইভ আপডেটের ব্যবস্থা করেছে। সারাবিশ্বে আক্রান্ত ৪,২৮,৪০৫ জন, এদিকে বাংলাদেশে মাত্র ৩৯ জন। অস্থির সাফল্য। সারাবিশ্বে মারা গিয়েছে ১৯,১২০ জন, বাংলাদেশে মারা গেছে মাত্র ৫ জন। পুরাই মাথা নষ্ট। এমন একটি সত্যবাদী মিডিয়া থাকলে মিথ্যা ছড়ানোর জন্য আর কিছু দরকারই হয় না।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা (প্রথম আলো অনুযায়ী) একেবারেই নগণ্য হলেও দেশের পরিস্থিতি তা বলছে না। চারদিকে থমথমে। অফিস, আদালত, স্কুল, কলেজ সব বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। এত নগণ্য সংখ্যার পরও যখন সব বন্ধ ঘোষনা করে আয়োজন করে সতর্কতা নেয়া হয় তখন সত্যিকার সংখ্যাটা নিয়ে মানুষের মনে বিভ্রান্তি থাকাই স্বাভাবিক।
জাতি যখন দিশেহারা তখনই একজন যোগ্য কান্ডারী হয়ে এলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আসন্ন স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে তিনি জাতির উদ্দেশ্যে দিলেন এক দিক-নির্দেশনামূলক ভাষণ। ধর্ম বর্ণ ভুলে একযোগে কাজ করতে হবে। বিএনপি আর জাতীয় পার্টি বলে আজ কোন বিভেদ নেই, প্রয়োজনে হরকাতুল জিহাদ এবং জামাত-নেজামে পার্টিও আসতে পারে। তবে জাসদ আনা যাবে না। এরা ঘাতক। সবাইকে ঘরে থাকতে হবে। প্রয়োজনে খাটের নিচে ঢুকে যেতে হবে। আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তো থাকবেই।
প্রধানমন্ত্রী অতীতেও দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে দেশকে খাদের কিনার থেকে তুলে এনেছেন। বাংলাদেশে এক সময় গণতন্ত্র যায় যায় অবস্থা। জিয়াউর রহমান ৫০% শেষ করে দিয়েছেন। এরশাদ দিলেন আরো ৪০%। অতঃপর প্রধানমন্ত্রী খাদের কিনার থেকে তুলে আনলেন পুরো জিনিসটি। যদিও তুলে আনার সময় অতিরিক্ত চাপে গণতন্ত্রের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেশিরভাগই গুড়া হয়ে গেছে। আজও ঠিক একইভাবে জাতির ক্রান্তিলগ্নে জাতিকে উদ্ধার করলেন দিক-নির্দেশনা দিয়ে।
দেশে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। করোনা ভাইরাস কোন প্রকার নাশকতার চেষ্টা করলে সেনাবাহিনি ট্যাংক, মর্টার ব্যবহার করার সকল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। রাস্তায় কাউকে ঘুরঘুর করতে দেখলে আর্মিরা তাদের ধরে নিয়ে কানে ধরে উঠবস করিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে। মানুষ এতে বেশ মজা পাচ্ছে। আমাকে একজন জানালেন, তিনি এইমাত্র কান ধরে উঠবস করে এলেন। পুরো ব্যাপারটি বেশ নাকি আনন্দের। প্রথমে লাইন ধরানো হয়। এরপর একজন একজন করে উঠবস। সেনাবাহিনি নাকি জানিয়েছে আরেকবার রাস্তায় দেখলে কাপড়-চোপড় খুলে ছেড়ে দেয়া হবে। এই ঘটনায়ও ভদ্রলোক দারুণ খুশি। আমি তাঁর কাছে খুশির কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, একই শাস্তি তো মেয়েদের জন্যও হবে। হেভী মজা।
আমি বললাম, তা তো বটেই। বাঙালি মজা খোঁজার এক অলৌকিক ক্ষমতা নিয়েই জন্মায়। আকাশে মজা, বাতাসে মজা, বাঁচলে মজা, মরলেও মজা।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশ যখন অভাবনীয় সাফল্যের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ঠিক এই সময়ে জেল থেকে মুক্তি পেলেন ‘গণতন্ত্রের মা’ বেগম খালেদা জিয়া। মাদার অফ হিউম্যানিটি আর মাদার অফ ডেমোক্রেসি দুইজনকে একসাথে দেখে করোনা ভাইরাস কিছুটা ভড়কে যেতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
বিএনপি জানিয়েছে, এটি বিএনপির রাজপথের কঠোর আন্দোলনের ফসল। তবে অনেকেই বলছে এটি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ফসল। কারণ বিএনপি কোন আন্দোলনই করেনি। দলটি ‘ঈদের পরে’ ছাড়া আন্দোলন করতে অক্ষম।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কিছু কোয়ারেন্টাইন সেন্টার খোলা হয়েছে। সেগুলোর অবস্থা দেখে সেখান থেকে সবাই পালাচ্ছে। পালানোর সময় লাইট, ফ্যান এবং টয়লেটের বদনাগুলো নিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ টয়লেটে রাখা ‘বাংলা টিস্যু’র বান্ডিল খুলেও নিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিদিন রাতেরবেলা হেলিকপ্টার দিয়ে এক কাল্পনিক ওষুধ ছিটানো হচ্ছে পুরো দেশে। সেই জীবনরক্ষাকারী ওষুধটি আকাশে ছিটিয়ে কী লাভ তা জানা যায় নি। গবেষনা বলছে করোনা মহাকাশে এখনও বিস্তার লাভ করেনি।
বাংলাদেশের মানুষ যে কতটা ধর্মপ্রাণ তা করোনা না এলে অজানাই থেকে যেত। তাঁরা ইনবক্সে চব্বিশ ঘন্টা অন্যকে সুরা, দোয়া ইত্যাদি পাঠাচ্ছে ফরোয়ার্ড করে। যে পাচ্ছে সে আবার দ্রুত আরেকজনকে ফরোয়ার্ড করে দিচ্ছে। সবাই ধরে নিচ্ছে আরেকজন ইবাদত করে দুনিয়াকে রক্ষা করবে। আর দুনিয়া রক্ষা পেয়ে গেলে আমি নিজে তো রক্ষা পাচ্ছিই। কারণ আমিও দুনিয়ার ভেতরেই আছি। এটা কোন কঠিন হিসাব না। এটা অতি সরল হিসাব।
নানান ধরনের কায়দা কানুন করে করোনাকে যখন কব্জায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে তখনই বের হলেন এক সূফী সাধক। নাম তাঁর ইব্রাহীম, তবে মেডিকেল সায়েন্সে তাকে ডাকা হয় ‘দ্যা গ্রেট ইব্রাহিম সিনা’ বলে। তিনি স্বপ্নে পেয়েছেন এক অলৌকিক চিকিৎসা। তিন পিস থানকুনি পাতা ব্লেন্ডার দিয়ে জুশ করে খেলে করোনা নিপাত হয় মাত্র পৌনে তিন মিনিটে। যুগান্তকারী এ আবিষ্কার চিকিৎসাশাস্ত্রকে দিয়েছে প্রবল ঝাঁকুনি।
বাংলাদেশের এতবড় আবিষ্কার দেখে বসে নেই প্রতিবেশি দেশ ভারত। সেখানেও এক গুরুদেব দেখে বসেছেন আরেক অলৌকিক স্বপ্ন। বাতলে দিয়েছেন করোনা থেকে বাঁচার অভিনব ফর্মুলা। মাম পানির বোতলে এক লিটার গো-মূত্র সেবনই মানবজাতিকে বাঁচাতে পারে এই অভিশাপ থেকে। এরপর থেকেই সবাই লাইন দিয়ে লিটারে লিটারে গো-মূত্র কিনছে। মহামতী নরেদ্র মোদি এবং অমিত শাহও এক বোতল করে কিনে ফ্রিজে রেখেছেন বলে জানিয়েছে দ্যা হিন্দুস্তান টাইমস।
‘মানসিকতা’ উন্নত বিশ্ব আর তৃতীয় বিশ্বে বোধহয় পার্থক্য এই এক জায়গাতেই। আমরা আতঙ্কের অভিনয় করে আনন্দ পাই। আনন্দ যে পাচ্ছি সেটা প্রকাশ পায় সমাধান খোঁজার উছিলায় আমাদের নাটকীয় কার্যাবলীতে। উন্নত বিশ্ব করছে গবেষণা। আমরা হাত গুটিয়ে বসে সেদিকে তাকিয়ে আছি। তাঁরা যেই ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করে ফেলবে আমরা চিৎকার করে সফলতার ঘোষনা দেব।