হুট করে মাঝরাতে এক বন্ধুর ম্যাসেজ পেলাম- “দোস্ত, তুই একটু ক্ষণের জন্যে আমার বাবা হবি!!” আমি জেগেই ছিলাম, আচমকা শাকিলের পাঠানো অদ্ভুত এই ম্যাসেজ দেখে তব্দা খেয়ে বসে আছি।। মানে কি, শাকিল কি ভুলে এই ম্যাসেজ দিলো, এই ম্যাসেজের মানে কি, কাকে দিতে গিয়ে কাকে দিলো।। আমি শাকিলকে কল ব্যাক করতে যাবো, এমন সময় আননুন নাম্বার থেকে উল্টা একটা কল আসলো।। আমি একটু জড়তা নিয়ে কল কেটে যাবার আগ মুহূর্তে রিসিভ করলাম, ওপাশ থেকে চড়া একটা কণ্ঠ ভেসে এলো- হ্যালো, আপনি কি মোবারক হোসেন??
আমি অবধারিতভাবে না বলতে গিয়ে চট করে মাথায় একটা ব্যাপার চলে আসলো, আমি বরং জবাব দিলাম- জ্বী, আপনি কে?? বিশেষ কারণে কণ্ঠ যথাসম্ভব মোটা করার চেষ্টা করে বললাম।। শাকিলুর রহমান শাকিল, হ্যাঁ শাকিল কি আপনার ছেলে?? আমি একটু বিরক্তি নিয়ে বললাম- জ্বী, আমার ছেলে, কেনো রে ভাই, আপনি কে এত রাতে?? আমি যাত্রাবাড়ি থানার এসআই।। আপনার ছেলেকে আমরা যাত্রাবাড়ি হোটেল ডায়মণ্ডে এক মেয়ের সাথে পেয়েছি, আপনার ছেলে বলছে এটা নাকি তার ওয়াইফ।। আপনি কি এই ব্যাপারে জানেন কিছু??
আমি শাকিলকে নিয়ে ঠিক এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম।। এর আগেও ওর এমন এক কাণ্ডের কথা শুনেছিলাম, যাক্ আর কিছু না হোক বুদ্ধি করে যে প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে নিয়েছি, সেই অনেক।। আমি হিসাব মিলিয়ে ফেলেছি, তাই আর দ্বিধা না করে বললাম- জ্বী, আমার ছেলে বিবাহিত, কিন্তু আমার কথা হলো, এত রাতে কি ভাই স্বামী স্ত্রীকে এভাবে ডিষ্টার্ব করা ঠিক।। ডিষ্টার্ব না, এইসব হোটেলে অনেক আকাম-কুকাম হয়, তাই হোটেলে মাঝে মাঝে আমরা রেড দেই।। আর বউ নিয়ে কেউ এইসব সস্তা হোটেলে উঠে নাকি।। যাই হোক, আপনার পুত্রবধূর নাম কি??
আমি এই প্রশ্ন শুনে তো দিলাম জিহ্বায় কামড়, ওর গার্লফ্রেন্ডের নাম আমি জানি, ফেসবুকেও এড আছে কিন্তু এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না।। আমি দ্রুত ঘেমে যাচ্ছি, কি করি, কি করি, একটু পরেই বিধাতার অশেষ কৃপায় মনে পড়লো, আমি সাথে সাথে বললাম- আদিবা, আদিবা ইসলাম।। যাক্ পুলিশ ভাই শোনেন, এইসব সন্দেহ কইরা লাভ নাই, আমার ছেলে বিবাহিত এটা হলো আসল কথা।। আমার ছেলে আর বউমাকে আর হেনস্তা কইরেন না।। আচ্ছা, ঠিক আছে আমরা দেখতাছি!! আপনি তো বগুড়া থাকেন তাই না?? আমি বুঝলাম, শাকিলের বাড়ি তো বগুড়া পুলিশকে নিশ্চয় বগুড়াই বলেছে- জ্বী আমি বগুড়া থাকি, আপনাদের দই খাবার দাওয়াত রইলো।। আচ্ছা রাখি!! বলে পুলিশ খট্ করে ফোন কেটে দিলো।। উফসসস্ আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।। শালার হারামী বন্ধু বান্ধব, এইগুলার জন্যে নিজের মান ইজ্জত নিয়ে টানাটানি।। মনে মনে নিজের বুদ্ধির তারিফ নিজেই করতে থাকলাম, শিকদার মোহম্মদ রাজভী রায়হান আলম শোভনের বুদ্ধি বলে কথা।।
খানিক বাদে ফেসবুকে ঢুকলাম, দেখি অনলাইনে কোন বন্ধু-বান্ধব পাইলে ওদের সাথে ব্যাপারটা শেয়ার করবো, এইসব মজার ব্যাপার বেশিক্ষণ চাপিয়ে রাখলে আমার মন আকুলি বিকুলি করে।। মধ্যরাতে ব্যাকুল মন খারাপ জিনিস।। ওদিকে হয়তো শাকিল আর আদিবা আমার কারণে ঝামেলা থেকে বেঁচে গেছে!!অনলাইনে গিয়ে ওভাবে কাউকেই পাচ্ছি না, রাত বাজে ১ টা ৩৭।। হুট করে চোখে পড়লো, আদিবা অনলাইনে।। ভাবলাম, বাহ্ ঝামেলা মনে হয় শেষ, জিজ্ঞেস করি কি দিয়ে কি হলো!! নক দিলাম-
হ্যালো, আদিবা কি অবস্থা এখন?? আদিব তাৎক্ষণিক কোন রিপ্লাই করলো না, বেশ কিছুক্ষণ পর ম্যাসেজের উত্তর দিলো- এই তো ভাইয়া ভালো, আপনার?? আমি তো ভালোই আছি, তোমাদের খবর বলো?? পুলিশ গেছে, শাকিল হারামিটা কই?? বুঝলাম না ভাইয়া কিসের পুলিশ, শাকিলের খবর জানি না, সন্ধ্যা থেকে ফোন রিসিভ করছে না।। আমি রীতিমত একটা বিষম খেলাম।। বুঝতেছি না, কাহিনী কি হলো।। আমি সাথে সাথে বললাম-
আদিবা তুমি কই?? শাকিলের সাথে না তুমি?? আমি বাসায়, শাকিলের সাথে মানে, ও কিভাবে এত রাতে থাকবে।। আর কিসের পুলিশ ভাইয়া!! আমার কাহিনী বোঝা শেষ, শাকিল তবে হোটেলে কার সাথে গেলো!! আদিবার সাথে তো যায় নি, নিশ্চয় অন্য কোন মেয়েকে নিয়ে গেছে।। খোদা রে, আমি যে পুলিশকে বললাম, মেয়ের নাম আদিবা ইসলাম, এখন কি হবে!! কি যে ঘটতেছে শাকিলের সাথে কে জানে!!
খাও বন্ধু এইবার পুলিশের বাটাম খাও।। বুঝবা ঠ্যালা, একলগে দুই তিনটা মেয়ে নিয়া ফুর্তি করবা আর বন্ধু বান্ধবরে পর্যন্ত জানাইবা না।। পুলিশরে কি তোমার বোকা মনে হয়, কত বুদ্ধি আমাকে মেয়ের নাম জিজ্ঞেস করে বসে আছে!! কথায় আছে না, অতি চালাকের গলায় দড়ি, শাকিলের হইছে সেই দশা, অতি চালাকের পাছায় পুলিশের ডান্ডার বারি!! বত্ব, শাকিলের আপডেট পাইলে জানিয়ে দিবো!!