ভালো দিনের স্বপ্ন

ভালো দিনের স্বপ্ন

মোবাইলে একটা SMS এলো। তাকিয়ে দেখি “সরকারের তরফ থেকে আমার এ্যাকাউন্টে ৫০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে” আমার মন খুশিতে ভরে গেল। ঘর থেকে বের হলাম আর চিৎকার করে বাড়ির সবাইকে বলছি “সবাই শোনো, দিন বদলে গেছে, আমার এ্যাকাউন্টে ৫০ লাখ টাকা এসে গেছে” ঘর থেকে মা বেড়িয়ে বলল, “অত খুশির কি আছে, আমার এ্যাকাউন্টেও ৫০ লাখ টাকা দিয়েছে। এই যে মেসেজ দেখ।একটু অবাক হলাম, ভাবলাম পাড়ার সবাইকে গিয়ে বলি। পাড়ার লোক আমায় বলছে, “বেশি উত্তেজিত হোস না, আমাদের এ্যাকাউন্টেও ৫০ লাখ জমা হয়েছে। আমার খুশি সব উড়ে গেল। ভাবলাম যাই, বাজার থেকে কিছু মিষ্টি নিয়ে আসি। বাজারে গিয়ে দেখলাম, দোকান বন্ধ। পাশের একজনকে জিগ্গাস করলাম, “ও দাদা এই মিষ্টির দোকান বন্ধ কেন?” সে বললো, “মিষ্টি দোকানদারের আর দোকানদারি করার কি দরকার। তার এ্যাকাউন্টে ৫০ লাখ এসে গেছে।”

ভাবলাম একটু নিউ মার্কেটে যাই, সেখান থেকে কিছু নিয়ে আসি। সেকি! কোনো দোকান পাট খোলা নেই। ওনাদের এ্যাকাউন্টেও নাকি ৫০ লাখ এসে গেছে। প্রচন্ড খিদে পেয়েছে ভাবলাম এখানে তো দোকান পাট বন্ধ। সামনের দিকে যাই, ভালো কোন হোটেলে তৃপ্তি করে খাওয়া যাবে। সামনে যতই যাই সবই দেখি ফাকা। হোটেলের বাইরে দাড়িয়ে থাকা স্বাগত জানানোর সেই লোকও নেই, যে কাস্টমার দেখলেই সালাম ঠুকে ওয়েলকাম করেন, শপিং মলের সিকিউরিটিও নেই। সবার এ্যাকাউন্টেই ৫০ লাখ এসে গেছে। মার্কেটে কেউ নেই।

সবজি ওয়ালা, চা ওয়ালা, সরবত ওয়ালা ফাস্টফুড ওয়ালা কেউ নেই। সব কিছুই বন্ধ। সকলের ঠিকানা এখন ব্যাঙ্কে ৫০ লাখ তোলার জন্যে। কেননা এখন আর কারো কাজ করার দরকার নেই, সবার কাছেই ৫০ লাখ আছে। আমার এক বন্ধু ফোন করে বলল, “আমি জব ছেড়ে দিয়েছি, আমার এ্যাকাউন্টে ৫০ লাখ আছে” আমার এক দাদা ফোন করে বলল, “আমার আর্ট স্কুল অফ করে দিয়েছি”

“আমার ছোট বোন আর স্কুলে যাচ্ছে না”
“আমার এক বন্ধু টিউশন পড়ানো বন্ধ করে দিয়েছে”
“যোতিশী ১০০ টাকার বিনিময়ে আর হস্ত রেখা দেখে না”
“লিপা নামের মেয়েটিও আর কলেজে যায় না”
“নিশাত আর জব খু্ঁজে না”
‘শ্রমিকরা আর কারখানায় যায় না, কলকারখানা সব বন্ধ”

সবার এ্যাকাউন্টে ৫০ লাখ জমা আছে। সবাই বড়লোক। সবাই সুর তুলছে, গান করছে, নৃত্য করছে “আচ্ছি দিন আগায়া, আচ্ছি দিন আগায়া।

বিকেলে মাঠের দিকে গেলাম, কৃষকরা সবাই কাজ ছেড়ে বাড়িতে। কেউ নেই জমিতে। এখন তাদের রোদে জ্বলে পুরে ভিজে আর কাজ করার আর দরকার নেই। তারা সবাই বড়লোক হয়ে গেছে। সবার এ্যাকাউন্টেই ৫০ লাখ। হাসপাতালে ডাক্তাররা বসে তাস খেলছেন। তারা আর চিকিৎসা করবে না। সারা জীবনের জন্যে, ৫০ লাখই যথেষ্ট।

৭ দিন পর দেখা গেল খিদের জ্বালায় লোক কাঁদছে। কেননা, জমি থেকে কেউ ফসল তুলছে না, সমস্ত দোকানপাট বন্ধ, হোটেল, মেডিক্যাল সব বন্ধ। অসুস্থ্য হয়ে মানুষ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কেননা, খাবার নেই, ডাক্তার নেই। পশুরাও না খেতে পেয়ে মরছে। জমিতে সবুজ ঘাস নেই, সোনালী ফসল নেই। শিশুরা খিদের জ্বালায় কাঁদছে, গোয়ালা দুধ দিচ্ছে না বলে। মানুষ এখন ছুটছে মুঠো মুঠো টাকা নিয়ে। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে পকেটে টাকা নিয়ে। কাঁদছে মানুষ লক্ষ টাকা হাতে নিয়ে আর বলছে, “এই ভাই নাও ১০ হাজার, 100 গ্রাম দুধ দাও।দুদিন বাচ্ছাটা নাখেয়ে আছে।

১০ দিন বাদে মানুষ না খেতে পেয়ে মরছে। কিছু লোক টাকার ব্যাগ নিয়ে ঘুরছে রাস্তায়। এই নাও ভাই ৫ লাখ টাকা, “আমাকে ৫ কেজি চাল দাও। ১০ দিন থেকে না খেয়ে আছি।” সব বাজার ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। শাক সবজি খাবার দাবার কারো কাছেই নেই। সবদিকে শুধু মৃত্যুর ছবি দেখা যাচ্ছে। আমিও আমার ৫০ লাখ টাকা নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছি, “নাও ভাই নাও ৫০ লাখ নিয়ে নাও, তবুও কিছু খাবার দাও” কে কার টাকা নেবে, তবুও খাবার নেই। মানুষ মানুষের দিখে তেরে আসছে হিংস্র সিংহের মত। মনে হচ্ছে, মানুষ মানুষকে খাবে।

অচেনা একলোক তাড়া করছে, আমাকে চিবিয়ে খাবে বলে। ছুটছি আমি। ক্ষুধার্ত মানুষ কতটা আর ছুটবে? পরে গেলাম হোঁচট খেয়ে. ..মা মা করে চিৎকার করে উঠলাম পাশের রুম থেকে মা ছুটে এসে বলছে, “কিরে কি হলো? সকাল হয়ে গেছে, ঘুম থেকে উঠ, চোখে মুখে জল দিয়ে আয়। বাচাঁও বাঁচাও বলে চেচাচ্ছিলি কেন? কোন খারাপ স্বপ্ন দেখছিলি?” আমি বললাম, “না মা, খারাপ নয়, ভালো দিনের স্বপ্ন” এর থেকে অনেক ভালো, খারাপ দিন গুলো। গরিব আমরা, কিন্তু ঘরে

“দুমুঠো খাবার তো আছে”
“তৃষ্নার জল তো আছে”
“শিশুরা খেলছে”
“পশুরা মাঠে ঘাস খাচ্ছে”
“দোকানে ভিড় আছে”
“যানবাহন চলছে”
“মানুষের সমাগম চলছে”
“বাগানে ফুল ফুটছে”
“প্রকৃতি হাসছে”

সত্যি কারো কাছে হঠাৎ করে যাতে ৫০ লাখ টাকা না আসে। তাহলে একি রকম দশা হবে। কাজ কে করবে? সবার কাছেই তো ৫০ লাখ মজুত।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত