কাইল্ল্যা জামাই

কাইল্ল্যা জামাই

গত মাসে বেস্ট ফ্রেন্ডের বিয়েতে পুরোনো এক বন্ধুর সাথে দেখা হলো। ওকে দেখা মাত্রই ওকে “কাইল্ল্যা” বলে সম্বোধন করলাম। যখন এক সাথে পড়তাম তখনও যে ফর্সা ছিল এমন নয়। তবে এখন একেবারেই কিটকাট চকোলেট কালারের হয়ে গেছে। ওকে কাইল্ল্যা বলে ডাকার পর থেকে এই শব্দটা আমার মুখে লেগেই আছে। যাকে পাচ্ছি তাকেই কাইল্ল্যা ডাকছি। এমন নয় যে আমি কালো মানুষ পছন্দ করিনা। কালো মানুষগুলোর মায়া ভরা মুখই আমার বেশি পছন্দ। সাধারণত আমি ফর্সা লোক সহ্য করতে পারিনা। ছেলেরা ফর্সা হলেতো একেবারেই মানতে পারিনা। কেমন জানি কদু কদু (লাউ) লাগে।

তবে এই কাইল্ল্যা ডাকটা নিয়ে আমাকে যত বিপাকে পড়তে হলো। কীভাবে জানি আপুর ছেলেকেও কয়েকবার কাইল্ল্যা ডেকে ফেলেছি। এই নিয়ে আপুর সাথে বেশ লড়াই হয়েছে। ছোট ভাইরে তো আগের থেকেই ডাকতাম তবে এখন কাইল্ল্যা ছাড়া কথাই বলিনা।সেও রোজ প্রার্থনা করে আমার যেন কাইল্ল্যা জামাই হয়। এখন আপুও সেইম দোয়া করছে। আমি এসব নিয়ে ভাবি না। আমি নিজেও মন থেকেই চাই আমার জামাই কালো হোক। তবে টেনশনে থাকি কবে আবার আব্বুকে এই নামে সম্বোধন করে ফেলি।

অনার্স ফাইনাল মাত্র শেষ হলো । আজকেই শেষ এক্সাম ছিল। পরীক্ষা শেষে যেই মাত্র ফোন অন করলাম সাথে সাথেই দেখি মায়ের ফোন। রিসিভ করার সাথে সাথেইঃ”তোর কি কখনো আক্কেল হবেনা, তাড়াতাড়ি বাসায় আয়,বলেছিলাম না আজ তোকে দেখতে আসবে”! আসছি বলে ফোন রেখে দিলাম। আমার জানা ছিল এই কথা। গত দুইদিন ধরেই ভাইটা বিরক্ত করছে কাইল্ল্যা জামাই বলে বলে। কাইল্ল্যা বলে মাথা ব্যাথা নাই। জীবনে একটা প্রেম হইলো না। এইবার বিয়ে তো হবে। অনেক এক্সাইটেড।

বাসার কাছেই একটা মিষ্টির দোকান আছে।মা বলল ওখান থেকে দই নিয়ে যাই। দোকানে ঢুকেই আইসক্রিম খেতে মন চাচ্ছিল। দেখলাম আইসক্রীম কোনটা খাব বুঝতে পারছিলাম না। ফ্রিজের সামনে গিয়ে দেখি একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে । তাকে উদ্দেশ্যে করে বললাম ”এক্সকিউজ মি কাইল্ল্যা ভাই একটু সরবেন প্লিইজ”! লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে অবাকই হলো মনে হয়েছে! তারপর কি যেন ভেবে হেসে ওখান থেকে বিদায় হলো। এদিকে মা আমাকে টানা ফোন করেই চলেছে। আমি দোকানে বসেই আইসক্রিম শেষ করে দই নিয়ে বাসার দিকে রওনা হলাম।

বাসায় ঢুকেই দেখছি মেহেমান চলে এসেছে। আমি রেডি হয়ে এলাম তাড়াতাড়ি। বড় আপু আমাকে চায়ের ট্রে হাতে ধরিয়ে দিয়ে ব্যঙ্গ করেই বললো ” যান আপনার নায়ককে দেখে আসেন” আমি খুশি মনেই উনাদের সামনে গিয়ে দেখি দোকানে যাকে কাইল্ল্যা ভাই বলে ডেকেছি তিনিই আমাকে দেখতে এসেছে। হাসব নাকি কাঁদব কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমাকে উনার মায়ের পাশে বসতে বলল। আমার মাথায় কিছুই আসছে শুধুই ঘুরছে ”কাইল্ল্যা ভাই ” শব্দটা।

উনারা আগেই আমাকে দেখেছে। তাই তখন দোকানে উনি হেসেছিলেন। আমাদের বিয়ের সবটা ঠিকঠাকই আছে। শুধু আজকে রিং পড়াবে।তাই কোনো কথা না বাড়িয়ে আমাকে ছেলেটার মা জিজ্ঞেস করলো ” আমার ছেলেকে তোমার কেমন লেগেছে” ”কাইল্ল্যা দের আমার বরাবরই পছন্দ” মুখ ফসকে বলে ফেললাম।

এতে আমার হবু শাশুড়ী খুব রেগে গেলেন। আমি কি বলব বুঝতে না পেরে আবারও বললাম ”রাগ করছেন কেন আন্টি আপনার ছেলেকে তো একটু আগেও আমি কাইল্ল্যা ভাই ডেকে ফেলেছিলাম উনি তো রাগ করেনি ”! কথাটা উনার রাগ কমানোর জন্যই বলেছিলাম। কিন্তু হিতের বিপরীত হলো। উনি ছেলের দিকে তাকিয়ে কটমট করে বলল ”বিয়ের আগেই বউয়ের দোষ লুকানো শিখে গেলি”?

যাই হোক আমি এখন আমার আনা দই গুলো খাচ্ছি। সাথে বাবার বকাও। কারণ বিয়েটা ভেঙ্গে গেল। বজ্জাত মহিলা আমার নামে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে গেল। আমি নাকি বিয়ের আগেই তার পোলার মাথা গিলেছি। এদিকে বাবাও পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে যতদিন একেবারে ফর্সা ছেলে জোগাড় করতে পারবে না ততদিন আমার বিয়ে দিবেনা। যাতে আমাকে সবাই বিলায়ের বউ বলতে পারে। এটাই নাকি আমার শাস্তি। খুব চিন্তাই আছি, চিন্তাই চিন্তাই একটা গান গেয়েই চলেছি ”বাবা আমার কি বিয়ে হবে না”!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত