দায়িত্ব

দায়িত্ব

আমি আমার বউয়ের দ্বিতীয় স্বামী এবং আমার বউ আমার প্রথম স্ত্রী।সে আমার প্রেমিকাও বটে।প্রেমিকা বললে ভুল হবে।নিঃসঙ্গতার সঙ্গী।এক সময় প্রেমিকা ছিলো। আমি তাকে ভালবাসি। আমার তাকে প্রয়োজন।

৫ বছর আগে তার সাথে আমার সম্পর্কের ইতি ঘটে।আসলে সম্পর্ক শেষ করতে বাধ্য ছিলাম আমরা দুজনেই।আমার বর্তমান স্ত্রীর নাম নাদিয়া।যে একসময়ে আমার প্রেমিকা ছিলো।আমাদের ৩ বছরের সম্পর্ক ছিলো।হঠাৎ করে ওর বিয়ে ঠিক হয়।নাদিয়া আমাকে হাজার বার বলেছে, “অয়ন চলো পালিয়ে বিয়ে করি।” আর যা হোক এসব করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলোনা।ফলাফল আমাদের সম্পর্কের সমাপ্তি। আমার মাথার উপরে দুই বোনের দায়িত্ব। আমার নিজের সক্ষম হতে হবে। এর মধ্যে অন্য একটা মেয়ের দায়িত্ব আমার পক্ষে নেয়া সম্ভব ছিলোনা।

ব্রেকাপের ২ বছর পর আমার জব হয়।একটা সরকারি জব।এক বোনের বিয়ে দেই।অন্য বোনের বিয়ে পরের মাসে ঠিক হয়েছে।নাদিয়ার সাথে আমার যোগাযোগ তখন ছিলোনা।ভাবলাম ওর একটা খবর নিয়ে দেখি। হয়তো সুখেই আছে।কিছু ফ্রেন্ড এর কাছে জানতে পারি নাদিয়ার বিয়ের ১ বছরের মাথায় ওর স্বামী দুর্ঘটনায় মারা যায়।

আমার পরিবার আমার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখছিলো।আমি তাদের সবটা জানাই।তারা কিছুতেই অমন মেয়ে ঘরের বউ করবেনা।আমি তাদের শুধু একটা কথাই বলি, “একসময় তোমাদের জন্য আমি ওকে ছাড়ি, আর এখন ওর জন্য তোমাদের ছাড়তে হবে।” অবশেষে পরিবার মেনে নেয়। আমাদের বিয়ে হয়। কিন্তু নাদিয়া আমাকে বিয়ে করতে চায়নি।পরিবারের ঝামেলা বাড়াতে চায়না এজন্য বিয়ে করেছে আমাকে।ও আমাকে এখনও মেনে নেয়নি। ছোট বোনকে বললাম নাদিয়াকে ছাদে পাঠাতে।

” ডেকেছো আমাকে? ”
” হ্যাঁ। ”
” কিছু বলবে? ”
” তুমি এখনও আমার উপরে রাগ করে থাকবে? ”
” আমার অনেক কাজ আছে।বাবাকে খাবার দিতে হবে।”
” বাবাকে খাবার দেয়ার জন্য ছোট বোন আছে।”
” তাতে কি পান থেকে চুন খসলে তোমার পরিবার কথা শুনাতে ছাড়েনা।জানোতো অয়ন আমি তোমার উপরে রাগ করলেও চেষ্টা করি তোমার পরিবারকে ভালবাসতে।তাদের খুশি করতে। কিন্তু তোমার মা,বাবা আমাকে একদম পছন্দ করেনা।”

” জানি সবটা আমি।পরের মাসে ঢাকাতে যাচ্ছি।ওখানে বদলি হয়েছি।”
” কেন?”
” নাদিয়া, তুমি এবং আমার পরিবার দুটোই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ন।এই জায়গায় থাকলে হয় তুমি কষ্ট পাবে,নয়তো মা,বাবা। তাই দুজনকে ভালো রাখা আমার দায়িত্ব। ”

” যে কখনও ভালো প্রেমিক হতে পারেনি,সে ভালো স্বামী কিভাবে হবে? ”
” যাদের প্রেমিকা থাকেনা তারা কি ভালো স্বামী হতে পারেনি।”
” হয়তো!!”
” আর কিছু বলবেনা?”
” জানো অয়ন, একটা কথা ভাবছি আমি।সেদিন তুমি আমাকে ফিরিয়ে না দিলে হয়তো আজকে আমার প্রথম স্বামীর জায়গায় তুমি থাকতে, আর আমাদের একটা সুন্দর সংসার হতো।”
” আর যদি আমি দু্র্ঘটনায় মরে যেতাম?”
” সেজন্যই হয়তো সেদিন তুমি আমার কপালে ছিলেনা।”

” তোমায় এখনও আমি ভালবাসি নাদিয়া। সেদিন আমার অনেক দায়িত্ব ছিলো।চারটা মানুষের দায়িত্ব।তোমাকে বিয়ে করলে আমি তোমাকে ভালো রাখতে পারতাম না।অভাবের সংসারে মরে যেতে।আমার পরিবারকে যেখানে কষ্ট পেয়ে থাকতে হয়,সেখানে তুমি কি করে থাকতে?আমার পরিবার সেদিন আমার দায়িত্ব ছিলো।প্রেমিকার থেকে পরিবার আগে।তারা আমাকে জন্ম দিয়েছে।পৃথিবীর আলো দেখিয়েছে।তাদের কথাও আমাকে ভাবতে হবে।”
” তোমায় প্রেমিক হিসেবে আমি ভালবাসতাম। বর হিসেবে ভালবাসতে আমার সময় লাগবে।ঐ জায়গাটা অন্য একজনকে দিয়ে ফেলেছি। ”

” যতদিন লাগে তুমি নিতে পারো।আমি তোমাকে জোর করবোনা। ”
“এখন তুমি তোমার পরিবার থেকে দূরে যেতে চাও কেন?তারা কি এখন তোমার দায়িত্ব নয়? ”
“তারা যেমন আমার দায়িত্ব,তুমিও আমার দায়িত্ব।তোমাকে ভালো রাখা আমার কর্তব্য। এখানে থাকলে তুমি নয় তো বাবা,মা কষ্ট পাবে। আর আমাদের প্রথম বাচ্চা হওয়ার পর এখানে চলে আসবো।হয়তো সেদিন তোমাকে মেনে নিবে।”

একদিন হয়তো নাদিয়া আমাকে মেনে নিবে।আগের মতো ভালবাসতে পারবেনা।কিন্তু তাতে কি নাদিয়া এখনও আমারই আছে।সেদিন ওকে ফিরিয়ে না দিলে ওর স্বামীর জায়গাতে হয়তো আমি থাকতাম।আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।আর আমার পরিবার এবং নাদিয়াকে ভালো রাখাই এখন আমার একমাত্র দায়িত্ব।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত