পরীক্ষায় পাশ বিভ্রাট

পরীক্ষায় পাশ বিভ্রাট

পড়ালেখায় আমি দুর্বল প্রজাতির স্টুডেন্ট। ২বার এস.এস.সি দিয়ে ফেল করে পাশ করছি।এখন ইন্টারমেডিয়েটেও একই দশা, দুইবার ফেল করছি এটাই লাস্ট সুযোগ। পাশ না করলে আমার বিয়ে ভেঙে যাবে।সারাবছর ড্যাংড্যাং করি,কিন্তু পরীক্ষা আসলে হুঁশ থাকেনা এটাই আমার ফেল করার মূল কারণ। ফেল করতে করতে আমি খুব ধৈর্য্যশীল হয়ে গেছি।সব সহ্য করতে পারি। সামনে আমার পরীক্ষা, এখন আমি বাড়িতে খুব চুপচাপ।কোনো কথা বলিনা, চুপ করে সব সহ্য করি বকাবকি। আম্মু না চাইলেও, আম্মুর সব কাজ করে দিই,যদি আম্মুর দোয়াতে পাশ করি আর কি।

আম্মুর তো ফুল কনফিডেন্স, এবারও আমি ফেল করবো।কারণ সারাবছর একটুও পড়িনা, ফেসবুক নিয়েই পড়ে থাকি, নাহয় বান্ধুবীদের সাথে ঘুরাঘুরি নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যেই সময় কাটে।আমার সব বান্ধুবী এখন আমার সিনিয়র আপু হয়ে গেছে একমাত্র ফেল করার কারণে। অনেকে আদর করে “আদু বোন” ডাকতো, এমনকি স্যাররাও। ফেসবুকে আসলাম, সেখানে দেখি লোকজন অহেতুক আমাকে গালাগালি করতেছে, একটু রাগ হলো তবুও কিচ্ছু বললাম না, যদি বদদোয়া দেয়। চুপচাপ সবার গালি খেয়েও “সহমত ভাই”, “সহমত ভাই” বলে আসছি।

বরাবরই আমি ফরওয়ার্ড করা এসএমএস এ বিশ্বাসী না, একজন বলল, এই এসএমএস এড়িয়ে গেলে বা ফরওয়ার্ড না করলে পরীক্ষায় ফেল নিশ্চিত। আমি ভাবলাম ফরওয়ার্ড করবো না, তবুও মনের মধ্যে খটকা লেগে গেলো। যদি ফরওয়ার্ড না করলে সত্যি সত্যি ফেল করি। এবার ফেল করলে তো আমার বিয়েই ভেঙে যাবে, অন্তত বিয়ের জন্য হলেও এসএমএস ফরওয়ার্ড করে পাশ করতে হবে। তারপর ২০জনকে এসএমএস ফরওয়ার্ড করে দিলাম। আহারে সেই ২০জনই গালিগালাজ দিয়ে আমার চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করলো, তারপরও কিছু বললাম না,বললে যদি তারা বদদোয়া দেয়,তাহলে তো নিশ্চিত ফেল।

পথে ফকিরের সাথে দেখা হলো, টাকা চাইলো, বলছে পরীক্ষার জন্য দোয়া করবে।এই শুনেই আমি আনন্দে আত্মহারা,যাক বাবা এবার ফকিরের দোয়ায় পাশ করবো।কিন্তু কপাল খারাপ ব্যাগে টাকা ছিল না,পরে ধার করে ফকিরকে টাকা দিয়ে দোয়া নিয়ে নিলাম। ও হ্যাঁ, এখন আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও পড়ি কুরআনও পড়ি নিয়মিত। আগেও পড়তাম কিন্তু মাঝেমধ্যে অলসতার কারণে ফাঁকিবাজি করতাম।এখন তো ফাঁকিবাজি করা যাবেনা।সারাদিন আল্লাহ করি। আত্মীয়স্বজন সবাইকে কল দিয়ে দোয়া চাইতে চাইতে আমার মুমূর্ষু অবস্থা শুধু এবার পাশ করার জন্য। তারাও হেঁসে উড়াই দিলো।মনে অনেক কষ্ট পাইলাম।তবুও কিছু বললাম না।কারণ হাঁসারই তো কথা এক ক্লাসে কয়বার থাকে মানুষ। প্রত্যেকবছরই তাদের কাছে পাশ করার জন্য দোয়া চাইতে হয়।

অথচ আমার পড়াই হয়না। আজকে পরীক্ষা আমার, আম্মু সকালে ডিমভাজি করে রুটি দিল, কিন্তু ডিমভাজি করে খেলে যদি ফেল করি,পরীক্ষায় ডিম পাই। অথচ একসময় আমি এসবকে কুসংস্কার বলে উড়িয়ে দিতাম আজ ফেল করতে করতে, আমি কুসংস্কারেই বিশ্বাসী হয়ে গেলাম। আম্মু খাওয়ার জন্য বারবার বলতেছে কিন্তু কিছুতেই তো আমি ডিম খাবো না।আপনারাই বলেন কত ফেল করতে মন চায়। আম্মুর জোরাজোরি দেখে আমি রেগে গিয়ে আম্মুকে বললাম,এবার যদি ফেল করি তাহলে তুমিই দায়ী থাকবা, এই ডিমভাজি আমার ফেলের মূল কারণ হবে।আম্মু বলতেছে, সারাবছর পড়ালেখা নাই, পরীক্ষার সময় ডিমভাজি ফেল করার কারণ হবে?এটা খেয়েই যাবি,নাহয় তোর পরীক্ষাই দেওয়া লাগবেনা।পরে খেয়ে নিলাম, কি আর করার। পরীক্ষা শেষ। আজকে রেজাল্ট দিবে।

আমিতো জানি আমি ফেল করবো।তার উপরে পরীক্ষা দেওয়ার সময় ডিম খেয়ে পরীক্ষা দিতে গেছি।আমার এবারও ফেল ঠেকায় কে। এ কি ঘটলো?রেজাল্ট দেখে আমি প্রায় বেহুঁশ।আমি কেমনে পাশ করলাম। পরে ডিমকে যত গালিগালাজ দিছি সব ফিরিয়ে নিয়ে ডিমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দুই রাকাত নামাজ পড়লাম। এরপর থেকে আমি বিশ্বাস করি ডিম ফেল করার কারণ না।সবাইকে এই নিয়ে খুব অনুপ্রেরণা দিই।পরীক্ষার হলে ডিম খেয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার জন্য।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত